Rokey changed his profile cover
6 yrs

image

image

এইরকম কিছু দিলে অবশ্যই কাজ করত ।।

imageimage

গল্প :-""""""--শেষ কান্না--""""" ♥
.
লেখক:- #RJ_Nayem_Ahmed
.
গল্পটা পড়ে 100% আপনাদের চোখে পানি চলে আসতে বাধ্য....Challenge
.
.
★-----------------পর্ব:- ০৮ ~~~~
.
.
১২ই জুলাই ২০১৫,
রাত নয়টা, পিয়াল বাসার সামনে দাঁড়িয়ে ভার্সিটির অধ্যাপক মতিন সাহেবের সাথে কথা বলছে।
মতিন সাহেব - হ্যা! সবই তো শুনলাম। রুমির যা অবস্থা তাতে ওকে ভালো কোনো মানুষিক বিশেষজ্ঞের কাছে নিয়ে যাওয়া উচিৎ।
পিয়াল - জ্বি স্যার। রুমির বাবাও তাই বলেছিলেন।
- আসলে! মানুষ যখন অতিরিক্ত মানসিক আঘাতপ্রাপ্ত হয় তখন এমনটা হয়। রুমির ক্ষেত্রেও তাই-ই হয়েছে। একসাথে দুজন কাছের মানুষের এভাবে চলে যাওয়াটা মেনে নিতে পারে নি।
- জ্বি স্যার!
- যার একবার মানসিক বিপর্যয় ঘটে তখন সেই-ই বোঝে কষ্টের গভীরতা কত। আমার এক বন্ধুর কথা তোমাকে বলি।
- জ্বি স্যার বলুন।
- মুক্তিযুদ্ধকালে তো অনেক বাংলাদেশী মানুষ,মুক্তিযোদ্ধারা শহীদ হয়েছিলেন।
- জ্বি স্যার!
- আচ্ছা বলো তো! আমাদের দেশ কত সালে স্বাধীন হয়েছিলো?
- ১৯৭১ সালে স্যার।
- গুড! আমরা মুক্তিযুদ্ধকালে তোমাদের মতই ছিলাম। তখন আমার বিয়ে-টিয়ে হয় নি।যাই হোক, আমি এখন আমার এক বন্ধুর কাহিনী তোমাকে শুনাবো। বন্ধুটির নাম ছিলো আব্দুল্লাহ। পুরো নামটা মনে নেই, অনেক আগের ঘটনা তো! আমি বিয়ে করি নি তো কি হয়েছে? আমার সেই বন্ধুটি তখন নতুন বিয়ে করেছিলো। বিয়ে করার কিছুদিন পরেই শুরু হলো গণ্ডগোল(মুক্তিযুদ্ধ)। যুদ্ধ শুরু হবার সাথে সাথেই যুদ্ধের খবর বাতাসের আগে সবার কানে পৌঁছে যায়। সবাই নিজের জান বাঁচাতে এদিকওদিক ছোটা-ছুটি করা শুরু করে দেয়। আমার বন্ধু আব্দুল্লাহ আর ওর পরিবারও নিজেদের জীবন বাঁচাতে গ্রাম ত্যাগ করলো।তখন তো আবার অনেকেই পালিয়ে ভারত চলে গিয়েছিলো। আব্দুল্লাহ ওর পরিবারকে নিয়ে ভারতে পালিয়ে যাওয়ার জন্যই গ্রাম ত্যাগ করেছিলো। কিন্তু মাঝ পথে এসে আব্দুল্লাহ এবং ওর পরিবারসহ আরো কয়েকশ মানুষ পাক-বাহিনীর হাতে ধরা পরে। আব্দুল্লাহ কোনো রকমে সেখান থেকে পালিয়ে আসতে পেরেছিলো কিন্তু তাঁর পরিবার পারে নি। সেখানেই মেরে ফেলা হয় তাদেরকে। আব্দুল্লাহ পরিবারের শোকে একপর্যায়ে পাগল হয়ে যায়। যুদ্ধ শেষে গ্রামে বেশ কয়েকদিন ঘুরতে দেখা গেছিলো। কিন্তু এরপর আব্দুল্লাহকে আর পাওয়া যায় নি। অনেক খুজেছিলাম আমি এবং ওর কয়েকজন প্রতিবেশীরা। ফল একই দাঁড়ালো। সারাজীবনের জন্য নিখোঁজ হয়ে যায় সে (দীর্ঘশ্বাস)। হয়তো এখনো সেই পুরনো স্মৃতি নিয়ে বেঁচে আছে, নয়তো সে এই পৃথিবীতেই আর নেই। আল্লাহ্ই ভালো জানেন।
- (পিয়াল নিশ্চুপ)
- এর জন্যই বলেছিলাম আপনজন বিয়োগে এতোটাই কষ্ট পেতে হয়, যে কষ্টের ভাগ যায় না কাউকে দেয়া আবার নিজের মধ্যেও রাখা যায় না।
পিয়াল মাথা নিচু করে থাকে।
- আচ্ছা পিয়াল। আজকে আমি আসি তাহলে। কালকে ভার্সিটিতে আসলে দেখা হবে।
-আচ্ছা স্যার।
মতিন সাহেব মুচকি একটা হাসি দিয়ে পিয়ালের সামনে থেকে চলে গেলেন। পিয়াল আকাশের দিকে তাকালো।মনে হচ্ছে আকাশের অর্ধেক চাঁদটা উঁকি মেরে পিয়ালের দিকে তাকিয়ে আছে। পিয়াল বাসায় ঢোকার জন্য পা বাড়ালো।
রাত তিনটা, পিয়াল বিছানায় শুয়ে আছে। চোখ দুটো প্রচণ্ড পোড়াচ্ছে। একটু ঘুমিয়ে নেয়া উচিৎ।
পরেরদিন সকাল নয়টা,
পিয়াল ফ্রেস হয়ে বাথরুম থেকে বের হলো। ভার্সিটি যাওয়ার উদ্দেশ্যে জামা-প্যান্ট পরে নেয়। যদিও ভার্সিটি যেতে ইচ্ছে করছে না, কিন্তু নিজেকে ব্যস্ত রাখার এটাই সব থেকে বড় পদ্ধতি। সকালের নাস্তা করে বেরিয়ে পরলো ভার্সিটির উদ্দেশ্যে।
পিয়াল বাসে বসে আছে হঠাতই ফোন বেজে উঠলো।পিয়ালের বন্ধু অপু কল দিয়েছে।
অপু- হ্যালো! পিয়াল।
পিয়াল- হ্যা বল!
- কোথায় তুই?
- আমি বাসে, ভার্সিটি যাচ্ছি।
- তুই এখনই ঢাকা মেডিকেলে চলে আয়।
- কেনো?
- অতো কিছু বলতে পারবো না, তুই এখনই আয়।
- আচ্ছা ঠিক আছে।
ফোন কেটে দিয়ে বাস থেকে নামে পিয়াল। হঠাতই পিয়ালের ভিতরে একটা আতংক কাজ করা শুরু করলো। যাই হোক,অপু যেখানে যেতে বললো সেখানে না গিয়ে আসল ব্যাপারটা বোঝা বোঝা যাবে না।পিয়াল ঢাকা মেডিকেল যাওয়ার জন্য অন্য একটি বাসে উঠে পরলো।
দুপুর একটা,
পিয়াল ঢাকা মেডিকেলের সামনে দাঁড়িয়ে অপু কে কল দিলো -
পিয়াল - দোস্ত আমি মেডিকেলের সামনে দাঁড়ানো।
অপু - তুই মেডিকেলের পাঁচ নাম্বার ফ্লোরে ওঠ। এরপর বাম দিকের মর্গের সামনে আয়।
- আচ্ছা।
মর্গের কথা শুনেই পিয়ালের ভিতরটা দ্বিতীয় বারের মতো কেঁপে ওঠে। লিফট দিয়ে পাঁচ নাম্বার ফ্লোরে উঠে, বাম দিকে হাটা শুরু করে। পা চলছে না, সামনে হয়তো খারাপ কিছু অপেক্ষা করছে পিয়ালের জন্য। তবুও কিছু একটা প্রবল আকর্ষণে সামনে এগোচ্ছে পিয়াল। একটা রুমের সামনে অপু দাঁড়ানো দেখা যাচ্ছে।আশেপাশে আরো অনেক মানুষ দাঁড়িয়ে আছে। অপু,পিয়ালকে দেখে দ্রুত হেটে এসে পিয়ালের সামনে এসে দাঁড়ালো।
পিয়াল - কি হয়েছে রে?
অপু - নিজেই দেখে নে। (কান্না কন্ঠে)
অপু পিয়ালকে নিয়ে রুমটার মধ্যে ঢোকে। রুমের মাঝখানেই একটা সাদা কাপড়ে ঢাকা লাশ। পিয়ালকে লাশটার সামনে দাঁড় করিয়ে মুখের উপরের কাপড়টা তুলে দেয় অপু। পিয়ালের মাথা বেয়ে প্রচন্ড ঘাম ঝরছে,চোখ দুটো যেনো বাহিরে বেরিয়ে আসতে চাচ্ছে। পা কাঁপছে, নিজেকে ধরে রাখার মত শক্তি পাচ্ছে না পিয়াল। সামনের সব কিছুই ঝাপসা লাগছে। একটু পরেই সব অন্ধকার।
পিয়াল চোখ খুললো।মনে হয় সে শুয়ে আছে। কিন্তু কোথায়? উপরে খোলা আকাশ দেখা যাচ্ছে। উঠে বসে পিয়াল। মনে হচ্ছে কোনো একটা বাড়ির ছাদে। দূরে ছাদের কর্নারে একজন বালক দাঁড়িয়ে আছে। পিয়াল উঠে বসে, ছাদটা অতি পরিচিত লাগছে তার কাছে। এই ছাদে সে অনেক বার এসেছে।
পিয়াল:- হ্যা! এটা তো রুমিদের বাসার ছাদ!
পিয়াল দূরে ছাদের কর্নারে দাঁড়িয়ে থাকা ছেলেটার দিকে তাকায়। একটা নীল পাঞ্জাবী পরা।
পিয়াল- এটা তো রুমি! ও ওখানে কি করছে? আর আমি এখানে এলামি বা কি করে?
দূরে দাঁড়িয়ে থাকা রুমি ছাদের রেলিংএর উপরে উঠে দাড়ালো। পিয়াল দৌড়ে রুমির কাছে যাওয়ার চেষ্টা করলো। কিন্তু চেষ্টা ব্যর্থ, পিয়ালের পা একটা কিছুর সাথে বাধা রয়েছে। পিয়াল পায়ের দিকে তাকালো। হঠাৎ করেই পা বেধে ফেললো কে? আর এই দড়িই আসলো কোথা থেকে? পিয়ালের মনে নানান রকমের প্রশ্ন জেগে উঠলো। যার উত্তর খুঁজতে গেলেই নতুন করে আরেকটা প্রশ্নের উদয়ন ঘটছে। পিয়াল জোরে চিৎকার করে রুমিকে ডাকলো। কিন্তু পিয়ালের মুখ কোনো প্রকার শব্দই বের হচ্ছিলো না। হঠাৎ করেই রুমি রেলিং থেকে ঝাপ দিলো। পিয়াল শুধু দাঁড়িয়ে দেখছে। সব কিছুই স্বপ্নময় মনে হচ্ছে। কিছুক্ষন পরেই নিচে একটা বিকট আওয়াজ হলো।
১৩ই জুলাই সকাল ৭টা,
পিয়াল বিছানায় শোয়া থেকে লাফিয়ে উঠে বসলো। ভিতর থেকে শ্বাস টেনে তুলতে পারছে না পিয়াল। মনে হচ্ছে কেউ এক মুহূর্তের জন্য ফুসফুসটার মুখ চেপে ধরেছিলো। নাক-মুখ বেয়ে প্রচন্ড ঘাম ঝরছে। খুব পানি খেতে ইচ্ছে করছে। পানির খোজে এদিক ওদিক তাকালো পিয়াল। কাছের একটা টেবিলে পানির পাত্র রাখা, পিয়াল বিদ্যুৎ গতিতে পাত্রটা হাতে নিয়ে এক শ্বাসে পানি খাওয়া শুরু করে। এখন একটু ভালো লাগছে পিয়ালের। পানির পাত্রটা আগের জায়গায় রেখে দেয় পিয়াল। পিয়াল একটা রুমের মধ্যের খাটে বসে আছে।রুমটা পিয়ালেরই। কিন্তু পিয়াল এখানে আসলো কিভাবে। তাহলে কি! রুমির ব্যাপারে যা দেখেছিলো তা সব স্বপ্ন? এইসব ভাবতে ভাবতে ফোনটা খোঁজে। কিন্তু ফোনটা রুমে নেই। ফোনের খোঁজে সামনের রুমের দিকে পা বাড়ায় পিয়াল। রুমের দরজাটা আলগাভাবে লাগানো ছিলো, তাই হাতল ধরে টান দিতেই খুলে যায়। সামনের রুমে পিয়ালের মা এবং ডক্টর বসে আছেন। পিয়ালকে দেখে দুজনেই পিয়ালের মুখের দিকে তাকান। পিয়ালের খোঁজাখুঁজি দেখে ওর মা জিজ্ঞাসা করলো-
পিয়ালের মা - কি খুজতেছো বাবা?
