গল্প : অবৈধ <<<<<♥
.
লেখক:- #RJ_Nayem_Ahmed
.
পর্ব :-০২~~~~~
.
.
তনয়া ভাবছে মানুষ কি করে এতোটা ন্যাচারাল এ্যকটিং করে?? কি করে সম্ভব?? নাহ আমার আয়াত এমন করতে পারে না?? আমি ওর নিজের মুখ থেকে না শুনা পর্যন্ত বিশ্বাস করবো না।
তনয়া: মা আমি একটু বের হচ্ছে।
মা: এই অসুস্থ অবস্থায় সন্ধার সময় কোথায় যাচ্ছিস???
তনয়া: সত্যিটা জানতে
মা: কিসের সত্যি??
তনয়া ওর মাকে আয়াতের মেসেজটা দেখালো। ওর মাও যেনো হঠাত করে বড়সড় একটা ধাক্কা খেলো।
মা: এই সন্ধা বেলা একা যেতে হবে না। আমিও তোর সাথে যাবো।
তনয়া: মা তুমি???
মা: চুপ একদম চুপ। আমার মেয়ে বিপদে পরছে
আর আমি তাকে এভাবে একা ছেড়ে দিবো। চল,,,
তনয়া আর ওর মা মিলে আয়াতদের বাসায় গেলো। আয়াতের মা তাদেরকে দেখে খুব খুশি হলো সাথে সাথে অবাকও হলো।
তনয়া: আন্টি আয়াত কোথায়???
আয়াতের মা: আন্টি কিরে?? মা বলতে পারিস না?? আগে তো ভাবতাম তোদের বিয়ে ঠিক হয়েছে
কালকে আয়াত বলল,,,, তোরা নাকি অনেকদিন আগেই বিয়ে করে নিয়েছিস। প্রথমে খুব রাগ হচ্ছিলো তোদের উপর। কিন্তু যখন শুনলাম আমাদের ঘরে নতুন অতিথি আসছে তখন আর রাগ করে থাকতে পারলাম না আমি আর আয়াতের বাবা।
আয়াতের মায়ের কথা শুনে তনয়া আরো বেশি দ্বিধার মধ্যে পরে গেলো। তারপর আয়াতের মাকে ওর ফোনের মেসেজটা দেখায়। আর বলে,,,,,
তনয়া: আয়াত কোথায়???
আয়াতের মাও মেসেজটা দেখে অনেক অবাক হলো। আবার হেসে দিয়ে বলল,,,,
আয়াতের মা: বোকা মেয়ে দেখ ভয় পেয়ে নিজের কি হাল করেছে?? আয় আমার সাথে এদিকে আয়???
তনয়াকে আয়াতের মা আয়াতের রুমে নিয়ে গেলো।
তনয়া রুমের দরজা খুলে তো অবাক। দেখে রুমে বাচ্চাদের অনেক খেলনা। পুরো ঘড়টায় বাচ্চাদের খেলনা দিয়ে সুন্দর করে সাজানো।
আয়াতের মা: আয়াত কাল রাতে আর আজ সকালে এইসব জিনিস কিনেছে। আর আমাকে বলেছে মা আমার জীবনে সবচেয়ে প্রিয় মানুষটা
কিছুদিন পর আমার ঘরে আসবে আর তার সাথে আসবে ছোট্র সোনা। তাদের জন্য ঘরটাকে তো সুন্দর করে গোছাতে হবে।
আর দু সপ্তাহ পর তোমাদের বিয়ের ডেট ফেলেছি
আমরা। আয়াত সেটা জানানোর জন্যইতো তোমাতের সাথে দেখা করতে যাচ্ছিলো।
তনয়ার কেমন যেনো সব ঘোলাটে লাগছে।
তনয়া: তাহলে মা আয়াত এমন মেসেজ কেন দিলো।
আয়াতের মা: মনে হয় তোর সাথে মজা করছে।
তনয়া: কিন্তু ফোনটা অফ কেন???
আয়াতের মা: দেখছি???
