Discover postsExplore captivating content and diverse perspectives on our Discover page. Uncover fresh ideas and engage in meaningful conversations
এরেঞ্জ ম্যারেজ
৪র্থ পর্ব ( শেষ পাঠ)
ক'দিন যাবত ভাবছি নাদিয়াকে আর ফ্লোরে ঘুমোতে দিবো না, তাকে নির্লজ্জ বেহায়া মেয়ে মনে করে লুঙ্গির বদলে আর জিন্স প্যান্ট পরে ঘুমোতে যাবো না, সবকিছুর জন্য ক্ষমা চাইতে হবে ওর কাছে, যে মেয়েটা বাসর রাত থেকে আজ অবধি আমার কাছ থেকে শুধু অপমান অবহেলা পেয়েও বলতে পারে সে শপ্ন দেখে আমার বুকে মাথা রেখে ঘুমোচ্ছে, আমার মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে, যে মেয়ে স্ত্রীর মর্যাদা না পেয়েও মা-বাবার সেবায় এতটুকু ক্ষমতি রাখছে না, তাকে বাসর রাত থেকে আমার বুকে জায়গা না দিয়ে দিলাম ফ্লোরে !? কবে হলাম এতো পাষান !? কেন হলাম ? তিশার শুকে এমন হয়েছি ? তিশাকে হারানোর শুকে আমি পাথর মানুষে পরিণত হয়েছি ? কিন্তু তিশাকে হারানোর পিছনে নাদিয়ার তো কোনো দোষ ছিল না ? তাহলে, তাহলে নাদিয়ার সাথে আমি এমন করলাম কেন ? নাদিয়ার মতো অপমান আবহেলা যদি আমি তিশাকে করতাম ? তিশা কি আমার সাথে এতদিন থাকতো ? অবশ্যই না ।
এগুলো ভাবতে ভাবতে আমার মাথা পুরো এলোমেলো হয়ে যাচ্ছে, কিছুই বুচ্ছিনা, কি করা উচিৎ।
তবে নাদিয়াকে পেয়ে কেন জানি আব্বু-আম্মুকে জরিয়ে ধরে খুব কাদতে ইচ্ছে করছে, তাদের জন্য আজ আমি নাদিয়াকে পেয়েছি।
বাহিরে গেলাম, গিয়ে আম্মুর প্রিয় খাবার দই আর আব্বুর প্রিয় খাবার পাটিসপ্তা কিনলাম। হটাৎ মনে হলো নাদিয়ার জন্য কি নেয়া যায় ? ওর পছন্দ সম্পর্কে আমার কিছুই জানা হয়নি, তবে মেয়েরা কিটকাট পছন্দ করে, নিলাম কিটকাট। বাসায় আসার পথে বাদাম দেখে মনে হলো, বাদাম নিলে কেমন হয় ? আজ ছাদে গিয়ে না হয় নাদিয়ার সাথে চাঁদ দেখতে দেখতে বাদাম খাবো ? বাদাম আর মোমবাতি নিয়ে বাসায় গেলাম, রুমে ঢুকে দেখি নাদিয়া এশার নামাজ শেষ করে সালাম ফিরালো, নাদিয়ার সাথে ফ্রেন্ডশিপ করায় ও এখন ফাজলামোর ছলে একটু বেশি বেশি করে আমাকে বন্ধু ডাকে। আমি ছাদে চলে গিয়ে মোমবাতি জ্বালিয়ে নাদিয়াকে মেসেজ দিলাম; বান্ধবী বিয়ের লাল শাড়ী পরে ঘোমটা ছাড়া একটু ছাদে আসতে পারবা ?
নাদিয়া মেসেজ সিন করেছে,
নিজের বউয়ের সাথে আর ফ্রেন্ডশিপ রাখতে আমার আর ভালো লাগছেনা, আজ সবকিছুর সমাধান করতে হবে।
নাদিয়া আসলো, বউয়ের সাজে আসলো, আমি তাকিয়ে আছি নাদিয়ার দিকে, আমার কিছুটা নার্ভাস লাগছে , নাদিয়াকে একটা চেয়ারে বসতে দিয়ে আমি ওর কাছাকাছি চেয়ার নিয়ে বসলাম, নাদিয়া নিরব দর্শকের ভুমিকা পালন করছে, আমি বাদাম এগিয়ে দিয়ে বললাম আজকের চাঁদটা দেখো নাদিয়া, তোমার সাথে যেনো প্রতিযোগিতায় নেমেছে, আমি বিচারক; আমাকে বিচার করতে হবে আকাশের ঐ চাঁদটা সুন্দর নাকি আমার পাশের চাঁদটা বেশি সুন্দর।
কথা শুনে নাদিয়া মুচকি হেসে আমার কাধে মাথা রাখলো।
আচ্ছা নাদিয়া তুমি কি কখনো প্রেম করেছিলে ?
