রাতে শাশুড়ীর ঘরে বসে শ্বশুড়ের মাথা টিপছিল সানজিদা। হঠাৎ শাশুড়ীর ডাকে কিছুটা চমকে উঠে সে।

--কি হয়েছে? শাশুড়ীর প্রশ্ন।

--ক কই কিছু নাতো। কেন আম্মা?

--তোমার চোখে পানি। কান্না করছ কেনো?

--চোখের কোনায় হাত দিয়ে সানজিদা বুঝতে পারল আসলে জায়গাটা ভেজা। কিছু না মা। ওই এমনিতে বলে মূল ব্যাপার এড়াতে চাইল।

--এমনিতে? কই আমাদের তো চোখ ভিজে না।

--মাথাটা ধরছে তাই আরকি। সানজিদা দ্রুত উত্তর দেয়।

--তোমার শ্বশুড় তো ঘুমায়। এখন তুমি রুমেতে যেতে পার। বিশ্রাম করো গিয়ে।

--আচ্ছা আম্মা। বলে সানজিদা রুম থেকে বের হয়ে নিজের রুমে চলে আসে।

বিছানায় মাথা নিচু করে বসে থাকে কিছু সময়। এরপর বালিশের পাশে হাতিয়ে ফোনটা বের করে গ্যালারিতে প্রবেশ করে সানজিদা। বাবার সাথে হাসিমুখে ওঠা ছবিটা দেখে হাত বুলায় বাবার ছবিটার উপরে। চোখের পানি যেন বাধ মানছে না আজ। টপটপ করে পড়ছে ফোনের উপর। ঝাপসা হয়ে আসা চোখটা মুছে নেয় সানজিদা বার বার। ফিরে যায় সে অতিতের সময়গুলোতে।

মেয়ে মা আর বাবা মিলে সানজিদার পরিবার। মা স্কুল টিচার আর বাবা বেসরকারি চাকুরিজীবি। বাবা মায়ের আদরে সানজিদা সবসময় শুধু পড়াশোনা আড্ডা গান আর মাস্তি মজাতে সময় ব্যয় করত। বাবা মাকে ভালোবাসলেও তাদের প্রয়োজন বোঝার মতো মনও পড়াশোনা আড্ডা আর মাস্তি মজাতে হারিয়ে ফেলেছিল। একদিন বাবা দুপুরে হঠাৎ বাসায় চলে আসে। সানজিদার রুমের দরজায় গিয়ে উনি দাঁড়িয়ে পড়েন।

--বাবা তুমি? এখন?

--ফ্রি আছিস মা?

--কেনো বলো তো?

--আমার মাথায় কেমন যেন লাগছে। ঘুরছে আর খুব ব্যথা করছে। একটু মাথাটা টিপে দিবি মা?

--আমিত এখন এসাইনমেন্ট রেডি করছি আব্বু। তুমি একটু ম্যানেজ করে নাও না। মুভ লাগিয়ে নাও দেখবে ঠিক হয়ে যাবে।

-- বাবা মুচকি হেসে আচ্ছা বলে চলে যায়।

এমন অনেক ঘটনা ছিল যেখানে সানজুর বাবা চায়ত মেয়ের সাথে কিছুটা সময় ব্যয় করতে আর মেয়ে সানজু নানা অযুহাত দেখাত নিজের ভালো লাগা কাজগুলো করতে বাবার ভালো লাগাকে অবমূল্যায়ন করে।

বর্তমান সময়ঃ

--কান্না করতে করতে সানজিদা ফ্লোরে বসে পড়ে। রুম আটকানো আছে তাই বাহিরের মানুষটি বুজতেও পারবে না ভেতরের মানুষটার কষ্ট আর আর্তচিৎকার।

--বাবা আমায় একটা সুযোগ দাও না প্লিজ। তোমায় একটু ছোঁয়ার সুযোগ দাও। এখন আমাকে অসুস্থ শরীর নিয়েও অন্যদের সেবা করতে হয়। ঘন্টার পর ঘন্টা হাত পা মাথা টিপে দিতে হয়। বিশ্বাস করো খারাপ লাগে না আমার। অভ্যাসে পরিনত হয়েছে ৷ শুধু কষ্ট হয় তাদের আবদার পূরন করতে পারলেও আমার জন্মদাতার আবদার আমি কখনো পূরন করতে পারিনি ভেবে। যখনি তাদের আবদার পূরন করতে বসি তখনি তোমার মুখটা সামনে ভেসে ওঠে। আব্বু একবার ফিরে এসো।আমি আমার কলিজা বের করে দিব তোমায় আব্বু। তবুও ফিরে এসো।

--সানজুর কথা শোনার মানুষটা কোন এক ভোরবেলায় দুনিয়া ছেড়েছিল স্ট্রোক করে। বাবাকে হারিয়ে সানজিদা এখন প্রতি পরতে পরতে বুঝতে পারে তার দুনিয়া ছিল তার বাবা। যাকে সময় থাকতেও অবহেলা করেছে সে। তার আশা আবদার পূরন না করে নিজের ভালো লাগাকে সামনে রেখেছিল সে। আজ সানজু শুধু একটা প্রার্থণা করে।

--বাবা। একবার ফিরে এসো। তোমায় একবার ছুঁতে চাই।

[সবাই যদি সময়ের কাজ সময়ে করত তাহলে দিনশেষে কাউকে আপসোসের বোঝা বয়ে বেরাতে হত না। ]

#লেখাঃ তাসকি