করোনা নামের অতিমারির কারণে আমাদের জীবনযাত্রায় এসেছে অনেক রকম পরিবর্তন। স্বাস্থ্য সুরক্ষায় যে বিষয়গুলো আগে একেবারেই গুরুত্ব পেত না, সে নিয়মগুলো এখন আমাদের জীবনের অংশ হয়ে গেছে। সামনে ঈদুল আজহা। প্রতিবছর এ সময়ে সারা দেশে বসে পশুর হাট। একই সঙ্গে শপিংমলগুলোতেও থাকে মানুষের আনাগোনা।
স্বাভাবিকভাবেই এবার ভার্চ্যুয়াল পশুর হাটকে উৎসাহিত করা হচ্ছে। কিন্তু সবাই তো আর অনলাইনে কেনাকাটা করে অভ্যস্থ না। অনেক জায়গায় হয়তো সেই সুবিধাও নেই। তাই হাটে গেলে অবশ্যই মানতে হবে স্বাস্থ্যবিধি। এ ছাড়া বাজারে প্রতিদিন নানা দরকারে আমাদের দৌড়াতে হয়। ঈদের আগে সেটা আরও বাড়ে। শপিংমলের টুকটাক কেনাকাটা থেকে মশলার বাজার পর্যন্ত ছুটতে হয়। সেখানে স্বাস্থ্যবিধি মেনে দূরত্ব এড়িয়ে চলা মানুষ থাকেন হাতে গোনা। তবে এই সময়ে যেহেতু মল বা হাটবাজারে লোকসমাগম বেশি হবে, তাই নিজের সুরক্ষার বিষয়টি ভাবতে হবে নিজেকেই।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিসিন বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ফজলে রাব্বী চৌধুরী বলেন, করোনাভাইরাস সংক্রমণের জন্য এই সময় থেকে ঝুঁকিপূর্ণ স্থান হলো পশুর হাট। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা থেকে বলা হচ্ছে অনেক ক্ষেত্রে মানুষের ভিড়ের স্থানটিতে সীমিত আকারে এই ভাইরাস বায়ুবাহিতও হয়ে পড়তে পারে। তবুও যদি কেউ হাটে যান, তবে অবশ্যই অন্যদের থেকে শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখতে হবে। এছাড়া সংক্রমণ থেকে রক্ষা পেতে মুখে মাস্ক, হাতে গ্লাভস, চোখে গগলস বা ফেস শিল্ড ব্যবহার করা জরুরি। তার সঙ্গে কিছুক্ষণ পর পর হাত জীবাণুনাশক দিয়ে পরিষ্কার করে নিতে হবে অবশ্যই। অনেকে মিলে একসঙ্গে কেনাকাটা করতে যাওয়া থেকে বিরত থেকে একদুজন যেতে হবে। বয়স্ক বা শিশুদের এসব জায়গা এড়িয়ে চলা উচিত।
বাজারে গেলে যা করবেন
অনেক সময় রাস্তায় বা দোকানের আশপাশে পড়ে থাকা মাস্ক, গ্লাভস, গগলস বা ফেস শিল্ড দেখা যায়। এসব ফেলে রাখা জিনিসে জীবাণু থাকে। তাই সাবধানে সেসব জিনিস এড়িয়ে চলুন। কারণ, এসব জিনিসে হাত দিলে বা পায়ে পায়ে ঘরে নিয়ে এলে সংক্রমণের ঝুঁকি বাড়বে। তাই আপনার ব্যবহৃত জিনিসগুলো বাইরে থেকে ফিরে একটি ব্যাগে ভরে ময়লা ফেলার স্থানে ফেলে দেয়া উচিত। তবে করোনায় আক্রান্ত ব্যক্তি মাস্ক না পরা অবস্থায় পশুর কাছাকাছি গিয়ে হাঁচি দিলে ভাইরাসটি পশুর চামড়ায় লেগে যায়। সেক্ষেত্রে সুস্থ ব্যক্তি পশুটির গায়ে হাত দিয়ে নিজের চোখ, মুখ স্পর্শ করলে তিনিও করোনায় আক্রান্ত হয়ে পড়বেন। তাই হাটে গিয়ে পশুর শরীর স্পর্শ না করাই ভাল এবং বারবার হাটে না গিয়ে এক দিনেই দূরত্ব মেনে হাটে যেতে পারেন।
এ ছাড়া যাঁদের পায়ে ক্ষত আছে, তাঁদের লোকসমাগমের এলাকামল বা হাটবাজারে যাওয়া থেকে একেবারেই বিরত থাকতে হবে। কারণ, পায়ের ক্ষত থেকে করোনার সংক্রমণ হতে পারে সহজেই। এমনকি যাঁদের পায়ে ক্ষত নেই, তাঁদেরও সাধারণ স্যান্ডেল না পরে, পাঢাকা জুতা বা লম্বা বুট জুতা পরার পরামর্শ দিয়েছেন এই বিশেষজ্ঞ।
মেনে চলুন এই বিষয়গুলো
শুধু নিজে মাস্ক ব্যবহার করাই সমাধান নয়। যাঁদের সঙ্গে কথা হবে তাঁদেরও অবশ্যই মাস্ক ব্যবহার করতে হবে। সেক্ষেত্রে সংক্রমণের আশংকা ৯৫% কমে যায়।
দোকানে ঢুকে সতর্কভাবে অন্য ক্রেতাদের থেকে দূরত্ব নিশ্চিত করতে হবে নিজেকে।
বাজারে যাওয়ার আগে দুই হাতে গ্লাভস ব্যবহার করা অত্যন্ত জরুরি।
প্রতি এক ঘণ্টা পরপর সাবান পানি বা জীবাণুনাশক দিয়ে হাত পরিষ্কার করতে হবে। অপরিষ্কার হাত দিয়ে মুখ স্পর্শ করা যাবে না।
বাজার বা শপিংমল থেকে ফিরে মাস্ক ও গ্লাভস খুলে একটি প্যাকেটে ভরে ঝুড়িতে ফেলুন। এরপর কারও সংস্পর্শে না এসে সোজা বাথরুমে ঢুকে সাবান দিয়ে গোসল করে নিন। একই সঙ্গে পোশাকও ধুয়ে ফেলুন।
কেনা জিনিসগুলো থেকে ব্যাগ সরিয়ে ফেলে দিন। কাঁচাবাজার হলে নিয়মমতো ধুয়ে নিন।