গল্প :-""""""--শেষ কান্না--""""" ♥
.
লেখক:- #RJ_Nayem_Ahmed
.
গল্পটা পড়ে 100% আপনাদের চোখে পানি চলে আসতে বাধ্য....Challenge
.
.
★-----পর্ব:- ০৭~~~~
.
.
০৭ই জুলাই ২০১৫,
ভার্সিটি ক্যাম্পাসের একটি গাছের নিচে একা বসে আছে পিয়াল।হঠাতই পিয়ালের বান্ধবী এনি'র আগমন।
এনি- কিরে এখানে এভাবে দেবদাসের মতো বসে আছিস কেনো?
পিয়াল- এইতো এমনিই বসে আছি।
- এমনি? কারন তো কিছু একটা আছে। সবাই ওখানে আড্ডা দিচ্ছে আর তুই এখানে একা বসে আছিস।
- ভাল্লাগছে না তাই বসে আছি। আমাকে একটু একা থাকতে দিবি? প্লিজ!
- না থাকতে দিবো না। আচ্ছা রুমির কি খবর রে?
- রুমির?
- হ্যা!
- ভালো নেই রে!
- রুমির জন্য আমাদেরও খারাপ লাগে। চাঞ্চল্যতায় ভরা ছেলেটা হঠাতই নিরব হয়ে গেলো।
- হুম।
- আমি তোর মনের অবস্থাটা বুঝতেছি। আমাদের বন্ধু তাই আমাদেরই খারাপ লাগছে ওর জন্য। আর তোরা দুইজন তো ভাই-ভাই। ভাইও হয়তো এতো আপন হয় না।
- হুম। (দীর্ঘশ্বাস)
- দেখা করেছিলি রুমির সাথে?
- হুম,গত কয়েকদিন আগে গিয়েছিলাম।
- কেমন দেখে এলি?
- ভালো নারে! কেমন যেনো হয়ে গেছে।
- কেমন হয়ে গেছে?
- আমাকে যেনো চিনেই না,হাতে একটা ডায়রী নিয়ে সারাক্ষণ ছাদে বসে থাকে। আর.....!আর কি যেনো ভাবে। কিছু জিজ্ঞাসা করলে মুখের দিকে তাকিয়ে থাকে, কিন্তু কোনো উত্তর দেয় না।
- কিছু বলিস নি?
- বলেছিলাম তো অনেক কিছু। অনেক বুঝালাম সেইদিন, কিন্তু আমার কথার কিঞ্চিত পরিমানও সারা দেয় নি। কি করবো বুঝে উঠতে পারছি না।
একটা ছেলে এসে এনি'র পিছনে দাঁড়ায়।
এনি - তোদের তো পরিচয় করিয়েই দেই নি। এই ছেলেটি আমার বয়ফ্রেন্ড। ওর নাম সিফাত।
পিয়াল - হাই! আমি পিয়াল! (হাত মিলিয়ে)
সিফাত - হাই! আমি সিফাত!
এনি- আচ্ছা আমি আজকে আসি তাইলে! নিজের খেয়াল রাখিস। কেমন?
পিয়াল - আচ্ছা ঠিক আছে। বায়
এনি ও সিফাত কথা বলতে বলতে সামনের দিকে এগিয়ে যায়। পিয়াল ফোনটা বের করে সময়টা দেখে নিলো। দুপুর বারোটা বাজে, বাসায় যাওয়া উচিৎ এখন। পিয়াল কাঁধে ব্যাগটা নিয়ে উঠে দাঁড়ায়। ক্যাম্পাস থেকে বের হয়ে বাসার উদ্দেশ্যে একটা বাসে উঠে পরে।
বিকাল ৫টা,
পিয়াল বাসার ছাদে বসে সিগারেট ফুগছে আর আশেপাশের পরিবেশ দেখছে। হাল্কা বাতাসের ছোঁয়া পাওয়া যাচ্ছিলো কিছুক্ষণ পর-পরই। এই অবস্থায় পিয়ালের ভালোই লাগছিলো পরিবেশটা।হঠাতই ফোনটা বেজে ওঠে। মুখে বিরক্তির ছাপ নিয়ে ফোনটা বের করে। রুমি কল দিয়েছে। পিয়াল তৎক্ষণাৎ কলটা রিসিভ করে। -
পিয়াল - হ্যালো রুমি!!!
ওপাশ থেকে - হ্যালো পিয়াল। আমি রুমির মা বলছিলাম।
- আসসালামু আলাইকুম আন্টি।
- ওয়ালাইকুম আসসালাম বাবা।
- আন্টি রুমি কোথায়?
- রুমি ওর রুমেই আছে কিন্তু..!!
- কিন্তু কি আন্টি?
- রুমির কি যেনো হয়েছে, অকারণই চেঁচামেচি করছে, নিজে নিজে বকবক করছে, আবার মাঝে মাঝে শুধুশুধুই কান্না জুড়ে দিচ্ছে।
- আন্টি আমি এখনই আপনাদের বাসায় আসছি।
- হ্যা বাবা! তাড়াতাড়ি আসো।
পিয়াল ফোনটা কেটে দিয়ে দ্রুত চলে যায় রুমির বাসায়।
পিয়াল - রুমি কোথায় আন্টি?
রুমির মা - ওর রুমে,ওর বাবা ওরে আটকে রেখেছে।
- আটকে রেখেছেন? মানে?
