গল্প :-"""""""--শেষ কান্না--"""""
. লেখক:- #RJ_Nayem_Ahmed
.
গল্পটা পড়ে 100% আপনাদের চোখে পানি চলে আসতে বাধ্য....Challenge
.
.
পর্ব:- ০৯ ~~২~
...
সেই দিকে তাকিয়ে আছে। শরীর দূর্বল থাকার কারনে ঘুম পিয়ালকে ঘিরে ধরলো,পিয়াল ঘুমিয়ে পরলো।
..
.

পিয়াল একা একটা খোলা রাস্তায় হাটছে, রাস্তাটা একটু নোংরা।কিন্তু একটা মিষ্টি সুগন্ধি পাওয়া যাচ্ছিলো। খুবই পরিচিত সুগন্ধিটা। হঠাতই পিছন থেকে কেউ পিয়ালের নাম ধরে ডাক দিলো, পিয়াল পিছু ফিরলো। দূরে রুমি দাঁড়িয়ে আছে। মাথাটা থেঁতলানো, রক্ত ঝরছে। পিয়াল দাঁড়িয়ে আছে, দৌড়ে পালাতে ইচ্ছে করছে কিন্তু পা নড়ছে না। রুমি হাত বাড়িয়ে পিয়ালকে বুকে টেনে নেবার জন্য সামনের দিকে এগোচ্ছে।
-
পিয়াল এক লাফে বিছানায় উঠে বসলো, এদিকে ওদিকে তাকালো। চারদিক অন্ধকারে ঘেরা। মনে হচ্ছে কেউ একজন বলছে "ভয় পেয়েছিস? "। পিয়াল এদিকওদিক হাত দিতেই বুঝে যায় সে তার রুমেই আছে। এক লাফে উঠে রুমের আলোটা জ্বালায়। খুব পানি পিপাসা পেয়েছে। টেবিল থেকে গ্লাসটা হাতে নিয়ে এক চুমুকেই সবটুকু পানিই খেয়ে নিলো।পিয়াল নিজেকে বুঝালো এটা স্বপ্ন ছিলো। আস্তে আস্তে হেটে বিছানায় গিয়ে বসলো। সেই পরিচিত সুগন্ধির ঘ্রানটা এখনো নাকে আসছে। সুগন্ধিটার উৎপত্তিস্থান খুজতে খুজতে বিছানার পাশের টেবিলের কাছে যায়। সেখানে তামান্নার সেই ডায়রীটা রাখা। হাতে নিয়ে নাকের একটু কাছে আছে। হ্যা! ডায়রীটা থেকেই ঘ্রানটা আসছে! ডায়রীটা একটা টেবিল ড্রয়ারের ভিতর ঢুকিয়ে রাখে। ড্রয়ারটা লক করে দিয়ে চাবিটা বালিশের নিচে রাখে। ঘুম আসছে না, তারপরও শুয়ে থাকে। উপরে একটা সিলিং ফ্যানটা সজোরে ঘুরছে।পিয়ালের দৃষ্টি সেইদিকেই।
সকাল ৮টা ঘুম ঘুম চোখে বারান্দায় বসে আছে। ছাইদানিটা সিগারেটের ছাইতে পরিপূর্ণ হয়ে আছে। বুকের বাম পাশে হালকা চিনচিনে ব্যথা করছে। চোখদুটো প্রচন্ড পোড়াচ্ছে, বেশ লাল হয়েও আছে। রাতে দুচোখের পাতা এক মুহূর্তের জন্য এক করতে পারে নি পিয়াল। যখনই ঘুমানোর চেষ্টা করেছে তখনই আজেবাজে স্বপ্ন দেখে জেগে উঠেছে। এখন ঘুমাতেও ভয় করে। চোখের সামনে রুমির সেই মৃত দেহটাই ভেসে ওঠে। এই মূহুর্তে একজন মনো বিশেষজ্ঞের কাছে যাওয়াটা খুবই প্রয়োজন।
ফ্রেস হয়ে নিলো পিয়াল, তৈরী হয়ে বেরিয়ে পরলো একজন মনো-বিশেষজ্ঞের খোঁজে।
বন্ধুর দেয়া ঠিকানায় পৌঁছে যায় পিয়াল। কিন্তু এটা তো একটা এপার্টমেন্ট। যাই-হোক পিয়াল ঢুকে পরে। খয়রি রঙের দরকার উপর স্টিলে খোদাই করে মিলা আহসান লেখা। পিয়াল দরজার পাশের কলিংবেল চাপলো। কিছুক্ষণের মধ্যেই পিয়ালের বয়সী একজন মেয়ে এসে দরজা খুললো।পিয়ালের মেয়েটাকে খুবই পরিচিত লাগছে, হয়তো এর আগেও কোথাও দেখেছে।
মেয়েটি - জ্বি কাকে চান?
