ওজন বেড়েছে? নিয়ন্ত্রণে আনবেন যেভাবে

Comments · 1382 Views

করোনা মহামারীর শুরু থেকেই ঘরবন্দি জীবন। চার মাসের ঘরবন্দি জীবনের মধ্যে কোরবানির ঈদ, স্বাভাবিকভাবে ওজন বেড়েই চলেছে অনেকের। এই ওজন বেড়ে যাওয়াটা প্রাথমিক অবস্থায় তেমন ক্ষতিকারক না হলেও ওজনাধিক্যের স্থায়ী কিছু প্রভাব রয়েছে।


যারা অলরেডি অবেসিটি, পিসিওএস, হাইপোথাইরোডিজমের সঙ্গে লড়াই করছেন তাদের জন্য এ ওজনাধিক্য আরও ঝুঁকির কারণ হতে পারে। প্রথমে জেনে নেই ওজন আসলে বাড়ে কেন?

স্ট্রেস : মানুষ যখন দুঃচিন্তায় থাকে তখন আমাদের দেহের কারটিসল নামক স্ট্রেস হরমোন বেড়ে যায় যা আমাদের ক্ষুধামন্দা বা ক্ষুধা বাড়িয়ে দেয়। অতিরিক্ত চিন্তায় মানুষের ক্ষুধা বৃদ্ধি পায়। স্ট্রেসের সময়গুলোতে মানুষ তুলনামূলক কমফোর্ট খাবার খেতে পছন্দ করে।

এ খাবারগুলো মূলত উচ্চ ফ্যাট এবং উচ্চ ক্যালরির হয়ে থাকে। তাই অনেক সময় আমাদের অতিরিক্ত খাবার গ্রহণ ওজন আধিক্যের কারণ হতে পারে।

ঘুম কম হওয়া : বাসায় থেকে আমাদের অনেকেরই ঘুমের পরিমাণ কমে গেছে আবার অনেকে অসময়ে ঘুমান। ঘুমের সঙ্গে ওজন বাড়ার সম্পর্ক আছে। যেমন- আপনি যদি অধিক রাত অবধি জেগে কাজ করেন তবে রাতে আপনাকে আলাদা করে স্ন্যাক্স খেতে হয়, ফলে যোগ হচ্ছে এক্সট্রা ক্যালরি। এছাড়া কম ঘুম হলে আপনার হরমনাল ইমব্যালেন্সের কারণেও ক্ষুধা বেড়ে যায়।

অ্যাক্টিভিটি কমে যাওয়া : বাসায় থাকার দরুন আমাদের প্রতিদিনকার কাজের পরিমাণ কিছুটা কমে আসছে আবার অনেকেই বসে থেকে অফিস করছেন। এ সময় একটু পরপর কিছু না কিছু খাওয়া হচ্ছে। বিশেষ করে আল্ট্রা প্রোসেসেড ফুড। তাই আমরা সারা দিন এ যে পরিমাণ ক্যালরি গ্রহণ করছি তা প্রয়োজনমতো বার্ন করতে পারছি না। ফলাফল ওজন আধিক্য।

আবার শরীরের কাজ কমে যাওয়ার ফলে ম্যাটাবলিজম কিছুটা কমে যায়। ফলে খাবার হজমে ব্যাঘাত ঘটে এবং শরীরে জমা হয়ে যায়। কিছু কিছু ওষুধ যেমন- এন্টিডিপ্রেশন, স্টেরইড ওজন বাড়িয়ে দিতে পারে। তাছাড়া বাসায় থেকে নতুন নতুন খাবার রান্নার ধুম পড়ে বাসায়। একটু-আধটু চেখে দেখতে দেখতে দেখা যায় অতিরিক্ত ক্যালরি নেয়া হয়ে যায়।


আবার বাসায় বসে অফিস করার সময় ফ্রিজের আশপাশে দিয়ে যাওয়ার সময় কিছু না কিছু খেতে ইচ্ছা করে, যা অফিসে বা বাসার বাইরে থাকলে হয় না। সে ক্ষেত্রেও ওজন বাড়ার সম্ভাবনা বাড়ে।

এখন আসি এ সমস্যা থেকে মুক্তি পাব কীভাবে?

১। জীবনকে একটি রুটিনে নিয়ে আসুন। একটি সুষম খাদ্য তালিকা তৈরি করুন যাতে করে সব খাদ্য উপাদান-ভিটামিন পর্যাপ্ত পরিমাণে পেয়ে থাকেন কিন্তু এক্সট্রা ক্যালরি গ্রহণ না করা হয়। তালিকায় হল গ্রেইন যেমন- ওটস, গম, আটার রুটি জাতীয় খাবার এবং লিন প্রোটিন রাখুন।

২। দুশ্চিন্তা থেকে দূরে থাকুন। ওজনাধিক্য নিয়েও দুশ্চিন্তা করা যাবে না। চিন্তা মুক্ত থাকার জন্য বিনোদন নিতে পারেন, খেলাধুলা বা আপনার ভালো লাগার কাজ করুন।

৩। সময়মতো ঘুমানোর চেষ্টা করুন। ঘুম কম হলে রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতাও কমে আসতে পারে।

৪। ঘরে থেকেই অল্প অল্প ব্যায়াম করুন। দড়ি লাফ, নাচ করতে পারেন অথবা ঘরের কাজ করলেও কিছুটা ক্যালোরি বার্ন হবে। ঘরের মাঝেই ৩০ মিনিট হাঁটার চেষ্টা করুন।

৫। সময় নিয়ে ভালো করে চিবিয়ে খাবার খান। বেশি সময় নিয়ে খাবার খেলে অল্প খাবারেই পেট ভরে আসে।

৬। কিছু খাবার এক্সচেঞ্জ করে নিন। যেমন- জাঙ্ক ফুড, চিপস, পিৎজার পরিবর্তে ফল এবং সালাদ গ্রহণ করুন এবং কোল্ড ড্রিঙ্কসের পরিবর্তে ফলের জুস বা শুধু পানি পান করুন।

৭। অতিরিক্ত মিষ্টি জাতীয় খাবার গ্রহণ বর্জন করুন, কারণ ক্যালরি বেড়ে যেতে পারে।

৮। একটি সুস্থ শরীর আপনার স্ট্রেস রিলিফ করতে সাহায্য করে। তাই নির্বাচন করুন বাদাম, মাছ যাতে রয়েছে ওমেগা-৩ যা ডিপ্রেশন কমাতে সাহায্য করে।

৯। খাবারের কারভিং কমাতে যখনই খেতে ইচ্ছা করবে টক জাতীয় ফল বা সবজি স্যুপ খেতে পারেন।

১০। সব শেষে সারাদিনে কমপক্ষে ২ লিটার পানি পান করুন এবং দুপুরে রাতে খাবার কিছুক্ষণ আগে এক গ্লাস পানি পান করুন।

Comments