আমার বিয়ের এক বছর পর হঠাৎ করে একদিন আমার বরের ছোট বোন নিতু আমায় আড়ালে ডেকে নিয়ে গিয়ে বললো,'ভাবী, তুমি কিছু মনে না করলে একটা কথা বলতে চাই আমি তোমার কাছে!'
আমি খানিক সময় চুপ থেকে বললাম,'বল। কিছু মনে করবো না।'
নিতু বললো,'তুমি কিন্তু শোনে অনেক কষ্ট পাবে!'
আমি বললাম,'কষ্ট পেলে আমি পাবো।তুই বল।'
নিতু এবার বললো,'ভাবী, ভাইয়ার সাথে না তোমার বোনের খারাপ সম্পর্ক আছে!'
'মানে?'
ভীষণ রকম চমকে উঠলাম আমি।
নিতু কেঁপে কেঁপে উঠে বললো,'ভাইয়া জানলে আমায় মেরে ফেলবে কিন্তু। আমি গতকাল দেখেছি। তুমি তো মার সাথে ডাক্তারের কাছে গিয়েছিলে।আর আমার আর তোমার বোন পৃথুর স্কুলে যাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু পৃথু হঠাৎ বললো,তার নাকি মাথা ব্যথা।সে স্কুলে যাবে না।ভাইয়াও বললো পৃথু একা বাসায় থাকবে কী করে!তাই সেও আজ অফিস যাবে না।তারও নাকি শরীর খারাপ। অবশেষে আমি একাই পথ ধরলাম স্কুলের। কিন্তু কিছু পথ যাওয়ার পর মনে হলো অংক খাতা টেবিলের উপর রেখে এসেছি।ওই খাতায় আবার সেদিনের হোম ওয়ার্ক।তাই দৌড়ে আবার বাসায় ফিরলাম খাতাটা নিতে। কিন্তু ফিরে দেখি--!
নিতু কথা শেষ না করেই চুপ হয়ে গেল।
আমি বললাম,'বল প্লিজ!'
নিতু বললো,'ভাইয়া আর পৃথু নোংরামি করছিলো। বিশ্বাস করো ভাবী ওদের শরীরে এক রত্তি কাপড় পর্যন্ত ছিল না।'
আমি সঙ্গে সঙ্গে নিতুর মুখে আমার হাত চেপে ধরে বললাম,'প্লিজ চুপ কর তুই।আমি আর শুনতে পারছি না।'
নিতু অনেক ঘাবড়ে গেল।সে আমার হাতটা চেপে ধরে বললো,'ভাবী,আল্লাহর দোহাই লাগে ভাইয়া কিংবা মা যেন কিছু না জানে। এরপর আমি পৃথুকে সাবধান করেছিলাম। কিন্তু পৃথু আমার কথা শুনেনি।সে এখনও ক্লাস ফাঁকি দিয়ে ভাইয়ার সাথে ঘুরে বেড়ায় রিক্সা করে। সেদিন তো সিনেমাও দেখেছে দুজন একসাথে।আমি সেদিন বলেছি,আমি কিন্তু ভাবীর কাছে সব বলে দিবো।
পৃথু তখন বললো,বলে দিলে তোমার ভাইয়া তখন আর তোমার রক্ষা রাখবে না।
সেই ভয়ে অতদিন আমি চুপ করে থেকেছি।
নিতুকে আমি বললাম,'প্লিজ তুই যা এখন এখান থেকে।আর চুপ থাকিস প্লিজ!আর কেউ যেন কিছু না জানে এ বিষয়ে!'
নিতু বললো,'আচ্ছা ভাবী।'
বলে সে চুপচাপ আমার কাছ থেকে চলে গেল।
কিন্তু আমার কেন জানি মনে হচ্ছে নিতুর কথা সত্য নয়।কারণ নিতুর চেয়ে পৃথুর রেজাল্ট ভালো।এইটে পৃথুর গোল্ডেন এ প্লাস থাকলেও নিতুর মাত্র ফোর পয়েন্ট।পৃথু যদি এসব করেই বেড়াতো তবে তো ওর রেজাল্ট গোল্লায় নামার কথা ছিল!
