গল্প:- অবৈধ ~~~ ♥
.
লেখক:- #RJ_Nayem_Ahmed
.
.
পর্ব :- ০১~~~~♥️
.
.

আজ তনয়া জানলো যে সে মা হতে চলেছে। কথাটা একটা মেয়ের কাছে সবচেয়ে খুশির খবর। তনয়ার কাছেও এইটা পৃথিবীর সবচেয়ে সুখের খবর। কিন্তু সাথে সাথে সব থেকে লজ্জাজনক খবরও বটে।
কারণ তনয়া অবিবাহিত।
আর একটা অবিবাহিতা মেয়ের মা হওয়া আমাদের সমাজর লজ্জার সর্বসীমা পেড়িয়ে যায়। তনয়া বরাবরই তার মায়ের কাছে কিছু লুকায় না। মায়ের কাছে কথাটা বলা মাত্র মা সজোড়ে তনয়ার গালে একটা চড় মারে।
.
মা: তুই এরকম কাজ করবি তা আমি স্বপ্নেও কল্পনা করি নি। আরে তোর সাথে তো আয়াতের বিয়ে ঠিক হয়েই গেছে তাহলে কেন এরকম করলি বল??? নিজের উপর কোন নিয়ন্ত্রণ রাখলি না।
তনয়া: মা আমার সাথে আয়াতের বিয়ে আরো ছয় মাস আগেই হয়ে গেছে। কিন্তু তোমরা কেউ জানো না।
মা: কি???
তনয়া: হ্যা মা ছয় মাস আগে কাজি অফিসে আমাদের বিয়ে হয়। আর সাক্ষী হিসেবে আমার বান্ধবী অনু আর আয়াতের বন্ধু ইমরান ছিলো।
মা আমি অন্যায় করেছি কিন্তু আমার বাচ্চাটা অবৈধ না। আমরা ইসলামের পূর্ণ রীতি অনুসারে বিয়ে করেছি।
মা: সেটা তুই জানিস। আমি না হয় তোর কথা বিশ্বাস করলাম কিন্তু সমাজের মানুষকে কিভাবে বিশ্বাস করাবি?? আর আয়াত ও যদি অস্বিকার করে?? তুই আয়াতকে এ বিষয়ে বলেছিস??
তনয়া: না মা। আমার খুব ভয় লাগতে ছিলো তাই তোমার কাছে আগে বললাম।
মা: এসব কথা মেয়েরা সবার আগে স্বামীকে জানায় আর তুই তা না করে?? এখনি আয়াতকে সব জানা। আর আমি তোর বাবাকে বলে আয়াতের পরিবারের সবার সাথে কথা বলে বিয়ের ডেট যত তাড়াতাড়ি সম্ভব পাকাপাকি করছি।
এই বলে তনয়ার মা ওখান থেকে চলে গেলো।
তনয়া ফোনটা নিয়ে ভয়ে ভয়ে আয়াতকে ফোন করলো। রিং হলো কিন্তু কল টা রিসিভ করলো না।
আবার দিলো পর পর কয়েকবার দিলো কিন্তু রিং হয়েই যাচ্ছে আয়াত ফোন রিসিভ করছে না। এদিকে ভয়ে তনয়ার হাত পা ঠান্ডা হয়ে যাচ্ছে।
মনে হচ্ছে কলিজাটা শুকিয়ে কাঠ হয়ে যাচ্ছে। ঢক ঢক করে এক জগ পানি খেয়ে ফেলল এদিকে আয়াত নাতো ফোন রিসিব করছে নাতো ব্যাক করছে। প্রচন্ড টেনশন হচ্ছে।
তার কিছুক্ষণপর থেকে আয়াতের ফোনটা অফ। তনয়ার মাথাটা ঘুরছে। চোখ দুটো ঝাপসা হয়ে যাচ্ছে। দাড়িয়ে থাকার ক্ষমতা ধীরে ধীরে হারিয়ে ফেলছে। তারপর আর কিছু মনে নেই।
যখন জ্ঞান ফিরলো তখন তনয়ার চোখটা সোজা
দেয়ালে টানানো ঘড়ির দিকে গেল। প্রায় চার ঘন্টা হয়ে গেছে। হাত দিয়ে ফোন দিয়ে ফোনটা খুজছে।
হঠাৎ মনে হলো কেউ তনয়ার মাথার কাছে বসে
ওর মাথায় হাত বুলাচ্ছে।
মাথার পাশে তাকাতেই দেখে আয়াত তনয়ার দিকে তাকিয়ে ওর মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে। আয়াতকে দেখে তনয়া যেনো নিজের প্রাণ ফিরে পেলো। কিন্তু কিছু বলতে পারছে না। শুধু আয়াতের দিকে তাকিয়ে ফুপিয়ে ফুপিয়ে কান্না করতে ছিলো।
আয়াত: উঠে বসো,,,,
আয়াত তনয়াকে বসিয়ে তনয়ার মাথাটা নিজের বুকের সাথে চেপে ধরলো। আর বলল,,,,,
আয়াত: এ বুকে কি কোন ছলনার শব্দ শুনতে পাও???