-নাদিয়া চাঁদের দিকে তাকিয়ে তাকিয়ে বললো "বিয়ে টিক হবার পর প্রথম যেদিন তোমার ছবি দেখেছিলাম, সেদিন থেকে আমার জিবনে প্রেম-ভালোবাসা এসেছিল । প্রতিরাতে তোমার ছবির দিকে তাকিয়ে বাসর রাত নিয়ে আমি শপ্ন দেখতাম"।
তাহলে তুমি কি বাসর রাতের সেই শপ্ন আমি ঘুমিয়ে যাবার পর পূরণ করেছিলে ??
-নাদিয়া মুচকি হেসে বললো, " ঐ রাতে তোমার মুখে তিশা তিশা শব্দ শুনে আমার মধ্যরাতে হটাৎ ঘুম ভেঙে যায়, তারপর দেখলাম তোমার লুঙ্গী হাটুর নিচে চলে গেছে, আমার কাছে ব্যাপারটা কেমন জানি অস্বস্থির লাগছিলো, তাই তোমার লুঙ্গি একটু উপরে দিতে গেলাম, তখন তুমি তিশা তিশা বলে আমাকে জরিয়ে ধরলে, আমি শেষমেশ তোমার বুকে মাথা রেখেই ঘুমিয়ে পড়লাম"।
নাদিয়ার কথা শুনে আমার গলা শুকিয়ে আসছে, লজ্জা লাগছে নিজের কাছে, আমি প্রশ্ন করলাম; তাহলে, তাহলে সাতসকালে গোসল করার ব্যাপারটা কি ছিল ?
-প্রায় অর্ধেক রাত একটা পুরুষ আমাকে তার ভালোবাসার মানুষ মনে করে জরিয়ে ধরে ঘুমিয়েছে, তাই গোসল ছাড়া ফজরের নামাজ পরা আমার কাছে ভালো দেখাচ্ছিলো না। আর সকালে রহস্যময় আচরণ করছিলাম আমার ভালোবাসার মানুষটাকে একটু রাগানোর জন্য, তার চমকে যাওয়া চেহারা একটু দেখার জন্য, আর এতে তুমি আমাকে নষ্টা বেহায়া নির্লজ্জ মেয়ে মনে করে প্রতিদিন প্যান্ট পরে ঘুমোতে যেতে। কথাটা বলেই নাদিয়া চেয়ার থেকে উঠে চলে গেলো।
আমি বসে আছি, আমি পাথর মানুষটার চোখ দিয়ে আজ অঝোরে পানি পড়ছে, নিজেকে খুব ঘৃণা হচ্ছে, নিজের বিবেকের বিচারে আজ আমি নিজেই অপরাধী।
রুমে ঢুকে দেখি নাদিয়া আয়নার সামনে দাড়িয়ে সাজুগুজু করছে, সে নিশ্চিত বুঝতে পারছে আজ ওর ভালোবাসার মানুষটা তাকে আর ফ্লোরে ঘুমোতে দিবে না, আজ তার শপ্ন পূরণের রাত, নাদিয়া সাজুগুজু করছে আর আমি প্রতিদিনের মতো পেছন থেকে তাকিয়ে দেখছি, আয়নায় আমাকে দেখে নাদিয়া মুচকি হাসলো। আমি এগিয়ে গিয়ে নাদিয়াকে পেছন থেকে জরিয়ে ধরলাম, আয়নায় আমি স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছি নাদিয়ার চেহারা, আমি জরিয়ে ধরার সাথেসাথেই সে চোখ বন্ধ করে ফেললো। কিছুক্ষণ পর নাদিয়ার গাল বেয়ে পানি পড়তে লাগলো। আমি বললাম, আজ তোমার গুনগুন করে গাওয়া সেই গান বাস্তব হয়েছে নাদিয়া, "আমি পাথরে ফুল ফুটাবো
শুধু ভালোবাসা দিয়ে"।
তুমি সেটা খুব সফলভাবে পেরেছো।
আজ তুমি কান্না না করে বিজয়ের হাসি হাসো।
নাদিয়া আমার হাত ছাড়িয়ে ফ্লোরে গিয়ে শুয়ে পড়লো।
আমিও নাছোড়বান্দা মতো ওর পাশে গিয়ে শুয়ে পড়লাম, নাদিয়া এখন মুচকি হেসে বেডে চলে গেলো।
আমিও আবার বেডে চলে গেলাম, নাদিয়া এখন অভিমান করে সময় নষ্ট না করে আমার বুকে মাথা রাখলো, আমি ওর মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছি।
নাদিয়া কিছুক্ষণ পর আমার কানের কাছে এসে বললো; "এই জানো ? তোমার বউ একটা ভার্জিন মেয়ে"।
আমি ওর কানের কাছে গিয়ে বললাম; বালিকা সেটার বড়াই আর বেশিক্ষণ করতে পারবা না ।