পিয়াল - আমি পিয়াল! এখানের ঠিকানাটা আমাকে আমার বন্ধু দিয়েছে।
- ও আচ্ছা আপনিই পিয়াল। আসুন,ভিতরে আসুন।
- ধন্যবাদ।
ভিতরে ঢুকলো পিয়াল। মেয়েটি পিয়ালকে বসতে বলে একটা রুমে ঢুকলো। পিয়াল চারদিকে দেখলো একটু। রুমটা একটু ক্লাসিক ভাবেই সাজানো। হয়তো ডক্টর মিলা একটু ক্লাসিক-ই।কিছুক্ষন পরেই মেয়েটি পিয়ালের সামনে এসে বসলো। কিন্তু মেয়েটি এবার চোখে চশমা পরা।
মেয়েটি - আমিই মিলা। (হাত বাড়িয়ে দেয় পিয়াল)
পিয়াল - ও আচ্ছা আচ্ছা, আপনার কথাই বলেছিলো আমার বন্ধুটি। (মিলার সাথে হাত মিলায় পিয়াল)
- আপনার বন্ধুটি আমাকে সব বলেছেন।
- ও আচ্ছা।
- একটা কথা কি! আপনই আমার প্রথম রোগী, এর আগে কোনো রোগী পাই নি। আসলে আমি এই বিষয়ে পড়াশুনা করছি। তাই এমন রোগী খুঁজি। এরজন্য আপনাদের কলেজেও গেছিলাম সেইদিনটা হয়তো নতুন ছাত্র-ছাত্রীদের এডমিশন চলছিলো। আমি আবার একটু ব্যাকডেটেড মানুষ। তাই শাড়ী পরেই গিয়েছিলাম, সবাই তো হাঁ করে তাকিয়ে ছিলো। হাহাহা.....
- লাল শাড়ি!
- হ্যা! আপনি জানলেন কিভাবে? (বিশ্ময়)
- আপনাকে, সেইদিন আমি দেখেছিলাম।
- ও আচ্ছা, যাই হোক। চা খাবেন?
- হ্যা!
- আমি আবার চা'র খুবই ভক্ত। প্রচুর বকবকও করি।
মিলা চা বানাতে গেলো। এভাবেই চলতে থাকলো, একসময় মিলা আর পিয়াল ভালো বন্ধুও হয়ে উঠলো।
০৪ আগস্ট ২০১৫,
বিকাল ৫টা,
পিয়ালের মধ্যে এখন অনেকটাই পরিবর্তন এসেছে। আগের মতো মন-মরা বা দুঃস্বপ্ন দেখে ঘুম থেকে লাফিয়ে ওঠে না। বলতে গেলে, মিলা পিয়ালকে প্রায় সম্পূর্ণ পরিবর্তন করে দিয়েছে।পিয়ালের পরিবর্তনটা পিয়ালকেই মাঝে মাঝে চমকে দেয়।এখন আর রুমি,তামান্না অথবা টিয়াকে নিয়ে আজেবাজে স্বপ্ন দেখে না। মিলা পিয়ালকে যথেষ্ট সময় দেয়। দিনের বেশীরভাগ সময়ই মিলা পিয়ালের সাথেই থাকে। সারাক্ষণ দুজনে এদিকওদিক ঘোরাঘুরি, কথাবার্তা দিয়ে ব্যস্ত রাখে পিয়ালকে। মিলার উদ্দেশ্য পিয়ালকে পুরোপুরিভাবে সুস্থ করাটা। পিয়ালকে তার অতীত ভূলিয়ে নতুন একটা বর্তমান এবং ভবিষ্যৎ দেয়া। পিয়ালও বাধ্য ছেলের মতো মিলার সব কথা শোনে। মিলার প্রতি পিয়ালও কিছুটা দূর্বল হয়ে পরে। হয়তো মিলারও একই অবস্থা, কিন্তু সব মনের কথা দুজন-দুজনাকে বললেও শুধু এই একটা কথাই লুকিয়ে রাখে।
পিয়াল তার রুমে কিছু একটা খুঁজছে। বিছানার পাশের টেবিলের ড্রয়ারটা খুললো। ভিতর থেকে একটা ডায়রী বের করলো। এখনো ডায়রীটায় তামান্নার রক্তের দাগ লেগে আছে। পিয়াল বিছানার উপর বসে পরলো। ডায়রীটা খুললো, প্রথম পৃষ্ঠায় মেয়েলী ধরনের আঁকিবুঁকি। পৃষ্টা উল্টালো পিয়াল, এই পৃষ্টায়ই বোঝা গেলো এটা তামান্নার ডায়রী। তার নাম বিভিন্ন ভাবে,বিভিন্ন রঙে লেখা। পিয়ার পরের পৃষ্টা উল্টালো যেখানে অল্প কিছু কথা লেখা আছে।
