আজকের বিষয় হচ্ছেঃ SSD vs HDD
বন্ধুরা আজকে আমি আপনাদের সাথে কম্পিউটার এর স্টোরেজ ডিভাইস, এস এস ডি (SSD) ও এইচ ডি ডি (HDD) সম্পর্কে তুলনামূলক আলোচনা করবো। প্রথমে আমাদের জানতে হবে,এইচ ডি ডি (হার্ড-ডিস্ক) এবংএস এস ডি (সলিড স্টেট ড্রাইভ) কি এবং এটা কিভাবে কাজ করে। কম্পিউটার কত তারাতারি অন হবে এবং ফাইল কত স্পিডে ওপেন হবে, এগুলো ডিপেন্ড করে কম্পিউটার এরস্টোরেজ ডিভাইসের স্পিডের ওপরে। কম্পিউটার এর প্রান বা অপারেটিং সিস্টেম এই স্টোরেজডিভাইস গুলোতে ইন্সটল করা হয় বলেই, আমরা কম্পিউটার চালাতে পারি। আমরা প্রায় সবাই এই বিষয়টা জানি, তাই কথা না বাড়িয়ে চলুন বিস্তারিত দেখে নিই।
হার্ড ড্রাইভ-(HDD) বিস্তারিতঃ
আমরা যারা কম্পিউটার ব্যবহার করি তাদের সবাই এই হার্ড ডিস্ক দেখেছি এবং এটা সবাই চিনে থাকবেন। আইবিএম সর্বপ্রথম ১৯৫৬ সালে এটা আবিস্কার করেন, আস্তে আস্তে এটার উন্নতি সাধন হচ্ছে এবং ক্যাপাচিটিও বাড়ানো হচ্ছে। এই হার্ড ডিস্কের মধ্যে কিছু স্পিনিং প্লেট থাকে, মানে এই প্লেট গুলো খুব জোরে ঘুরতে থাকে, এবং এতে ম্যাগনেটিজাম ব্যবহার করে এতে ডেটা স্টোর করে রাখা হয়। এই প্লেটের উপরে একটা রিড/রাইট হেড থাকে যেটার মাধ্যমে ডেটাগুলো রিড এবং রাইট করা হয়। এই হার্ড ডিস্কের প্লেট যত জোরে ঘুরবে, রিড/রাইট স্পিড তত বেশি হবে। বর্তমানে এই হার্ড ডিস্কগুলোর স্পিনিং রেট ৫৪০০-৭২০০ আরপিএম পর্যন্ত হয়। তাহলে বুঝতেই পারছেন ৫৪০০ এর থেকে অবশ্যই ৭২০০ আরপিএম এর হার্ড ডিস্ক এর গতি ও পারফরমেন্স বেশি হবে।
বর্তমানে আমাদের দেশের কম্পিউটার ব্যবহারকারির প্রায় ৯০% মানুষ কম্পিউটার এ হার্ড ডিস্ক ব্যবহার করে। নরমাল কাজের জন্য হার্ড-ডিস্ক ব্যবহার করে কাজ করা যায়, কিন্তুু যারা বড় ধরনের কাজ করে তাদেরএস এস ডি ব্যবহার করতে হয়। বর্তমানে বাজারে অনেক কোম্পানির হার্ড ডিস্ক দেখা যায়, এগুলোর মধ্যে অনেক কোয়ালিটি থাকে। আপনি যদি হার্ড ডিস্ক কিনতে যান তাহলে সর্বপ্রথম একটি ভাল ব্রান্ড সিলেক্ট করে নিবেন, এবং এরপর এর স্পিনিং রেট টা দেখে নিবেন। মনে রাখবেন স্পিনিং রেট যত বেশি হবে, তত বেশি সেটার স্পিড হবে। তাহলে এখন চলুন দেখে নিই হার্ড ডিস্কের সুবিধা এবং অসুবিধা গুলো।
সুবিধাঃ
