Back To Blogs | My Blogs | Create Blogs

কোথায় আছেন, কেমন আছেন শান্তা ইসলাম

শান্তা ইসলামের জীবনে তখন ঝড়। একা থাকার সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছেন। ছেলের বয়স তেরো কি চৌদ্দ। ছেলেকে সময় দেবেন নাকি উদয়াস্ত অভিনয়ের সূচি মানবেন? সংসারের সঙ্গে সঙ্গে অভিনয়টাকেও ছাড়েন শান্তা ইসলাম। প্রায় ১৫ বছর আগে নিজের সঙ্গে যুদ্ধ করেই অভিনয়কে বিদায় জানান একসময়ের জনপ্রিয় এ অভিনেত্রী। গত দেড় দশকে অভিনয়ের অনেক প্রস্তাবই পেয়েছেন। কখনোই আর 'হ্যাঁ' করেননি।

এ সময়টা অভিনয় না করলেও পর্দা থেকে একেবারে বিদায় নেননি। আরটিভির প্রতিষ্ঠার শুরু থেকেই 'ধ্রুপদী কাহিনী' নামে একটা টক শো উপস্থাপনা করেছেন। অনুষ্ঠানটি পরিকল্পনা-পরিচালনাও তাঁর। এ অনুষ্ঠানের সূত্রে পর্দায় তাঁর মুখশ্রীটা দেখেছেন দর্শকেরা। এটুকুতেই ঝুলে আছে শান্তা-দর্শক সম্পর্ক। অভিনয়ে বিরতি নিলেও পর্দার পেছনে তিনি বেশ সরব ছিলেন বছর দশেক আগে। প্রায় ৩০টির মতো নাটক-টেলিফিল্ম নির্মাণ করেছেন। নিজের প্রোডাকশন হাউস থেকে এখনো অনুষ্ঠান নির্মাণ করছেন। তবে কাজের গতি কমিয়ে দিয়েছেন।

ধীরে ধীরে পারিবারিক জীবনে পুরোপুরি অভ্যস্ত হওয়ার চেষ্টা করছেন। তাঁর একমাত্র ছেলে শাদমান সৌমিক ইউনিভার্সিটি অব টরন্টো থেকে ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে পড়াশোনা শেষ করেছেন। কানাডাতেই বিয়ে করে আবাস গেড়েছেন। শান্তা ইসলাম ঢাকায় থাকেন। মাঝেমধ্যে ছেলের ওখানে বেড়াতে যান। ছেলের শ্বশুরবাড়ির লোকজনের সঙ্গে ওঠাবসা বেশি তাঁর। নিজের আত্মীয়দের সঙ্গেও মেলামেশা ভালো। পরিবারকেই এখন আকড়ে ধরে বাঁচতে চাইছেন।

শান্তা ইসলাম বলেন, 'যখন আমি বিচ্ছেদের কারণে একা হয়ে পড়ি, আমার ছেলেকে দেখার কেউ ছিল না। আমি অভিনয় ছেড়ে দিয়ে ছেলেকে মানুষ করতে ব্যস্ত হয়ে পড়ি। নির্মাণে জড়িয়ে যাই যেন সময়টাকে নিজের মতো ভাগ করে নিতে পারি। এখন আমার মনে হচ্ছে, আমি ভুল করিনি। ছেলেকে সময় দিয়েছি। ওকে ভালোভাবে পড়াশোনা করিয়েছি। ও এখন চাকরি করছে। আমার আগের মতো উপার্জনেরও প্রয়োজন নেই।'

তিনি জানান, তাঁর ছেলে বৃত্তি নিয়ে পুরো শিক্ষাজীবন শেষ করেছে। সংসার চালাতে তাঁকে প্রোডাকশন হাউস খুলতে হয়েছে। সেই সময় তাঁর মনে হয়েছে, অভিনয়ের চেয়ে নির্মাণটাই পেশা হিসেবে নিরাপদ। নির্মাণে তিনি আজীবনই থাকতে চান। মিডিয়াকে চিরতরে ছেড়ে যাওয়ার কথা ভাবতে গেলে বেদনা অনুভব করেন। তবে অভিনয়ে ফেরার আর কোনো সম্ভাবনা নেই। 'প্রয়াত নির্মাতা মিঠু আমাকে তাঁর ছবির একটা চরিত্রের জন্য বলেছিলেন। আমি দুদিন তাঁর কাছ থেকে সময় নিয়েছিলাম। দুদিন পর তাঁকে বলেছিলাম, আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে নিজেকে প্রশ্ন করেছি, অভিনয়ে ফেরা আমার পক্ষে সম্ভব কিনা। উত্তর পেয়েছি, অভিনয়ে আর ফেরা সম্ভব নয়।'