আমার কেন জানি মনে হচ্ছে কোন একটা জেদ মেটাতে চায় পৃথুর উপর নিতু। কিন্তু সেই জেদটা কী নিয়ে?
তাছাড়া পৃথুকে আমি খুব ভালো করেই চিনি। এমন শান্ত শিষ্ট আরেকটি মেয়ে হয় না।আর সে তো জানে বাবা মা মারা যাওয়ার পর বোনের বাড়ি ছাড়া তার আর কোন আশ্রয় নাই।নিশ্চয় সে তার এই শেষ আশ্রয়স্থল নষ্ট করতে চাইবে না!
'
পৃথুকে সে রাতে কিছু বলতে চেয়েও আমি বললাম না। ভাবলাম,একটা মিথ্যে বিষয় নিয়ে ওর মনে কষ্ট দেয়া ঠিক না। তাছাড়া মিতুল (আমার বর)শুনলেও তো খুব মন খারাপ করবে।হতে পারে এই একটা বিষয় নিয়ে আমার সংসারটাও ভেঙে খান খান হয়ে যেতে পারে।তাই আমি এই বিষয়টাকে একেবারে মাটি চাপা দিয়ে ফেললাম।
'
এর সপ্তাহ খানেক পর আমার শাশুড়ি মাকে নিয়ে আবার ডাক্তারের কাছে গেলাম আমি চেকআপ করাতে। আমার প্র্যাগনেন্সির সাত মাস পাড় হয়েছে।মিতুল আজকাল আমার উপর খুব স্বতর্ক। গতকাল রাতে সে আমার হাত ধরে বললো,'বৃষ্টি,তুমি কিন্তু একদম কাজ করবে না বুঝলে।আমি দেখেছি এখনও রান্না বান্না, কাপড় ধোয়া মুছা এইসব কিছু করো তুমি।এটা কিন্তু ঠিক না।পৃথু আছে,নিতু আছে, ওদেরকে বলবে।ওরা সবকিছু করবে। এমন শরীর নিয়ে কিছু করলে পরে যদি সমস্যা হয়!বিশ্বাস করো বৃষ্টি আমার খুব ভয় হয় তোমায় নিয়ে!'
আমি তখন আনন্দে আত্মহারা হয়ে উঠেছিলাম।মিতুলের একটা হাত তখন আমার বুকের উপর টেনে এনে মনে মনে ভাবলাম, ছিঃ! এমন ফেরেশতার মতো একটা মানুষকে নিয়ে কী মন্দ কথাটা আমার কাছে বললো নিতু!তাও আবার আপন ভাইকে নিয়ে! ছিঃ!
চেকআপ করাতে বের হয়ে অর্ধেক রাস্তা গিয়ে মনে হলো একটা মস্ত ভুল হয়ে গেছে। গতবারের সব কাগজপত্র রেখে এসেছি সোকেশের ড্রয়ারে।
তাই আবার ফিরতে হলো গাড়ি ঘুরিয়ে। গেটের কাছে এসে শাশুড়ি মাকে বললাম,'আপনি বসে থাকুন গাড়িতে মা।আমি গিয়ে কাগজপত্র নিয়ে আসছি।'
মা বললেন,'ঠিক আছে।'
আমি গাড়ি থেকে নেমে গেট পেরিয়ে ঘরে গিয়েই হতভম্ব হয়ে গেলাম।এ কী দেখছি আমি! ছিঃ!
অবশেষে নিতুর কথাই সত্যি হলো।
ঘরে ঢুকতেই দেখি পৃথুর সাথে এক বিছানায় মিতুল। ওদের শরীরে এক টুকরো কাপড় পর্যন্ত নাই। ছিঃ ছিঃ ছিঃ!