কথাটা শুনে নাদিয়ার মুখটা লজ্জায় লাল হয়ে গেলো।
আমি নাদিয়ার কোলে মাথা রাখলাম, নাদিয়া আমার মাথায় হাত বুলাতে বুলাতে গুনগুন করে রবিন্দ্র সঙ্গীত গাচ্ছে; "ভালবেসে সখি নিভৃতে যতনে আমার নামটি লিখো
তোমার মনেরও মন্দিরে।।
আমারও পরাণে যে গান বাজিছে তাহার তালটি শিখো
তোমার চরণ মঞ্জিরে"।।
লেখকঃ Jobrul Islam Habib
এরেঞ্জ ম্যারেজ
৩য় পর্ব
নাদিয়া আমার বেডে ঘুমিয়ে আছে, আমি রুমে আসছি সেটা বোধহয় ও বুঝতে পারেনি। কি করবো ? প্রতিদিনের মতো অপমান করে ফ্লোরে যেতে বলবো ? না থাক, টেবিলে ভাত রাখা আছে খেয়ে আসি। খাওয়া শেষ করে রুমে এসে দেখি নাদিয়া ফ্লোরে চলে গেছে।
নাদিয়ার মাঝে আজকাল কিছু পরিবর্তন এসেছে, এখন আর আগের মতো আমাকে বিরক্ত করেনা, হাজার অপমানের পর ও আমি ঘুমিয়ে গেলে বেহায়ার মতো আমার মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে আসেনা। আমার স্পর্শ পাওয়ার জন্য বাহানা খুজে না।
নাদিয়া হয়তো জানেনা, আমি তিশাকে হারানোর শোকে যে পাথর মানুষে পরিণত হয়েছিলাম, সেই পাথর মানুষ এখন আর আমি নেই। আমার মাঝে মুগ্ধতা ফিরে এসেছে, বাহির থেকে এসে যখন বাসার কলিং বেল বাজাই, ভেতর থেকে সে দরজা খুলে দিয়ে যখন হেটে চলে যায়, আমি তখন পেছন থেকে অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকি, ওর চুল দেখে মুগ্ধ হই, লাল ব্লাউজের সাথে সবুজ শাড়ীতে তাকে দেখে মুগ্ধ হই, সে আমার ভোতা অনুভূতিগুলো জাগিয়ে তুলেছে। দিন দিন আমি পাথর মানুষটা ওর প্রতি দুর্বল হয়ে যাচ্ছি।
আচ্ছা, নাদিয়া কি এখন ঘুমিয়ে গেছে? নাকি চোখ বন্ধ করে শুয়ে আছে, ডেকে দেখি ? না থাক মেসেজ দেই।
মেসেজ দিলাম; "আপনি ঘুমিয়ে গেছেন নাকি" ?
তাকিয়ে দেখলাম মেসেজের রিং বাজতেই নাদিয়া মোবাইল হাতে নিয়ে টাইপ করছে।
-কিছুক্ষণ পর রিপ্লে আসলো; "না এখনো ঘুম আসেনি, কেন, মশারি টাঙিয়ে দিতে হবে বুঝি" ?
আমি বললাম; না, বলছিলাম আজকে আপনি বেডে এসে ঘুমান আর আমি ফ্লোরে যাই।
-রিপ্লে দিলো; "তাই নাকি ? কিন্তু আমার যে ভালোবাসার মানুষটাকে ফ্লোরে ঘুমোতে দিয়ে বেডে ঘুম আসবেনা, তার চেয়ে বরং আপনি বেডে ঘুমান"।
আমার কেন জানি ইচ্ছে করছে ওকে বলি; তাহলে এসো দুজন একিই বেডে ঘুমাই, কিন্তু বলতে যেয়ে ও কিরকম আটকে যাচ্ছি।
তবে আটকে থাকলে আমার চলবেনা, তিশা আমার জন্য থেমে নেই, এখন সে বাচ্চাকাচ্চা নিয়ে সুখের সংসার করছে, আমার ও এখন নাদিয়াকে নিয়ে সুখে সংসার করতে ইচ্ছে হয়।
আচ্ছা, নাদিয়ার সাথে আমি এতদিন এতো খারাপ ব্যবহার করলাম কেন ? নাদিয়ার তো কোনো দোষ নেই, আব্বু-আম্মুর জন্য আমি তিশাকে পাইনি, কোনোভাবে আমি সেই রাগ নাদিয়ার উপর মেটাচ্ছি না তো ? সবকিছুর জন্য নাদিয়াকে সরি বললে কেমন হয় ? সরি বলতে এখন কেমন জানি আত্মসম্মানে লাগছে। তার চেয়ে বরং আগে ওর সাথে ফ্রেন্ডশিপ করি।
নাদিয়াকে মেসেজ দিলাম; আমরা কি ফ্রেন্ডশিপ করতে পারি ?
