গল্প :-""""""--শেষ কান্না--"""""
.
লেখক:- #RJ_Nayem_Ahmed
.
গল্পটা পড়ে 100% আপনাদের চোখে পানি চলে আসতে বাধ্য....Challenge
.
.
পর্ব:- ১০~~~
.
.
০৪ই আগস্ট ২০১৫,
রাত ৮টা, পিয়াল একটা ফুলের দোকানের সামনে দাঁড়িয়ে। একগুচ্ছ গোলাপ ফুল কিনে এসে মিলার বাসার সামনে দাঁড়ালো। কলিংবেল চাপলো পিয়াল,কিছুক্ষণ পরেই দরজা খুললো মিলা।
মিলা :- আরে পিয়াল! তুমি এই সময়?
পিয়াল :- কেনো ডিস্টার্ব করলাম নাকি?
- আরেহ না! কি যে বলো না তুমি।
- মনে হয় জ্বালাতন করছি, আচ্ছা যাই তাহলে। (পিছু ঘুরে যাওয়ার জন্য পা বাড়ালো পিয়াল)
- অই! কই যাও। (পিয়ালের হাত ধরে মিলা)
- যাবো না?
- না! ভিতরে এসো।
পিয়াল, মিলার বাসার ভিতরে ঢোকে।মিলা একাই থাকে বাসায়। ওর মা-বাবা সবাই ইতালি থাকে। মিলা বাংলাদেশী সংস্কৃতি ছাড়তে পারে নি।তাই সে দেশেই থেকে যায়। তবে মাঝে মাঝে ওর বাবা-মা দেশে আসে, শুধুমাত্র তাদের আদুরে মেয়েকে দেখতে। পিয়াল, মিলার হাতে গোলাপগুচ্ছ তুলে দেয়।
মিলা- গোলাপফুল! হঠাৎ? (গোলাপের ঘ্রাণ নিতে নিতে)
পিয়াল - তোমার মুখের এইসুন্দর হাসিটা দেখার জন্য। (মিলার গাল ধরে হাল্কা টান)
- হুম্ম!!! আমি জানি তুমি কেনো এসেছো।
- কেনো? বলতো!
- আমাকে মিস করছিলা, তাই না?
- না, মোটেই না!
- দেখেন মিস্টার! আমি কিন্তু একজন মনো- বিশেষজ্ঞ। আমাকে মিথ্যা বলে এড়িয়ে যেতে পারবেন না।
- আচ্ছা বাবা! হ্যা আমি মিস করছিলাম তাই এসেছি।
হঠাতই বাহিরে বৃষ্টি শুরু হলো। মিলা উঠে জানালাটা একটু ফাক করে দেখলো।
মিলা - দেখো বৃষ্টি হচ্ছে।
পিয়াল - হ্যা হচ্ছে তো।
- ভিজবা?
- এখন? এই রাতে?
- হ্যা! চলো।
পিয়াল বাধ্য ছেলের মতো মিলার পিছু পিছু বাসার ছাদে ওঠে। পিয়াল,মিলা ভিজছে। পিয়াল, মিলার দিকে তাকিয়ে আছে। বৃষ্টিতে ভেজার পর মিলাকে যেনো আরো বেশি সুন্দর লাগছে।পিয়ালের মন চাচ্ছে এখনই সজোরে চিৎকার দিয়ে মিলাকে প্রেম নিবেদন করতে।কিন্তু সাহস হচ্ছে না পিয়ালের। আচ্ছা!মিলা নাকি মনো- বিশেষজ্ঞ। সে কি পিয়ালের মনের কথাটা জানে না? নাকি জেনেও না জানার ভান করছে? আমি বাপু! লেখক! আমি মন- বিশেষজ্ঞ না, দেখা যাক কি হয়!
প্রায় আধাঘণ্টা বৃষ্টিতে ভেজার পর বাসার ভিতরে আসে ওরা। পিয়ালের জামা-কাপড় ভিজে একাকার।
পিয়াল - আমার জামাকাপড় ভিজে গেছে! এবার কি করবো?
মিলা - এভাবেই বসে থাকেন!
মিলা তার রুমে ঢুকে দরজা আটকে দিলো। কিছুক্ষণ পর মিলা বের হলো। সেই লাল শাড়ী, কপালে একটা কালো টিপ দেয়া।হাতে একটা শপিং ব্যাগ। পিয়াল হাঁ করে মিলাকে দেখছে।
মিলা - এই যে!
