ভক্ত ও ভালোবাসার মানুষদের শুভেচ্ছায় আমি সত্যিই আপ্লুত। সবাই ফেসবুক, টুইটারে এত সুন্দর সুন্দর করে নানা কথা বলছে, চোখে পানি এসে যায়। চেনাজানার বাইরে অচেনাঅপরিচিতরা এত মায়া নিয়ে লিখছে, সত্যিই কান্না পায়। এসব মায়া-মমতার কারণে আরও কিছুদিন পৃথিবীতে বাঁচতে ইচ্ছে করে। ১ জুলাই জন্মদিনের সন্ধ্যায় প্রথম আলোকে এমনটাই বললেন জয়া আহসান।
বাংলাদেশের পাশাপাশি ভারতেও সমান জনপ্রিয় জয়া আহসান। ভারতের অনেক নামকরা নির্মাতা জয়ার অভিনয়গুণে মুগ্ধ। অসংখ্যবার তাঁরা বাংলাদেশের এই অভিনয়শিল্পীর সঙ্গে কাজ করে মুগ্ধতার কথা প্রথম আলোকে জানিয়েছেনও। ১ জুলাই তাঁর জন্মদিন। কততম জন্মদিন তা জানা না গেলেও এই জন্মদিন কেমন কেটেছে, তা জানার চেষ্টা করা হয়েছে।
শুরুতেই জয়া জানালেন, চার বছর আগের এই দিনে হোলি আর্টিজানের ঘটনার পর থেকে জন্মদিনে কোনো কেক কাটেন না। তাঁর মতে, জঘন্যতম এই ঘটনা তাঁর জীবনে কালিমা লেপে দিয়েছে। তিনি বললেন, জানি না কবে এই ঘটনার ট্রমা থেকে বের হতে পারব। আমি সেদিনের ঘটনার কথা মনে করতে চাই না। তবুও জন্মদিন এলে শুধু মনে পড়ে যায়। একটা কালো অধ্যায় সামনে এসে পড়ে।
জন্মদিনে জয়া কেক না কাটলেও ভালোবেসে অনেকে তাঁর বাড়ির ঠিকানায় পাঠিয়েছেন অনেকগুলো কেক। এই করোনার মধ্যে জীবনটাকে বোনাস হিসেবে দেখা জয়া জানালেন, দু-একটি বাদে বাসায় আসা সব কটি কেক বিল্ডিংয়ে নিরাপত্তার দায়িত্ব থাকা সবাইকে দিয়েছেন। তাঁর আশপাশে যাঁরা সব সময় কেক খেতে পারেন না, তাঁদেরকেও দিয়েছেন।
জয়া বলেন, সাধারণত আমি জন্মদিনে অনেক বছর ধরে রাস্তার কুকুরদের খাওয়ায়। এটা শুধু আমার একার জন্মদিন নয়, আমার বাড়ির যে কারও জন্মদিনেই তা করি। করোনার কারণে এবার এই উদযাপন করতে পারিনি। ওদের খাওয়াটা পাওনা রইল। আমার কাছে কুকুরগুলো বাচ্চার মতো। কথায় কথায় জয়া আরও জানালেন, যত দূর মনে পড়ে জন্মদিনটা আমার কখনোই সেভাবে ঘটা করে উদযাপন করা হয় না। নায়িকারা জন্মদিনের কেক কাটে, এটা আমার ভালো লাগে না, হাস্যকর লাগে।
পাঁচ বছর বয়সের জন্মদিনে জয়া তাঁর বন্ধুর কাছ থেকে একটি উপহার পেয়েছিলেন, যা এখন পর্যন্ত সবচেয়ে বড় সারপ্রাইজ। কোনো উপহারই সেই সারপ্রাইজ আজও অতিক্রম করেনি। এবারের জন্মদিনে সেই উপহারের কথাও মনে পড়ল। জয়া বললেন, একদম ছোটবেলায়, আমার বয়স খুব সম্ভবত পাঁচ বছর হবে। কলাবাগান থাকতাম, আমার নানুবাড়ির নিচতলায় একজন ভাড়াটে থাকত, ওই পরিবারে শম্পা নামের একজনের সঙ্গে খুব বন্ধুত্ব হয়েছিল। পাঁচ বছরের সেই বন্ধু আমাকে উপহারটা দিয়েছিল। মাঝারি সাইজের খুব সুন্দর একটা মাটির চুলা। কী যে খুশি হয়েছিলাম, বলে বোঝাতে পারব না। অতটা খুশি আমি আজ পর্যন্ত কোনো কিছুতেই হইনি। সেই বন্ধুর সঙ্গে কি এখনো যোগাযোগ হয়? জয়া জানালেন, তাঁর সেই বন্ধুটি হারিয়ে গেছে। বললেন, শম্পাকে আমি হারিয়ে ফেলেছি। কোনো যোগাযোগ নেই। এখনো স্পষ্ট মনে আছে, ও মাথা ন্যাড়া করলে আমিও করতাম।
জন্মদিন উপলক্ষে সবাই ফেসবুক ও টুইটারে শুভেচ্ছা জানাচ্ছেন জয়াকে। বললেন, ভালো লাগছে। পাশাপাশি করোনার এই কঠিন সময়ে আমার জন্মদিন এতটা গুরুত্ব পাওয়ায় কেমন যেন লজ্জা লাগছে।
জন্মদিনে মা কী দিলেন? আমার সবচেয়ে প্রিয় খাবার পোলাও রান্না করেছেন। সঙ্গে ছিল কাঠালের বিচি দিয়ে গরুর মাংস। বললেন জয়া। এও জানিয়ে দিলেন, অনেক না করেছেন, কিন্তু মায়ের মন বলে কথা! তাই ঠিকই মেয়ের পছন্দের খাবার রান্না করেছেন।
আপনি কি ভোজনরসিক? অনেকে তো বলেন, আপনি নাকি খাওয়াদাওয়া খুবই কম করেন? বললেন, আমি খাওয়ায় কোনো কার্পণ্য করি না। খাওয়ার সময় কিছু মাথায় থাকে না। বরং অনেক বেশি না খেলে আমার মাথা কাজ করে না। স্ক্রিপ্ট মুখস্থ রাখতে পারি না, ডায়ালগ ভুলে যাই। তবে আমি খাই যেমন, তেমন ব্যায়ামও করি। আমি মনে করি, মন খুলে বাঁচতে পারা, থাকতে পারা, উড়তে পারাই সুন্দর জীবনের মূল চাবিকাঠি।