আমাকে দেখেই দুজন দুদিকে সড়ে গেল।
মিতুল বিছানা থেকে উঠে কাপড় ঠিক করতে করতে ওয়াশরুমের দিকে চলে গেল।আর পৃথু বিছানায় থাকা কাঁথাটা নিজের গায়ের উপর ভালো করে ছড়িয়ে দিয়ে মুখটা বালিশের বুকে গুঁজে দিয়ে চুপচাপ শুয়ে পড়লো।
আমি আর এখানে দাঁড়িয়ে থাকতে পারছি না।মাথা ঘুরছে। সবকিছু কেমন দুঃস্বপ্নের মতো মনে হচ্ছে। তবুও তো কাগজ পত্র নিয়ে গাড়িতে গিয়ে উঠতে হবে।মার সাথে ডাক্তারের কাছে যেতে হবে। মুখে মেকি হাসি ধরে রাখতে হবে। নয়তো যে মা প্রশ্ন করবেন কী হয়েছে তখন আমি কী উত্তর দিবো?
তিনি যদি শুধু একবার জানতে পারেন পৃথু এমন একটা নোংরা কাজে জড়িত তবে তাকে আজকেই তিনি ঘাড় ধাক্কা দিয়ে এ বাড়ি থেকে বের করে দিবেন। তখন পৃথু কোথায় গিয়ে আশ্রয় নিবে?
তাছাড়া আমাকেও যে তিনি পৃথুর সাথে এ বাড়ি থেকে বের করে দিবেন না তা কে বলতে পারবে?
একটা দুশ্চিন্তা আর চাপা ঘৃণায় মরে যেতে ইচ্ছে করছে আমার। তবুও নিজের শরীরটাকে অতি কষ্টে টেনে নিয়ে সোকেশের ড্রয়ার খুলে কাগজপত্র বের করে নিয়ে গেলাম গাড়ির কাছে।গাড়িতে উঠে এবার ডাক্তারের কাছে গেলাম।ডাক্তার চেকআপ করে হাসিমুখে জানালো,'আপনি মেয়ে সন্তানের মা হতে যাচ্ছেন।'
শুনে খুশিতে আমার শাশুড়ি আত্মহারা হয়ে উঠলেন।তার গলায় পরা স্বর্ণের যে চেইন‌ ছিল ডাক্তারের সামনেই তিনি গলা থেকে সেই চেইন খুলে আমার হাতে তুলে দিয়ে বললেন,'এই চেইন দিয়ে আমার নাতনীর জন্য তুমি কানের ঝুমকা, নাকফুল,হাতের চুড়ি বানাইবা।'
আমার চোখ দিয়ে টপটপ করে জল নেমে এলো তখন। না এটা আনন্দের কোন জল নয়।একটা চাপা দুশ্চিন্তার। এই যে অনাগত কন্যা আমার পেটে।সে যখন ভূমিষ্ঠ হয়ে জানবে তার পিতা একটা পাপিষ্ঠ তখন কেমন হবে?
'একটু মন দিয়ে পড়ুন--
এরকম আরো গল্প ওই গ্রুপে দেয়া আছে, পুরো গল্প গুলো পড়তে নিচে গ্রীন (See More) ক্লিক বা টাচ করুন,তারপর গ্রুপে জয়েন করে পড়েনিন।
ধন্যবাদ।
......See More
� নীল ক্যাফের ভালোবাসা �
এই গ্রুপে দেয়া আছে, জয়েন করে পড়েনিন।
আমার শাশুড়ি আমার মুখের দিকে তাকিয়ে বললেন,'কী গো মা কন্যা সন্তান হবে শুনে তুমি কী খুশি হও নাই?'
আমি কান্নামাখা গলায় বললাম,'খুশি হয়েছি মা। অনেক খুশি হয়েছি।'
'তাহলে কাঁদছো কেন এভাবে?'
'খুশিতে মা।খুশিতে কাঁদছি!'
আমার শাশুড়ি তখন আমায় জাপটে ধরে ফেললেন।আর আমার চোখের দিকে সন্দেহের চোখে তাকিয়ে বললেন,'না গো মা না। তুমি একটা কিছু লুকাচ্ছো আমার কাছে। তুমি কাঁদছো খুশিতে না অন্য কোন কারণে! খুশির কান্না এমন হয় না!কেন কাঁদতেছো সত্যটা কও মা আমার কাছে!সত্যটা আমার কাছে বলতেই হবে!
'
#চলবে

image