পিয়াল - হ্যা! বলো।
- এভাবে তাকিয়ে আছো কেনো?
- এমনি। (লজ্জাকর ভাব)
- এইটা ধর! (কাগজের ব্যাগটা তুলে ধরে)
- এইটা কি? (হাতে নেয় পিয়াল)
- তোমার জন্যই কিনেছিলাম।
- হুম্ম, তাই বুঝি?
- হ্যা! এবার এগুলো পরেন। না হলে ঠান্ডা লাগবে। আমি খাবার দিচ্ছি, বাহিরে প্রচন্ড বৃষ্টি হচ্ছে। এই বৃষ্টিতে বাসায় যাওয়ার দরকার নেই। আমি আন্টিকে ফোন দিয়ে বলে দিচ্ছি।
- আচ্ছা যাচ্ছি।
পিয়াল নতুন জামাকাপড়ের ব্যাগটা হাতে নিয়ে বাথরুমে ঢুকে পরলো।মিলা পিয়ালের আম্মুকে কল করলো।
মিলা - হ্যালো আন্টি!
পিয়ালের মা - হ্যালো মিলা! পিয়াল তো বাসায় নেই।
- আন্টি পিয়াল আমার বাসাতেই আছে। বাহিরে প্রচন্ড বৃষ্টি হচ্ছে,মনে হয় এতো তাড়াতাড়ি থামবে না ।
- হ্যা! পিয়ালকে তোমার বাসায় রেখে দাও, এই বৃষ্টিতে বাইরে নামার কোনো দরকার নেই।
- জ্বি আন্টি! এইটা জানানোর জন্যই কল দিয়েছিলাম। তা আন্টি রাতে খেয়েছেন।
- না এখনো খাই নি। তোমরা খেয়েছো?
- না আন্টি, এখনই খেতে বসবো। আপনি খেয়ে নিয়েন।
- হ্যা মা খেয়ে নিবো।
- আচ্ছা আন্টি রাখি তাহলে?
- আচ্ছা মা!
মিলা ফোন কেটে দেয়। জামাকাপড় পরিবর্তন করে বের হলো পিয়াল। মিলা টেবিলে খাবার সাজিয়ে রাখলো। পিয়াল,মিলা খেতে বসে পরলো।
পিয়াল- আম্মুকে ফোন দিছিলা?
মিলা - হ্যা! তোমাকে এখানেই থাকতে বললো।
- আচ্ছা।
পিয়াল মিলা খেয়ে উঠলো। মিলা একটা ঔষধ এনে পিয়ালের হাতে ধরিয়ে দিলো।
মিলা - আপনি তো আপনার ঔষধ আনেন নি।
পিয়াল - হ্যা! কে বুঝছিলো এমন বৃষ্টি নামবে।
- যাই হোক! খেয়ে নিন এটা। আমার কাছে ছিলো।
- হুম্ম দাও।
পিয়াল হাত বাড়িয়ে ঔষধটা নেয়। ঔষধটা খেয়ে নেয় পিয়াল। রুমির সেই ঘটনার পর থেকেই এই ঔষধটা খেয়ে আসছে। ভালো ঘুমের জন্য ডাক্তার এই ঔষধটা দিয়েছিলেন। পিয়ালকে অন্য একটা রুমে যায় মিলা।
মিলা - এখন লক্ষী ছেলের মতো শুয়ে পরেন।
পিয়াল - তুমি ঘুমাবা না?