-নাদিয়া রিপ্লাই দিলো; "তাই, টিক আছে, তবে একটা শর্ত আছে, আমাকে আপনি করে না বলে তুমি করে বলতে হবে, এবং কথায় কথায় এই মেয়ে বলা বন্ধ করে এই নাদিয়া বলে ডাকতে হবে, পারবে তুমি ?
হুম পারবো ।
-নাদিয়া মেসেজ দিলো; "রাত অনেক হলো, এখন ঘুমিয়ে পড়ো"।
আমি বললাম ঘুম আসছেনা, তুমি ঘুমাও ।
তাকিয়ে দেখলাম নাদিয়া মোবাইল হাত থেকে রেখে শুয়ে পড়ছে।
আমিও অন্যদিনের মতো ওকে শুয়ে শুয়ে দেখছি, দুষ্ট ফ্যানের বাতাস আজ নাদিয়ার চুলগুলোর সাথে সবুজ শাড়ীর আঁচল নিয়ে ও খেলায় মেতেছে।
এই দৃশ্যগুলো দেখে নাদিয়ার ইচ্ছের সাথে আজ আমার ইচ্ছের মিলন ঘটছে , সেটা হচ্ছে আমার ও খুব ইচ্ছে করছে নাদিয়াকে বুকে জরিয়ে ধরে ঘুমোতে, ওর চুল একটু ছুয়ে দেখতে, ওর মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে ।
আমি বিছানা থেকে উঠে ওর পাশে গেলাম, কেমন জানি লাগছে, যদি ও বুঝে ফেলে ?
আবার চলে আসলাম বেডে, চোখ বন্ধ করে শুয়ে পড়লাম, কিছুক্ষণ পর মোবাইলে রিং বাজলো, মোবাইল হাতে নিয়ে দেখলাম নাদিয়া মেসেজ দিছে; " নিজের বউকে চুরি করে দেখার কি আছে বন্ধু" ??
মেসেজ পড়ে আমি লজ্জায় চোখ বন্ধ করে ঘাপটি মেরে শুয়ে পড়লাম, নাদিয়া আজ একটু সাহস পেয়েছে বোধহয়, আমার পাশে এসে শুয়ে পড়েছে, আমি বুঝতে পেরেও কিছু না বলে চোখ বন্ধ করে আছি, নাদিয়া আমার মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে আর গুনগুন করে গান গাচ্ছে; " আমি পাথরে ফুল ফোটাবো
শুধু ভালবাসা দিয়ে,
আমি সাগরের ঢেউ থামাবো
শুধু ভালবাসা দিয়ে।
লেখকঃ Jobrul Islam Habib
এরেঞ্জ ম্যারেজ
২য় পর্ব
এখন আর লুঙ্গী পরে ঘুমোতে যাইনা, ঐ রাতের ঘটনার পর থেকে ভেবে নিয়েছি আর লুঙ্গী পরে ঘুমাবো না। বাসর রাতেই মেয়েটা এতো নির্লজ্জ হয়ে যাবে আমি ভাবিনি।
আজ সারাদিন বন্ধুদের সাথে বাহিরে আড্ডা দিয়ে রাত ৯-টায় বাসায় ফিরতেছি । বাড়িতে থাকলে নাদিয়ার সাথে একই রুমে থাকতে হবে, এটা আমার কাছে খুব অস্বস্তির একটা ব্যাপার। নাদিয়ার চোখে চোখ পড়লে আমি এখন বিব্রতবোধ করি। বাসর রাতের ঘটনার পর থেকে এমনটা হচ্ছে ।
আমার মাঝেমাঝেই ইচ্ছে করে নাদিয়াকে গিয়ে জিজ্ঞেস করি বাসর রাতে কে আমার লুঙ্গী খুলেছিল ??
