Sweet Sahjan changed his profile picture
6 yrs

image

M.o.a.jowel

image
Mortuzza Mahmud Sani changed his profile picture
6 yrs

image

#Asik

image

#Ekramul

Ekramul Sardar changed his profile picture
6 yrs

image
Alif Hasan changed his profile picture
6 yrs

image
Md Mehedi Hasan changed his profile picture
6 yrs

image

অভাবের দিনগুলি: আম্মা ধার চেয়েছিলেন ২০০০ টাকা : পেলাম ২০ টাকার দুটো নোট
২০০০সন ।
আমার মা তখন প্রেগন্যান্ট। মায়ের পেটে আমাদের গোল্ডেন সিস্টার আদুরে ছোট বোন আফসানা।আফসানা এই পর্যন্ত তিন টা গোল্ডেন জিপিএ ৫ পাওয়ায় এই নাম তার।
মা খুব অসুস্থ ছিলেন তখন। আমাদের অভাব ও তুঙ্গে।
বাবা তখন বেকার।ঘরে বাজার নেই,চাল, ডাল, তেল, নুন কিছুই নেই।।
একটা নীরব হাহাকার এর ভিতর দিয়ে আমরা যাচ্ছি।
আমার এক কাকা তখন থাকতেন কুমিল্লা শহর এর নানুয়া দিঘীর দক্ষিন পাড়ে শরীফ মঞ্জিলে।
উনি কুয়েত এ থাকতেন। অনেক টাকা উনার তখন।
দেশে আসার পর আম্মা আমাকে নিয়ে উনার বাসায় গেলেন।২০০০ টাকা ধার চাইলেন।
মা অনেক কাকুতি মিনতি করলেন।
আমরা না খেয়ে আছি,মা এর শরীর টা ভাল না এইসব বুঝালেন।।কাকা মাথা নাড়লেন।
আমি ও মা একটা আশা নিয়ে রাত কাটালাম উনার বাসায়।
পরের দিন আসার সময় আমার হাতে উনি ২০ টাকার দুইটা নোট ধরিয়ে দিলেন।
উনার বাসা থেকে টমছম ব্রিজ এর রিক্সা ভাড়া ছিল ৫ টাকা,বাসে টমছম ব্রিজ থেকে বলাকা বাসে আড্ডা বাজার এর ভাড়া ছিল ১৭ টা,দুইজনের ৩৪ টাকা লাগিল।উনি আমাদের ১ টাকা বেশি দিয়েছিলেন।
আমার মা বাস জার্নি করতে পারেন না,মোশন সিক্নেস এর জন্য উনি বমি করে অস্থির হয়ে যান।
অনেক আশা নিয়ে কাকার বাসায় গিয়েছিলেন মা।
আমরা যখন বাড়ি ফিরি, তখন অনেক বৃষ্টি হচ্ছিল।
বৃষ্টি ও মা এর কান্না একাকার হয়ে ঝরছিল।
সেদিন এর কথা আজো ভুলি নি।।
আমি তখন ক্লাশ টেনের ছাত্র।
প্রায় দুই সপ্তাহ ধরে জ্বর। সাথে বমি,খাবারে অরুচি,মাথা ব্যাথা।।
লেখাপড়া করতে পারছিলাম না।স্কুলে যেতে পারি না।
জ্বর বেশি আসলে মা মাথায় পানির ঝর্না দিত।
একটু একটু পানি মাথায় কপালে পড়ত, শান্তি লাগত।
খুব খেতে পারছিলাম না,হঠাৎ নাবিস্কোর ৫ টাকা দামের গ্লুকোজ বিস্কুট খেতে ইচ্ছে হল খুব।
আমার মা কে সেদিন ৫ টাকা কেহ ধার দেয়নি।
আমার সেই কাকা শহর থেকে বাড়ি আসলেন।
কাকা সাদা শার্টের সামনের পকেট এ ৫০০ টাকার অনেক গুলো নোট রেখেছিলেন।