তনয়া আয়াতের বুকে মাথা রেখে তখনো কাদছে।
আয়াত তনয়ার চোখের জল মুছে দিয়ে গালে হাত দিয়ে বলল,,,,,
আয়াত: হেই বিউটিফুল তুমি কি ভাবছো খবরটা শুনার পর আমিও অন্য ছেলেদের মতো ওয়ান টু ফোর হবো??? বোকা মেয়ে!!!
তনয়া: তাহলে ফোন রিসিভ করলা না কেন???
আয়াত: তার জন্য এত্তোগুলা সরি। আসলে তখন জরুরি মিটিং চলছিলো। আর ফোনটা সাইলেন্টে ছিলো। ফোনে চার্জও ছিলো না তাই হয়তো রিং হতে হতে ফোনটা অফ হয়ে যায়।
মিটিং শেষে ফোন চার্জ করে যখন ফোন অন করলাম তখন তোমার অনেকগুলো মিসকল দেখে কল দিলাম। তোমার মা ই ফোনটা রিসিভ করে তিনি বলেন তুমি নাকি অসুস্থ। দেরি না করে সোজা তোমাদের বাসায় চলে আসলাম। আন্টির কাছ থেকে সব শুনলাম।
ম্যাডাম টানা দেড় ঘন্টা ধরে তোমার পাশে বসে আছি। দেখেন অফিস ড্রেসেই আছি।
তনয়া: তার জন্যই তোমার গা থেকে ঘামের গন্ধ বের হচ্ছে।
আয়াত: তনয়াকে আরো জোড়ে নিজের বুকের মাঝে চেপে ধরে বলল এখন কি গন্ধ আসছে???
তনয়া: ছাড়ো। মা এসে পরবে।
আয়াত: ও হ্যালো ম্যাডাম। আমি আপনার বিয়ে করা স্বামী আর আপনি আমার বউ। কয়েকদিন পর আবার বিয়ে করবো। দু দুবার যাকে বিয়ে করবো তাকে জড়িয়ে ধরলে কার বাপের কি??
তনয়া: হয়েছে আর ভালোবাসা দেখাতে হবে না। সব দোষ তোমার??
বিয়ের আগে তুমিই বলেছিলে যে যতোদিন পারিবারিক ভাবে বিয়ে হবে না ততোদিন আমরা একে অপরের কাছে আসবে না। কিন্তু.......
আয়াত: হ্যা কিন্তু সেদিন কি যে হয়েছিলো আমার
বুঝতেই পারতেছিলাম না। দেখো আমরা ভুল করেছি কিন্তু পাপ না। কারণ আমরা শরিয়ত মোতাবেক স্বামী স্ত্রী। হ্যা আমাদের বিয়ের কথা কয়েকজন লোক ছাড়া কেউ জানে না। কিন্তু তবুও তো আমরা স্বামী স্ত্রী।
তনয়া: হুম সবতো বুঝলাম কিন্তু এখন কি করবে?
আয়াত: তুমি একদম চিন্তা করো না। এ মাসের মধ্যেই আমরা বিয়ে করে নিবো। বাবা মাকে আমি বুঝিয়ে বলবো। আর এসময় টেনশন নেয়া মা ও বাচ্চার জন্য ক্ষতিকর। আর আমি আমার দুই রাজকুমারীর কারোর ক্ষতি সহ্য করবো না।
তনয়া: দুই রাজকুমারী মানে???
আয়াত: হ্যা। যে আসছে সে আমার লিটিল প্রিন্সেস আর তুমি আমার মনের প্রিন্সেস।
তনয়া: পিন্সেস না হয়ে পিন্সও তো হতে পারে??
আয়াত: তা দেখা যাবে।
তনয়া: যখন তুমি আমার ফোন রিসিভ করছিলে না তখন মনে হচ্ছিলো প্রাণ বুঝি বেরিয়ে.......
আয়াত তনয়ার মুখটা চেপে ধরলো। আর বলল,,,
আয়াত: খবরদার এমন কথা কখনো বলবে না। হেই বিউটিফুল তোমার কিছু হলে তোমার আয়াতটাকে কে সামলাবে???(আয়াত কান্না করে দিলো)
তনয়া: জানো আয়াত মাঝে মাঝে আমার মনে হয়
তোমার মতো ছিছকাদুনে ছেলেকে আমি কিভাবে
ভালোবাসলাম???