অথবা জিজ্ঞেস করি সেদিন সাতসকালে কেন সে গোসল করেছিল।
আজকে বাসায় গিয়ে কি জিজ্ঞেস করে ফেলবো ? না থাক, ওর সাথে কথা বাড়াতে ভালো লাগেনা।
আজকাল নাদিয়াকে আমার খুব হিংসে হয়, সারা বাড়িটা দিনদিন ওর দখলে চলে যাচ্ছে, আব্বু-আম্মু সবাই এখন ওকে নিয়ে সারাক্ষণ মেতে থাকে।
আম্মুর সাথে যখন নাদিয়াকে মাখামাখি করতে দেখি তখন আমার নিজেকে রোহিঙ্গা রোহিঙ্গা মনে হয়।
রাত অনেক হয়েছে, দরজার সামনে এসে কলিং বেল বাজালাম।
নাদিয়া দরজা খুলে দিলো, ওর পরনে আজ সবুজ রঙের শাড়ী, লাল ব্লাউজ, চুলগুলো কোমরের বাজে এসে পড়েছে, দরজা খুলে যখন ও হেটে যাচ্ছে আমি তখন পিছন থেকে ওকে দেখছি। অপরুপ সুন্দর লাগছে মেয়েটাকে।
তাতে আমার কি ?? ওর রুপে মজে যাবার মতো ছেলে আমি না, আমার তিশা ও কম সুন্দর ছিলনা। আব্বু-আম্মুর খামখিয়ালে আমি তিশাকে হারিয়েছি।
বাসায় ঢুকতেই আম্মু-আব্বু বকা শুরু করলো। কারণ নতুন বউ রেখে সারাদিন বাহিরে ছিলাম। কোনো কথা না বলেই আমি রুমে গিয়ে ঘাপটি মেরে বসে থাকলাম।
কিছুক্ষণ পর নাদিয়া রুমে আসলো।
-গ্লাসে পানি ঢেলে একটু ন্যাকামি করে আমাকে বললো, "পানি চলবে" ?
আমার যথেষ্ঠ পানির পিপাসা থাকার পর ও বললাম, "আমি কি বলছি পানি লাগবে, আগ বাড়িয়ে কোনোকিছু করবেন না"।
আমার কথা শুনে নাদিয়ার হাসিখুশি মুখটা নিমিষেই মলিন হয়ে গেলো। পানির গ্লাস রেখে চলে গেলো রান্নাঘরে।
আম্মু খাবার টেবিলে ডাকলো, চলে গেলাম খাবার টেবিলে, আব্বু-আম্মু খাবার খাচ্ছে আর নাদিয়ার রান্নার প্রশংসা করছে। রান্না আসলেই খুব ভালো হয়েছে তারপরও আমি চুপচাপ খেয়ে রুমে এসে শুয়ে পড়লাম।
পরনে জিন্সের প্যান্ট, নিশ্চিন্তে ঘুমোতে পারবো, আজ খুব মাথা ব্যাথা করছে, তাড়াতাড়ি ঘুমোতে পারলেই হয়, বিছানায় গা হেলিয়ে দিলাম।
কিছুক্ষন পর অনুভব করলাম কে জানি আমার মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে ।
নির্লজ্জ মেয়ে নাদিয়া ছাড়া আর কেউ না, কিন্তু মাথা ব্যাথার সময় মাথায় হাত বুলানো খারাপ না, আমার ভালোই লাগছে।
ভালো লাগাকে প্রশ্রয় না দিয়ে আমি বললাম, "এই মেয়ে এই, তোমাকে না একবার না করলাম আমাকে স্পর্শ করবানা, যাও ফ্লোরে গিয়ে ঘুমাও, না হয় আমি ফ্লোরে গিয়ে ঘুমাবো "।
নাদিয়া ফ্লোরে চলে গেলো ঘুমোতে।
কিছুক্ষণ পর আবিষ্কার করলাম কে জানি কাদছে, খিয়াল করে দেখলাম নাদিয়া বালিশে মুখ চেপে কাদছে।
বুঝতেছিনা কি করবো, নাদিয়ার সাথে কি বেশী করে ফেলছি ?
কাদছে কেন, আমার কি করা উচিৎ, কি করবো ?? ওকে কি জিজ্ঞেস করবো কাদছো কেন ?? অথবা ওর পাশে বসে একটু গল্প করবো ?? না এসব করা যাবেনা।
হটাৎ আমার মাথায় আইডিয়া আসলো মেসেজে কথা বলি ।
নাম্বারটা আম্মু বিয়ের আগে ফটোর নিচে লেখে দিয়েছিল।
ফটো বের করে মেসেজ দিলাম; " কাদছো কেন" ?