টাকা দেখিয়ে বেড়ানো বড়লোকদের বিরাট ব্যাপার।
আমার মরহুম দাদী কাকা কে আমাদের নাজুক অবস্থার কথা বলে আমাকে দেখে যেতে বল্লেন, কিছু সাহায্য করতে অনুরোধ করেছিলেন।
কাকা সেদিন বলেছিলেন, যে যেমন ইনকাম করবে, তার বাচ্চারা তেমন খাবে।
ইনকাম না করতে পারলে না খেয়ে থাকবে।।
নাবিস্কোর গ্লুকোজ বিস্কুট খেতে না পারার সেই দিন কে আজো ভুলিনি ।
#ঢাকায় ঘুরতে যাওয়াঃ
ক্লাশ টেনে পড়ার সময় আমার বন্ধু সরোয়ার এর সাথে ঢাকায় ঘুরতে গেলাম। উঠলাম বন্ধুর ভাই এর বাসায়।
রোজার মাস ছিল।বন্ধুকে নিয়ে বড় মুখ করে গেলাম মিরপুরের পাইক পাড়ায় বড়লোক খালার বাসায়।
৫ তলার বাসায় সেদিন খালা বাসায় ছিলেন না। ইফতার এর সময় আসন্ন ছিল তখন।খালাত ভাই এর বউ ফোনে খালার সাথে কানেক্ট করে দিলেন।খালা
ইফতার করে চলে যেতে বল্লেন। আমি বল্লাম, খালাম্মা আমাকে ১০০ টাকা দেন,আমার কাছে টাকা নেই।
সেদিন ১০০ টাকা না পেয়ে বন্ধুর কাছে আর মুখটা বড় থাকেনি।।অনেক টা মলিন হয়ে গিয়েছিল।।
বন্ধু কে নিয়ে গেলাম গাজীপুর এর মামার বাসায়।
সেহেরী খেতে খেতে মামার কাছে ১০০ টাকার আবদার করেছিলাম। মামা মামীর কাছে জিজ্ঞেস করল আমাকে ১০০ টাকা দিবেন কিনা।
মামীর উত্তর ছিল ' উনি কি ব্যাংক নাকি,আমার বাবা কি উনার ব্যাংক এ ১০০ টাকা জমা রাখছেন নাকি যে আমাকে এখন টাকা দিবেন।
সেদিন মামার বাসায় ও ১০০ টাকা পাইনি।।ভুলিনি সেই দিনের কথা।।
২০০১ সন
#এস এস সি পাশের পর।।
আমি আমার স্কুলের ফাস্ট বয় ছিলাম।
এস এস সি তে জিপিএ পেলাম ৪.২৫। আমরা
গ্রেডিং এর ফাস্ট ব্যাচ হওয়াতে স্যারেরাই বুঝতনা গ্রেডিং।না হলে পয়েন্ট আরো বেশি হত।
আমার খালা আমার এস এস সি পাশের খবর পেয়ে আমার মা কে বল্লেন আমাকে কলেজ এ না পড়িয়ে অটোমোবাইল এর ওয়ার্কশপ এ ভর্তি করে দিতে।
কাজ শিখা অবস্থায় ৫০০০ টাকা পাব,কাজ শিখে ফেললে বেতন ১০,০০০/ টাকা হবে।
আমিও চলতে পারবো,মা এর সংসারের হাল ও ধরতে পারব।।
ভুলিনি সেইদিনের খালার দরদী পরামর্শ।।
কলেজ এ পড়ার সময় আমি ফাস্ট ইয়ার ফাইলাম এক্সাম না দিয়ে ঢাকা চলে গিয়েছিলাম।
একদিন ছিলাম খালার বাসায়।
আমরা গরীব বলে আমাকে খাটে শুতে দিলেন না।
ড্রয়িং রুমে বিছানা করে দিলেন।
তখন শীতকাল ছিল।খালা আমাকে খুব আদর করতেন।
তাই কনকনে শীতের রাতে আমাকে একটা লেপ দিয়েছিলেন।
আমার তখন ভাল কোন শার্ট ছিল না।
খালার কাছে দুইটা পুরাতন শার্ট চাইলাম।
খালা বল্ল, এখন ত বাসায় পুরাতন শার্ট নেই,সব ফকির দের দাণ করে দিছি,আচ্ছা তোর ভাইরা শার্ট ফেলে দিলে ফকির কে না দিয়ে তোদের জন্য রাখব।।