পিয়াল - আমার মোবাইলটা।
ডাক্তার - এই নাও তোমার মোবাইল। (হাত বাড়িয়ে উপরের দিকে তুলে ধরেন)
পিয়াল ডাক্তারের হাত থেকে মোবাইলটা নিয়ে রুমির নাম্বার খুজতে থাকে।
ডাক্তার :- পিয়াল এখানে বসো। (একটা খালি চেয়ার দেখিয়ে)
পিয়াল ডাক্তারের মুখের দিকে তাকায়, কিন্তু কিচ্ছু বলে না। আবারো চোখ যায় মোবাইলের স্ক্রিনের উপর।ডাক্তার এবার নিজেই উঠে পিয়ালকে ধরে বসায় চেয়ারে। কিন্তু পিয়ালের চোখ ফোনের কন্ট্রাক্ট-লিষ্টে।কিন্তু, রুমির নাম্বারটা খুঁজে পাচ্ছে না পিয়াল....!
.
.
♥...........""চলবেই"".......... ♥

গল্প :-""""""--শেষ কান্না--""""" ♥
.
লেখক:- #RJ_Nayem_Ahmed
.
গল্পটা পড়ে 100% আপনাদের চোখে পানি চলে আসতে বাধ্য....Challenge
.
.
★-----পর্ব:- ০৭~~~~
.
.
০৭ই জুলাই ২০১৫,
ভার্সিটি ক্যাম্পাসের একটি গাছের নিচে একা বসে আছে পিয়াল।হঠাতই পিয়ালের বান্ধবী এনি'র আগমন।
এনি- কিরে এখানে এভাবে দেবদাসের মতো বসে আছিস কেনো?
পিয়াল- এইতো এমনিই বসে আছি।
- এমনি? কারন তো কিছু একটা আছে। সবাই ওখানে আড্ডা দিচ্ছে আর তুই এখানে একা বসে আছিস।
- ভাল্লাগছে না তাই বসে আছি। আমাকে একটু একা থাকতে দিবি? প্লিজ!
- না থাকতে দিবো না। আচ্ছা রুমির কি খবর রে?
- রুমির?
- হ্যা!
- ভালো নেই রে!
- রুমির জন্য আমাদেরও খারাপ লাগে। চাঞ্চল্যতায় ভরা ছেলেটা হঠাতই নিরব হয়ে গেলো।
- হুম।
- আমি তোর মনের অবস্থাটা বুঝতেছি। আমাদের বন্ধু তাই আমাদেরই খারাপ লাগছে ওর জন্য। আর তোরা দুইজন তো ভাই-ভাই। ভাইও হয়তো এতো আপন হয় না।
- হুম। (দীর্ঘশ্বাস)
- দেখা করেছিলি রুমির সাথে?
- হুম,গত কয়েকদিন আগে গিয়েছিলাম।
- কেমন দেখে এলি?
- ভালো নারে! কেমন যেনো হয়ে গেছে।
- কেমন হয়ে গেছে?
- আমাকে যেনো চিনেই না,হাতে একটা ডায়রী নিয়ে সারাক্ষণ ছাদে বসে থাকে। আর.....!আর কি যেনো ভাবে। কিছু জিজ্ঞাসা করলে মুখের দিকে তাকিয়ে থাকে, কিন্তু কোনো উত্তর দেয় না।
- কিছু বলিস নি?
- বলেছিলাম তো অনেক কিছু। অনেক বুঝালাম সেইদিন, কিন্তু আমার কথার কিঞ্চিত পরিমানও সারা দেয় নি। কি করবো বুঝে উঠতে পারছি না।
একটা ছেলে এসে এনি'র পিছনে দাঁড়ায়।
এনি - তোদের তো পরিচয় করিয়েই দেই নি। এই ছেলেটি আমার বয়ফ্রেন্ড। ওর নাম সিফাত।
পিয়াল - হাই! আমি পিয়াল! (হাত মিলিয়ে)
সিফাত - হাই! আমি সিফাত!
এনি- আচ্ছা আমি আজকে আসি তাইলে! নিজের খেয়াল রাখিস। কেমন?
পিয়াল - আচ্ছা ঠিক আছে। বায়
এনি ও সিফাত কথা বলতে বলতে সামনের দিকে এগিয়ে যায়। পিয়াল ফোনটা বের করে সময়টা দেখে নিলো। দুপুর বারোটা বাজে, বাসায় যাওয়া উচিৎ এখন। পিয়াল কাঁধে ব্যাগটা নিয়ে উঠে দাঁড়ায়। ক্যাম্পাস থেকে বের হয়ে বাসার উদ্দেশ্যে একটা বাসে উঠে পরে।
বিকাল ৫টা,
পিয়াল বাসার ছাদে বসে সিগারেট ফুগছে আর আশেপাশের পরিবেশ দেখছে। হাল্কা বাতাসের ছোঁয়া পাওয়া যাচ্ছিলো কিছুক্ষণ পর-পরই। এই অবস্থায় পিয়ালের ভালোই লাগছিলো পরিবেশটা।হঠাতই ফোনটা বেজে ওঠে। মুখে বিরক্তির ছাপ নিয়ে ফোনটা বের করে। রুমি কল দিয়েছে। পিয়াল তৎক্ষণাৎ কলটা রিসিভ করে। -
পিয়াল - হ্যালো রুমি!!!
ওপাশ থেকে - হ্যালো পিয়াল। আমি রুমির মা বলছিলাম।
- আসসালামু আলাইকুম আন্টি।
- ওয়ালাইকুম আসসালাম বাবা।
- আন্টি রুমি কোথায়?
- রুমি ওর রুমেই আছে কিন্তু..!!
- কিন্তু কি আন্টি?
- রুমির কি যেনো হয়েছে, অকারণই চেঁচামেচি করছে, নিজে নিজে বকবক করছে, আবার মাঝে মাঝে শুধুশুধুই কান্না জুড়ে দিচ্ছে।
- আন্টি আমি এখনই আপনাদের বাসায় আসছি।
- হ্যা বাবা! তাড়াতাড়ি আসো।
পিয়াল ফোনটা কেটে দিয়ে দ্রুত চলে যায় রুমির বাসায়।
পিয়াল - রুমি কোথায় আন্টি?
রুমির মা - ওর রুমে,ওর বাবা ওরে আটকে রেখেছে।
- আটকে রেখেছেন? মানে?
- হাতের কাছে যা কিছুই পাচ্ছে সব কিছুই ভাঙচুর করছে,চেঁচামেচি করছে তাই।হঠাৎ করেই আমার ছেলেটার কি যে হলো আল্লাহ্ই জানেন। (কান্না করতে করতে)
- ডাক্তারকে ফোন দেন নি?
- হ্যা দিয়েছি, কিছুক্ষনের মধ্যেই এসে যাবে বললো।
- আন্টি আমি একটু রুমির সাথে কথা বলতে চাই।
- কিন্তু....
- কোনো কিন্তু না আন্টি, আপনি ওর রুমের দরজাটা খুলেন একটু।
- আচ্ছা খুলে দিচ্ছি।
রুমির মা রুমির রুমের দরজাটা খুলে দিলেন।পিয়াল, রুমির রুমে ঢুকলো। রুমটা খুবই নোংরা হয়ে আছে। রুমের মধ্যকার কোনো জিনিসই ঠিক জায়গায় নেই।কিন্তু রুম থেকে একটা মিষ্টি সুগন্ধির ঘ্রান আসছে।ঘ্রানটা খুবই পরিচিত ঘ্রান।ডায়রীটা নিচে পরে আছে। রুমি বিছানার উপরে বসে আছে। চোখ দুটো বড় বড় করে তাকিয়ে আছে নিচে পরে থাকা ডায়রীটার দিকে। পিয়াল আস্তে আস্তে রুমির পাশে গিয়ে বসলো। নিচে পরে থাকা ডায়রীটার দিকে তাকালো, তামান্নার সেই ডায়রীটা। সাদা ডায়রীটায় এখনো তামান্নার রক্তের ছাপ আছে।
পিয়াল - রুমি।
রুমি পিয়ালের মুখের দিকে তাকালো।
রুমি - পিয়াল তুই? (কান্না করে জড়িয়ে ধরে পিয়ালকে)
পিয়াল - কি হয়েছে তোর? বল আমায়। (রুমিকে জড়িয়ে ধরে)
রুমি - তামান্না, টিয়া।
পিয়াল - হ্যা! তামান্না, টিয়া। কি হয়েছে?
রুমি - অই দেখ! ওদের লাশ ওখানে! আমার খুব ভয় করছে।
- কোথায় রুমি? (চমকিত হয়ে)
- অই দেখ! ( নিচে পরে থাকা ডায়রীটার দিকে ইঙ্গিত করে দেখায়)
- রুমি ওটা একটা ডায়রী।
- না না, ডায়রীর পাশেই ওদের লাশ। দেখ!
- না দোস্ত এখানে নেই। ওদের অনেকদিন আগেই কবর দিয়ে দেয়া হয়েছে, ওদের লাশ এখানে আসবে কিভাবে?
- এখানেই আছে। ওদের লাশ আমি ছাড়া আর কেউ দেখতে পারে না। ওরা আমাকে রাতে ঘুমাতে দেয় না। আমার খুব ভয় করে আমাকে এখান থেকে নিয়ে চল প্লিজ।
- রুমি, এটা তোর দেখার ভূল। কিচ্ছুই নেই এখানে। তুই দেখ!
- আমি দেখেছি, এখনো পরে আছে তামান্নার রক্তমাখা লাশটা। ওরা আমাকে....
কিছু একটা বলতে যাবে এক মধ্যেই একজন ডাক্তারের আগমন রুমির রুমে,সাথে রুমির বাবাও আছেন।
রুমির বাবা - পিয়াল ডাক্তারকে একটু দেখতে দাও।
পিয়াল - জ্বি আংকেল!
পিয়াল রুমির পাশ থেকে উঠে রুমির বাবার পাশে গিয়ে দাঁড়ায়। ডাক্তার রুমিকে খুব ভালো করে দেখে। এরপর ব্যাগ থেকে একটা ইনজেকশন বের করে রুমির হাতে পুষ করে। পিয়াল জানে এটা হয়তো ঘুমানোর জন্য। বিছানায় রুমিকে শুয়িয়ে দেয়া হলো,প্রথমে শুতে চাইছিলো না। একপ্রকার জোড় করেই শুয়িয়ে দেয়া হয়। ডাক্তার ব্যাগ থেকে বের করা একটা নোট-প্যাডের খালি পৃষ্ঠায় কিছু লেখা শুরু করেন। হয়তো প্রেসক্রিপশন লিখছেন।
ডাক্তার - রুমিকে আপাতত একটু একা থাকতে দিন। মানসিক চাপ দিবেন না, আর ঠিকমত ঔষধ খাওয়াবেন। এরপর যদি কোনো সমস্যা দেখা দেয় তাহলে আমাকে ডেকে নিবেন।
রুমির বাবা - আচ্ছা ঠিক আছে। ( ডাক্তারের দেয়া প্রেসক্রিপশনটা হাত বাড়িয়ে নিলেন)
রুমির বাবা ডাক্তারকে বিদায় দিলেন। পিয়াল রুমির রুমের আলো নিভিয়ে দিয়ে দরজাটা আটকে দিলো।
পিয়াল- আচ্ছা আংকেল আমি আজকে আসি তাহলে।
রুমির বাবা - হ্যা বাবা, আবার এসো।
রুমির বাসা থেকে বের হয়ে নিজের বাসার দিকে পা বাড়ায় পিয়াল.....
.

গল্প :-"""""""--শেষ কান্না--""""" ♥
.
লেখক:- #RJ_Nayem_Ahmed
.
গল্পটা পড়ে 100% আপনাদের চোখে পানি চলে আসতে বাধ্য....Challenge
.
.
পর্ব:- ০৬ ~~~~
.
.
২৮শে জুন ২০১৫,
সকাল নয়টা, পিয়াল, রুমি সিএনজিতে চেপে তামান্নার বাসায় যাচ্ছে। নীল পাঞ্জাবীতে রুমিকে আজ অন্যরকম লাগছে। মিষ্টি একটা সুগন্ধিও ব্যবহার করেছে মনে হচ্ছে।
পিয়াল- তোরে তো কখনই পাঞ্জাবী পরতে দেখি নি। আজকে হঠাৎ পাঞ্জাবী?