কিছুক্ষণ পর মেসেজ আসলো; "১০০ বার কাদবো, আপনি আমার সাথে এমন করেন কেন, আমার দোষটা কি শুনি !? আমাকে পছন্দ না হলে বিয়ের আগে না করে দিতে পারতেন"।
সত্যিই তো নাদিয়ার দোষ কি ?? আমি ওর এই প্রশ্ন এড়িয়ে গিয়ে মেসেজ দিলাম; আপনি কি আমাকে পছন্দ করে বিয়েতে রাজি হয়েছিলেন।
- "হুম, বিয়ের আগে আপনার ফটো দেখেছিলাম, ফটো দেখার পর থেকে আপনাকে শুধু পছন্দ না; খুব ভালোবাসি, জানেন আপনি দেখতে কত সুদর্শন একটা ছেলে, একদম আমার শপ্নের রাজকুমার, আপনার চুলগুলো অনেক সুন্দর, আপনার চেহারায় কেমন জানি একটা মায়া আছে, আমি না বিয়ের আগে আপনার ফটো দেখে শপ্ন দেখতাম, আপনার বুকে মাথা রেখে ঘুমাবো"।
মেসেজের আর রিপ্লে দিলাম না, কারণ নাদিয়া আমাকে ধীরে ধীরে দুর্বল করে ফেলছে ।
- রিপ্লে না পেয়ে এরিমধ্যে নাদিয়া কয়েকটা মেসেজ দিলো; "রিপ্লে দাও না কেন, কিইই হলো মিস্টার, হ্যালো, হ্যালো"।
কোনো রিপ্লে না দিয়ে ওর বিপরীত দিকে মুখ করে আমি শুয়ে পড়লাম।
এতক্ষণে হয়তো ঘুমিয়ে গেছে নাদিয়া।
ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে কেন জানি ওকে দেখতে ইচ্ছে করছে,
রুমে হালকা আলো, উপরে ইলেকট্রনিক ফ্যান ঘুরছে, আমি দেখতে পাচ্ছি ঘুমন্ত নাদিয়াকে, ঘুমন্ত অবস্থায় নাদিয়াকে আরো বেশি সুন্দরী দেখাচ্ছে।
হুমায়ুন আহমেদ বলেছিলেন, "যে নারীকে ঘুমন্ত অবস্থায় সুন্দর দেখায় সে নারী প্রকৃত সুন্দরী"।
নাদিয়া বোধহয় হুমায়ুন আহমেদের সেই প্রকৃত সুন্দরী।
ফ্যানের বাতাসে নাদিয়ার চুলগুলো এলোমেলো হয়ে গেছে, চুলের জন্য মুখটা আর ভালো করে দেখা যাচ্ছে না , ইচ্ছে করছে গিয়ে ওর চুলগুলো একটু সরিয়ে আসি।
যাবো নাকি ? কিন্তু ও যদি বুঝে ফেলে ?
না থাক, আমি বরং এভাবেই দেখি, দেখতে দেখতে হটাৎ ঘুম চলে আসলো।
সকালবেলা ঘুম ভাঙলো নাদিয়ার কোরআন তিলাওয়াত শুনে, খুব উচ্চস্বরে তিলাওয়াত করছে না, গুনগুন আওয়াজ করে, আমার আবার একটুতে ঘুম ভেঙে যায়।
তিলাওয়াত শেষ করে নাদিয়া রান্নাঘরে চলে গেলো, কিন্তু আমার মশারি কে খুলবে ? আমার মশারি টাঙাতে বা খুলতে যত আলসেমি, বিয়ের আগে না হয় আম্মু খুলতেন, এখনো কি আম্মুকে বলবো মশারি খুলতে ? কিন্তু বউ রেখে আম্মুকে বললে আম্মু কি মনে করবে ?
তার চেয়ে বরং নাদিয়াকে মেসেজ দিয়ে বলি মশারি খুলে দিতে, মেসেজ দিলাম; " নাদিয়া মশারিটা একটু খুলে দিতে পারবেন" ?
- নাদিয়া রিপ্লে দিলো; "অবশ্যই না"
আমি প্রশ্ন করলাম; কেন খুলবেন না ?
-কারণ, বিয়ের এতদিন হয়ে গেলো অথচ যে বর এখনো আমাকে সেলোয়ার কামিজের গিট্টু খুলে দেবার কথা বলেনা, আমি তার মশারির গিট্টু খুলে দিতে বাধ্য নই, আমার বয়েই গেছে আপনার মশারি টাঙিয়ে আর খুলে দিতে"।
এরেঞ্জ ম্যারেজ
১ম পর্ব
যাক বাবা !! শেষমেশ বিয়েটা করেই ফেললাম।
আজ আমার বাসর রাত।
বউ-টউ আমি এখনো দেখিনি, দেখার দরকার ও নেই।
আমি বাসর ঘরে ঢুকেই লুঙ্গি পড়ে হাত-পা চারদিকে ছড়িয়ে দিয়ে বেডে শুয়ে পড়লাম ।
বউ দাঁড়িয়ে আছে।
আমি বললাম; "এই মেয়ে আমার হেডফোনটা এদিকে একটু দেন তো"।
আর রুমের বাতিটা অফ করেন ।
হেডফোন হাতে নিয়ে বললাম; "চার্জারটা এদিকে দেন" ।
মোবাইল চার্জে লাগিয়ে আমি হেডফোন দিয়ে মনের সুখে গান শুনতেছি আর ফেসবুকিং করছি।
মেয়েটা দাঁড়িয়ে আছে, কিছুক্ষণ পর আমার পায়ে সালাম করলো।
আমি চমকে উঠে বললাম; "এই মেয়ে এই, সালাম করবা ভালো কথা আপনি আমার পা স্পর্শ করলা কেন ??