সেদিন বুঝেছিলাম খালা আমাদের ফকির ভাবে।
খালার চার সন্তান এর বিয়েতে আমাদের কে দাওয়াত দেয়নি,কারন আমরা ফকির, আমাদের ভাল জামা নেই।
বড় লোকের বিয়েতে কি কাপড় পরে যাব আমরা?
খালার একটা প্রেস্টিজ আছে।।
বিয়েতে অন্য আত্নীয় রা যখন আম্মার কথা জিজ্ঞেস করত, তখন খালা বলত আম্মা অসুস্থ তাই যেতে পারেন নি।।
১৯৯৬ সাল।।
ক্লাস সিক্স এ পড়ি।
আমার খালাত ভাই এর ট্রাভেল এজেন্সি ছিল।
আমার আব্বা কে মালয়েশিয়া পাঠাবেন বলে আমাদের জমি বিক্রির ৪০,০০০/টাকা নিয়েছিলেন।
পরে আমার বাবা কে বিদেশ ও পাঠাননি এবং আমাদের টাকাও ফেরত দেন নি।।
আমার মা নীরবে অশ্রু ফেলতেন।
আমার খালা আমাদের টাকা মেরে দিলেন।
বাবা প্রায়শই এই টাকা নিয়ে মায়ের সাথে ঝগড়া করে ভাত না খেয়ে থাকতেন।।
একটা দুর্বিষহ মানুষিক যন্ত্রনার মধ্যদিয়ে আমাদের কৈশোর কেটেছে।।
#১৯৯৮ সন।।
চারদিকে বন্যা।।
সব কিছুর চড়া দাম।
দিনে এক বেলা খাওয়াও কঠিন।।
বাজার থেকে ১/২ কেজি চাউল পলিথিন এ হাতে করে আনতাম।।
গরম ভাত এর সাথে একটা পেয়াজ ও গুড়ো মরিচ।
আহ কি স্বাদ।
ভাতের সাথে মাছ,মাংস খাব কল্পনাও করা সম্ভব ছিল না।
কুরবানির ঈদ ছাড়া আমরা গরুর মাংস চোখে দেখতাম না।
মা মাঝে মাঝে খেসারী ডালের বড়া বানাতেন।খেসারীর ডাল সস্তা ছিল।গরীবের ডাল।
এক প্লেট গরম ভাত।সাথে দুই টা খেসারীর ডালের বড়া।
মাঝে মধ্যে একটা ডিম পেয়াজ দিয়ে বিরাম করে চার ভাগের একভাগ জনপ্রতি।।
একদিন বড় বোন স্কুল থেকে এসে ভাতের সাথে পেয়াজ ও গুড়ো মরিচ দেখে না খেয়ে ভাতের প্লেট টা মেলা মেরে ফেলে দিয়েছিলেন।
সেই উড়ন্ত গরমভাতের প্লেটের ছবি টা আজো ভুলিনি।।
#১৯৯৯ সনঃ
আমরা তখন নানার বাড়িতে থাকিতাম।
মামা পুরো বাড়ি বিক্রি করে ঢাকায় চলে গেছেন ১৯৯৪ সালে।তখন আমরা কিছু অংশ কিনে রেখেছিলাম।
অনেক টা পানির দরে এই বাড়ি বিক্রি করে আমরা দাদাবাড়ি ফিরলাম।
আমাদের বাড়ি বিক্রির টাকা দিয়ে বিদেশ গেল আমার ছোট কাকা।।
ছোট কাকার ঘরে থাকতেন দাদা দাদী।
আমার মা ছোট চাচার ঘরে ৫ কেজি চাউল আনতে গেছিলেন,দাদা ভাই এর জমির চাল।
চাচী সেদিন চাউল না দিয়ে বললেছিলেন, ওনাদের ঘরে চাউল এর জন্য গেলে মা এর পা ভেংগে দিবেন।
ঘরে ফিরে মা এর অশ্রুভেজা চোখ টা আজো ভুলিনি।
# ২০০৩ সনঃ
আব্বা তখন স্ট্যান্ডার্ড গ্রুপে স্টোর কীপার এর একটা চাকুরী পেলেন।ঢাকা থেকে বাড়ি এসে দেখেন আম্মা বাড়ি নেই,আমার বড় বোন ঘরের সামনে বসে কাঁদছে।
