গল্প :-""""""--শেষ কান্না--""""" ♥
.
লেখক:- #RJ_Nayem_Ahmed
.
গল্পটা পড়ে 100% আপনাদের চোখে পানি চলে আসতে বাধ্য....Challenge
.
.
★-----------------পর্ব:- ০৮ ~~~~
.
.
১২ই জুলাই ২০১৫,
রাত নয়টা, পিয়াল বাসার সামনে দাঁড়িয়ে ভার্সিটির অধ্যাপক মতিন সাহেবের সাথে কথা বলছে।
মতিন সাহেব - হ্যা! সবই তো শুনলাম। রুমির যা অবস্থা তাতে ওকে ভালো কোনো মানুষিক বিশেষজ্ঞের কাছে নিয়ে যাওয়া উচিৎ।
পিয়াল - জ্বি স্যার। রুমির বাবাও তাই বলেছিলেন।
- আসলে! মানুষ যখন অতিরিক্ত মানসিক আঘাতপ্রাপ্ত হয় তখন এমনটা হয়। রুমির ক্ষেত্রেও তাই-ই হয়েছে। একসাথে দুজন কাছের মানুষের এভাবে চলে যাওয়াটা মেনে নিতে পারে নি।
- জ্বি স্যার!
- যার একবার মানসিক বিপর্যয় ঘটে তখন সেই-ই বোঝে কষ্টের গভীরতা কত। আমার এক বন্ধুর কথা তোমাকে বলি।
- জ্বি স্যার বলুন।
- মুক্তিযুদ্ধকালে তো অনেক বাংলাদেশী মানুষ,মুক্তিযোদ্ধারা শহীদ হয়েছিলেন।
- জ্বি স্যার!
- আচ্ছা বলো তো! আমাদের দেশ কত সালে স্বাধীন হয়েছিলো?
- ১৯৭১ সালে স্যার।
- গুড! আমরা মুক্তিযুদ্ধকালে তোমাদের মতই ছিলাম। তখন আমার বিয়ে-টিয়ে হয় নি।যাই হোক, আমি এখন আমার এক বন্ধুর কাহিনী তোমাকে শুনাবো। বন্ধুটির নাম ছিলো আব্দুল্লাহ। পুরো নামটা মনে নেই, অনেক আগের ঘটনা তো! আমি বিয়ে করি নি তো কি হয়েছে? আমার সেই বন্ধুটি তখন নতুন বিয়ে করেছিলো। বিয়ে করার কিছুদিন পরেই শুরু হলো গণ্ডগোল(মুক্তিযুদ্ধ)। যুদ্ধ শুরু হবার সাথে সাথেই যুদ্ধের খবর বাতাসের আগে সবার কানে পৌঁছে যায়। সবাই নিজের জান বাঁচাতে এদিকওদিক ছোটা-ছুটি করা শুরু করে দেয়। আমার বন্ধু আব্দুল্লাহ আর ওর পরিবারও নিজেদের জীবন বাঁচাতে গ্রাম ত্যাগ করলো।তখন তো আবার অনেকেই পালিয়ে ভারত চলে গিয়েছিলো। আব্দুল্লাহ ওর পরিবারকে নিয়ে ভারতে পালিয়ে যাওয়ার জন্যই গ্রাম ত্যাগ করেছিলো। কিন্তু মাঝ পথে এসে আব্দুল্লাহ এবং ওর পরিবারসহ আরো কয়েকশ মানুষ পাক-বাহিনীর হাতে ধরা পরে। আব্দুল্লাহ কোনো রকমে সেখান থেকে পালিয়ে আসতে পেরেছিলো কিন্তু তাঁর পরিবার পারে নি। সেখানেই মেরে ফেলা হয় তাদেরকে। আব্দুল্লাহ পরিবারের শোকে একপর্যায়ে পাগল হয়ে যায়। যুদ্ধ শেষে গ্রামে বেশ কয়েকদিন ঘুরতে দেখা গেছিলো। কিন্তু এরপর আব্দুল্লাহকে আর পাওয়া যায় নি। অনেক খুজেছিলাম আমি এবং ওর কয়েকজন প্রতিবেশীরা। ফল একই দাঁড়ালো। সারাজীবনের জন্য নিখোঁজ হয়ে যায় সে (দীর্ঘশ্বাস)। হয়তো এখনো সেই পুরনো স্মৃতি নিয়ে বেঁচে আছে, নয়তো সে এই পৃথিবীতেই আর নেই। আল্লাহ্ই ভালো জানেন।
- (পিয়াল নিশ্চুপ)
- এর জন্যই বলেছিলাম আপনজন বিয়োগে এতোটাই কষ্ট পেতে হয়, যে কষ্টের ভাগ যায় না কাউকে দেয়া আবার নিজের মধ্যেও রাখা যায় না।
পিয়াল মাথা নিচু করে থাকে।
- আচ্ছা পিয়াল। আজকে আমি আসি তাহলে। কালকে ভার্সিটিতে আসলে দেখা হবে।