আয়াতের মা অনুকে (আয়াতের ছোট বোন + তনয়ার বান্ধবী) বললো আয়াতকে ফোন দে তো।
অনু ফোনের পর ফোন দিতেছে। কিন্তু ফোন বন্ধ।
পরিচিত বন্ধু বান্ধবদের অফিসে ফোন করলো কিন্তু কোথাও আয়াত নেই। এবার ঘরের সবার খুব টেনশন হচ্ছে। তনয়া রাতে আয়াতদের বাড়িই থাকলো কিন্তু ওর মাকে বাড়ি পাঠিয়ে দিলো।
সারারাত তনয়া আয়াতের রুমে ওর আয়াতের লাগানো ছবির দিকে তাকিয়ে কান্না করতে লাগলো।
মনে হাজারো প্রশ্ন??? কিন্তু শত প্রশ্নের একটাই উওর হাসতেছে যে আয়াত আমাকে ধোকা দিতে পারে না। কিন্তু মেসেজে লেখা প্রত্যেকটা কথা মাথার মধ্যে পোকার মতো কিলবিল করছে।
নাহ তনয়া আর নিতে পারছে না। মনে হয় মাথাটা ছিড়ে যাবে। এদিকে পেটের ভিতর ছোট্র একটা ব্রুন যা হয়তো এখোনো আকৃতি ধারণ করে নি কিন্তু তার জীবন আছে। তার চলাচল তার অস্তিত্ব
তনয়া প্রতি মুহূর্তে নিজের ভিতর অনুভব করছে।
তার সাথে অনুভব করছে আয়াতের অস্তিত্বকেও
কারণ ভিতরে যে আছে সে যে আয়াতেরই অংশ।
সেদিন রাতে বাড়ির কেউই ঘুমায় নি। খুব সকালে উঠে সোজা পুলিশ স্টেশনে গেলো।
অফিসার বললেন,,,,দেখেন ছোট ছেলে তো নয়।
আর তাছাড়া ২৪ঘন্টার আগে আমরা রির্পোট নেই না। তারপর কিছু প্রশ্ন করলো তারপর তনয়াকে দেয়া মেসেজটার কথা জানার পর বলল,,,,
অফিসার: তাহলে আর কি?? আপনার ছেলে পালিয়েছে। তাই ফোন অফ রেখেছে। ছোট বাচ্চা তো আর না। দেখুন আবার কার সাথে প্রেমলীলা
শুরু করেছে,,,,,
আয়াতের বাবা: জাস্ট সেটাপ অফিসার। রির্পোট নিতে বলেছি রির্পোট নিন। বাজে কথা বলবেন না।
অফিসার: (চোখ রাঙিয়ে) রির্পোট নিয়ে নিচ্ছি কিন্তু ২৪ঘন্টা না গেলে কোন তদন্ত শুরু করবো না।
থানায় রির্পোট করিয়ে তনয়াকে বাড়ি পৌছে দিয়ে তারা বাড়ি গেলেন।
তনয়া বাড়ি গিয়ে খুব ভেঙ্গে পরলো। মনে হচ্ছে কোন গোলক ধাধায় পরে গেছে। কোনটা মিথ্যা কোনটা সত্যি তার মধ্যে কেন জানি পার্থক্য করতে পারছে না। যদি আয়াতের মেসেজটা সত্যি হয় তাহলে বাড়িতে কেন বললো?? আর বাড়িতে বললে মেসেজটা কেন পাঠালো??
খুব কান্না করছে কনয়া। চোখের সামনে যেনো আয়াতের সাথে কাটানো স্মৃতুগুলো ভাসছে।
আয়াতের সাথে প্রথম দেখা হয়েছিলো কলেজের একটা অনুষ্ঠানে। অনুর সাথে আয়াত কলেজে এসেছিলো। অনুই আয়াতের সাথে তনয়ার পরিচয় করিয়ে দেয়।
আয়াত: হাই!!
তনয়া:হ্যালো,,
আয়াত: বিউটিফুল!!
তনয়া: হোয়াট??
আয়াত: আই মিন নাইস টু মিট ইউ।
তনয়া: ধন্যবাদ।
অনু: তনয়া তুই একটু ভাইয়ার সাথে থাক আমি দশ মিনিটের মধ্যে আসছি।
তনয়া কিছু বলতে যাবে তার আগেই অনু চলে গেলো। কিছুক্ষণ দুজনেই চুপ। নীরবতা ভেঙ্গে আয়াত বলল,,,,,,
আয়াত: তো কোন ইয়ারে পড়েন?? কোন বিষয়ে?
তনয়া: থার্ড ইয়ার ফাইনাল। হিসাব বিজ্ঞান বিভাগ। আর আপনি???