- হ্যা ঘুমাবো তো! তুমি ঘুমাও।আমি আমার রুমে ঘুমাবো।
- আচ্ছা ঠিক আছে। শুভরাত্রি।
- শুভরাত্রি।
পিয়াল পাশ ফিরে শোয়।মিলা রুমের আলো নিভিয়ে তার রুমে চলে যায়। কিছুক্ষনের মধ্যেই ঘুমের দেশে পা বাড়ায় পিয়াল।
-
পিয়াল, মিলা একটা খোলা রাস্তায় হাটছে, একে অপরের হাত ধরে। হঠাৎ করেই একটা রুমের মধ্যে চলে আসে পিয়াল,মিলা। কোথা দিয়ে বা কিভাবে আসলো তা বুঝতে পারলো না তারা। রুমের ফ্যানের সাথে রুমির বোন টিয়ার লাশটা ঝুলছে।তাঁর চোখদুটো যেনো মাথা থেকে বেড়িয়ে আসতে চাচ্ছে। একটু পরেই দূর থেকে ভাইয়া নামে কেউ একজন ডাক দিলো। পিয়াল মনোযোগ দিয়ে দেখলো দূরে তামান্না দাঁড়িয়ে আছে।এক হাতে একটা রক্তমাখা চাকু। অন্য হাত থেকে ফিনকী দিয়ে রক্ত ঝরছে। পিয়াল, মিলাকে নিয়ে পালানোর জন্য মিলার হাত ধরতে গেলো, কিন্তু সেখানে মিলা নেই। সেখানে.... সেখানে রুমি দাঁড়িয়ে আছে।রুমির থেঁতলানো মাথাটা থেকে মগজ বের হয়ে গিয়েছে,রক্তে রক্তাক্ত রুমির মুখ। কিন্তু মিলা কোথায়? পিয়াল মিলাকে খোঁজার জন্য তামান্নার দিকে তাকায়। মিলা,তামান্নার পাশেই দাঁড়ানো। তামান্নার রক্তমাখা হাতটা মিলার একটা হাত ধরে আছে। তামান্না কি করতে যাচ্ছে তা ভেবে পাচ্ছে না পিয়াল। তামান্না, মিলার হাতটা একটু উপরে উঠালো। পিয়াল কিছু একটা বুঝতে পেরে দৌড়ে মিলার কাছে যেতে চাইলো। কিন্তু পিছন থেকে কোনো প্রচন্ড শক্তি তাকে সামনে এগুতে দিচ্ছে না। পিয়াল পিছে তাকালো, সেখানে রুমি দাঁড়িয়ে আছে। পিয়ালের এক হাত আটকে রেখেছে। পিয়াল নিজের হাত ছাড়িয়ে মিলার কাছে যাওয়ার সব চেষ্টা চালাতে থাকলো। হঠাৎ করেই মিলার চিৎকার। পিয়াল, মিলার দিকে তাকালো। মিলার হাত থেকে রক্ত ঝরছে। একটু পরেই মিলার দেহটা মাটিতে গড়িয়ে পরলো।
-
পিয়াল,মিলা বলে চেঁচিয়ে উঠে বসে পরে।পাশে মিলাকে বসে থাকতে দেখে একপ্রকার চমকে যায় পিয়াল।মিলাকে সজোরে জড়িয়ে ধরেই বাচ্চাদের মতো কান্না জুড়ে দেয় পিয়াল। মিলা বুঝতে পারলো, হয়তো আবারও তাকে নিয়েই কোনো আজেবাজে স্বপ্ন দেখেছে। মিলাও পিয়ালকে জড়িয়ে ধরলো। কিছুক্ষন এভাবেই দুজন, দুজকে জড়িয়ে থাকলো,পিয়াল কান্না করেই চলছে। এইবার মিলা, পিয়ালের মাথাটা নিজের কাঁধ থেকে তুলে সামনে আনলো। পিয়াল কান্না করে চোখ-মুখ ভিজিয়ে ফেলেছে, অসহায় লাগছে তাকে। দুজন - দুজনের চোখের দিকে তাকিয়ে আছে। পিয়াল এই প্রথম মিলাকে এতো কাছ থেকে দেখছে। কিছু বুঝে ওঠার আগেই মিলার ঘন গরম নিশ্বাস আছড়ে পরে পিয়ালের ঠোঁটে। সব কিছু যেনো কিছুক্ষনের জন্য থমকে যায়। পিয়াল, মিলাকে টেনে নিজের আরো কাছে নিয়ে আসে।
বাহিরে ঝরছে অঝোর বৃষ্টি, মাঝে মাঝে দু-একটা বাজ পরছে এর মধ্যেই জন্ম হলো নতুন এক ভালোবাসার।যেনো এক অন্যরকম পরিবেশ সৃষ্টি করেছেন সৃষ্টিকর্তা। শুধুমাত্র এই নতুন দুজন ভালোবাসার দূতকে স্বাগতম জানানোর জন্যই.....♥
.
.
♥...........""চলবেই""..........