-দেখেন, আমি "এই মেয়ে" না, আমার নাম "নাদিয়া" ।
আপনার নাম দিয়ে আমার কোনো কাম নেই,
আমাকে কখনো স্পর্ষ করবেনা বলে দিচ্ছি।
-আমি কি খুব গরম, যে স্পর্শ করলেই আপনার গা জ্বলে যাবে ??
আরে আপনি তো আচ্ছা বেয়াদাব মেয়ে আপনার সাহস তো কম না, এতো প্যাচাল পারবেন না আমার সাথে।
-হুম ঠিক আছে, কিন্তু আমি তো আপনার পাশের বালিশটায় শুতে পারি, নাকি ??
-অবশ্যই না, ফ্লোরে ঘুমাবেন ।
-ওকে সমস্যা নেই।
আমি গান শুনছি, রাত ঘনিয়ে আসছে, হটাৎ ফ্লোরে খেয়াল করে দেখলাম মেয়েটা এতক্ষণে ঘুমিয়ে পড়েছে, মোবাইলের ডিসপ্লের হালকা আলো ওর মুখে গিয়ে পড়ছে, এতক্ষণে আমার খেয়াল হলো আম্মুর কথাটাই ঠিক, মেয়েটা আসলেই খুব সুন্দরী ।
তাতে আমার কি, আমি ও ঘুমিয়ে পড়লাম।
সকালে ঘুম থেকে উঠে দেখি, কেন জানি আমার শ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছে, শরীরটা যেনো কে চেপে ধরেছে।
ওমা কি সাহস মেয়েটার, আমার বুকের উপর ঘুমিয়ে আছে।
হটাৎ খেয়াল করে দেখলাম আমার পরনে লুঙ্গীটা ও আর নেই।
কি সর্বনাশ রে বাবা, কে আমার এই সর্বনাশ করলো, এই মেয়ে এই, উঠেন বলছি উঠেন ।
-চোখ কচলাতে কচলাতে বললো "কি হইছে ?? সাতসাকালে চেচামেচি করছেন কেন" ??
-আরে চেচামেচি কি আর স্বাদে করছি, আমার লুঙ্গী কই ??
-মুচকি হাসি দিয়ে ও বাতরুমে চলে গেলো গোসল করতে।
-আমি অবাক, ঘুম থেকে উঠেই মেয়েটা গোসল করতে গেলো কেন, আমিতো কিছু টের পেলাম না। লুঙ্গীটা খাটের নিচে পড়ে আছে।
ঘটনা কি !!
এসব ভাবতে ভাবতে মেজাজটা খুব গরম হয়ে আসছে, আব্বু-আম্মুর কথায় বিয়ে করাটাই ভুল হইছে। আমার ডিসিশনই ঠিক ছিলো।
-তিশাকে যখন আব্বু-আম্মু মেনে নেয়নি, তখন থেকে রাগে-ক্ষোভে দুঃখে-কষ্টে গভীর রাতে তিশাকে কাছে না পাওয়ার যন্ত্রণায় ধীরে ধীরে আমি একজন পাথর মানুষে পরিণত হয়েছিলাম, মাথায় একটা জিনিস খুব অশ্লীলভাবেই ঢুকিয়ে নিয়েছিলাম; বিয়েসাদী আর করবোই না । তিশা ছিলো বড়লোকের মেয়ে, এখানেই আম্মুর যত্তসব সমস্যা, আম্মুর একটাই কথা, "আমার একটা মাত্র ছেলে, ছেলেটাকে আমাদের থেকে কোনো বড়লোকের মেয়ের সাথে বিয়ে দিবো না"।
আম্মুর কথাবার্তার ধরনে মনে হতো; বড়লোকের মেয়েরা বর পিটায়, অথবা বড়লোকের মেয়েরা মাদকের মতো ধীরে ধীরে উনার একমাত্র ছেলেকে শেষ করে ফেলবে।
এদিকে
