জার্মানির জৈবপ্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান কিউরভ্যাক তাদের সম্ভাব্য করোনার টিকাটির দ্রুত অনুমোদন প্রক্রিয়ার সম্ভাবনা উড়িয়ে দিচ্ছে না। গতকাল রোববার প্রতিষ্ঠানটির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ফ্রাঞ্জ ওয়ার্নার হ্যাস এ কথা বলেছেন।
গত শুক্রবার কিউরভ্যাকের পক্ষ থেকে জানানো হয়, তারা ২০২১ সালের মাঝামাঝি সময়ের মধ্যেই টিকা বাজারে আনার আশা করছে। তবে দ্রুত অনুমোদন প্রক্রিয়ার মধ্যে দিয়ে গেলে এর আগেই কিউভ্যাকের টিকা বাজারে চলে আসতে পারে। তবে দ্রুত অনুমোদন প্রক্রিয়া সম্পর্কে বিস্তারিত কিছু বলেননি ফ্রাঞ্জ।
কিউরভ্যাকের সিইও বলেন, দ্রুত টিকা অনুমোদন দেওয়ার বিষয়টি উড়িয়ে দিচ্ছি না। তবে এটা কেবল কর্তৃপক্ষের একান্ত সহযোগিতার মাধ্যমে অর্জন করা যাবে।
বার্তা সংস্থা রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়, কিউরভ্যাকের টিকা তৈরির পেছনে রয়েছেন মাইক্রোসফটের প্রতিষ্ঠাতা বিল গেটস। কিউরভ্যাকের দ্রুত টিকা আনার ঘোষণা দেওয়ার পর তাদের শেয়ারের দাম বেড়ে গেছে।
ফ্রাঞ্জ বলেছেন, তাঁদের কোম্পানির তৈরি সম্ভাব্য টিকাটির ক্লিনিক্যাল পরীক্ষার ফল শরতে প্রকাশ করা হবে। পরীক্ষার ফল জানার পর আগামী বছরের প্রথমার্ধেই টিকাটির অনুমোদন পেয়ে যেতে পারে।
কিউরভ্যাকের গবেষকেরা রোগের চিকিৎসায় নির্দিষ্ট জেনেটিক কোড বা এমআরএনএ বহনকারী বিভিন্ন কণা নিয়ে কীভাবে ব্যবহার করা যায়, তা গবেষণা করছেন।
গবেষকেরা আশা করছেন, এমআরএনএ ব্যবহার করে তাঁরা রোগীর শরীরকে প্রোটিন উৎপাদনে বাধ্য করতে পারবেন যা রোগের বিরুদ্ধে লড়তে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।
কিউরভ্যাক সিইও বলেন, আমরা দেখছি যুক্তরাষ্ট্র এমআরএনএ প্রযুক্তির বিষয়টি এবং এ থেকে দ্রুত কার্যকর টিকা তৈরির বিষয়য়ে গভীরভাবে বুঝতে পেরেছে।
বার্তা সংস্থা এএফপি জানিয়েছে, মডার্নার টিকাটির তৃতীয় ধাপের পরীক্ষা চলছে যুক্তরাষ্ট্রে। মডার্নার ভ্যাকসিন মূলত ম্যাসেঞ্জার আরএনএ (এমআরএনএ) ভিত্তিক, যা ভাইরাসের জেনেটিক উপাদান বহন করে এবং শরীরের প্রতিরোধ ব্যবস্থাকে ভাইরাসের বিরুদ্ধে লড়তে শেখায়। যুক্তরাষ্ট্রে ভ্যাকসিন তৈরিতে সম্ভাব্য অগ্রগতির ঘোষণা এসেছে মডার্নার প্রথম ধাপের পরীক্ষার ইতিবাচক ফল দেখে।
মডার্নার প্রথম ধাপের পরীক্ষায় ৪৫ জন স্বেচ্ছাসেবীর সবার শরীরেই ভাইরাসের বিরুদ্ধে অ্যান্টিবডি তৈরি হতে দেখা গেছে। মার্কিন ওষুধ প্রস্তুতকারী কোম্পানি মডার্নার উদ্ভাবিত করোনা টিকার ১০ কোটি ডোজ কিনছে যুক্তরাষ্ট্র। এ জন্য প্রতিষ্ঠানটির সঙ্গে দেড় বিলিয়ন ডলারের একটি চুক্তি করেছে ট্রাম্প প্রশাসন। মঙ্গলবার হোয়াইট হাউস ও মডার্নার পক্ষ থেকে বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়েছে।
বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে, মেক্সিকোর প্রেসিডেন্ট আন্দ্রেস ম্যানুয়েল লোপেজ বলেছেন, আগামী বছরের প্রথম প্রান্তিকে তাঁর দেশ টিকা ব্যবহার শুরু করবে। গতকাল রোববার টুইটারে এক ভিডিও বার্তায় তিনি এ কথা বলেন। মেক্সিকো ও আর্জেন্টিনা ফার্মাসিউটিক্যাল কোম্পানি অ্যাস্ট্রাজেনেকার সঙ্গে টিকা পেতে টুক্তি করেছে।
টিকার অনুমোদনের ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি তড়িঘড়ি করেছে রাশিয়া। রাশিয়ার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়কে উদ্ধৃত করে বার্তা সংস্থা ইন্টারফ্যাক্স জানিয়েছে, স্পুটনিক ৫ টিকাটির প্রথম ব্যাচ শনিবার উৎপাদন করা হয়েছে।
রাশিয়ার তৈরি টিকা নিয়ে দেশটির রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যমে একে করোনাভাইরাসের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে গুরুত্বপূর্ণ উদ্ভাবন হিসেবে তুলে ধরা হচ্ছে। দেশটির জাতীয় টেলিভিশনেও একে নিরাপদ হিসেবে দাবি করা হচ্ছে। রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন বলেছেন, তাঁর এক মেয়ের শরীরেও টিকাটি প্রয়োগ করা হয়েছে।
ইন্টারফ্যাক্সের প্রতিবেদন অনুযায়ী, এর আগে টিকা প্রস্তুতকারক গামেলিয়া ইনস্টিটিউট জানায়, ডিসেম্বর থেকে জানুয়ারি নাগাদ ৫০ লাখ ডোজ টিকা উৎপাদন করতে পারবে রাশিয়া।