অভিনেত্রী শান্তা ইসলাম। ছবি: প্রথম আলো

শান্তা ইসলাম মনে করেন, তিনি যখন যে কাজটা করেছেন আন্তরিকতার সঙ্গে করেছেন। যত দিন অভিনয়ে ছিলেন স্ক্রিপ্ট বেছে বেছে কাজ করেছেন। ভালো নির্মাতাদের সঙ্গে কাজ করেছেন। সে রকম এখন আর সম্ভব নয়। এখন পরিবেশ অনেক বদলে গেছে। সেই বদলের ধরন কেমন? শান্তা ইসলাম বলেন, 'তখন একটা স্ক্রিপ্টের ওপরে দুদিন আলোচনা হতো। একটা শব্দও যেন ভুল উচ্চারণ না হয়, সেটা নিশ্চিত করতে হতো। তারপর তিন দিন ধরে মহড়া চলত। শিল্পীর কাজের মেজাজ এলে তবেই গিয়ে কাজটা করা হতো। বিটিভির প্রতিটি কাজ ধরে ধরে হতো। তিন ক্যামেরায় শুট হতো। কোন তাড়াহুড়ো ছিল না।'

শান্তা ইসলাম নির্মাণের সঙ্গে এখনো জড়িয়ে। এখনকার কাজ নিয়ে তিনি বলেন, অভিনয়শিল্পীর সংখ্যা বেড়ে গেছে। কাজের সংখ্যা বেড়ে গেছে। এ জন্য তাড়াহুড়োটাও বেড়ে গেছে। সময় বদলে গেলেও শান্তা ইসলামের প্রতি দশর্কদের অনুভূতি বদলায়নি। পর্দা থেকে সরে পড়লেও তাঁর প্রতি ভালো লাগা দর্শকদের অমলিন। তাঁর কাছে মনে হয়, তিনি বোধ হয় কখনোই অভিনয় ছাড়েননি। এখনো দর্শকেরা দেখা হলে যেভাবে কথা বলেন, উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেন, মনে হয় যেন এখনো তিনি আগের মতোই পর্দায় নিয়মিত। তিনি বলেন, 'আমি অবাক হয়ে যাই কীভাবে দর্শকেরা এখনো আমাকে মনে রেখেছেন। আমি আমার নাটকের নাম ভুলে গেছি। চরিত্রের নাম ভুলে গেছি। দর্শকেরা ঠিকই আমাকে আমার নাটকের নাম ধরে ধরে তাঁদের ভালো লাগার কথা বলেন। তাঁদের প্রতি আমি আসলে কৃতজ্ঞ।'

শান্তা ইসলাম এ আলাপচারিতার সময় মনে করতে পারেননি তাঁর অভিনীত জনপ্রিয় অনেক টিভি নাটকের কথা। তাঁর মনে গেঁথে আছে কিছু মঞ্চ নাটকের কথা। 'ময়ূর সিংহাসন', 'যুদ্ধ এবং যুদ্ধ' এবং 'আগুনমুখা' এ তিনটি নাটেকর নাম তিনি উল্লেখ করেন। তাঁর মনে আছে কানাডায়, দক্ষিণ কোরিয়ায় এবং যুক্তরাষ্ট্রে মঞ্চায়িত একক নাটক 'রাজকন্যার গল্পকথা' নাটকের কথা। মনে আছে ১৯৮৫ সালে বিটিভির সঙ্গে যুক্ত হওয়ার গল্প। মাত্র অডিশন দিয়েছেন বিটিভিতে। ফল বেরোনোর আগেই প্রযোজক জিয়া আনসারী 'অভিযোগ' নাটকের স্ক্রিপ্ট তুলে দেন তাঁর হাতে। সৈয়দ আহসান আলী সিডনীর সঙ্গে ওই নাটকে অভিনয় করেন শান্তা ইসলাম।

তারপর হাজারের কাছাকাছি নাটকে অভিনয় করেছেন। অভিনয় করেছেন ছয়টি সিনেমায়। 'অন্য জীবন' ছবিতে অভিনয়ের জন্য পেয়েছেন শ্রেষ্ঠ পার্শ্ব অভিনেত্রী হিসেবে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার। আরও নানা পুরস্কারে তাঁর ক্যারিয়ার সমৃদ্ধ। সবচেয়ে বড় পুরস্কার মনে করেন, দর্শকদের স্মৃতিতে জ্যান্ত থাকাটাকেই। যে কারণে এক রকম ঝাড়া হাতপা হয়ে যাওয়ার পরও নির্মাণে যুক্ত থেকে শোবিজের সঙ্গে একটা যোগসূত্র ধরে রেখেছেন শান্তা ইসলাম।


Akash Ahmed  

124 Blog posts

Comments