সাউদাম্পটনে প্রথম টেস্টে ব্যাট হাতে একেবারে খারাপ না করলেও খুব একটা আলোও ছড়াতে পারেননি। কিন্তু ম্যানচেস্টারে দ্বিতীয় টেস্টে জ্বলে উঠেছেন বেন স্টোকস। ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে সিরিজের দ্বিতীয় টেস্টের প্রথম ইনিংসে ইংল্যান্ড ৯ উইকেটে ৪৬৯ রান নিয়ে ইনিংস ঘোষণা করেছে, তাতে স্টোকসের ব্যাট থেকে এসেছে ১৭ চার ও ২ ছক্কায় সাজানো ১৭৬ রানের ইনিংস।
এই ইনিংসেই একটা কীর্তিতে কিংবদন্তিদের পাশে নামটি লিখিয়েছেন ইংলিশ অলরাউন্ডার। গ্যারি সোবার্স, ইয়ান বোথাম, রবি শাস্ত্রী ও জ্যাক ক্যালিসের পর টেস্টে ১০টি শতক ও ১৫০ উইকেট পাওয়া পঞ্চম অলরাউন্ডার স্টোকস। কালকের ইনিংসের পর স্বাভাবিকভাবেই ধন্য ধন্য পড়ে গেছে স্টোকসের নামে। ভারতের সাবেক ব্যাটসম্যান ও বর্তমানে ক্রিকেট বিশ্লেষক আকাশ চোপড়া যেমন বলে দিলেন, স্টোকসই তিন সংস্করণে সময়ের সেরা অলরাউন্ডার। তালিকায় এরপরই বাংলাদেশের সাকিব আল হাসান আর ভারতের রবীন্দ্র জাদেজাকে রেখেছেন আকাশ চোপড়া।
ইংল্যান্ডকে বিশ্বকাপ জেতানো আর অ্যাশেজে আলো ছড়ানোর পর এমনিতেই স্টোকসে মুগ্ধ ক্রিকেটবিশ্ব। ২০১৬ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের ফাইনালে ওয়েস্ট ইন্ডিজের কার্লোস ব্রাফেটের কাছেই চার বলে চার ছক্কা খেয়ে শিরোপা হারানো কিংবা বছর তিনেক আগে ব্রিস্টলের এক পাবে মারামারি করে সমালোচিত স্টোকসই এখন কত পরিণত! তাঁর প্রশংসা হয় সে কারণেও। ইংলিশ ক্রিকেটে তো তিনি এরই মধ্যে নায়ক, এভাবে খেলে যেতে পারলে স্টোকস যে ক্রিকেটের সেরাদের পাশে নাম লিখিয়েই বিদায় নেবেন, তা নিয়ে সংশয় সামান্যই।
সেটা ভবিষ্যতের ব্যাপার, আপাতত সময়ের সেরা অলরাউন্ডারের স্বীকৃতি স্টোকসকে দিয়ে দিচ্ছেন আকাশ চোপড়া। এই মুহূর্তে আমার মনে কোনো সংশয়ই নেই যে বেন স্টোকস সব সংস্করণেই বিশ্বের ১ নম্বর অলরাউন্ডার। যদি টেস্ট ক্রিকেটে দেখেন, (ব্যাট হাতে) ওর গড় ৪৩, ওয়ানডেতে ৫৯, আর টি-টোয়েন্টিতে ওর গড় ৩৩। টেস্টে বোলিং গড় ২৮। ওয়ানডেতে ৫৪, এটা অবশ্য একটা ব্যতিক্রম। টি-টোয়েন্টিতে ওর বোলিং গড় ১৮ ইউটিউবে নিজের চ্যানেল আকাশবাণীতে বলেছেন আকাশ চোপড়া। তবে আকাশ পরিষ্কার করে না বললেও এটা স্টোকসের ক্যারিয়ার গড় নয়, গত দুবছরের গড়ের হিসাব।
যা-ই হোক, দুবছর ধরে এমন পারফরম্যান্সের কারণেই স্টোকসকে নিয়ে আকাশের রায়, কোনো সংশয়ই নেই যে এই মুহূর্তে বেন স্টোকসই বিশ্বের সেরা অলরাউন্ডার। আমি খুব বেশি করে চাই যেন হার্দিক পান্ডিয়া (ভারতের অলরাউন্ডার) এই মানে পৌঁছাতে পারে। প্রতিশ্রুতি জাগানো ক্যারিয়ারে ওর (পান্ডিয়া) খুব ভালো সময়ই কাটছিল, কিন্তু টানা দুই চোট ওকে একটু পিছিয়ে দিয়েছে।
স্টোকসের মানে বা তাঁর কাছাকাছি আর কারা আছেন, সে বিশ্লেষণে গিয়েই আকাশ চোপড়ার কথা, জাদ্দু (ভারতের অলরাউন্ডার রবীন্দ্র জাদেজা) সে পথেই আছে, কিন্তু এখনো সেখানে পৌঁছাতে পারেনি। সাকিব অবশ্যই ওই পর্যায়ে পৌঁছে গেছে। এর বাইরে আর কোনো খেলোয়াড়কে দেখি না যে কিনা ওর (স্টোকসের) কাছাকাছি যেতে পারে।
আইসিসির কাছ থেকে পাওয়া নিষেধাজ্ঞায় মাঠের বাইরে থাকা সাকিব এক সময় তিন সংস্করণেই বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার ছিলেন। গত বিশ্বকাপেও ব্যাট হাতে চোখধাঁধানো পারফরম্যান্স ছিল বাংলাদেশি বাঁহাতি অলরাউন্ডারের। আর গত দুবছরের পারফরম্যান্স বিবেচনায় নিলে ব্যাট হাতে টেস্টে সাকিবের গড় ৩৪, ওয়ানডেতে ৬৩.৫২ আর টি-টোয়েন্টিতে ৩৭.৭৫। বল হাতে টেস্টে সাকিবের গড় ২০.৫০, ওয়ানডেতে ৩৭.৩২, আর টি-টোয়েন্টিতে ১৮.৪০।