Discover postsExplore captivating content and diverse perspectives on our Discover page. Uncover fresh ideas and engage in meaningful conversations
ঘরে ঢুকতে যাবে এমন সময় জানালা দিয়ে উঁকি
মেরে দেখে তার স্ত্রী আলিঙ্গনরত একজন পুরুষের
গালে চুমু খাচ্ছে ।
এক দরিদ্র লোক ও তার স্ত্রী পাহাড়ে বাস করে
। বেশিরভাগ সময় এই পরিবারের নুন আনতে
পান্তা ফুরায় ; মাঝেমধ্যে না খেয়েও
দিনাতিপাত করতে হয়। মোটকথা, বাঁচার
সংগ্রাম । একদিন লোকটি রুটি – রোজগারের
সন্ধানে পাহাড় ছেড়ে অন্য কোথাও বেরুবার
সিধান্ত নেয় । যাবার আগে স্ত্রীকে বলে, ‘ আমি
দীর্ঘ দিনের জন্য বাইরে যাচ্ছি । তোমার প্রতি
আমি সবসময় বিশ্বস্ত ছিলাম এবং থাকব;
প্রতিজ্ঞা করতে পারবে যে তুমিও আমার
অনুপস্থিতে আমার প্রতি বিশ্বস্ত থাকবে ‘? তার
স্ত্রী মাথা ঝাঁকিয়ে হ্যাঁ সূচক সম্মতি জানায়
।
অনেক দিন পার করে পাহাড় বেয়ে নিচে নেমে লোকটি
শর্ত দিয়ে একটি দোকানে চাকরি নেয় । শর্তটি হচ্ছে
এই যে, পুরো উপার্জন বা মজুরি মালিকের কাছে
জমা থাকবে; কাজ ছেড়ে চলে যাবার সময় সমুদয়
অর্থ ফেরত নেয়া হবে। মালিক গরিব লোকটির কথায়
রাজি হলেন।বিশ বছর পর লোকটি আর কাজ করবেনা
বলে মালিকের কাছে তার প্রাপ্য সব টাকা
ফেরত চাইল ।
মালিক বললেন , তুমি টাকা নিবে নাও কিন্তু
টাকার পরিবর্তে আমার তিনটা উপদেশও গ্রহণ
করতে পারো । তুমি স্বাধীন । হয় আমার উপদেশ
মানবে নয়তো তোমার বিশ বছরের পারিশ্রমিক ফেরত
নেবে, কোনটা ? লোকটি দুদিনের সময় নিয়ে অনেক
ভেবেচিন্তে বলল, ‘আমি আপনার তিনটি উপদেশ
চাই, আমার প্রাপ্য অর্থ নয়’ ।
তা হলে বেশ মনোযোগ দিয়ে মাথায় নাও । উপদেশ
-১ঃ কখনও সংক্ষিপ্ত রাস্তা বা সর্টকাট বেছে
নেবেনা ; আপাতদৃষ্টে ভাল হলেও লম্বা সময়
নিয়ে করা কাজ অধিকতর উপকারী । উপদেশ-২ঃ
কোন কিছুতে হুট করে আগ্রহ দেখাবেনা । ধৈর্য ধরে
উপসংহারে উপনীত হবার চেষ্টা করবে । এবং
উপদেশ ৩ঃ কারো সম্পর্কে ধারণা নেবার আগে
পুঙ্খনাপুঙ্খ চিন্তাভাবনা করবে ।
এই বলে মালিক লোকটিকে তিনটা পাউরুটি দিয়ে
বললেন , এই দুটি খাবে রাস্তায় ভ্রমণকালে আর
এই বড় রুটিটা খাবে বাড়িতে গিয়ে স্ত্রীর সাথে
শেয়ার করে ।
মালিকের উপদেশ মনে গেঁথে লোকটি তার দীর্ঘ ও
ক্লান্তিময় সফর শুরু করে । পথিমধ্যে একজনের