প্রেম আর লাভ ম্যারেজ নিয়ে ছিল আব্বুর যত্তসব সমস্যা; আমি যখন ক্লাস সিক্সে পড়ি তখন সিনেমা দেখে সবেমাত্র চোখমারা শিখেছি, স্কুলে যেয়ে সহপাঠী তমাকে বার বার চোখ মারছিলাম, তমা সেদিন বাড়িতে এসে আব্বুর কাছে দিয়ে দিলো বিচার ; সেদিন রাত্রে ধপায় ধপায় আব্বুর হাতে মাইর খেলাম, সেকি যন্ত্রণা, পাছা ফ্যানের দিকে দিয়ে উল্টো হয়ে ঘুমোতে হয়েছে রাত্রে । পিটান খেয়ে আর তমার পিছনে লাগিনি প্রায় দুবছর , ক্লাস নাইনে যখন উঠলাম তখন আবার তমাকে চিঠি দিলাম, সেদিন কে জানি বিচার দিয়ে দিলো হেডস্যারের কাছে, হাতেনাতে চিঠি ধরা পড়ায় হেডস্যার আব্বুকে ফোন দিয়ে স্কুলে নিলেন, আব্বু আমাকে বাসায় এনে স্যান্ডেল দিয়ে পাছায় দুচা পিটান দিলেন । সেদিন টেবিল ফ্যানের সামনে পাছা রেখে জ্বালা-যন্ত্রনাকে সামাল দিতে হয়েছিল। এসব মনে হলে শরীর এখনো ভয়ে ঘেমে যায়।
ধীরে ধীরে বড় হলাম, প্রেম করলাম তিশার সাথে, বিয়ের বয়স হয়েছে, ভয়-ডর ভেঙে তিশার কথা জানালাম আব্বু-আম্মুকে, কিন্তু তারা কিছুতেই তিশাকে মেনে নেয়নি, সবঠিক থাকলে ও আব্বু লাভ ম্যারেজে রাজি নয়, সবঠিক থাকলে ও বড়লোকের মেয়ে আম্মুর পছন্দ নয় ।
আব্বু-আম্মুর খামখেয়ালে যখন আমি আমার ভালোবাসা তিশাকে প্রায় হারিয়ে ফেলতে বসলাম, তখন পালিয়ে বিয়ে ছাড়া কোনো উপায় ছিলো না, তিশাকে বললাম চলো আমরা পালিয়ে বিয়ে করি, এদিকে আবার তিশা কল্পনাই করতে পারেনা পালিয়ে বিয়ে করবে, তিশার ডিসিশন ফাইনাল; ওর মা-বাবাকে কাদিয়ে সে বিয়ে করবেনা, মা-বাবার ইজ্জতের বারোটা বাজিয়ে ও সুখে থাকবেনা। যদি আমার পরিবারকে রাজি করতে পারি তাহলে তিশাকে পাবো।
-তিশাকে আমি পাইনি, আজ তিনবছর হলো অন্যকারো সাথে তিশার বিয়ে হয়ে গেছে , আমি এখনো ওরে পুরোপুরি ভুলতে পারিনি।
আব্বু-আম্মু খুব জোরাজোরি করতেছে বিয়ে করার জন্য, আম্মুর ও বেশ বয়স হয়েছে, আমার বিয়েটা যেনো এখন সময়ের দাবী, বান্ধুবান্ধবরা ও খুব বুঝায় বিয়ে করার জন্য, আম্মু মাঝেমধ্যে বিয়ের জন্য খুব ইমোশনাল ব্ল্যাকমেইল করে। আমিও বুঝতাম, বাসার রান্নাবান্নার জন্য হলেও একটা বউ দরকার।
শেষমেশ আব্বু-আম্মুর জোরাজোরিতে, সাময়ের দাবী মেনে নিতে বিয়ে করলাম; ভাবলাম আব্বু-আম্মুর কাছে যে বউমা, আমার কাছে না হয় সে কাজের মেয়ে হয়ে থাকবে; সমস্যা কি ??
কিন্তু এখন বুঝতে পারলাম এই মেয়েটা আসলেই সমস্যা।
এতক্ষণে গোসল করে মনের সুখে গুনগুন গান গেয়ে বাথরুমে থেকে বের হচ্ছে।
আমি খুব কঠিনভাবে চোখ রাঙানি দিয়ে বললাম; "এই মেয়ে এই, আপনি সাতসকালে গোসল করলেন কেন ??
-মেয়েটা আমার চোখ রাঙানিকে পাত্তা না দিয়ে খুব স্বাভাবিকভাবেই বললো; "আরে বোকা গোসল করতে হয়, তুমিও গোসল করে এসো, যাও"।
লেখকঃঃ Jobrul Islam Habib