সুপার শপ ও বড় বড় শো রুম গুলোতে কিছু কিনতে গেলে তারা কষ্ট করে ক্যালকুলেটর চেপে এখন আর হিসেব করে না । পিস্তলের মত ছোট একটি যন্ত্র দিয়ে কোন কিছুর উপর লাল রঙের লেজার ফেলে আর সাথেসাথেই তার সামনে থাকা কম্পিউটারে সেই জিনিসের নাম ও দাম উঠে যায় , যে খানে তারা লাইট ফেলে সেখানে থাকে সাদা কালো হিজিবিজি কিছু লাইন । আমাদের মত সাধারন মানুষের কাছে এই হিজিবিজির কোন মূল্য না থাকলেও এই হিজিবিজি লাইন দিয়েই আজকে বড় বড় বিক্রয়োত্তর প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের ব্যাবসাকে সহজ করে তুলেছে। একে আমরা বারকোড বলে থাকি , এত কথা আসলে শুধু শুধু বলা হল , কারন বারকোড নিয়ে কোন কথাই বলব না , এখন বার কোডের কালো সাদা হিজিবিজি জিনিসের মত আরেকটি পুরাতন কোড সিস্টেম রয়েছে যাকে আমরা বলি মোর্স কোড ।

স্যামুয়েল মোর্স ১৮৪০ সালে বৈদ্যুতিক টেলিগ্রাফ যোগাযোগের জন্য প্রথম এ কোড তৈরি করেন। প্রথম মোর্স কোড বার্তাটি ছিল, “What hath god wrought?” যা ওয়াশিংটন থেকে বাল্টিমোরে পাঠানো হয়েছিল।
রেডিও যোগাযোগের জন্য মোর্স কোড প্রথম দিকে ব্যপক ব্যবহৃত হত। এমনকি বিংশ শতাব্দির প্রথম দিকেও টেলিগ্রাফ লাইন, সমুদ্রের নিচে কেবল এবং রেডিও সার্কিটে দ্রুত গতির যোগাযোগ করা হত মোর্স কোডের সাহায্যে। সাধারনত "ডট(ডিট)" এবং "ড্যাশ(ডাহ্)" এর মাধ্যমে কোন ভাষার letters, numerals, punctuation এবং special characters প্রকাশ করা হয়। পেশাগত ভাবে পাইলট, এয়ার ট্রাফিক নিয়ন্ত্রনকারী, জাহাজের ক্যাপ্টেন, সামুদ্রিক স্টেশন চালনাকারীদের মোর্সকোডে খুবই ভাল দক্ষতা থাকতে হয়।
আকাশে বিমান চালানোর সুবিধার্থে গঠিত বিভিন্ন বেইজ স্টেশন যেমন VHF Omni-directional Radio Range (VORs); Non-Directional Beacon (ND আকাশে চলমান বিমানের বিভিন্ন সমস্যা সমাধানে জন্য প্রতিনিয়ত নিজেরদের অস্তিত্ত্ব জানান দিতে মোর্স কোডের ব্যবহার করে।
যুক্তরাষ্ট্রের ফেডেরাল কমিউনিকেশন কমিশন এখনো সামুদ্রিক যোগাযোগের জন্য মোর্সকোড ব্যবহার করে। নেভি সিল সহ বড় বড় গ্রুপ গুলো পর্যন্ত নিজেদের মধ্যে সিগনাল পাঠাতে কিছু কিছু সময় মোর্স কোড ব্যবহার করে।
মোর্স কোডের সবচেয়ে বড় সুবিধা হল এটি নানারকম ভাবে যোগাযোগের জন্য ব্যবহার করা যায়। শব্দ, চিহ্ন, পাল্স, রেডিও সিগনাল, রেডিও অন অফ, আয়নার আলো, লাইট অন অফ ইত্যাদি নানা উপায়ে মোর্সকোডের মাধ্যমে তথ্য প্রেরন করা যায়। একারণেই S O S মেসেজ পাঠানোর জন্য মোর্স কোড সবচেয়ে উপযোগী। SOS হল এক কথায় বলতে গেলে বিপদে উদ্ধার আহবানের সিগনাল , এর পূর্ন রূপ হচ্ছে "Save our Souls"।
কিভাবে মোর্স কোড তৈরী করব , অনলাইনে বিভিন্ন সাইট আছে যেখানে সহযেই আপনি একটি ওয়ার্ডের মোর্স কোড পাঠাতে পারবেন । তবে আমরা কাগজে কলমেই মোর্স কোড একটু শিখে ফেলি , বাকি জিনিস ঘাটাঘাটি করতে করতে আপনারা নিজেরাই শিখে ফেলতে পারবেন । তবে মোর্স কোডের সিগনাল বুঝতে বা পাঠাতে এর উপর অনেক দক্ষতা থাকতে হয় খুব সহজে এটি আয়ত্ত করা হয়ত সম্ভব না , প্রথমেই মোর্স কোডের কোন বর্নটি কি দিয়ে প্রকাশ করা হয় তা নিচের ছবিতে দেয়া চার্ট দেখে বুঝে নেই ,
আমরা SOS দেখি ,
S স্থানে এখানে ৩ টি ডট ...
o স্থানে ৩ টি ড্যাশ ---
অর্থাৎ আমরা যদি কাওকে SOS সিগনাল পাঠাতে যাই তো আমাদের মোর্স কোড হবে ...---...
আপনারা চাইলে ইউটিউব বা গুগল থেকে SOS এর মোর্স কোডে সাউন্ড সিগনাল টি দেখে আসতে পারেন , তাহলে হয়ত ব্যাপারটা পরিষ্কার হবে , প্রতিটি বর্নের মাঝে সাউন্ড সিগনালে অল্প ব্যাবধান থাকে এবং একটি ওয়ার্ডের পর একটু বেশী সিগনাল গ্যাপ থাকে যা থেকে শব্দ ও বর্ন আলাদা ভাবে বুঝা যায় ।
ভাল জিনিশ শিখিয়ে দিলাম , মোর্স কোড উপরের চার্ট দেখে নিজের নাম খাতায় বা বই এ দিয়ে রাখুন , প্রিয়জনকে মনের কথা বলতে পারছেন না ...... মোর্স কোড দিয়ে পাঠিয়ে দিন , কিছু বুঝুক আর না বুঝুক আপনি মনের কথা বলে দিয়েছেন , এই যা স্বান্তনা ।
তো আজকের মত এতটুকুই , সামনে অন্য কোন কোড নিয়ে লেখব ( হয়ত )
নীচের ছবিতে একটা মোর্স কোড দেয়া হয়েছে , ডিকোড করে কমেন্টে দিয়ে দিন ......

image