রুমি - এই পাঞ্জাবীটা তামান্না দিয়েছিলো। পাঞ্জাবী পরা পছন্দ করি না বলে ফেলে রেখেছিলাম। কিন্তু আজকে পরলাম শুধুমাত্র তামান্নার জন্য। (লাজুক হাসি দিয়ে)
- মিষ্টি একটা সুগন্ধ পাচ্ছি! এটাও নিশ্চই তারই দেয়া!
- হুম্ম। জানি না তামান্না আমাকে এই অবস্থায় দেখলে কি বলবে।
- তাহলে রুমি ভাইয়া আজকে তামান্নার মনের মতো করেই সেজেছে। চিন্তা করিস না তামান্না সব মেনে নিয়ে তোকে আবারো কাছে টেনে নিবে।
- সেইটাই যেনো হয়। ওই দেখ একটা ফুলের দোকান! কিছু ফুল কিনে নিয়ে যাই। (ফুটপাতের একটা ফুলের দোকানের দিকে ইঙ্গিত করে)
- হ্যা! খারাপ হয় না। মামা সিএনজিটা থামান তো! (সিএনজি চালকের উদ্দেশ্যে)
সিএনজি থেকে পিয়াল ও রুমি নামে, দোকানে গিয়ে বেশ কয়েকটা লাল গোলাপ কেনে। আবারো সিএনজিতে উঠে পরে।
কিছুক্ষনের মধ্যেই সিএনজি এসে তামান্নার বাসার সামনে থাকে। পাঁচ তালার ফ্লাটটি সাদা রং করা,ছাদে লাগানো কিছু গাছপালার শাখা মাথা নিচু করে রেলিংএর বাহিরে ঝুলে পরেছে। দুই তালায়ই থাকে তামান্না আর ওর বাবা-মা। রুমি বেশ কয়েকবার তামান্নার বাসায় এসেছে। রুমি পাঞ্জাবিটা টেনে-টুনে ঠিক করে নিলো, মোবাইলটা বের করে চুলটাও দেখে নিয়ে পা বাড়ালো তামান্নার বাসার দিকে।
তামান্নার বাসার সামনে এসে দরজায় টোকা দিলো। তামান্নার মা এসে দরজা খুললো।
তামান্নার মা - !!!
পিয়াল -আসসালামু আলাইকুম আন্টি!!
তামান্নার মা - ওয়ালাইকুম আসসালাম! কে তোমরা বাবা?
পিয়াল- আন্টি আমরা তামান্নার বন্ধু, কলেজের পরীক্ষার ব্যাপারে ওর সাথে একটু কথা ছিলো।
- ও আচ্ছা, আসো ভিতরে আসো।
- জ্বি আন্টি, ধন্যবাদ।
- তোমাদের সাথে আমার কিছু কথা ছিলো বাবা।
- জ্বি বলুন আন্টি!
- তামান্নার কি হয়েছে বলতে পারো? একটু অন্যরকম হয়ে গেছে।
- আন্টি চিন্তা কইরেন না এখন সব ঠিক হয়ে যাবে। আমরা এসে গেছি না?
- ও ওর রুমে আছে। গত কালকে বিকাল থেকে রুম থেকে বের হচ্ছে না। রাতে একবার বের হয়েছিলো কিছু খায় নি। অনেক বার বললাম খেয়ে শুয়ে পরতে, কিন্তু বললো খিদে নেই। হঠাৎ আমাকে জড়িয়ে ধরে বললো "মা আমি তোমাকে অনেক ভালোবাসি, কোনো ভূল করলে মাফ করে দিয়ো।" এরপর আবার রুমে চলে গেলো। আমি অনেকবার জিজ্ঞাসা করলাম কি হয়েছে কিছুই বললো না আমাকে।অনেক ডাকাডাকি করলাম সকাল থেকে কিন্তু কোনো সাড়া শব্দই পাওয়া যাচ্ছে না।
- ঘুমাচ্ছে মনে হয়! আংকেল কোথায় আন্টি?
- সেও ঢাকার বাহিরে গেছে বেশ কয়েকদিন হলো। তাকে ফোন দিয়ে জানিয়েছি। বললো আসতেছি।
- আচ্ছা তামান্নার রুম কোনটা?
- ওই যে ওইটা, একটু দেখো তো! (একটা রুমের দিকে ইংগিত করে)
- জ্বি আন্টি।
পিয়াল রুমের দরজায় সশব্দে ধাক্কা দিলো আর বললো -
পিয়াল - তামান্না, আমি পিয়াল। দরজাটা খোলো তো একটু।
কিন্তু অপর পাশ থেকে কোনো আওয়াজই পাওয়া যাচ্ছে না। পিয়াল হাল না ছেড়ে বেশ কয়েকবার চেঁচিয়ে তামান্নাকে ডাকলো। লাভ হলো না, ফল একই দাঁড়ালো। এইবার রুমি এসেও দরজায় ধাক্কাধাক্কি লাগালো আর ডাকাডাকি শুরু করলো। এতো ডাকাডাকির পরেও দরজার ওপাশ থেকে একটা পিন-পতনেরও আওয়াজ আসছে না। এবার কিছুটা ভয় ঢুকলো পিয়ালের ভিতর। পিয়াল রুমির মুখের দিকে তাকালো, রুমির মুখটাও যেনো ফ্যাকাসে হয়ে যাচ্ছে। পিয়াল দেরী না করে খুব জোরে ধাক্কা দিতে থাকলো দরজায়। পিয়ালের দেখাদেখি রুমিও দাঁড়িয়ে থাকলো না। ধাক্কাধাক্কির এক পর্যায়ে দরজার ছিটকানি ভেঙ্গে দরজাটা খুলে যায়। দরজাটা খুলে যেতেই একটু ভ্যাপসা গরম বাতাস পিয়ালের শরীরে ছুঁয়ে যায়,তার সাথে রক্তের ঘ্রান। পিয়াল ভিতরে ঢুকেই থমকে দাঁড়িয়ে যায়। রুমি দরজার বাহিরে নিস্তব্ধ ভাবে দাঁড়িয়ে আছে। তামান্নার আম্মু ছুটে এসে বিছানার উপরে তামান্নার দেহের উপরে ঝুকে পরে, "তামান্না মাগো কি হয়েছে তোর,কথা বল" বেশ কয়েকবার চিৎকার দিয়ে বলে।কিন্তু তামান্নার নিথর দেহ ঠায় ওখানেই পরে থাকে, একচুল পরিমাণ নড়াচড়া নেই। গোলাপি রংএর চাদরটা লাল রক্তের সাথে মিশে গিয়েছে। কোনটা গোলাপি, কোনটা লাল তা বুঝে ওঠা কঠিন। বিছানার চাদরটাও এলোমেলো, হয়তো অন্তিমসময়ে কষ্টটা একটু বেশিই হয়েছিলো। একটা রক্তমাখা ধারালো চাকু নিচে পরে আছে। তামান্নার শরীরের কিছু অংশ রক্তে ভিজে আবার শুকিয়েও গিয়েছে। তামান্নার মা চিৎকার করে কাঁদছেন, কিন্তু পিয়াল যেনো এক ঘোরের মধ্যে পরে গিয়েছে। সব কিছুই দেখছে, সব কিছুই শুনছে কিন্তু কোনো কিছুই সত্যি মনে হচ্ছে না। বিছানার এক কর্নারে হাল্কা রক্ত মাখানো একটা ডায়েরী পরে আছে। সাদা রঙের ডায়রীটা লাল রক্ত চুষে নিয়ে লাল হয়ে গিয়েছে। কিন্তু কিছু অংশভাগ এখনো সাদাই রয়েছে। যা থেকে প্রমাণিত হয় ডায়রিটা সাদাই ছিলো। হঠাৎ একটা শব্দে পিয়াল নিজেকে তামান্নার রুমে আবিস্কার করে, শব্দটা পিছন থেকে আসে। আগত শব্দের উৎস খুজতে ঘাড় ঘুরিয়ে পিছনে ফিরে তাকায় পিয়াল।রুমি, রুমি নিচে বসে পরেছে।যদিও বসে পরাটা স্বাভাবিক ভাবে ছিলো না। তামান্নার এমন অবস্থা দেখে রুমিও হয়তো নিজের ভারসাম্য হারিয়ে ফেলেছে। তামান্নার দরজার পাশে একটা চেয়ার রাখা ছিলো। হয়তো নিজের ভারসাম্য ধরে রাখার জন্য চেয়ারটাকে আকরে ধরতে চেষ্টা করেছিলো। কিন্তু চেয়ারটা ফসকে গিয়ে পিয়ালকে নিচে ফেলে দেয়। রুমির চোখ দুটো বড় হয়ে গেছে। মানু্ষ যখন অতিরিক্ত কষ্টে কাঁদতে না পারে এমনটাই হয়তো হয়। পিয়ালের ইচ্ছে করছে রুমিকে টেনে তুলতে, কিন্তু এই মুহূর্তে পিয়ালের কোনো অঙ্গই যেন কাজ করছে না।
বিকাল পাঁচটা,
তামান্নার বাবা বাসায় এসেছেন, এসেই একমাত্র আদরের মেয়ের মরা মুখটা দেখতে হলো তার। বাসায় কান্নাকাটির রোল পরে গিয়েছে। অনেক আত্নিয়-স্বজন এসেছে। তামান্নাকে গোসল করিয়ে লাশবাহী খাটে তোলার সময় হয়ে এসেছে। রুমি একটা চেয়ারে বসে তামান্নার মৃত দেহের দিকে তাকিয়ে আছে। বুকে জড়িয়ে রেখেছে তামান্নার সেই রক্তমাখা ডায়রীটা।পিয়াল রুমির পাশেই দাঁড়িয়ে আছে। রুমের চারদিক আগরবাতির ঘ্রানে ভরে গিয়েছে।তামান্নাকে গোসল করিয়ে খাটে তোলা হলো। খাটটা কয়েকজন মুরব্বী কাঁধে তুলে নিলো।
রাত ৭টা, তামান্নার জানাজা শেষে দাফনকার্য শেষ হলো।পিয়াল আর রুমি বাসায় ফিরছে। রুমিকে, পিয়াল বেশ কয়েকবার কয়েকটা প্রশ্ন করেছে। কিন্তু রুমি কোনো কথাই বলছে না। বুকের মধ্যে ডায়রীটা চেপে ধরেই আছে সেই কয়েক-ঘন্টা ধরে। রুমিকে টেনে যেখানেই নিয়ে যাওয়া হয় সেখানেই যায়, দাড় করিয়ে রাখলে ঠায় দাঁড়িয়ে থাকে। একটা সিএনজি করে রুমির বাসায় চলে আসে পিয়াল,রুমি। পিয়াল রুমিকে, রুমির রুমে এনে বসায়।
রুমির মা - কি হয়েছে রুমির? রুমি কি হয়েছে তোর?
রুমি- (নিশ্চুপ ভাবে নিচের দিকে তাকিয়ে আছে)
পিয়াল- আন্টি কিছু হয় নি। মন খারাপ, আপনি যান রুমি একটু বিশ্রাম নিক।
রুমির হাত থেকে ডায়রীটা নিয়ে পাশের একটা টেবিলে রাখে। এরপর রুমিকে শুয়িয়ে দেয় পিয়াল। আজকে রুমির কাছে থাকাটা খুবই দরকার পিয়ালের। কিন্তু ওর বাসায় ওর মা একা। পিয়ালের বাবা সৌদিআরব থাকেন। তাই বাসায় পিয়াল আর ওর মা-ই থাকেন। পিয়াল রুমিকে শুয়িয়ে দিয়ে রুমের আলো বন্ধ করে দেয়। রুমির বাসা থেকে বের হয়ে নিজের বাসার উদ্দেশ্যে একটা রিক্সা নেয়। পিয়ালের কিচ্ছুই ভালো লাগছে না। পিয়াল শুধু রুমির চিন্তা করছে, একসাথে দুইটা ধাক্কা রুমি কি সহ্য করতে পারবে?
দেখতে দেখতে পিয়াল ওর বাসার সামনে এসে যায়। ভাড়া মিটিয়ে বাসায় এসে শুয়ে পরে। পিয়ালে মা রাতের খাবার খাওয়ার কথা বললেও না খেয়ে শুয়ে পরে। কেমন যেনো! পেট ভরা লাগছে পিয়ালের। একটা মিষ্টি সুগন্ধির ঘ্রান নাকে আসছে, যে সুগন্ধিটা রুমিকে তামান্না দিয়েছিলো....... ♥
.
.