পাগল তোমাকে ছেড়ে কোথায় যাবো?? তোমাকে আমি আগামী সাত জম্মের জন্য বুকিং করে রেখেছি।
আয়াত: তার মানে সাত জম্ম পর্যন্ত আমি অন্য কোনো মেয়ের সাথে চান্স মারতে পারবো না??
তনয়া: খুন করে ফেলবো তোমাকে!!!
আয়াত: তোমার ভালোবাসায় তো এমনিতেই খুন হয়ে আছি। আবার খুন করার কি দরকার??
তনয়া: মাঝে মাঝে তোমার উপর আমার খুব সন্দেহ হয়,,,
আয়াত: কেন???
তনয়া: তুমি কি সত্যিই আমাকে এতোটা ভালোবাসো নাকি অন্যকিছু??
আয়াত: বিশ্বাস করো না আমায়??
তনয়া: নিজের থেকে বেশি।
আয়াত: আচ্ছা বাদ দাও। তার আগেে আমাকে একটা কথা বলো মেয়েদের প্রেগন্সির খবর সবার আগে তার বরকে জানায় আর তুমি আমাকে না জানিয়ে তোমার মাকে কেন জানালে????
কি ভেবেছিলে আমি তোমায় ধোকা দিবো নাকি তোমার কথায় বিশ্বাস করবো না?? বলো????
তনয়া: আসলে রেজাল্ট পজেটিভ দেখে এতোটা
ভয় পেয়েছিলাম যে মা ছাড়া আর কারো কথা মাথায় আসে নাই।
আয়াত: বোকা মেয়ে। তুমি না এই আয়াতের হৃদয়। আর কেউ কি এই হৃদয় ছাড়া বাচতে পারে???
তনয়া: সরি। আসলে তখন মাথাটা কাজ করতে ছিলো না।
আয়াত: আমি জানি। আর আমিও সরি।
তনয়া: কেন????
আয়াত: সেদিন আমি জোড় না করলে আজ তোমাকে এতোটা নাজেহাল হতে হতো না। মা তোমাকে একটা চড় মারছে তাই না??
তনয়া: তোমাকে মা বলছে???
আয়াত: নাহ। তোমার গালে চড়ের দাগগুলো বলে দিচ্ছে। খুব ব্যাথা করছে তাই না??
তারপর আয়াত তনয়ার গালে একটা ভালোবাসার পরস একে দিলো।
তনয়া: এটা কি হলো???
আয়াত: এখন ব্যাথা চলে যাবে।
তনয়া: পাগল।
আয়াত: পাগলের বউ।
দুজনেই হেসে দিলো।
আয়াত: এখন আমাকে বাড়ি যেতে হবে। বাবা মাকে বলে বিয়ের ডেট এ মাসের মধ্যে ঠিক করতে হবে। সব জোগাড় করতে হবে।
অনেক কাজ আছে।
তনয়া: আয়াত শুনো,,,,
আয়াত: হ্যা বলো।
তনয়া: পাচ মিনিট বসো আমি আসতেছি।
আয়াত: তোমার উঠার কি দরকার?? আমাকে বলো কি লাগবে???
তনয়া: চুপ করে বসো তো।
কিছুক্ষণপর তনয়া আয়াতের জন্য খাবার নিয়ে আসলো।
আয়াত: এগুলো দিয়ে কি হবে???
তনয়া: অফিস থেকে সোজা এখানে আসছো তারমানে এখোনো কিছু খাও নি। এগুলো খাবে তারপর উঠবে।
আয়াত: ঠিক আছে তবে খাইয়ে দিতে হবে।
তনয়া আর আয়াত একে অপরকে খাইয়ে দিলো।
তারপর আয়াত চলে গেলো আর যাবার আগে তনয়াকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে কপালে একটা ভালোবাসার চিহৃ একে দিয়ে গেলো। আর বলল,,,
কাল তোমার জন্য একটা সারপ্রাইজ আছে।
পরেরদিন আয়াতের কোনো ফোন আসলো না সন্ধা বেলায় শুধু একটা মেসেজ আসলো।
তনয়া তোমার কাছ থেকে যা পাবার তা আমি পেয়ে গেছি। এখন নাতো তোমাকে চাই না তোমার বাচ্চাকে। গুড বাই তনয়া।
তারপর থেকে ফোন অফ।
মেসেজটা পড়ে তনয়া যেনো পাথর হয়ে গেলো।
আর ভাবছে..........
সব মিথ্যা??? এতোদিন থেকে কাল পর্যন্ত যা বলেছিলো প্রত্যেকটা কথা প্রত্যেকটা অনুভুতি সব মিথ্যা ছিলো?? মিথ্যা ছিলো ওর ভালোবাসাটা???
নাকি অন্য কিছু-----???
.
.
★------"To be continue"-----★