ডায়রী-
ভালোবাসা কি? এই প্রশ্ন বহুবার বহু মানুষকে করেছি। কিন্তু কেউ এই প্রশ্নের উত্তর দিতে পারে নি। আজকে আমি বুঝছি ভালোবাসা কি। ভালোবাসা এমন একটা জিনিস যার অনুভূতি না যায় কাউকে দেয়া, না যায় কাউকে বলা। একবার ভালোবাসার ছোঁয়া পেলে মনে হয় কিছুক্ষণ পর,পরই হাওয়ায় ভাসছি।
পিয়াল ডায়রী থেকে চোখ উঠায়। প্রথম পৃষ্টাটা পড়ে ভালই লাগলো পিয়ালের। অবশ্য ভালো লাগারই কথা। পিয়ালের অনুভূতির সাথে মিলে যাচ্ছে ব্যাপারটা। বাকি লেখাগুলো পড়ার জন্য পৃষ্টা উল্টাতে থাকে পিয়াল-
ডায়রী -
ভালোবাসা জিনিসটাই অন্যরকম। যাকে একবার ভালোবেসে ফেলা যায় তাকে সব কিছুতেই ভালো লাগে। একসময় ভালোবাসার মানুষটার প্রতি একপ্রকার নেশা লেগে যায়। প্রথমে অল্প অল্প মিস করা তারপর আস্তে আস্তে এর পরিমান বাড়তেই থাকে। সব জায়গার তার ছোঁয়া পাওয়া যায়,সব জায়গায়।
একটা সময় আসে যখন ভালোবাসার মানুষটাকেই কাছে পেতে মন চায়। তাকে ছাড়া সব কিছুই অসম্ভব মনে হয়।তখন তার দেয়া কষ্টটুকুও ভালো লাগে। ভালো লাগে তার হাসি, ভালো লাগে তার কান্না।এমনকি তার সব খারাপ কাজগুলোকেও ভালো লাগে।
ভালো লাগার মানুষটা এমন হয় যাকে পেয়ে নিজেকে সম্পূর্ণ মনে হয়। মনে হয় কোনো এক স্বপ্নের ভিতরে আছি। আর এটা যদি সত্যিই কোনো স্বপ্ন হয় তাহলে এই স্বপ্ন আমি বার বার -হাজারবার দেখতে চাই। স্বপ্নটাকে বাস্তব করে দেখতে চাই না, শুনেছি বাস্তব নাকি অনেক কঠিন হয়। আর আমি চাই না এই কঠিনতাকে।
কখনো যদি ভালোবাসার মানুষটা রাগ করে কথা বলা বন্ধ করে দেয় তখন মনে হয় কেউ আমার দম বন্ধ করে রেখেছে। এক মিনিট হাজার বছরের মতো লাগে।হয়তো এটাই ভালোবাসা। কান্না করতে ইচ্ছে করে তখন, খুব কান্না করতে ইচ্ছে করে।
পিয়াল কয়েকটা পৃষ্টা পড়ে ফেলে, কিন্তু হঠাতই করে পরের পৃষ্টাগুলোতে অন্যকিছু লেখা। যা ভালোবাসার অপর দিকে। পিয়াল ডায়রীটা বন্ধ করে রাখে। পিয়ালের খুব ভালো লাগছে হঠাৎ করে। অন্যরকম একটা সুখ জাগ্রত হয়েছে। পিয়াল নিজেকে প্রশ্ন করলো এটাই কি তাহলে ভালোবাসা? যার জন্য তিনটা মানুষ জীবন দিয়েছিলো। পিয়ালের খুব মিলার কথা মনে পরছে। আজকে একবারও দেখা হয় নি। পিয়াল নিজের মনকে স্থির করে ভাবলো,সে এখন মিলার সাথে দেখা করতে যাবে। মিলা এখন ওর বাসায়ই আছে। সেহেতু পিয়ালের উদ্দেশ্য মিলার বাসা। পিয়াল আজকে একটু অন্যরকম ভাবে সাজলো,কিছুটা ক্লাসিক স্টাইলে। মিলার খুবই পছন্দের। পিয়াল বেড়িয়ে পরলো মিলার বাসার উদ্দেশ্যে.......
♥...........""চলবেই""..........♥ .