♥...........""চলবেই""..........♥ .

গল্প :-""""""--শেষ কান্না--""""" ♥
.
লেখক:- #RJ_Nayem_Ahmed
.
গল্পটা পড়ে 100% আপনাদের চোখে পানি চলে আসতে বাধ্য....Challenge
.
.
পর্ব:- ০৫~~~~
.
.
২৭শে জুন ২০১৫,
পিয়ালের ভার্সিটি আজকে খুলেছে। তাই খুব সকালেই উঠতে হলো। মাথাটা খুবই ভারী লাগছে। গত বেশ কয়েকদিন ভালো ঘুম হয় নি। রুমির বোন টিয়ার এভাবে চলে যাওয়াটা পিয়ালের উপরেও কিছুটা প্রভাব ফেলেছে। এই কয়েকদিন রুমির সাথেও তেমন কথাও হয় নি। দুইদিন আগে ফোনে কথা হয়েছিলো। রুমি বলেছিল ভার্সিটি আসলে দেখা হবে। এরপর থেকে ফোন অফ পাচ্ছে পিয়াল।তাই গত দুইদিন কোনো রকমেরই যোগাযোগ হয় নি রুমির সাথে। আজকে ভার্সিটি আসলে হয়তো দেখা হয়েও যেতে পারে। পিয়াল আজকে একটু তাড়াতাড়িই ভার্সিটি যাবে। ফ্রেস হয়ে, নাস্তা করে ঝটপট বেড়িয়ে পরলো।বাসা থেকে ভার্সিটি যেতে প্রায় ৪৫ মিনিট সময় লাগে। কিন্তু সকালবেলা বাসের জন্য লাইনে দাঁড়িয়ে থাকতে হয়।আজকেও তার বিপরীত হলো না। লাইনে দাঁড়িয়ে যায় পিয়াল।
প্রায় একঘন্টার মধ্যেই ভার্সিটি পৌঁছে যায় পিয়াল।যতটা তাড়াতাড়ি আসতে চেয়েছিলো ততটা তাড়াতাড়ি আসাটা ব্যর্থ হলো। আজকে ক্লাসের সবাই এসেছে মোটামুটি। কিন্তু রুমি আসে নি। হয়তো রোজকার মতো আজকেও দেরীতে আসবে।
২ ঘন্টা পরে,
এখনো রুমির আসার কোনো নাম নেই। পিয়াল রুমিকে কল দিলো। এইবার রুমির ফোনটা খোলা পাওয়া গেলো।
পিয়াল- অই বেটা তোর না আজকে ভার্সিটি আসার কথা।
রুমি- এমনিতেই আসি নি।
পিয়াল - এমনিতেই মানে। তুই কই এখন?
- বাসায়।
- বাসায় বসে কি করছ?
- কিছু না।
- কি হইছে বলবি তো।
- ভাল্লাগে না দোস্ত। রাখি এখন পরে কথা বলবো।
-আচ্ছা, আমি বিকালে তোর বাসায় আসতেছি, কেমন?
- আচ্ছা আয়।
পিয়াল ফোন কেটে দিয়ে বই-খাতা ব্যাগে রাখলো। ব্যাগটা কাধে নিয়ে ক্লাস থেকে বের হয়ে গেলো। পিয়ালের ক্লাস করতে ভালো লাগছে না। বাসায় গিয়ে গোসল করে খেয়ে রুমির বাসায় যাবে। পিয়াল বাসে উঠলো। যদিও বাসটা যাত্রিতে পরিপূর্ণ ছিলো তারপরও ঠাসাঠাসি করে উঠলো। বাসায় খুব দ্রুত যেতে হবে।
বাস থামিয়ে নামলো পিয়াল। দ্রুত হেটে বাসায় চলে আসলো পিয়াল।পিয়ালের মা পিয়ালকে জিজ্ঞাসা করলো-
পিয়ালের মা - কিরে আজকে এতো তাড়াতাড়ি বাসায় ফিরলি?
পিয়াল - রুমিদের বাসায় যাওয়া লাগবে একটু।
- রুমি কেমন আছে?
- ভালো নেই এতোটুকু জানি। এখন বাকিটুকু গিয়ে দেখতে হবে।
-আচ্ছা। কখন যাবি?
- গোসলটা করবো এখন, এরপর খাওয়াদাওয়া করেই বের হয়ে পরবো।
- এতো তাড়াতাড়ি? রান্না শেষ হয় নি তো।
- যা হয়েছে তাই খেয়ে যাবো।
- আরে শোন। খেয়ে এরপর বের হ।বেশি সময় লাগবে না রান্না শেষ হতে।
- আচ্ছা ঠিক আছে। আমি যাই গোসলটা সেরে নেই।
- আচ্ছা যা।
পিয়াল রুমে ঢুকে পরে। প্রতিদিনের মতই ব্যাগটা বিছানার উপরে ছুড়ে মারে। ভাগ্যিস পিয়াল বাহিরে যাওয়ার পর ওর মা সব কিছু গুছিয়ে রাখে। শার্ট-প্যান্ট খুলেই বাথরুমে ঢুকে পরে পিয়াল। গোসল সেরে মাথা মুছতে মুছতে বিছানায় এসে বসে। ফোনটা হাতে নিয়ে জেরিনকে কল দেয় পিয়াল।
জেরিন - হ্যালো বাবু! কেমন আছো?
পিয়াল- হ্যা ভালো। তুমি?
- এইতো আছি। কি করছো?
- ভার্সিটি থেকে এসে গোসল করলাম, এখন তোমার সাথে কথা বলছি।তুমি কি করছো?
- আমি? আমি রান্না করছি।
- রান্না করছো? কি রান্না?
- এইতো মুরগি রান্না করছি। জানো তো! আমার হাতটা না পুরে গেছে। খুব ব্যথা করতেছে। উফ!
- হাতে ঔষধ লাগাও।
-লাগাইছি তো! মুরগি রান্না করতে যে এতো কষ্ট তা আগে জানতামই না।
- আচ্ছা মুরগি কিভাবে রান্না করে?
- মুরগি?
- হুম।
- মুরগি রান্না করা তো অনেক সহজ, তুমি পারো না?
- সহজ এর জন্যই জিজ্ঞাসা করছি, কিভাবে রান্না করে?
- তুমি কি ভাবো আমি রান্না করতে পারি না?
- পারো বলেই তো জিজ্ঞাসা করলাম।
- আমি হাতে ব্যথা পেয়েছি তা তো জিজ্ঞাসা করলা না। মুরগি রান্না করে কিভাবে সেইটাই জিজ্ঞাসা করলা শুধু।
- একটা কথা বলবো?
- হ্যা বলো। (অভিমানী সুরে)
- রান্না এমন একটা জিনিস যা বাঙ্গালী নারীদের অহংকার, যা বাঙ্গালী নারীদের একটা গুন। আর সেই গুনটা তোমার ভিতরে নেই।
- কি!! তুমি কি বললা? তুমি কি বুঝাতে চাও?
- আমি এতোটুকুই শুধু বুঝাতে চাই, মেকাপ আর টাইট- ছোট ড্রেস পরাটাকেই গুন বা অহংকার বলে না।একজন পরিপূর্ণ নারী হতে যা লাগে তা তোমার নেই। তুমি একা না এই দেশে এমন অনেক আছে। এরা একপ্রকার এলিয়েন (ভিনগ্রহের প্রানি)। এদের গুন বলতে কিছুই নেই কিন্তু এরা প্রমান করতে চায় এদের সব গুন আছে। যে রাঁধে সে চুলও বাধে। কিন্তু তোমরা শুধু চুলটাকেই বিভিন্ন স্টাইলে বাধতে পেরেছো, আর কিছুই পারো নি।
- তুমি!!! তুমি!!!
জেরিন কিছু বলার আগেই ফোনটা কেটে দিলো পিয়াল। রুমের সামনে থেকে পিয়ালের মা, পিয়ালকে ডাক দিলো -
পিয়ালের মা - পিয়াল, খেতে আয়।
পিয়াল - হ্যা আম্মু, আসতেছি।
পিয়াল ফোন রেখে খেতে চলে গেলো। খেয়ে উঠে শার্ট-প্যান্ট পরলো, উদ্দেশ্য রুমির বাসা। তৈরী হয়ে ঘড়ির সময়টা দেখলো। দুপুর তিনটা বাজে। এখনই বের হয়ে পরাটা উত্তম হবে। পিয়াল আর দেরী না করে বাসা থেকে বের হয়ে পরলো। রাস্তার পাশে বাসের অপেক্ষায় পিয়াল। দুপুরবেলা বাস পাওয়াটা আরেকটা ঝামেলা।যদিও কিছুক্ষনের মধ্যেই একটা বাস চলে আসলো। বাসে উঠে সিটে বসে পরলো পিয়াল। পকেট থেকে হেডফোন বের করে ফোনে সেট করে নিলো।
বিশ মিনিটের মধ্যেই বাস রুমির বাসার সামনে এসে থামলো। পিয়াল বাস থেকে নেমে রুমির বাসার দিকে পা বাড়ালো। বাসার সামনে এসে কলিংবেলে চাপ প্রয়োগ করলো। কিছুক্ষন পরেই দরজার ওপাশ থেকে -
রুমির মা - কে?
পিয়াল - আন্টি আমি! পিয়াল!
- ওহ! তুমি! ভিতরে আসো বাবা। (দরজা খুলে)
- জ্বি আন্টি। পিয়াল কোথায়?
- ও তো ছাদে গেলো কিছুক্ষন আগে।
- ছাদে কেনো?
- জানি না। টিয়ার ওই কাহিনীর পর থেকে রুমি কেমন যেনো হয়ে গেছে। সারাক্ষণ রুমে থাকে, আমাদের সাথেও কম কথা বলে।আর বিকালে ছাদে গিয়ে বসে থাকে। মাঝে মাঝে রাতেও যায়। অনেক রাত পর্যন্ত ছাদে বসে থাকে।
-আচ্ছা আন্টি আমি ছাদে যাই, দেখি কি করে।
-আচ্ছা বাবা, যাও।
পিয়াল রুমির বাসা থেকে বের হয়ে সিঁড়ি বেয়ে ছাদের দিকে পা বাড়ায়। দৌড়ে ছাদে চলে আসে পিয়াল। ছাদে এসে হাপাতে থাকে, ছাদের এক কর্নারে রুমিকে বসে থাকতে দেখা গেলো। পিয়াল আস্তে আস্তে হেটে রুমির কাছে গেলো।
পিয়াল - অই!
রুমি - ও তুই এসেছিস? (চমকে উঠে)
- হ্যা! কি হইছে বল তো তোর!
- একটু বিশ্রাম নে, হাপাচ্ছিস তো!
- আরেহ না, সমস্যা নাই আমি ঠিক আছি। এখন বল কি হইছে তোর?
- কিছুই হয় নি।
কিছুক্ষন দুজনেই নিশ্চুপ।
পিয়াল - আন্টি বললো তুই নাকি কি রকম হয়ে গেছিস।
রুমি - আরে কই না তো আগের মতই আছি।
-তুই কাকে বোকা বানাচ্ছিস?
- বোকা বানাবো কেনো?
- কষ্টটা নিজের ভিতরে রাখিস না, আমাকে বল।
- কি বলবো কিছুই ভালো লাগে না। টিয়ার জন্য মনটা অনেক খারাপ।( কেঁদে)
- ও! আচ্ছা একটা প্রশ্ন করবো তোরে?
- কি প্রশ্ন?
- তুই জানস টিয়া এই কাজটা কেনো করেছিলো?
- না জানি না, আর জানতেও চাই না।
- না জানলেও তোর আজকে জানতে হবে। টিয়ার এই করুন অবস্থার জন্য আজকে তুই দায়ি। একমাত্র তুই!
- আমি?
- হ্যা তুই! রুমি আমরা অন্য মেয়েদেরকে ঠকাতে ঠকাতে ভূলেই গিয়েছিলাম আমাদের ঘরেও মা-বোন আছে। অন্য মেয়েদের যেমন মন আছে, স্বপ্ন আছে, আশা আছে তেমন তোর বোনেরও ছিলো। আমরা একসময় ভূলেই গিয়েছিলাম উপরে আল্লাহ/ভগবান/যিশু বলতে কিছু একটা আছে। আমরা গুনাহ/পাপ করেছি তার ফল আজকে আমাদের বোনকে ভোগ করতে হলো।এখন দেখ তাহলে দোষটা কার?