আয়াত: গুড। পড়াশুনা শেষ করে কিছুদিন হলো বাবার ব্যবসা দেখা শুনা করছি।
তনয়া: গুড।
আয়াত: আইসত্রুিম খাবেন???
তনয়া: না না ঠিক আছে।
আয়াত: দেখুন মিথ্যা বলবেন না। মেয়েরা আইসত্রুিম কখনো না করে না।
তনয়া: মুচকি হেসে। ওকে।
দজন আইসত্রুিম খাচ্ছে এর মধ্যে অনু এসে পরলো। অনুষ্ঠানে থাকা কালীন পুরোটা সময় আয়াত বারবার শুধু তনয়ার দিকে তাকিয়ে ছিলো। তনয়ার চোখে চোখ পরলেই আবার চোখ নামিয়ে নিতো।
রাতে আয়াত অনুর রুমে গিয়ে বলল,,,,,
আয়াত: বোন আইসত্রুিম খাবি???
অনু: মাখন লাগানো লাগবে না। কি চাই বল???
আয়াত: তনয়ার কি কোনো বয়ফ্রেন্ড আছে???
অনু: না। প্রচন্ড ভালো মেয়ে তনয়া। দেখতে যেমন সুন্দর মনটা তার থেকে বেশি সুন্দর। কোন ছেলেকে পাওা দেয় না। আর বাবা মায়ের একমাএ সন্তান। আর যদি ফোন নাম্বার বা ফেসবুক আইডি চাস তাহলে কালকে শপিং এ নিয়ে যেতে হবে।
এক শ্বাসে কথাগুলো বলে ফেললো অনু।
আয়াত: তুই কিভাবে বুঝলি???
অনু: আমি তোর মতো গাধা না। কলেজে থাকা কালীন সারাটা সময় তুই শুধু তনয়ার দিকেই উল্লুকের মতো তাকিয়ে ছিলি। তোর লজ্জা লাগে না।
আয়াত: কিসের জন্য???
অনু: ছোট বোনের বান্ধবী। সেও তো ছোট বোনের মতো। তার দিকে নজর দেয়া পাপ।
অায়াত: চুপ কর। ও আমার কোন জম্মের বোন রে?? আর খবরদার তনয়াকে নিষেধ করে দিবি ও যেনো আমাকে কখনো ভাইয়া বলে না ডাকে। আজ যখন ভাইয়া বলে ডাকছে মনে হয়েছে যেনো কলিজায় গিয়ে তীর মারছে।
এখন নাম্বারটা দে বোন বা ফেসবুক আইডি।
অনু: আর আমার শপিং???
আয়াত: ওকে ডান।
তারপর অনুর কাছ থেকে নাম্বারতো নেয় কিন্তু কল দেবার সাহস আয়াতের নাই।
আয়াত প্রায় তনয়াদের কলেজের সামনে যায়।
একদিন তনয়াকে প্রপোজ করলো। কিন্তু তনয়া বলল,,,,আপনি যে আমাকে সত্যিই ভালোবাসেন তার প্রমান কি???
পরেরদিন বিকালে আয়াত তার পুরো পরিবারকে নিয়ে তনয়াদের বাসায় যায় বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে।
তনয়ার বাবা বলে কয়েকমাস পর তনয়ার ফাইনাল পরীক্ষা। বিয়েটা যদি পরীক্ষার পর হতো তাহলে ভালো হতো।
তারাও রাজি হয়ে যায়। ওদের বিয়েতো ঠিক হয়ে যায়। কিন্তু তনয়া আয়াতের সাথে ঠিক মতো কথা বলে না। সবসময় এভোয়েট করে। আয়াতের এগুলোতে খুব কষ্ট লাগে কিন্তু কিছু বলে না। কিন্তু এভাবে থাকতেও পারে না। তাই অনুকে দিয়ে তনয়াকে নিজের বাসায় আনলো। সেদিন আয়াতের বাবাবা মা বাড়ি ছিলো না। আর অনুও দুজনের কথা ভেবে বাইরে চলে যায়।
আয়াত এসে তনয়ার পাশে বসে আর তনয়া আরেকটু দুরে সরে যায়।
আয়াত: তনয়া তুমি কি এই বিয়েতে খুশি না???