-আচ্ছা স্যার।
মতিন সাহেব মুচকি একটা হাসি দিয়ে পিয়ালের সামনে থেকে চলে গেলেন। পিয়াল আকাশের দিকে তাকালো।মনে হচ্ছে আকাশের অর্ধেক চাঁদটা উঁকি মেরে পিয়ালের দিকে তাকিয়ে আছে। পিয়াল বাসায় ঢোকার জন্য পা বাড়ালো।
রাত তিনটা, পিয়াল বিছানায় শুয়ে আছে। চোখ দুটো প্রচণ্ড পোড়াচ্ছে। একটু ঘুমিয়ে নেয়া উচিৎ।
পরেরদিন সকাল নয়টা,
পিয়াল ফ্রেস হয়ে বাথরুম থেকে বের হলো। ভার্সিটি যাওয়ার উদ্দেশ্যে জামা-প্যান্ট পরে নেয়। যদিও ভার্সিটি যেতে ইচ্ছে করছে না, কিন্তু নিজেকে ব্যস্ত রাখার এটাই সব থেকে বড় পদ্ধতি। সকালের নাস্তা করে বেরিয়ে পরলো ভার্সিটির উদ্দেশ্যে।
পিয়াল বাসে বসে আছে হঠাতই ফোন বেজে উঠলো।পিয়ালের বন্ধু অপু কল দিয়েছে।
অপু- হ্যালো! পিয়াল।
পিয়াল- হ্যা বল!
- কোথায় তুই?
- আমি বাসে, ভার্সিটি যাচ্ছি।
- তুই এখনই ঢাকা মেডিকেলে চলে আয়।
- কেনো?
- অতো কিছু বলতে পারবো না, তুই এখনই আয়।
- আচ্ছা ঠিক আছে।
ফোন কেটে দিয়ে বাস থেকে নামে পিয়াল। হঠাতই পিয়ালের ভিতরে একটা আতংক কাজ করা শুরু করলো। যাই হোক,অপু যেখানে যেতে বললো সেখানে না গিয়ে আসল ব্যাপারটা বোঝা বোঝা যাবে না।পিয়াল ঢাকা মেডিকেল যাওয়ার জন্য অন্য একটি বাসে উঠে পরলো।
দুপুর একটা,
পিয়াল ঢাকা মেডিকেলের সামনে দাঁড়িয়ে অপু কে কল দিলো -
পিয়াল - দোস্ত আমি মেডিকেলের সামনে দাঁড়ানো।
অপু - তুই মেডিকেলের পাঁচ নাম্বার ফ্লোরে ওঠ। এরপর বাম দিকের মর্গের সামনে আয়।
- আচ্ছা।
মর্গের কথা শুনেই পিয়ালের ভিতরটা দ্বিতীয় বারের মতো কেঁপে ওঠে। লিফট দিয়ে পাঁচ নাম্বার ফ্লোরে উঠে, বাম দিকে হাটা শুরু করে। পা চলছে না, সামনে হয়তো খারাপ কিছু অপেক্ষা করছে পিয়ালের জন্য। তবুও কিছু একটা প্রবল আকর্ষণে সামনে এগোচ্ছে পিয়াল। একটা রুমের সামনে অপু দাঁড়ানো দেখা যাচ্ছে।আশেপাশে আরো অনেক মানুষ দাঁড়িয়ে আছে। অপু,পিয়ালকে দেখে দ্রুত হেটে এসে পিয়ালের সামনে এসে দাঁড়ালো।
পিয়াল - কি হয়েছে রে?
অপু - নিজেই দেখে নে। (কান্না কন্ঠে)
অপু পিয়ালকে নিয়ে রুমটার মধ্যে ঢোকে। রুমের মাঝখানেই একটা সাদা কাপড়ে ঢাকা লাশ। পিয়ালকে লাশটার সামনে দাঁড় করিয়ে মুখের উপরের কাপড়টা তুলে দেয় অপু। পিয়ালের মাথা বেয়ে প্রচন্ড ঘাম ঝরছে,চোখ দুটো যেনো বাহিরে বেরিয়ে আসতে চাচ্ছে। পা কাঁপছে, নিজেকে ধরে রাখার মত শক্তি পাচ্ছে না পিয়াল। সামনের সব কিছুই ঝাপসা লাগছে। একটু পরেই সব অন্ধকার।
পিয়াল চোখ খুললো।মনে হয় সে শুয়ে আছে। কিন্তু কোথায়? উপরে খোলা আকাশ দেখা যাচ্ছে। উঠে বসে পিয়াল। মনে হচ্ছে কোনো একটা বাড়ির ছাদে। দূরে ছাদের কর্নারে একজন বালক দাঁড়িয়ে আছে। পিয়াল উঠে বসে, ছাদটা অতি পরিচিত লাগছে তার কাছে। এই ছাদে সে অনেক বার এসেছে।
পিয়াল:- হ্যা! এটা তো রুমিদের বাসার ছাদ!