- হ্যা দোষটা আমারই, আমি ভাই নামে একটা খুনি। আমি অন্যের স্বপ্ন,আশা খুন করেছি। তার ফলে আজ আমার এই অবস্থা। এই পাপ/গুনাহ থেকে আমি জিবনেও রেহাই পাবো না। আমি জানি! (কান্নায় ভেঙ্গে পরে)
- ভূল, তোর হাতে এখনো সময় আছে এই ভূল শুধরানোর। হয়তো অন্তত তাতে আমাদের মরা বোন শান্তি পাবে।
- কি করলে, বল? আমি সব করতে রাজি আছি।
- আমি যা বলবো তা করতে পারবি তো?
- হ্যা পারবো বল।
- তুই তামান্নার কাছে ফিরে যা।
- কি?
- হ্যা! তুই তামান্নার কাছে ফিরে যাবি। তামান্নাও একটা মেয়ে। টিয়ার মতো তামান্নারও আছে একটা মন, আছে কিছু স্বপ্ন,চাওয়া-পাওয়া। রুমি, এখনো সময় আছে আমি যা বলছি তা কর।
- এটা সম্ভব না, তামান্না আমাকে জীবনেও ক্ষমা করবে না।
- রুমি, এটা তোর ভূল ধারনা, সব ঠিক হয়ে যাবে। তামান্না তোকে ভালোবাসে, ও তোকে ক্ষমা করে দিবে।
রুমি নিশ্চুপ।
-এখনো কি ভাবছিস?
- হ্যা তুই ঠিকই বলেছিস।
রুমি পকেট থেকে ফোন বের করে তামান্নার নাম্বার ডায়েল করে। কিন্তু ফোনের সুইচড অফ।
রুমি- তামান্নার ফোনের সুইচড অফ। কি করবো?
পিয়াল - কালকে ওর বাসায় যাবো। সাথে তুইও যাবি।
- আচ্ছা ঠিক আছে। কিন্তু কখন যাবি? ওর বাসায় ওর বাবা-মা আছেন তো।
- সেইটা আমি দেখবো। কালকে সকালেই যাবো। তুই রেডি হয়ে থাকিস আমি এখান থেকে তোকে নিয়ে যাবো।
- আচ্ছা ঠিক আছে (চোখ মুছতে মুছতে)
- আচ্ছা আমি এখন আসি বাসায় যাবো। একটু কাজ আছে।
- আচ্ছা ঠিক আছে।
- বায়।
- বায়।
পিয়াল, রুমির বাসা থেকে বের হলো। একটা দোকান থেকে একটা সিগারেট কিনে বাসস্টপের দিকে হাটা শুরু করলো। সিগারেটটা অর্ধেক টেনে ফেলে দিয়ে বাসে উঠে পরলো।
পরের দিন সকালে,
রুমির ফোনে পিয়ালের ঘুম ভাঙ্গে।
রুমি - কিরে তুই ঘুম থেকে উঠিস নাই?
পিয়াল - না, তোর কলেই ঘুম ভাঙ্গলো।
- তাড়াতাড়ি ফ্রেস হয়ে তৈরী হয়ে নে তামান্নার বাসায় যেতে হবে।
- বাহ! রুমি ভাইয়ের দেখি তামান্নার প্রতি ফিলিংস এসে গেছে।
- হাহাহাহা!
- আচ্ছা রাখলাম ফ্রেস হতে যাই।
- আচ্ছা যা।
পিয়াল ফোন রেখে ফ্রেস হয়ে তৈরী হয়ে নেয়। সকালের নাস্তা করে বের হয়ে পরে। একটা সিএনজি নিয়ে রুমি বাসার সামনে এসে দাঁড়ায়।
পিয়াল- হ্যালো রুমি!
রুমি - হ্যা বল। কই তুই।
- আমি তোর বাসার নিচে। তাড়াতাড়ি নিচে নাম।
রুমি বাসা থেকে বের হয়। পিয়াল এবং রুমি সিএনজিতেই করে রওনা হলো তামান্নার বাসার উদ্দেশ্যে.......
.
.
♥...........""চলবেই""..........♥ .

গল্প :-""""""--শেষ কান্না--""""" ♥
.
লেখক:- #RJ_Nayem_Ahmed
.
গল্পটা পড়ে 100% আপনাদের চোখে পানি চলে আসতে বাধ্য....Challenge
.
.
পর্ব:- ০৪~~~~
.
.
কয়েকদিন পরের ঘটনা-
২০ই জুন ২০১৫ বিকালে-
পিয়াল রুমে বসে জেরিনের সাথে ফোনে কথা বলছে -
জেরিন -গতকালকে যে রেস্টুরেন্টে নিয়ে গেছিলা অইটার খাবারটা দারুন ছিলো। এক কথায় অস্থির।
পিয়াল- হুম্ম।
- ইস! প্রতিদিনই যদি যেতে পারতাম। আচ্ছা কালকে আবার দেখা করবা?
- গতকালকেই তো দেখা করলাম, আবার কালকে কেনো?
- এমন করে বলো কেনো? আমাকে কি একটুও সময় দিবা না বলো? (ঢং এর সহিত)
- দিবো না কখনো বলছি। কিন্তু কালকে না কয়েকদিন পরে দেখা করি।
- না না কালকেই করবা। একটু মার্কেটিং করবো। আমার একটা ড্রেস পছন্দ হইছে।
- আচ্ছা দেখি।পরে জানাচ্ছি।
-আচ্ছা বাবু। আই লাভ ইউ।
-হুম! আই লাভ ইউ টু!
-আচ্ছা এখন রাখি। পরে কথা বলবো।
-আচ্ছা বাবু বায়।
-হুম বায়।
ফোন কেটে দিয়ে কানে হেডফোন লাগিয়ে বিছায় শুয়ে পরে পিয়াল।কিছুক্ষন পরেই রুমির ফোন থেকে কল আসে পিয়ালের নাম্বারে। পিয়াল ফোনের দিকে তাকিয়ে থাকে। ফোনটা ধরবে কিনা সেই চিন্তা করছে। সেইদিনের কাহিনীর পরে রুমির সাথে যোগাযোগ বন্ধ করে দিয়েছিলো পিয়াল। আজকে হয়তো সরি বলার জন্য কল দিয়েছে। ভাবতে ভাবতেই কলটা রিসিভ করার আগেই কেটে যায়। পিয়াল আবারো ফোনে গান ছেড়ে হেডফোন কানে দেয়। কিছুক্ষন পরে আবারো রনি ফোন দেয়। এইবার পিয়াল সাথে সাথেই রিসিভ করে -
পিয়াল- হ্যালো!
রুমি- হ্যালো পিয়াল!!
-হ্যা বল।
-তুই একটু তাড়াতাড়ি আমাদের বাসায় আয়।
-কেনো?
- প্লিজ আয়, তাড়াতাড়ি। (কান্না কন্ঠে)
-কি হইছে দোস্ত? কি হইছে বল?
- আমার বোন টিয়া সুইসাইড করছে।
" আমি এখনই আসতেছি " বলে ফোনটা কেটে দিয়ে দ্রুত বের হয়ে পরে পিয়াল। রেডি হওয়ার সময় নেই তাই একটা থ্রি-কোয়ায়ার প্যান্ট আর টি-শার্ট পরেই বের হয়ে পরে পিয়াল।বাসা থেকে বের হয়ে একটা সিএনজি নিয়ে খুব দ্রুত রওনা হয় রুমির বাসার উদ্দেশ্যে। টিয়া, রুমির একমাত্র আদুরে ছোট বোন।এবার দশম শ্রেনীর ছাত্রী সে।ছাত্রী হিসেবে অনেক ভালো। রুমির সাথে সারাক্ষণ ঝগড়াঝাঁটিতে মেটে থাকতো।দেখতেও পরীর মতই সুন্দর। পিয়াল ওদের বাসায় গেলে টিয়াকে পেত্নি বলে পচাইতো,টিয়াও অনেক রাগ করতো। বেশি পচালে কান্না করে দিতো। পিয়ালের কোনো ছোট বোন না থাকায় ওরেই ছোট বোন বলতো। ওদের বাসায় যখনই যেতো তখনই কয়েকটা চকলেট কিনে নিয়ে যেতো। চকলেট কেনার সময় রুমি জিজ্ঞাসা করতো "কার জন্য কিনিস এইগুলা?"। তখন পিয়াল ওর মুখের দিকে তাকিয়ে মুচকি একটা হাসি দিয়ে বলতো- " আমার ছোট বোনটার জন্য"। টিয়াকে যদি কখনো কেউ জিজ্ঞাসা করতো ওরা কয় ভাই-বোন তখন টিয়ার উত্তর থাকতো -"ওরা তিন ভাই বোন, দুই ভাই আর এক বোন"।কিন্তু টিয়ার মতো মেয়ে আজকে এমন একটা কাজ করবে তা কিছুতেই মেনে নিতে পারছিলো না পিয়াল।সব কিছুই যেনো স্বপ্নের মতো লাগছে আজকে।এটা যদি সত্যিই স্বপ্ন হতো তাহলেই হয়তো ভালো লাগতো পিয়ালের।কি করবে কিছুই বুঝে উঠতে পারছে না। ফোনটা থ্রি-কোয়াটার প্যান্টের পকেট থেকে বের করে সিএনজিতে বসেই বন্ধু রাসেদকে ফোন দেয় পিয়াল -
পিয়াল- হ্যালো রাসেদ।
রাসেদ - হ্যা বল। (ঘুম জড়ানো কন্ঠে)
- তুই এখনই রুমির বাসায় আয়।
- কেনো?
- ওর বোন সুইসাইড করেছে।
-কি? আচ্ছা আমি আসতেছি।
- রিয়া, আলিসা, আরাফ ওদেরও কল দিয়ে আসতে বল।
-আচ্ছা আচ্ছা ঠিক আছে। তুই বের হইছোস?
- হ্যা আমি বের হইছি তোরা একটু তাড়াতাড়ি আয়।
-আচ্ছা আমরা আসতেছি, তুই যা। রাখলাম।
ফোন কেটে দেয় রাসেদ।
পিয়াল সিএনজি চালকের উদ্দেশ্যে-
পিয়াল- মামা একটু তাড়াতাড়ি জান প্লিজ।
সিএনজি চালক - হ যাইতাছি।
২০ মিনিটের মধ্যেই সিএনজি রুমির বাসার সামনে এসে থামে। পিয়াল সিএনজি থেকে নেমে ভাড়া মিটিয়ে। রুমির বাসার দিকে পা বাড়ায়। রুমিদের ফ্লাটটা সাত তালা। ওরা ৩য় ফ্লোরে থাকে। পিয়াল দৌড়ে ওদের বাসায় চলে যায়। বাসার সামনে অনেক মানুষের ভিড়। পিয়াল ভিড় ঠেলে ভিতরে ঢোকে। ঢোকার সাথে সাথেই রুমির বোন টিয়ার মৃত দেহ নিচে শোয়ানো দেখে পিয়াল।সাদা কাপড়ে ঢেকে রেখেছে। টিয়ার লাশের পাশে বসে কান্না করছে তার মা,কিছু আত্নিয়-স্বজন আর ওর কয়েকটা বান্ধবী। রুমির আব্বু সোফায় বসে আছেন। তিনি এক দৃষ্টিতে মরা মেয়ের লাশের দিকে তাকিয়ে আছেন। তাকে তার পাশ থেকে ধরে আছেন কয়েকজন মুরুব্বী। রুমি এক কর্নারে দাঁড়িয়ে কান্না করছে। পিয়াল রুমির কাছে গেলো। পিয়ালকে দেখা মাত্রই রুমি, পিয়ালকে জড়িয়ে ধরে কান্না শুরু করলো। পিয়ালও রুমিকে জড়িয়ে ধরলো।
পিয়াল- কাঁদিস না দোস্ত। (কাঁদতে কাঁদতে)
রুমি - আমার বোনটা কেনো এমন করলো, বল? আমরা কি ওরে কম ভালোবাসতাম।
- যা হবার তা হয়ে গেছে, এখন কেঁদে আর কি হবে বল?
- আমার কি হবে? আমার একটা মাত্র বোন। কতো দুষ্টামি করতো আমার সাথে। কতো স্বপ্ন দেখছিলাম বোনটাকে নিয়ে।
- কিভাবে হলো? কেনো করলো টিয়া এইসব?
