পোশাকে বিজয়ের রং

Comments · 1184 Views

বিজয়ের মাস ডিসেম্বর। ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর পৃথিবীর বুকে জেগে উঠেছিল এক নতুন দেশের মানচিত্র, যার নাম বাংলাদেশ। বিজয়ের আনন্দ প্রতি বছর আমরা এ দিনটিকে আমরা স্মরণ করি গভীর শ্রদ্ধা ও ভালোবাসার সঙ্গে। এই দিবসটি সামনে রেখে পোশাকে বিজয়ের রং নিয়ে দেশীয় ফ্যাশন হাউজগুলো সেজেছে বর্ণিল রূপে।

 

 

 

 

আমাদের ফ্যাশন হাউজগুলো নতুন প্রজন্মকে পোশাকের দিক থেকে করেছে স্বদেশমুখী। তাদের ডিজাইনের একটা বড় অংশজুড়ে রয়েছে দেশাত্মবাধের চেতনা। এবারের বিজয় দিবসে লাল-সবুজের প্রত্যয়ে আবারও সে চেষ্টাই চালিয়েছেন তারা। মূলত, ফ্যাশনের ধারাটা সময়কে ধারণ করে। স্টাইল, স্মার্টনেস, আউটলুকিংয়ের সামগ্রিক কনসেপ্টে বৈচিত্র্য এলেও বিজয় দিবস, স্বাধীনতা দিবস এবং আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের ফ্যাশনে দেশাত্মবোধের ভাবধারাটা উন্মোচিত হয়। এর সঙ্গে আমাদের অন্যান্য উত্সবকেন্দ্রিক ফ্যাশন প্রবাহের রয়েছে এক বিরাট পার্থক্য। তাই তো আজ পোশাকে ডিজাইন, নকশা ও রঙে উঠে আসে বাংলাদেশের অবিস্মরণীয় জন্ম লাভের ইতিহাস। তাতে রয়েছে বাঙালির স্বাধীনতা, মুক্তিযুদ্ধ, বাংলা ভাষার প্রতি সশ্রদ্ধ মমতা এবং এক রক্তক্ষয়ী ইতিহাসের প্রবল অনুরণন। যে অনুরণনের প্রতিটি পল-অনুপলে রয়েছে স্বাধীনচেতা বাঙালির হাজার বছরের ঐতিহ্যের মহিমান্বিত গৌরবগাঁথার মহোত্তম স্বপ্ন বিকাশের আদিগন্ত স্ফূরণ। দীর্ঘ আন্দোলন, সংগ্রাম, যুদ্ধ এবং পরিণতিতে স্বাধীনতা অর্জন। আর এই অর্জনের ভেতর দিয়েই অন্ধকার সরিয়ে সরিয়ে বাঙালির পথচলা হচ্ছে সেই ৪৯ বছর আগে পাওয়া রক্তোজ্জ্বল বিজয়ের আলোয়। ১৯৭১-এর ১৬ ডিসেম্বরের বিজয় এখন ফ্যাশন স্টাইলের অনুষঙ্গ হিসেবে যোগ করেছে নতুন মাত্রা। এ ফ্যাশন-স্টাইলে উৎসবী আমেজ থাকলেও তার থেকে বেশি থাকে দেশাত্মবোধ তথা দেশপ্রেম। আর সেই কারণেই বিজয়, স্বাধীনতা কিংবা ভাষা দিবসের ফ্যাশনের প্রথম চিত্রকল্প হিসেবে পোশাকে, শো-পিসে, পটে উঠে আসে মুক্তিযুদ্ধের স্থিরচিত্রের চিত্রকর্ম; বঙ্গবন্ধুর মুখচ্ছবি। ’৭১-এর আত্মত্যাগের বাঙালি ধরনটা যেমন হৃদয় ছোঁয়া, মর্মস্পর্শী, আবেগঘন; তেমনি আনন্দময়তার রেশটাও কম নয়। ফলে দু’টি রূপেরই প্রতিফলন বিস্মিত হয় ১৬ ডিসেম্বর, ২৬ মার্চ এবং ২১ ফেব্রুয়ারির ফ্যাশন কনসেপ্টে। আর এই ফ্যাশন বোধের মর্মকথাটা চিত্রে ও কবিতার পঙক্তির মাধ্যমে পোশাকে উত্কীর্ণ করার সফল প্রয়াসটা প্রতি বছরের এই বিশেষ দিনগুলোতে করে থাকেন প্রতিষ্ঠিত আউটলেটগুলোর পক্ষে স্ব-স্ব ডিজাইনাররা।

 