১- এর মূল্য আমাদের নাগালে, উদাহরনঃ ১-টেরাবাইট=৩৫০০ টাকা।
২- প্রায় সকল বাজারে/মার্কেটে এটা পাওয়া যায়।
৩- অনেক ডেটা স্টোর করে রাখা যায়।
৪- নষ্ট হলেও অনেক সময় ডেটা রিকোভার করা যায়।
অসুবিধাঃ
১- মুভিং পার্স থাকার কারনে ড্যামেজ হওয়ার সম্ভাবনা বেশি।
২-মুভিং পার্স থাকার কারনে, সাইন্ড হয়, কম্পন করে, গরম হয়।
৩- ইলেকট্রিক পাওয়ার বেশি লাগে।
৪- পিসি চালু হতে সময় লাগে ৩০-১২০ সেকেন্ড।
৫- রিড রাইট স্পিড ৫০-১২০ এমবিপিএস পর্যন্ত হয়।
৬- ফাইল অনেক স্লো তে ওপেন হয়।
৭- আকারে বড় এবং ওজন বেশি।
৮- পড়ে গেলে নষ্ট হবার চান্স ৮০%।
৯- অনেক সময় কম্পিউটার হ্যাং করে।
১০- গেমিং এর সময় মাঝে মধ্যেই আটকে যায় ।
সহজ কথায় বলতে গেলে, হার্ড ডিস্ক এর সুবিধার থেকে অসুবিধায় বেশি। আবার আপনার কম্পিউটার এ যখন একই হার্ড ডিস্কে উইন্ডোজ/অপারেটিং সিস্টেম দেয়া থাকবে, তখন কিন্তুু সেটার উপর অনেক চাপ পড়বে, ফলে সেটা অনেক গরম হয়ে যায় এবং ড্যামেজ হওয়ার অনেক সম্ভাবনা থাকে। তাই আপনার পার্সোনাল ফাইল গুলো আলাদা করে ব্যাকআপ করে রাখতে পারলে ভালো হয়।
সলিড স্টেট ড্রাইভ-(SSD) বিস্তারিতঃ
আমাদের মধ্যে অনেকেই হয়ত জানিএস-এস-ডি কি, আবার হয়ত অনেকেই জানার জন্য এসেছেএস-এস-ডি কি এবং এটার কাজ কি?এস-এস-ডি মানে হচ্ছে সলিড স্টেট ড্রাইভ, সাধারনত পেনড্রাইভ/মেমোরি কার্ডে যে ধরনেরম্যাগনেটিজাম ব্যবহার করা হয়,এস-এস-ডি তেও একই ধরনেরম্যাগনেটিজাম ব্যবহার করা হয়। এটাতে কিছু ইন্টিগ্রেটেড সার্কিট ব্যবহার করে ডেটা স্টোর করা হয়। এবং এস-এস-ডি তে কোনোরকম মুভিং পার্টস না থাকার কারনে এর কোন এটা সরাসরি রিড/রাইট করে থাকে। এটা একটা উন্নত মানের সার্কিট বোর্ডের উপরে এর পার্টসগুলো সুন্দর ভাবে লাগানো থাকে। আপনি যদিএস-এস-ডি আপনার ল্যাপটপ/কম্পিউটার এ ব্যবহার করেন, তাহলে আপনার মধ্যে একটি নতুন এক্সপেরিয়েন্স দেখতে পাবেন। এটা অনেক ফাস্ট এবং স্মুথলি কাজ করে। এটা হার্ড-ডিস্কের থেকে ৩০% ফাস্ট কাজ করে। এস-এস-ডি তে যেকোনো ধরনের বড় সফটওয়্যার এর কাজ করলেও এটা কম্পিউটার হ্যাং করবেনা।