রুমি, পিয়ালের হাত ধরে টেনে নিয়ে গেলো টিয়ার রুমে। রুমটা আগের মতই গুছানো ও পরিপাটি। শুধু ফ্যানের সাথে একটা বাধা ওড়না ঝুলছে। হয়তো এই ওড়নার স্পর্শেই এই নিষ্ঠুর পৃথিবী থেকে বিদায় নিয়েছে রুমির বোন টিয়া। রুমি, পিয়ালকে টিয়ার রুমে এনে হাতে একটা ভাঁজ করা কাগজ ধরিয়ে দেয়। পিয়াল রুমির মুখের দিকে তাকায়, কাঁদতে কাঁদতে চোখ জোড়া লাল হয়ে গিয়েছে রুমির। পিয়াল কাগজের ভাঁজটা খোলে। কাগজটার ভিতরে কাঁপা কাঁপা হাতে কিছু লেখা আছে। হাতের লেখাটা টিয়ার তা বুঝতে কষ্ট হলো না পিয়ালের। কাগজটা পড়তে পড়তে পিয়ালের চোখ দুটো বড় হয়ে গেলো। যা লেখা ছিলো কাগজটায়-
"এই পৃথিবীর মধ্যে আমি খুবই ছোট একটা মানুষ। কিন্তু আমারো একটা মন আছে, আছে কিছু স্বপ্ন। আমাকে ঘিরে হয়তো তোমাদের অনেক স্বপ্ন ছিলো এবং আছে। হয়তো ভবিষ্যতে আর থাকবে না। কিন্তু আমারো কাউকে নিয়ে স্বপ্ন ছিলো। তোমরা যেমন আমাকে ভালোবাসতে আমিও ঠিক তেমনি একজনকে খুবই ভালোবাসতাম। কিন্তু সেই স্বপ্ন গুলো যখন ভেঙ্গে যায় তখন সব কিছু এলোমেলো হয়ে যায়। হয়তো আমার স্বপ্ন আমাকে চায় না। কিন্তু আমি আমার স্বপ্ন ছাড়া কিভাবে বাচঁবো। প্রতিদিন কষ্ট পাওয়ার থেকে একদিনেই সব কষ্ট শেষ দেয়াটাই ভালো। আর আমি সেই পথটাকেই বেছে নিলাম। ভালো থাকুক,বেঁচে থাকুক সবার স্বপ্ন গুলো।"
কাগজের লেখাগুলো পড়ে চোখ থেকে পানি পরে যায় পিয়ালের।
রুমি- এই ওড়নার সাথে ঝুলে আমার বোনটা আমাদের ছেড়ে চলে গিয়েছে। (ঝুলন্ত ওড়নার দিকে আঙ্গুল তুলে)।ঘরটা অনেক শান্ত হয়ে গেছে। কেউ আর আমাকে ভাইয়া বলে ডাকবে না। কেউ আর মোবাইলে গেইম খেলার জন্য বিরক্ত করবে না। জানিস তো বাসায় রাগ করে যখন ভাত খেতাম না, তখন আমার বোনটা আমাকে জোর করে ভাত খাইয়ে দিতো। এখন আর কেউ খাওয়াবে না। শত বকাবকির পরেও কেউ আর আমার কাছে এসে টাকা চাইবে না। গতকালকে টিয়ার মনটা অনেক খারাপ ছিলো আমি দেখেছি। আমি ভেবেছিলাম হয়তো আম্মু বকা দিয়েছেন। টিয়াকে জিজ্ঞাসা করাতেও আমাকে কিছু বলে নি। ও যদি একবার মুখ ফুটে বলতো ও কাউকে ভালোবাসে তাহলে তার পুরো পরিবার তুলে এনে টিয়ার সামনে রাখতাম। কিন্তু এখন বলে কি লাভ, আমার বোনটা তো আর ফিরে আসবে না।
পিয়াল মাথা নিচু করে হাতের কাগজটার দিকে তাকিয়ে আছে, আর রুমি কি বলছে তা শুনছে। হঠাতই রাশেদের গলার আওয়াজ পাওয়া গেলো। পিয়াল হেটে সামনের রুমে গেলো। দেখলো রাসেদ এবং আরাফ দাঁড়িয়ে আছে। রিয়া আর আলিসা রুমির আম্মুকে ধরে বসে আছে। পিয়াল রাসেদ এবং আরাফাতক্র ইশারায় ডাক দিলো। রাসেরদ এবং আরাফ পিয়ালের পিছু পিছু টিয়ার রুমের দিকে গেলো। সেখানে রুমিকে দাঁড়ানো দেখে রুমির কাঁধে হাত রেখে আরাফ বললো-
আরাফ - ছেলেটা কে?
রুমি - টিয়া এই বিষয়ে আমাদেরকে কিছুই বলে নি।
আরাফ - আমি খোঁজ-খবর নিয়ে দেখতেছি।আজকে ওই ছেলে বেঁচে থাকবে না হয় আমি।
রাসেদ - আরাফ! ওই ছেলেকে মারলে আমাদের বোন কি ফিরে আসবে?
আরাফ মাথা নিচু করে টিয়ার খাটের উপরে বসে পরলো। আর কিছুক্ষন পরেই টিয়াকে জানাজা পড়িয়ে কবর দেয়া হবে। টিয়াকে গোছল করিয়ে লাশবাহী খাটে তোলা হলো। পিয়াল,রুমি, আরাফ এবং একজন মুরুব্বী খাটটা কাধে নিলো। সবাই কবরস্থানের দিকে পা বাড়ালো।
রাত ৯টায় টিয়াকে জানাজা পড়িয়ে কবর দেয়া হলো। রুমির মন খারাপ দেখে পিয়াল বললো -
পিয়াল - আজকে আমি তোর সাথে থাকি রুমি।
রাসেদ- হ্যা সেইটাই ভালো হবে। তুই ওদের বাসায় চলে যা।
রুমি - না থাক। আমার কিছু ভাল্লাগছে না। আমাকে একটু একা থাকতে দে তোরা।
রুমির এমন উত্তরে পিয়াল, রাসেদ আর কিছুই বললো না। রুমিকে বাসায় দিয়ে গেলো পিয়াল,রাসেদ। আরাফ, আলিসা এবং রিয়াকে এগিয়ে দিতে গিয়েছে। রুমির বাসা থেকে বেড়িয়ে রাসেদ এবং পিয়াল একটা চায়ের দোকানে বসলো।
রাসেদ - সিগারেট খাবি?
পিয়াল- না।
- অন্য কিছু খাবি? সারা বিকাল তো কিছু খাওয়া হলো না।
- নাহ ভালো লাগছে না। রুমিদের কিছু খাবার কিনে দিয়ে এলে ভালো হতো না?
- পাশের বাসায় ওদের জন্য রান্না করা হয়েছে।
- তুই খবর নিয়েছিস?
- হ্যা আমি সব কিছুর খবর নিয়েই ওখান থেকে নেমেছি।
- যাক ভালো করেছিস।
-তা কি করবি এখন?
-কিছুই ভালো লাগছে না। বাসায় যাবো।
-হ্যা সেইটাই কর তাইলে। আমিও যাই। গিয়ে গোসল করতে হবে। তুইও করে নিস।
-আচ্ছা চল তাইলে আমি আমার বাইকে তোরে তোর বাসায় নামিয়ে দিচ্ছি।
-চল।
রাসেদর ওর বাইকে করে পিয়ালকে, পিয়ালের বাসার সামনে নামিয়ে দিলো। পিয়াল আস্তে আস্তে হেটে ওর বাসায় গেলো। সোজা রুমে গিয়ে ঢুকলো। বিছানার উপরে সশব্দে বসে পরলো। মোবাইলটা বের করে টিয়ার সাথে কয়েকটি তোলা ছবি দেখতে থাকলো। নিষ্পাপ হাসি দেখে চোখে পানি এসে গেলো পিয়ালের। ছবি দেখে মনেই হচ্ছে না কিছুক্ষন আগে এই মেয়েটাকেই কবর দিয়ে এসেছে। ফোনটা রেখে বাথরুমে গেলো পিয়াল। গোসল করে বের হলো। খুব খিদে পেয়েছে কিন্তু খাওয়ার ইচ্ছেটাই যেনো মরে গিয়েছে। রুমের লাইটটা বন্ধ করে শুয়ে পরে বিছানায়। ঘুম আসছে না পিয়ালের।
সকাল ৭টা, সারারাত জাগিয়ে কাটিয়ে দিয়েছে পিয়াল। খুব মাথা ব্যাথা করছে আর একটু ঘুম-ঘুম পাচ্ছে।চোখ বুঝলো একটু ঘুমানোর জন্য। হঠাতই জেরিনের কল আসলো,ফোনটা কর্কশ স্বরে বেজে উঠলো। পিয়ালের মাথা সর্বোচ্চ পর্যায়ে গরম হয়ে গেলো। ফোনটাকে বিছানা থেকে দেয়ালের গায়ে ছুড়ে মারলো পিয়াল।ফোনটার চেঁচামেচি বন্ধ হয়ে গেলো। এখন একটু শান্তি লাগছে পিয়ালের। আবারো চোখ বন্ধ করলো পিয়াল......
.
.
♥...........""চলবেই""..........♥ .

গল্প :-""""""--শেষ কান্না--""""" ♥
.
লেখক:- #RJ_Nayem_Ahmed
.
গল্পটা পড়ে 100% আপনাদের চোখে পানি চলে আসতে বাধ্য....Challenge
.
.
পর্ব:- ০৩~~~~
.
.
১৬ই জুন ২০১৫,
পিয়াল আজকে ভার্সিটিতে অনেক আগেই উপস্থিত। এতো তাড়াতাড়ি কখনই আসে না, কিন্তু আজকে এসেছে। ভার্সিটির গেইটের সামনে বসে রুমির আসার অপেক্ষা করছে। রুমির উপরে বিশ্বাস নেই আজকে যদি আবার না আসে, তাহলে? পিয়াল তৎক্ষণাৎ পকেট থেকে মোবাইল বের করে রুমির নাম্বারটা ডায়েল করে। রিঙ হচ্ছে কিন্তু রুমি ফোন তুলছে না। পিয়ালের আরো বেশ কয়েকবার চেষ্টা চালায়। কিন্তু ফল একই দাঁড়ায়।
দেখতে দেখতে ক্লাসমেট সবাই এসে গিয়েছে। কিন্তু রুমির দেখা নাই। পিয়াল আবারো কল দেয় রুমির ফোনে, কিন্তু চেষ্টা বৃথা। একপ্রকার রাগ করেই ক্লাসে ঢুকে পরে পিয়াল।
প্রায় একঘন্টা পরেই পিয়ালের ফোনে রুমির ফোন থেকে কল আসে। পিয়াল ক্লাসের মধ্যেই কলটা রিসিভ করে -
পিয়াল- হ্যালো! রুমি।
রুমি- হ্যা বল!
- কই তুই?
-আমি বাসায় মাত্র ঘুম থেকে উঠলাম।
-এতো দেরিতে কেনো?
-আর বলিস না, কালকে বন্ধুদের সাথে একটু গিলতে গেছিলাম।তাই পিনিকে সকালে উঠতে পারি নি।
-তুই ভার্সিটিতে আসবি না?
-ইচ্ছা তো নাই!!
-তোর সাথে আমার কিছু গুরুত্বপূর্ণ কথা আছে। তুই ভার্সিটি আসলে ভালো হতো।
- কি কথা? ফোনেই বল।
-ভার্সিটি আয়। সামনা-সামনি বলবো।
-আচ্ছা ৩০ মিনিটের মধ্যেই আসতেছি।
-আচ্ছা তাড়াতাড়ি আয়। রাখলাম।
-আচ্ছা।
ওপাশ থেকে রুমিই ফোনটা কেটে দেয়।
প্রায় ৪০ মিনিট পরে আবারো পিয়ালের ফোনে রুমির ফোন থেকে কল আসে -
রুমি- হ্যালো পিয়াল, বের হ! আমি ক্যাম্পাসেই আছি।
পিয়াল -আচ্ছা দারা আসতেছি।
পিয়াল বই-খাতা সব ব্যাগে তুলে নেয়।অতঃপর ক্লাসের পিছনের দরজা থেকে বের হয়ে যায়। বের হতে না হতেই রুমিকে ভার্সিটির মাঠের মাঝখানে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা গেলো। হয়তো কারো সাথে ফোনে কথা বলছে। পিয়াল দৌড়ে রুমির কাছে যায়।
রুমি - কি খবর? (হাত মিলিয়ে)
পিয়াল- এইতো! ফোনে কথা বলা শেষ কর।
রুমি- আচ্ছা একটু দাঁড়া। হ্যালো, জান। হ্যা! তোমার সাথে একটু পরে কথা বলি সোনা? আই লাভ ইউ, বায়।
ফোন কেটে দিয়ে পিয়ালের মুখের দিকে তাকায় রুমি।
রুমি- হ্যা বল, কি এমন জরুরী কথা।
পিয়াল - চল সামনের গাছতলায় গিয়ে বসি।
রুমি- হ্যা চল।
রুমি এবং পিয়াল সামনের একটা গোড়া বাধানো গাছের নিচে গিয়ে বসে।
পিয়াল- এবার তোর ফোনটা কিছুক্ষনের জন্য সুইচ অফ রাখ।
রুমি -ক্যান বলতো।
-যা বলছি তা কর।
-আচ্ছা করতেছি।
ফোন সুইচ অফ করে রুমি।
রুমি - এখন বল।
পিয়াল - তোর সাথে কি তামান্নার ব্রেকাপ হইছে?