পিয়াল দূরে ছাদের কর্নারে দাঁড়িয়ে থাকা ছেলেটার দিকে তাকায়। একটা নীল পাঞ্জাবী পরা।
পিয়াল- এটা তো রুমি! ও ওখানে কি করছে? আর আমি এখানে এলামি বা কি করে?
দূরে দাঁড়িয়ে থাকা রুমি ছাদের রেলিংএর উপরে উঠে দাড়ালো। পিয়াল দৌড়ে রুমির কাছে যাওয়ার চেষ্টা করলো। কিন্তু চেষ্টা ব্যর্থ, পিয়ালের পা একটা কিছুর সাথে বাধা রয়েছে। পিয়াল পায়ের দিকে তাকালো। হঠাৎ করেই পা বেধে ফেললো কে? আর এই দড়িই আসলো কোথা থেকে? পিয়ালের মনে নানান রকমের প্রশ্ন জেগে উঠলো। যার উত্তর খুঁজতে গেলেই নতুন করে আরেকটা প্রশ্নের উদয়ন ঘটছে। পিয়াল জোরে চিৎকার করে রুমিকে ডাকলো। কিন্তু পিয়ালের মুখ কোনো প্রকার শব্দই বের হচ্ছিলো না। হঠাৎ করেই রুমি রেলিং থেকে ঝাপ দিলো। পিয়াল শুধু দাঁড়িয়ে দেখছে। সব কিছুই স্বপ্নময় মনে হচ্ছে। কিছুক্ষন পরেই নিচে একটা বিকট আওয়াজ হলো।
১৩ই জুলাই সকাল ৭টা,
পিয়াল বিছানায় শোয়া থেকে লাফিয়ে উঠে বসলো। ভিতর থেকে শ্বাস টেনে তুলতে পারছে না পিয়াল। মনে হচ্ছে কেউ এক মুহূর্তের জন্য ফুসফুসটার মুখ চেপে ধরেছিলো। নাক-মুখ বেয়ে প্রচন্ড ঘাম ঝরছে। খুব পানি খেতে ইচ্ছে করছে। পানির খোজে এদিক ওদিক তাকালো পিয়াল। কাছের একটা টেবিলে পানির পাত্র রাখা, পিয়াল বিদ্যুৎ গতিতে পাত্রটা হাতে নিয়ে এক শ্বাসে পানি খাওয়া শুরু করে। এখন একটু ভালো লাগছে পিয়ালের। পানির পাত্রটা আগের জায়গায় রেখে দেয় পিয়াল। পিয়াল একটা রুমের মধ্যের খাটে বসে আছে।রুমটা পিয়ালেরই। কিন্তু পিয়াল এখানে আসলো কিভাবে। তাহলে কি! রুমির ব্যাপারে যা দেখেছিলো তা সব স্বপ্ন? এইসব ভাবতে ভাবতে ফোনটা খোঁজে। কিন্তু ফোনটা রুমে নেই। ফোনের খোঁজে সামনের রুমের দিকে পা বাড়ায় পিয়াল। রুমের দরজাটা আলগাভাবে লাগানো ছিলো, তাই হাতল ধরে টান দিতেই খুলে যায়। সামনের রুমে পিয়ালের মা এবং ডক্টর বসে আছেন। পিয়ালকে দেখে দুজনেই পিয়ালের মুখের দিকে তাকান। পিয়ালের খোঁজাখুঁজি দেখে ওর মা জিজ্ঞাসা করলো-
পিয়ালের মা - কি খুজতেছো বাবা?
পিয়াল - আমার মোবাইলটা।
ডাক্তার - এই নাও তোমার মোবাইল। (হাত বাড়িয়ে উপরের দিকে তুলে ধরেন)
পিয়াল ডাক্তারের হাত থেকে মোবাইলটা নিয়ে রুমির নাম্বার খুজতে থাকে।
ডাক্তার :- পিয়াল এখানে বসো। (একটা খালি চেয়ার দেখিয়ে)
পিয়াল ডাক্তারের মুখের দিকে তাকায়, কিন্তু কিচ্ছু বলে না। আবারো চোখ যায় মোবাইলের স্ক্রিনের উপর।ডাক্তার এবার নিজেই উঠে পিয়ালকে ধরে বসায় চেয়ারে। কিন্তু পিয়ালের চোখ ফোনের কন্ট্রাক্ট-লিষ্টে।কিন্তু, রুমির নাম্বারটা খুঁজে পাচ্ছে না পিয়াল....!
.
.
♥...........""চলবেই"".......... ♥