আফসানার তখন তিন বছর।
আব্বা কে দেখে দৌড়ে ঘর থেকে বের হয়ে আব্বার কোলে উঠল।তারপর বল্ল দুই দিন ভাত খাইনি আব্বা।
চিনি দিয়ে পানি গুলে খাইছি।।।
মাছ দিয়ে ভাত খাবো আব্বা।।।।
কয়েকদিন আগে আব্বা এই কথা বলে কেঁদে দিয়েছেন।
#এইস এস সি পরীক্ষার ফরম ফিলাপ শুরু হইছে।
আমার সাথের অনেকের ই ফরম ফিলাপ শেষ।
আব্বা খুব টেনশন এ।
আমার আরেক কাকা বিদেশ থেকে আসলেন।
তিনি বল্লেন আমার ফরম ফিলাপের জন্য তিনি ৩০০০ টাকা দিবেন।আর একদিন বাকী।
সকালে কাকা বল্লেন আমি হাজীগঞ্জ যাচ্ছি, বিকালে এসে টাকা দিব।
কাকা বিকেল গড়িয়ে রাতেও আর ফিরে আসেন নি বাড়িতে।
আমি কলেজের ফাস্ট বয় ছিলাম। শামীম কাকা, যিনি আমার বাবার চাচাতো ভাই, প্রিন্সিপাল স্যার কে বলে বিনা টাকায় আমার ফরম ফিলাপ এর ব্যবস্থা করে দিয়েছিলেন।
আমার নিজের আপন কাকা তিন দিন পর বাড়ি ফিরে খুব স্বস্থি পেয়েছিলেন,যাক বাবা বুদ্ধি করে তিন দিন পর বাড়ি আসাতে ৩০০০/ টাকা বেচে গেল।।
সেই দিনের কথাও ভুলিনি।
#মেডিকেলের কোচিংঃ
আমি ডাক্তার হতে চাইনি।
কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ার হবার খুব ইচ্ছে ছিল।
বায়োলজি ছিল অপশনাল।
আমি বায়োলজি পড়িনি বাবার উপর রাগ করে।
এবং এই সাব্জেক্ট পাল্টাতে আমি অনেক চেষ্টা করেছি।
আমার বাবা পরীক্ষার পর একটা সমিতি থেকে সুদে ১০০০০/ টাকা এনে আমাকে নিয়ে ঢাকায় রওয়ানা দিলেন।
রেটিনা কোচিং এ আমার ইচ্ছার বিরুদ্ধে ভর্তি করিয়ে দিলেন।
বাবা শুধু বলেছিলেন, আমার বিশ্বাস, দিলে টানে তুমি মেডিকেল এ চান্স পাবে।।
ঠিকমত লেখাপড়া করবে।।
পড়ার টেবিল এ বসলেই বাবার চেহারা টা ভেসে উঠত।
মেসে থাকতাম পূর্ব রাজা বাজার এ।
একদিন সকালে বুয়া আসেনি।
নাস্তা কই খাবো। নগদ টাকা নেই।
সেদিন আমার মেসের রুম মেট শাকিল ভাই ১২ টাকার নাস্তা ফ্রি করিয়েছিলেন।।
সেই ১২ টাকার স্নেহের কথা ভুলিনি।
ঢাকায় আমার খালার বাসা,মামার বাসা।
কারো বাসায় যাইনি।
#২০০৪ সন, ১০ এপ্রিল
আমি সিলেট এম এ জি ওসমানী মেডিকেল কলেজ এর ৪২তম ব্যাচের ছাত্র হিসেবে মেডিকেল জীবনের আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু করি।
আমার বাবার বিশ্বাস টা বাস্তব হয়েছিল।
সেই দিন থেকেই আমি আমার পরিবারের দায়িত্ব কাঁধে নিয়েছিলাম।
______________________________
ডা. জোবায়ের আহমেদ ।সুলেখক। সিলেট এম এ জি ওসমানী মেডিকেল কলেজের ৪২ ব্যাচ।

#sumanmanna

image