-হ্যা! কালকে শেষ কথা বলছিলাম, এরপর ব্লাকলিষ্টে নাম্বার রেখে দিছি।মনে নাই তোর? তুই তো আমার সাথেই ছিলি তখন।
-ব্রেকাপ করার কারনটা কি ছিলো?
-ওরে বাবা! পিয়াল দেখি আমার কাছে ব্রেকাপের কারন জানতে চাচ্ছে। ব্যাপার কি বল তো?
-আমি যা জিজ্ঞাসা করছি তার উত্তর দে শুধু।
-আরে ভাই! এক মাল আর কতোদিন? নতুন একটারে পটাইছি। সেই দেখতে। দেখবি?
-না থাক। কিন্তু তামান্না তোরে ভালোবাসে।
-তো? আমি কি করবো?
-ওর সাথে এমন কেনো করলি? ধোকা দিলি কেনো?
-আচ্ছা তোর সাথে তামান্নার কথা হয়েছে নাকি?
-হ্যা! গতকালকে তামান্না আমাকে রমনায় ডেকেছিলো। তখন অনেক কান্নাকাটি করেছে।
-ও আচ্ছা! তাই বলি! আচ্ছা বাদ দে। ছেড়ে দিছি তো দিছি। এখন আর কিছু করার নেই।
-কিন্তু তাই বলে এভাবে ধোকা দিবি?
-পিয়াল,তোর সমস্যাটা কোথায়? হ্যা আমি দিছি। আমার ভালো লেগেছে আমি দিছি।আর এটা তো আমার পার্সোনাল ব্যাপার তাই না? তুই কেনো এর ভিতরে ঢুকছিস? আজকে একটা মেয়ের কাছে আমাদের বন্ধুত্বটাকে ছোট করে দিলি? আমাকে প্রশ্ন করতেছিস?
-কিন্তু তোর এই কাজটা করা উচিৎ হয় নি। আমি আমাদের বন্ধুত্ব ছোট করছি না, আমি তোকে ভূলটা দেখাচ্ছি। আর এইটা তোর ভূল। একটা মেয়েকে শুধু শুধু স্বপ্ন দেখিয়ে তা ভাঙ্গার কোনো অধিকারই তোর নেই।
-তুই আমাকে স্বপ্ন ভাঙ্গার কথা বলছিস? তুই কতোটুকু ভালো বল তো? তুই তো আমার থেকেও বেশি। আগে নিজেকে ঠিক কর পিয়াল, এরপর অন্যকে ঠিক কর। কেমন?
-রুমি, আমি এমন মেয়েদের সাথে রিলেশন করি যারা অন্যকে ঠকায়। কিন্তু তামান্না তো নির্দোষ। ওকে কেনো কষ্ট দিচ্ছিস? তুই একটা চিটার মেয়ের সাথে রিলেশন করে তাকে ধোকা দিতি আমি কিচ্ছুই বলতাম না। কিন্তু ও তো কারো ক্ষতি করে নি। বরং তোকে ভালোবেসে আজকে নিজের ক্ষতিটাকেই ডেকে এনেছে।
-থাম ভাই! প্লিজ! আমি এই নিয়ে আর একটাও কথা শুনতে চাই না। যদি তোর ইচ্ছে হয় তাহলে তুই গিয়ে রিলেশন কর আর মেয়েটাকে ক্ষতির হাত থেকে বাঁচা। আমার এর প্রতি কোনোই ইন্টারেস্ট নেই। প্লিজ ভাই! মাফ চাই।
-রুমি মাফটা তামান্নার কাছে চাইলে খুবই ভালো হতো। একদিন তুই তোর ভূলটা ঠিকই বুঝতে পারবি।
-আমি ভূল বুঝবো কিনা সেইটাও আমার ব্যাপার, দয়া করে আমার পার্সোনাল লাইফ নিয়ে তোমার না ঘাটাই উত্তম হবে। আমার আর কিছু শুনতে ইচ্ছে করছে না। আমি যাচ্ছি।
পিয়াল নিশ্চুপ বসে আছে, রুমি ব্যাগ নিয়ে ভার্সিটির গেইটের দিকে অগ্রসর হলো। পিয়াল অন্যদিকে তাকিয়ে থাকলো। তামান্নার জন্য কিছুই না করতে পেরে পিয়ালের খুবই খারাপ লাগছে। সে জানে না তামান্নার কি হবে। হয়তো এই দাগ নিয়ে তার সারাজীবন কাটাতে হবে। পিয়ালের কিছুই ভালোলাগছে না । উঠে দাঁড়ালো পিয়াল,কাঁধে ব্যাটটা নিয়ে গেইটের দিকে অগ্রসর হলো। মাথাটা ব্যাথা করছে পিয়ালের। তামান্না রুমির ব্যাপারে জিজ্ঞাসা করলে কি বলবে? তামান্না এইসব কথা শুনে কি করবে? এইসব ভেবে পিয়ালের আরো বেশি মাথা ব্যাথা করছে।পিয়ালের ফোন বেজে ওঠে। জেরিন কল দিয়েছে -
পিয়াল- হ্যালো!
জেরিন- হ্যালো বাবু!
-হ্যা বলো।
-কি করো?
-এইতো ভার্সিটি থেকে বাসায় ফিরছি।
-ওওও!
-হ্যা! বাসায় গিয়ে ফ্রী হয়ে কল দিচ্ছি তোমাকে।
-আচ্ছা ঠিক আছে।
ফোন কেটে দিয়ে একটা বাসে উঠে পরে পিয়াল।
বাসায় এসে কাঁধ থেকে ব্যাগটা বিছানার উপরে ছুড়ে মারে পিয়াল। এরপর নিজেকেও এলিয়ে দেয় বিছানার উপড়ে।যদিও একটু ঘুম ঘুম পাচ্ছে। ঘুমালে হয়তো মাথা ব্যাথাটা কমে যাবে। একটু ফেইসবুকে ঢুকে পিয়াল।ভার্সিটির একটা গ্রুপে কয়েকটা বন্ধু পোষ্ট করেছে, কালকে থেকে টানা ৮ দিন ভার্সিটি বন্ধ থাকবে। পিয়াল পোষ্টটা দেখে একটু মুচকি হাসলো, ফোনের স্ক্রিন অফ করে চোখ বুঝলো ঘুমানোর চেষ্টায়।
একটু ঘুমাতে না ঘুমাতেই পিয়ালের আম্মু ডাক দিলো পিয়ালকে। -
পিয়ালের মা- পিয়াল, খেয়ে ঘুমা।
পিয়াল - ঘুম থেকে উঠে খাবো আম্মু।যাও তো এখন। (ঘুম জড়ানো কন্ঠে)
পিয়ালের মা- না ঠান্ডা হয়ে যাবে। এখন খেয়ে নে। এরপর ঘুমা।
পিয়াল - আচ্ছা যাও আমি আসছি।
পিয়াল উঠে ওয়াশরুমে গিয়ে চোখে-মুখে পানি দেয়। এরপর খাওয়ার টেবিলে গিয়ে বসে পরে।
খেয়ে উঠে আবারো বিছানায় গিয়ে শুয়ে পরে। চোখ বুঝে ভাবতে থাকে, বিকালে ঘুম থেকে উঠে আড্ডা মারতে যাবে বন্ধুদের সাথে। একটু পরেই ঘুমের জগতে পা বাড়ালো পিয়াল......♥
.
.
♥...........""চলবেই""..........♥.

গল্প:--""""""--শেষ কান্না--""""" ♥
.
লেখক:- #RJ_Nayem_Ahmed
.
গল্পটা_পড়ে 100% আপনাদের চোখে পানি চলে আসতে বাধ্য....Challenge
.
.
পর্ব:- ০২~~~~ ♥
.

বিকাল ৪টা ৫০ মিনিট,
পিয়াল রমনার ২য় গেইটের সামনে এসে রিক্সা থেকে নামলো। ভাড়া মিটিয়ে গেইটের সামনে চলে গেলো পিয়াল।যদিও এখানে কেউ নেই দু একজন পথচারীকে দেখা যাচ্ছে কিন্তু কোনো মেয়ে নেই। ফোনটা বের করে অপরিচিত নাম্বারটায় কল দিলো পিয়াল-
পিয়াল-হ্যালো!
ফোনের ওপাশ থেকে- দুই মিনিট দাঁড়ান আমি এসেই পরেছি।
-আচ্ছা একটু তাড়াতাড়ি আসুন।
-হ্যা! কিন্তু আপনি কয় নাম্বার গেইটে?
-আমি দুই নাম্বার গেইটে।
-আচ্ছা পাচঁ মিনিট, আমি এসে পরেছি।
মুখে বিরক্তির ছাপ নিয়ে ফোনটা কেটে দেয় পিয়াল। ফুটপাতের একটা চায়ের দোকান থেকে সিগারেট ধরায়। দোকানের পাশে রাখা বেঞ্চিতে বসে পরে। পায়ের উপর পা তুলে সিগারেট ফুগতে থাকে। প্রায় দশ মিনিট পরে একটা রিক্সা এসে থামে গেইটের সামনে,রিক্সায় যাত্রী হিসেবে একটা অচেনা মেয়ে ছিলো। যদিও পিয়াল একটু দূরে ছিলো গেইট থেকে। কিন্তু পিয়াল ঘটনাটা দেখছিলো। মেয়েটা রিক্সায় বসেই ভাড়াটা দেয়, এরপর রিক্সা থেকে নেমে গেইটের সামনে গিয়ে দাঁড়ালো। হাতে একটা ব্যাগ, ব্যাগ থেকে মোবাইলটা বের করে কাউকে কল করছে মনে হয়। হঠাৎ পিয়ালের ফোন বেজে উঠলো। পিয়াল কলটা রিসিভ করলো-
ফোনের ওপাশ থেকে- পিয়াল ভাইয়া! আপনি কোথায়?
পিয়াল- আমি আশে পাশেই আছি। আপনি হলুদ ড্রেস আর কালো একটা হিজাব পরে আছেন, তাই না?
-হ্যা! আপনি কোথায়?
পিয়াল ফোনটা কেটে দিয়ে দোকানীর বিল মেটায়।এরপর উঠে দাঁড়ায়, আস্তে আস্তে হেটে মেয়েটার সামনে এসে দাঁড়ায়। মেয়েটার বয়স ১৯ কি ২০ হবে। চোখের নিচে কালো দাগ পরেছে। মনে হচ্ছে বেশ কয়েকদিন ঘুমায় নি। বাহির থেকেই বুঝা যায় মেয়েটা ভালো নেই। হয়তো কোনো মানষিক চাপের ভিতরে আছে। খুব চিন্তিতও মনে হচ্ছিলো।
পিয়াল-এখন আপনার পরিচয় বলুন।
অচেনা মেয়েটি- হ্যা সব বলবো! চলুন পার্কের ভিতরে গিয়ে বসি।
-দেখুন আমি আপনার সাথে আড্ডা মারতে আসি নি। যা বলার একটু তাড়াতাড়ি বলুন, আমার কাজ আছে।
-আমি অত্যন্ত পরিমাণ দূঃক্ষিত আপনাকে এতো ব্যস্ততার ভিতরে এখানে ডেকেছি।কিন্তু আমার কিছুই করার ছিলো না। প্লিজ ভাইয়া রাগ করবেন না।
-আচ্ছা আচ্ছা চলুন ভিতরে গিয়ে বসি।
পিয়াল আর অচেনা মেয়েটি পার্কের ভিতরের একটা বেঞ্চিতে গিয়ে বসলো।
অচেনা মেয়েটি -আমি জানি না কথাটা কিভাবে শুরু করবো।কিন্তু...
পিয়াল- ন্যাকামো বাদ দিবেন প্লিজ? যা বলার সরাসরি বলুন।
-আমার নাম তামান্না।
-আচ্ছা।
-আমি আপনার বন্ধু রুমির গার্লফ্রেন্ড।
-তো? আমি কি করবো? এইটা বলার জন্য এখানে ডেকেছেন?
-না না ভাইয়া!
-তাহলে?
-আমি রুমির গার্লফ্রেন্ড ছিলাম, এখনো আর ভবিষ্যতেও থাকতে চাই।
-দেখুন এইটা আপনার আর রুমির ব্যাপার, আমাকে কেনো ডেকেছেন সেইটা বলুন।
-কিন্তু রুমি আমাকে তার জীবন থেকে সরিয়ে দিতে চাচ্ছে।
-এটাও তো আপনাদের ব্যাপার তাই না?