বর্তমানে আমাদের দেশে এস-এস-ডি এর ব্যবহার খুব বেশি দেখা যায় না। বিশেষ করে এর মূল্যটা হার্ড ডিস্ক এর তুলনায় অনেক বেশি। বাংলাদেশে শতকরা প্রায় ১০% কম্পিউটার ব্যবহারকারীএস-এস-ডি ব্যবহার করে। আমদের মধ্যে এমন অনেকেই আছেন যারা কম্পিউটার এ কোন ধরনের বড় কাজ করতে গেলেই দেখা যায়, কম্পিউটার অনেক সময় হ্যাং হয়ে যায়। অথবা, বিভিন্ন সফটওয়্যার যেমনঃ ভিডিও এডিটিং, ফটোশপ, গেমিং ইত্যাদি কাজ গুলো করার সময় কম্পিউটার কোন রেসপন্স করেনা অথবা অনেক দেরিতে ফাইল ওপেন হয় কিংবা কম্পিউটার হ্যাং হয়ে যায়, এগুলো সমস্যা যদি হয়ে থাকে তাহলে আপনি অপারেটিং সিস্টেম চালানোর জন্য একটিএস-এস-ডি আপনার কম্পিউটার এ লাগিয়ে ফেলুন। হার্ড-ডিস্কের তুলনায়এস-এস-ডি তে ৩০% আগে ফাইল ওপেন হয়। তাহলে আশা করি আপনার আর এই সমস্যা গুলো থাকবেনা। তাহলে চলুন দেখে নিইএস-এস-ডি এর সুবিধা এবং অসুবিধাগুলো।
সুবিধাঃ
১- এতে কোন মুভিং পার্স না থাকাই এটা পুরোপুরি ড্যামেজ ফ্রি।
২-মুভিং পার্স না থাকার কারনে, সাইন্ড হয় না, কম্পন নাই, গরম হয়না।
৩-ইলেকট্রিক পাওয়ার খুব কম লাগে।
৪-পিসি চালু হতে সময় লাগে ১০-১৫ সেকেন্ড।
৫-রিড রাইট স্পিড ২০০-৫০০ এমবিপিএস পর্যন্ত হয়।
৬- ফাইল অনেক ফাস্ট ভাবে ওপেন হয়।
৭- আকারে ছোট এবং ওজন মাত্র ৬০-৭০ গ্রাম।
৮- পড়ে গেলে নষ্ট হবার চান্স ৫%।
৯- কম্পিউটার অনেক স্মুথ এবং ফাস্ট চলে।
১০- গেমিং এর সময় কাজের সময় কোনরকম হ্যাং করেনা।
অসুবিধাঃ
১- এর মূল্য অনেক বেশি, উদাহরনঃ ১২০জিবি=৩৬০০-৫০০০ টাকা।
২-সব বাজারে/মার্কেটে এটা পাওয়া যায় না।
৩- ছোট হলে শুধুমাত্র অপারেটিং সিস্টেম ইন্সটল করে রাখা যায়।
এস-এস-ডি তে অসুবিধা নাই বললেই চলে, এর শুধু দাম টাই একটু বেশি। এছাড়া এর অসুবিধা লক্ষ্য করা যায় না। তবে এর অনেক মূল্য হবার কারনে অনেক দোকানে এটা তারা রাখেনা, এটা কিনতে হলে কোন বড় দোকানে যেতে হবে। অথবা, আমরা চাইলে এটা অনলাইনের মাধ্যমেও কিনতে পারি। অনলাইনে অনেক সময় ডিস্কাউন্ট তারা দিয়ে থাকে এতে অনেক কম মুল্যেও পাওয়া যায়। আমি রিকোমেন্ট করব মার্কেট থেকে কেনার আগে অবশ্যই অনলাইনে সেটা দেখে নিবেন। এবং প্রডাক্ট কেনার আগে অবশ্যই ভালো ব্র্যান্ড এর দেখে নিবেন। যদি বুঝতে না পারেন কোনটা ভালো ব্র্যান্ড তাহলে নেট এ সার্চ করে দেখবেন তাহলেই আপনি পেয়ে যাবেন।
Azizul Hoque 6 yrs
nice