 

 

এবারের বিজয় দিবসও এর ব্যতিক্রম নয়। ইতিমধ্যে দেশীয় প্রতিষ্ঠিত ফ্যাশন হাউজগুলো বিভিন্ন প্রজন্মের ফ্যাশন সচেতনদের জন্য আউটলেট সাজিয়েছে পোশাকের মনোহর পসরা। যেহেতু বিজয় দিবস তাই টি-শার্ট, ফতুয়া, পাঞ্জাবি, থ্রি-পিস, শাড়িসহ নানা পোশাকে প্রাধান্য পেয়েছে লাল ও সবুজ রঙ। আমাদের জাতীয় পতাকার রঙকে তুলির আঁচড়ে নান্দনিকভাবে পোশাকের গায়ে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। পোশাকে বিজয়ের রং দিয়ে রাঙানো পোশাকগুলো আপনি পাবেন দেশীয় ফ্যাশন হাউজ অঞ্জন’স, বিশ্বরঙ, কে ক্র্যাফট, রঙ বাংলাদেশ, নিত্যউপহার, নিপুন, বাংলার মেলা সহ অন্যান্য হাউজগুলোতে। শুধু ব্যবসায়িক দৃষ্টিভঙ্গি থেকে নয়, দায়িত্ব ও মূল্যবোধ থেকেই বিজয় দিবসের বিশেষ আয়োজন করে থাকে। লাল-সবুজ আমাদের পতাকার রঙ, আমাদের বিজয়ের প্রতীক। বিজয়ের এই ডিসেম্বর মাসজুড়ে তাই লাল-সবুজকে নিয়েই তাদের যত আয়োজন। শীতের আগমনে এই আয়োজনে বিজয় দিবসে কিছুটা ভিন্নতা আনা হয়েছে। পোশাকগুলোতে ব্যবহার করা হয়েছে মোটা সুতি ও খাদি কাপড়। শাড়ি, থ্রি-পিস, ফতুয়া, পাঞ্জাবি, ছেলে-মেয়েদের কুর্তা, টি-শার্ট ইত্যাদিতে তুলে ধরা হয়েছে বাংলাদেশ লেখা এবং লাল-সবুজ রঙের মাধ্যমে উঠে এসেছে দেশীয় ভাবনা। পাশাপাশি দেশীয় সংস্কৃতির বিভিন্ন উপাদান এসেছে ডিজাইনের অনুষঙ্গ হিসেবে। কাজের মাধ্যম হিসেবে এসেছে টাইডাই, ব্লক, বাটিক, অ্যাপলিক, ক্যাটওয়াক, স্ক্রিন প্রিন্ট ইত্যাদি। আর এসব পোশাকের দাম ক্রেতাদের নাগালের মধ্যেই।

 

এবারের বিজয়ের পোশাক নিয়ে নন্দিত ফ্যাশন ডিজাইনার ও বিশ্বরঙ-এর কর্ণধার বিপ্লব সাহা বলেন, ‘আমরা সব সময়ই পোশাক ডিজাইন ও চিন্তাভাবনায় দেশীয় ঐতিহ্য ও গর্ব করার মতো বিষয়গুলোকে বেশি গুরুত্ব দিয়ে থাকে। মহান মুক্তিযুদ্ধ ও বিজয় দিবস আমাদের জীবনে একটি বিশেষ গর্ব করার মতো বিষয়। তাই মহান বিজয় দিবসকে কেন্দ্র করে প্রতিবারের মতো আমরা এবারও বিজয়ের পোশাক নিয়ে বিশেষ আয়োজন করেছে। মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক ডাকটিকেট, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক কবিতা, ছবি, আমাদের জাতীয় ফুল শাপলা ও স্মৃতিসৌধ এবারের আয়োজনের অনুপ্রেরণা হিসেবে ব্যবহূত হয়েছে। আমাদের পতাকার রঙ লাল ও সবুজ রঙ পোশাক ডিজাইনে বেশি গুরুত্ব পেয়েছে। এবারের আয়োজনে শাড়ি, পাঞ্জাবি, মেয়েদের টপস, সালোয়ার কামিজ, টি-শার্ট পাওয়া যাবে। এছাড়া শিশু কিশোরদের জন্য থাকছে পাঞ্জাবি, শাড়ি, টি-শার্ট, ফ্রক ও সালোয়ার কামিজ। মহান বিজয়ের এই দিনটিকে সুন্দরভাবে উদ্যাপন করার জন্য পোশাকগুলোর মূল্যও তুলনামূলকভাবে কম রাখা হয়েছে।’

Comments