-হ্যা! কিন্তু আমি তো রুমিকে ভালোবাসি। রুমিও আমাকে ভালোবাসতো কিন্তু হঠাৎ করে রুমির ভিতরে একটা পরিবর্তন আসে। আর, আর আমাকে সময় দেয়া বন্ধ করে দিতে থাকে আস্তে আস্তে। একদিন হঠাতই আমার সাথে খারাপ ব্যবহার করা শুরু করে। আমার সাথে তার যে সম্পর্কটা ছিলো সেইটাও বিচ্ছেদ করতে বলে।রুমিকে ভুলে যেতে বলে। কিন্তু আমি তো এমন কোনো ভূলই করি নি যার কারনে সে আমাকে এতো বড় একটা শাস্তি দিবে।
তামান্না কেঁদে ফেলে।পিয়াল এক দৃষ্টিতে তার কান্না করা দেখতে থাকে। জীবনে পিয়াল কোনো মেয়েকে এভাবে কাঁদতে দেখে নি। তার রিলেশনেও ব্রেকাপ হয়েছে, কিন্তু কোনো মেয়েই এভাবে তার জন্য কাদে নি। এখন নিজের কাছেই খারাপ লাগছে পিয়ালের। মন চাচ্ছে মেয়েটাকে বুকে টেনে শান্তনা দেই। কিন্তু না এতে মেয়েটা বুঝবে সুযোগে সৎ ব্যবহার করছি। তাই নিরবে দেখে যাওয়াটাই উত্তম হবে।
পিয়াল- আপনার সাথে রুমির সম্পর্কের ব্যপারে আমি শুনেছি। আপনার নাম বলছিলো আমার কাছে। কিন্তু আপনাকে কখনোই দেখায় নি বা আমিই দেখতে চাই নি। আমি জানি না এই অবস্থায় আপনাকে আমি কিভাবে শান্তনা দিবো। আপনি যদি কিছু মনে না করেন তাহলে আমাকে, আপনার আর রুমির সম্পর্কের ব্যাপারে শুরু থেকে একটু বলতে পারবেন?
তামান্না- হ্যা অবশ্যই! (চোখ মুছতে, মুছতে)। রুমির সাথে আমার সম্পর্ক ছিলো মাত্র পাঁচ মাষ ১৩ দিনের।দিনটা ছিলো অক্টবরের দুই তারিখ-, আমি আমার কলেজের সামনে প্রায়ই একটা ছেলেকে দাঁড়ানো দেখতাম। একদম হঠাতই ছেলেটার আগমন ঘটে। প্রতিদিনই ছেলেটা দাঁড়ানো থাকতো, আমার কলেজ ছুটি হলে আমি যখন বাসায়র উদ্দেশ্যে রওনা দিতাম তখন ছেলেটা আমাকে ফলো করতো। এইরকম প্রায় একমাস আমাকে ফলো করেছিলো।আমি আমার বান্ধবীদের কাছ থেকে ছেলেটার নাম জানতে পারি।ছেলেটার নাম ছিলো রুমি। কিন্তু আমাকে ফলো করার ব্যাপারটায় আমি তেমন কোনোই গুরুত্ব দিতাম না। কারন আমার লক্ষ ছিলো আমার ক্যারিয়ার। নভেম্বরের ২৮ তারিখ ছিলো আমার জন্মদিন।আমি আর আমার বন্ধুরা মিলে ঘুরতে যাওয়ার জন্য বের হয়েছিলাম। তখন দেখলাম ছেলেটা হঠাৎ কোথা থেকে এসে উদায় হলো। আমি আর আমার বন্ধুরা ঘোরার জন্য একটা পার্কে ঢুকলাম। রুমিও আমাকে ফলো করতে করতে পার্কের মধ্যে এসে গেলো। তখন পার্কে বসেই হাটু গেড়ে আমাকে প্রস্তাব দেয়।আমার সব বন্ধুরা হাত-তালি দিতে থাকলো। তখন বুঝলাম এইটা রুমি আর আমার বন্ধুদেরই প্লান ছিলো। যদিও আমি তখন কিছু না বলেই রাগ করে বাসায় চলে আসি। কিন্তু রাতে কি যে হলো, হঠাৎ হঠাৎ রুমির কথা মনে পরতো। এরপর কোথা দিয়ে কি হয়ে গেলো তা নিজেও জানি না।
*একজন পার্ক গার্ডের আগমন ইতোমধ্যে -
পার্ক-গার্ড :- মামা পাঁচটা বাজে। পার্ক বন্ধ হবে এখন।
পিয়াল -আচ্ছা মামা, যাচ্ছি। চলেন তামান্না বের হয়ে হাটি আর কথা বলি।
তামান্না -হ্যা চলুন।
পিয়াল এবং তামান্না পার্ক থেকে বের হলো।
পিয়াল-হ্যা! তারপর বলুন।
তামান্না - রিলেশনের প্রথম দিকে রুমি আমার অনেক দেখাশুনা করতো। অনেক ভালোবাসতো, জানি না তা অভিনয় নাকি সত্যিই ছিলো। কিন্তু ওর উপর আমার অন্ধ বিশ্বাস ছিলো। আমার মনে হয় তখন আমাকেই সবচেয়ে বেশি সময় দিতো। আমাকে কলেজে দিয়ে যেতো,আবার কলেজ থেকে বাসায় এগিয়ে দিয়ে যেতো। মাঝে মাঝে আমি রাগ করে কথা বলা বন্ধ করে দিলে কান্নাকাটিও করতো। রিলেশনের দুইমাস পরেই ওর নামে নানানরকম আজেবাজে কথা শুনতে শুরু করি।কেউ কেউ বলতো আমার আগেও নাকি ওর অনেক মেয়ের সাথে সম্পর্ক ছিলো। কিন্তু এই বিষয় আমি পুরোই ইগনোর করি। এমনকি এই বিষয়ে আমি রুমিকে কোনরকম প্রশ্নও করি নি। আমি ভাবতাম সব মিথ্যে শুধুমাত্র রুমিই একমাত্র সত্য। খুব অল্প সময়ের ভিতরেই আমি রুমিকে এতোটাই ভালোবেসে ফেলি তা নিজেরও ধারণার বাহিরে। তখন রুমিকে ছাড়া কিচ্ছুই বুঝি না আমি এমন অবস্থা। পড়ালেখার কথা বাদই দিলাম, কোনো কাজই ঠিকমতো করতে পারতাম না। সব যায়গায় যেনো রুমির ছায়া দেখতে পেতাম। আমাকে বিয়ে করবে বলেও আশ্বাস দিয়েছিলো। আর আমি বোকার মতো তা বিশ্বাস করেছিলাম।হয়তো আমার ভূল ছিলো সেই বিশ্বাসটাই করা, যার যোগ্য নয় রুমি।এভাবে ৪ মাষ সব কিছুই ভালো চলতেছিলো। আমি আমার সবটুকুই দিয়ে ভালোবেসে ছিলাম রুমিকে। যখন যা করতে বলতো তাই করতাম, যখন যা করতে চাইতো তাই-ই করতে দিতাম। একদিন আমি আর রুমি একটা রেস্টুরেন্টে বসে ছিলাম।তখন আমার কাছে ওর ফোন দিয়ে ওয়াসরুমে যায়। তখন আপনার নাম্বারটা আমি রেখে দেই।ফেইসবুকে আপনার সাথে ওর ছবি দেখেছি। আর আপনি ওর খুব ক্লোস একটা ফ্রেন্ড সেইটা বুঝতে পেরেছিলাম। নাম্বার নেয়ার কারনটা যে ভবিষতে এমন হবে তা বুঝতে পারি নি।আমি ভেবেছিলাম আপনাকে ফোন দিয়ে ওর খোজ খবর নিবো। কিন্তু আজকে তার বদলে আপনাকে আমাদের সম্পর্কের অন্তিম সময়টা বর্ণনা করতেছি। সত্যিই জীবনটা কতোটাই অদ্ভুত(দীর্ঘশ্ব
াস)।
পিয়াল- তারপর কি হয়েছিলো?
তামান্না- ও হ্যা! তারপর হঠাৎ করেই রুমির ভিতর পরিবর্তন ঘটে। কেনো বা কিসের জন্য বুঝে ওঠার আগেই সব শেষ করে দেয়। আমি জানি না কেনো ও আমার সাথে এমনটা করেছে। এমন একটা নাটক করার জন্য আমাকেই কেনো.....?(কেদেঁ দেয় তামান্না)
পিয়াল পকেটে হাত দিয়ে একটা পকেট টিস্যু-পেপারের প্যাকেট বের করে। প্যাকেট থেকে একটা টিস্যু তামান্নার দিকে এগিয়ে দেয়। তামান্না টিস্যুটা হাতে নিয়ে চোখ মুছতে মুছতে বলে-
তামান্না - গত এক সপ্তাহ আগ থেকে আমার সাথে খারাপ-বাজে ব্যাবহার করা শুরু করে রুমি। আজকে সকালেও অনেক আজে বাজে ব্যাবহার করে। এরপর নাম্বারটা ব্লাকলিষ্টে ফালায়। অনেকবার কল দিছি,কিন্তু নাম্বার ব্যস্ত বলে। সেই গত এক সপ্তাহ থেকে ডিপ্রেশনে ভুগছি। না পারতেছি রাতে ঘুমাতে না পারতেছি কিছু খেতে। কিছুই ভালোলাগে না। মাঝে মাঝে হয় মারা যাই। কি করবো কিছুই বুঝতে পারতেছিলাম না। না পারছিলাম কারো সাথে বলতে না পারছিলাম নিজে সহ্য করতে। নিজের সাথে অনেক যুদ্ধ করে আপনাকে কল দেয়। আমি জানি রুমি আর আমার কাছে ফিরবে না। কিন্তু আমি কি করবো?কিছুই বুঝতে পারতেছি না। অনেক কষ্ট হয়। আমি জানি এটা আবেগ না এটা ভালোবাসা। যার কোনো দাম নেই রুমির কাছে।
পিয়াল-আপনি রিলেশন করার আগে ওর সম্পর্কে একবারও খোঁজ-খবর নিলেন না কেনো?
তামান্না- আমি ভেবেছিলাম আমার জন্য যে এতো কিছু করে সে আমাকে ধোকা দিবে কেনো? আমি আসলেই তখন বুঝতে পারি নি।(কান্না করতে করতে)
পিয়াল- আচ্ছা এখন চোখ মুছুন। চলুন কিছু খেয়ে নেই।
তামান্না - না, আমার কিছুই ভালো লাগছে না। এখন আমার জন্য বাসায় যাওয়াটাই ভালো হবে।
-আচ্ছা চলুন এগিয়ে দেই আপনাকে।
-না থাক। ধন্যবাদ, আমি একাই যেতে পারবো।তবে একটা কথা,আমার ভালোবাসাটা শুধু বুঝতে বইলেন ওরে। আর কিছুই চাই না আমি।
-হ্যা আমি আমার সর্বশেষ চেষ্টা চালাবো।
-আমাকে একটা রিক্সা করে দিতে পারলে ভালো হতো।
-হ্যা, একটু দাঁড়ান দয়া করে। আমি দেখছি।
পিয়াল একটা রিক্সা ডাক দেয়।
তামান্না - আপনাকে কষ্ট দিলাম, অনেকটা সময় নষ্ট হলো আপনার। আমি আসলেই দুঃক্ষিত।ক্ষমা করে দিয়েন ভূল হলে।
পিয়াল- না না ঠিক আছে। দুঃক্ষিত তো আমাকে বলা উচিৎ। এইরকমটা আমার সাথে হলে আমিও একই কাজ করতাম। আচ্ছা সাবধানে যাবেন। বায়।
-আচ্ছা, বায়।
তামান্না রিক্সায় উঠে পরে। রিক্সা চালক রিক্সা সামনের দিকে নিয়ে যায়। পিয়াল রিক্সার দিকে তাকিয়ে তামান্নার চলে যাওয়াটা একদৃষ্টিতে দেখতে থাকে। তামান্নার রিক্সা পিয়ালের চোখের বাহিরে চলে যায়। পিয়াল একটা বাসে উঠে পরে। একটু তাড়াতাড়িই বাসায় ফিরতে চায়।খুব খিদেও পেয়েছে।
বাস থামিয়ে, বাস থেকে নামে পিয়াল। সোজা বাসায় চলে যায় পিয়াল। আজকে আর আড্ডা দিবে না সে।
বাসায় ঢুকে ফ্রেস হতে যায় ওয়াশরুমে। ফ্রেস হয়ে বের হয়, ফ্রিজ খুলে একটা আপেল নিয়ে বারান্দায় যায়। কামড়ে কামড়ে আপেলটা খাচ্ছে আর ভাবছে কালকে ভার্সিটিতে গিয়ে রুমির সাথে কথা বলতে হবে........ ♥
.
.
♥...........""চলবেই""...........♥