সাক্ষাতে জানতে পারে যে এই পথে যেতে যা
সময় লাগবে, বিকল্প পথে লাগবে তার চেয়ে অনেক
কম সময় । আর যেহেতু বিশ বছর ধরে সে স্ত্রীকে
দেখেনা তাই এমনভাবে সময় নষ্ট করা ঠিক না ।
লোকটি প্রথমে রাজি হোল কিন্তু পরক্ষনে মালিকের
উপদেশ -১ স্মরণ করে দীর্ঘ পথই বেছে নিলো । পরে
জানতে পারে যে সংক্ষিপ্ত পথে একটা এম্বুস ছিল
যা তার প্রাণ নিয়ে নিতে পারতো ।
সফরের এক সময় রাত্রি যাপনের জন্য লোকটি
একজন মহানুভব মানুষের সাহায্য গ্রহণ করল।
অনেক রাতে একটা গোংরানির শব্দে তার ঘুম
ভেঙ্গে গেলে সে খুব আগ্রহ নিয়ে কি ঘটেছে দেখার
জন্য দরজা খুলতে যায় । হটাৎ তার মনে পড়ে
মালিকের উপদেশ -২ অর্থাৎ হুট করে আগ্রহ
দেখানো ভাল ফল নাও দিতে পারে । সত্যি তাই ।
সকালে আশ্রয়দাতা জানালো যে রাতে এই
বাড়িতে একটা বাঘ ঢুকেছিল ।
অবশেষে দীর্ঘ পথ পরিভ্রমণ শেষে একরাশ ক্লান্তি
ও হাতে একটা পাউরুটি নিয়ে লোকটা বাড়ি
পৌঁছায় । ঘরে ঢুকতে যাবে এমন সময় জানালা
দিয়ে উঁকি মেরে দেখে তার স্ত্রী আলিঙ্গনরত
একজন পুরুষের গালে চুমু খাচ্ছে। রাগে, ক্ষোভে আর
ক্লান্তিতে বিধ্বস্ত লোকটি তার স্ত্রীর প্রতি
চরম ঘৃণা ভরে চিরতরে বাড়ি ত্যাগ করার
সিদ্ধান্ত নেয়। তবে বাড়ি ছাড়ার আগে সে
জানতে চায় কেন তার স্ত্রী তার প্রতি বিশ্বস্ত
থাকার প্রতিজ্ঞা করেও বিশ্বাসঘাতকতা করল
। অথচ সেতো সেই আগের মতই বউকে ভালবাসে।
দরজায় কড়া নাড়তেই সহাস্যে তার স্ত্রী
দরজা খুলে দিয়ে তাকে জড়িয়ে ধরতে এগিয়ে আসে।
লোকটি তাকে কাছে ঘেঁষতে দেয় না -‘আমি শুধু
জানতে চাই তুমি আমাকে রেখে আমার
অনুপস্থিতে অন্য একজন পুরুষের গালে চুমু খেয়ে
বিশ্বাসঘাতকতা করলে কেন? কই আমি তো ওইরকম
নই বরং বিশটা বছর তোমার কথা ভেবে ভেবে
কাটিয়েছি ‘ – লোকটি বলল ।
‘ঘরে এসো সব খুলে বলছি’ – তার স্ত্রী
বিনীতভাবে আমন্ত্রন জানাল।‘না, তার আগে
আমার নিজ চোখে দেখা এই মাত্র ঘটে যাওয়া
অপকর্মের ব্যাখ্যা চাই’।
‘আচ্ছা ঠিক আছে, বলছি। তুমি যখন বাড়ি ছেড়ে চলে
গেলে তখন আমি সন্তানসম্ভবা। এখন আমাদের
বিশ বছর বয়সের একটা ছেলে আছে । দূরে পাহাড়ে
কাজে যাবে বলে দুইগালে চুমু খেয়ে আশীর্বাদ
করছিলাম’।
আনন্দাশ্রু নিয়ে উভয়ে পাউরুটিটা ভাগ করে খেতে
বসলো। রুটি চিড়তেই লোকটি দেখে তার মালিক তার
পাওনা সমুদয় অর্থ রুটির ভেতর গুঁজে দিয়েছিল ।