তনয়া: আমি কি সেটা বলেছি???
আয়াত: তাহলে তুমি আমাকে এভাবে এভোয়েট কেন করো???
তনয়া চুপ করে আছে।
আয়াত: কি হলো চুপ করে আছো যে প্লীজ কিছু বলো??
তনয়া: আমি বাড়ি যাবো??
আয়াত: ঠিক আছে তার আগে আমার প্রশ্নের উওর দেও।
তনয়া উঠে চলে যেতে চাইলে আয়াত তনয়ার হাতটা ধরে টান দিয়ে নিজের একদম কাছে নিয়ে আসে।
তনয়া: কি হচ্ছে ছাড়ুন???
আয়াত: এই মেয়ে আমি কি তোমার সাথে কোন খারাপ কিছু করেছি??? নাকি তোমাকে খারাপ কোন প্রস্তাব দিয়েছি?? তোমাকে সারাজীবন ভালোবাসতে চেয়েছি এইটা কি আমার অন্যায়???
তনয়া: আয়াত ছাড়ুন আমার হাতে লাগছে,,,
আয়াত তনয়াকে ছেড়ে দিয়ে সরি বলে নিজের রুমে চলে গেলো।
তনয়াও বাড়ি যাবার জন্য নিচে নামতেই দেখলো ওর মোবাইলটা ভিতরে ফেলে এসেছে।
তাই আবার ভিতরে গেলো। হঠাৎ আয়াতের রুম থেকে কাচ ভাঙ্গার শব্দ এলো। তনয়া ধীমি পায়ে আয়াতের রুমের সামনে গিয়ে আস্তে করে দরজাটা খুলে দেখে আয়াতের হাত থেকে রক্ত ঝরছে আর নিচে কিছু কাচের গ্লাসের ভাঙ্গা টুকরা পরে আছে।
আর ওর টেবিলে রাখা তনয়ার ছবির দিকে তাকিয়ে বাচ্চাদের মতো কাদছে। তনয়া জানে খুব বেশি কষ্ট না পেলে ছেলেরা কাদে না। তনয়া আয়াতের রুমে ডুকে আয়াতের হাতটা ধরে ভালোভাবে পরিষ্কার করে ব্যান্ডেজ করে দিলো। আয়াত শুধু তনয়ার দিকে তাকিয়ে আছে।
তনয়া: রাগটা কার উপর দেখালেন???
আয়াত: নিজের উপর।
তনয়া: কেন???
আয়াত: এই হাতটা তোমাকে কষ্ট দিয়েছে তাই।
তনয়া: আপনি জানেন আমি একটা ছেলেকে খুব ভালোবাসি???
কথাটা শুনে আয়াতের খুব কষ্ট হচ্ছিলো।
আয়াত: কাকে???
তনয়া: জানেন এতোদিন জানতাম সে আমাকে খুব ভালোবাসে। তাই তার ভালোবাসার সত্যতা যাচাই করতে এতোদিন তাকে খুব এভোয়েট করেছি। খুব কষ্ট দিয়েছি। কিন্তু আজকে জানলাম সে আমাকে একটুও ভালোবাসে না।
আয়াত: মানে???
তনয়া: যদি সে আমাকে ভালোবাসতো তাহলে নিজের হাত কেটে এভাবে আমাকে কষ্ট দিতে পারতো না।
আয়াত কিছু বলছে না শুধু তনয়ার দিকে তাকিয়ে আছে।
তনয়া আয়াতের কাটা হাতটায় আলতো করে একটা ভালোবাসার পরস একে দেয়। তারপর বলে পাগল। আমার চোখ দেখে বুঝো না তোমাকে কতটা ভালোবাসি। আয়াত নিজের বাহুডোরে তনয়াকে নিয়ে বলল খুব ভালোবাসি তোমায় তনয়া।
হঠাৎ তনয়ার ফোনটা বেজে উঠায় তনয়ার ভাবনায় ছেদ পরে।
ফোনটা হাতে নিয়ে স্ক্রিন এর দিকে তাকাতেই বুকটা কেপে উঠে তনয়ার। কারণ ফোনটা আয়াত করেছে।
তনয়া তাড়াহুড়ো করে ফোনটা তুললো।
তনয়া: হ্য হ্যা হ্য হ্যালো আয়াত???
আয়াত:----------
.
.
♥------"To be continue"-----♥