- হাতের কাছে যা কিছুই পাচ্ছে সব কিছুই ভাঙচুর করছে,চেঁচামেচি করছে তাই।হঠাৎ করেই আমার ছেলেটার কি যে হলো আল্লাহ্ই জানেন। (কান্না করতে করতে)
- ডাক্তারকে ফোন দেন নি?
- হ্যা দিয়েছি, কিছুক্ষনের মধ্যেই এসে যাবে বললো।
- আন্টি আমি একটু রুমির সাথে কথা বলতে চাই।
- কিন্তু....
- কোনো কিন্তু না আন্টি, আপনি ওর রুমের দরজাটা খুলেন একটু।
- আচ্ছা খুলে দিচ্ছি।
রুমির মা রুমির রুমের দরজাটা খুলে দিলেন।পিয়াল, রুমির রুমে ঢুকলো। রুমটা খুবই নোংরা হয়ে আছে। রুমের মধ্যকার কোনো জিনিসই ঠিক জায়গায় নেই।কিন্তু রুম থেকে একটা মিষ্টি সুগন্ধির ঘ্রান আসছে।ঘ্রানটা খুবই পরিচিত ঘ্রান।ডায়রীটা নিচে পরে আছে। রুমি বিছানার উপরে বসে আছে। চোখ দুটো বড় বড় করে তাকিয়ে আছে নিচে পরে থাকা ডায়রীটার দিকে। পিয়াল আস্তে আস্তে রুমির পাশে গিয়ে বসলো। নিচে পরে থাকা ডায়রীটার দিকে তাকালো, তামান্নার সেই ডায়রীটা। সাদা ডায়রীটায় এখনো তামান্নার রক্তের ছাপ আছে।
পিয়াল - রুমি।
রুমি পিয়ালের মুখের দিকে তাকালো।
রুমি - পিয়াল তুই? (কান্না করে জড়িয়ে ধরে পিয়ালকে)
পিয়াল - কি হয়েছে তোর? বল আমায়। (রুমিকে জড়িয়ে ধরে)
রুমি - তামান্না, টিয়া।
পিয়াল - হ্যা! তামান্না, টিয়া। কি হয়েছে?
রুমি - অই দেখ! ওদের লাশ ওখানে! আমার খুব ভয় করছে।
- কোথায় রুমি? (চমকিত হয়ে)
- অই দেখ! ( নিচে পরে থাকা ডায়রীটার দিকে ইঙ্গিত করে দেখায়)
- রুমি ওটা একটা ডায়রী।
- না না, ডায়রীর পাশেই ওদের লাশ। দেখ!
- না দোস্ত এখানে নেই। ওদের অনেকদিন আগেই কবর দিয়ে দেয়া হয়েছে, ওদের লাশ এখানে আসবে কিভাবে?
- এখানেই আছে। ওদের লাশ আমি ছাড়া আর কেউ দেখতে পারে না। ওরা আমাকে রাতে ঘুমাতে দেয় না। আমার খুব ভয় করে আমাকে এখান থেকে নিয়ে চল প্লিজ।
- রুমি, এটা তোর দেখার ভূল। কিচ্ছুই নেই এখানে। তুই দেখ!
- আমি দেখেছি, এখনো পরে আছে তামান্নার রক্তমাখা লাশটা। ওরা আমাকে....
কিছু একটা বলতে যাবে এক মধ্যেই একজন ডাক্তারের আগমন রুমির রুমে,সাথে রুমির বাবাও আছেন।
রুমির বাবা - পিয়াল ডাক্তারকে একটু দেখতে দাও।
পিয়াল - জ্বি আংকেল!
পিয়াল রুমির পাশ থেকে উঠে রুমির বাবার পাশে গিয়ে দাঁড়ায়। ডাক্তার রুমিকে খুব ভালো করে দেখে। এরপর ব্যাগ থেকে একটা ইনজেকশন বের করে রুমির হাতে পুষ করে। পিয়াল জানে এটা হয়তো ঘুমানোর জন্য। বিছানায় রুমিকে শুয়িয়ে দেয়া হলো,প্রথমে শুতে চাইছিলো না। একপ্রকার জোড় করেই শুয়িয়ে দেয়া হয়। ডাক্তার ব্যাগ থেকে বের করা একটা নোট-প্যাডের খালি পৃষ্ঠায় কিছু লেখা শুরু করেন। হয়তো প্রেসক্রিপশন লিখছেন।
ডাক্তার - রুমিকে আপাতত একটু একা থাকতে দিন। মানসিক চাপ দিবেন না, আর ঠিকমত ঔষধ খাওয়াবেন। এরপর যদি কোনো সমস্যা দেখা দেয় তাহলে আমাকে ডেকে নিবেন।
রুমির বাবা - আচ্ছা ঠিক আছে। ( ডাক্তারের দেয়া প্রেসক্রিপশনটা হাত বাড়িয়ে নিলেন)
রুমির বাবা ডাক্তারকে বিদায় দিলেন। পিয়াল রুমির রুমের আলো নিভিয়ে দিয়ে দরজাটা আটকে দিলো।
পিয়াল- আচ্ছা আংকেল আমি আজকে আসি তাহলে।
রুমির বাবা - হ্যা বাবা, আবার এসো।
রুমির বাসা থেকে বের হয়ে নিজের বাসার দিকে পা বাড়ায় পিয়াল.....
.