গল্প :-"""""""--শেষ কান্না--"""""
. লেখক:- #RJ_Nayem_Ahmed
.
গল্পটা পড়ে 100% আপনাদের চোখে পানি চলে আসতে বাধ্য....Challenge
.
.
পর্ব:- ০৯ ~~~
.
.
১৩ই জুলাই ২০১৫,
একটা চেয়ারে বসে আছে পিয়াল,ঠিক তার পাশের চেয়ারেই বসে পরলেন বাসায় আগত সেই ডক্টর।পিয়াল একেরপর এক নাম্বার মনোযোগ দিয়ে দেখছে আর রুমির নাম্বারটা খুঁজছে।
ডক্টর - পিয়াল!
পিয়াল আড়চোখে ডাক্টরের দিকে তাকালো।
ডক্টর - কি? রুমিকে স্বপ্নে দেখেছিলে বুঝি?
পিয়াল - আপনি জানলেন কিভাবে? (ডক্টরের দিকে বড় বড় দৃষ্টিতে তাকালো পিয়াল)
- রুমির নাম্বারটাও আমিই ডিলেট করেছি।
- আপনি? কেনো? আমার ফোন ধরার অধিকার তো আপনার নেই।তাই না?
- শুধু রুমির নাম্বার নয়, তোমার সাথে তোলা ছবিগুলোও ডিলেট করে দিয়েছি।
- আপনার কি মাথা খারাপ হয়ে গেছে? আপনি কে এইসব করার? (চেঁচিয়ে)
- পিয়াল, যার কোনো অস্তিত্বই এই পৃথিবীতে নেই তার স্মৃতি রেখে কি লাভ? বলো।
- অস্তিত্ব নেই মানে? আমি স্বপ্ন দেখেছি ঠিক আছে। কিন্তু এটা তো আর সত্যি না, তাই না?
- কোনটা সত্যি না? রুমি বেঁচে নেই সেইটা? আর সত্যিটা যদি স্বপ্ন হতো তাহলে আমাদের চেয়ে বেশী খুশি হয়তো আর কেউ হতো না।
- আবারো আপনি বলছেন রুমি বেঁচে নেই। আপনি কি চান বলুন তো? টাকা দিচ্ছি আপনি বিদায় হোন এখান থেকে। প্লিজ!
- টাকাই যদি সব হতো তাহলে হয়তো তোমার বন্ধু রুমিকে তোমার সামনেই দেখতে পেতে।
- আম্মু, উনি কি বলছেন এসব?
পিয়ালের মা- পিয়াল, মাথা ঠান্ডা কর বাবা। রুমি সত্যিই এই পৃথিবীতে নেই। (কান্না)
পিয়াল- আমার বিশ্বাস হয় না। আমি এখনই রুমির বাসায় যেতে চাই।
পিয়াল উঠে দাঁড়ায়। পিয়ালের মা তার ছেলেকে রুমির বাসায় যাওয়া থেকে আটকাতে আসেন।
ডক্টর - দাঁড়ান,পিয়ালকে যেতে দিন। সত্যটা নিজেই দেখে আসুক।
পিয়ালের মা সরে দাঁড়ায়। পিয়াল দৌড়ে বাসা থেকে বের হয়। একটা সিএনজি নিয়ে রওনা হয় রুমির বাসায়।
সকাল ১০টা, পিয়াল রুমির বাসার সামনে দাঁড়িয়ে দরজায় টোকা দিলো। রুমির বাবা দরজা খুললেন।
পিয়াল - আংকেল রুমি কোথায়?
রুমির বাবা নিশ্চুপ। পিয়াল দ্রুত চলে যায় রুমির রুমে। রুমে রুমির মা বসে বসে কাঁদছেন। পিয়ালের মাথায় হাজারও প্রশ্নের ভিড় জমে আছে। রুমির বিছানার পাশেই একটা ডায়রী রাখা। কাঁপা হাতে ডায়রীটা তুলে নেয়। রুমির রুমে রুমির বাবার আগমন। তিনি রুমির মাকে নিয়ে তাদের রুমে চলে গেলেন। রুমির রুম থেকে ডায়রী হাতে বের হলো পিয়াল। সামনের রুমের একটা সোফায় বসে পরলো। কিছুক্ষন পরেই রুমির বাবা এসে পিয়ালের পাশে বসলেন।
রুমির বাবা - কালকে তুমি রুমিকে দেখতে হাসপাতালে এসেছিলে তখন হঠাতই তুমি অজ্ঞান হয়ে যাও। তখন তোমাকে তোমার বাসায় নিয়ে যাওয়া হয়েছিলো।
পিয়াল- আমি রুমিকে....?
- বুকটা ফাঁকা করে মেয়েটাও চলে গেলো আর এবার ছেলেটাও। জানি না কি পাপ করেছিলাম যার ফল এখন পাচ্ছি। (কেঁদে)
- তাহলে আমি যা স্বপ্নে দেখেছিলাম তা সত্য! (চোখ বড় বড় করে)
রুমির আব্বু তার ফোন বের করে একটা ছবি বের করেন। পিয়ালের সামনে ফোনটা রেখে উঠে চলে যান।পিয়াল হাতে ফোনটা নিলো। মাথা থেঁতলানো একটা লাশের ছবি। গতকালকে এই লাশটাই দেখে অজ্ঞান হয়ে গিয়েছিলো পিয়াল। লাশটার মুখটা রক্তে লাল হয়ে আছে। মাথার মগজও বের হয়ে আছে। পিয়ালের বমি আসছে, সে ফোনটা হাত থেকে রেখে দৌড়ে রুমির বাসা থেকে বের হলো। আবারো সব কিছু যেনো ঝাপসা হয়ে আসছে। তারমানে আবারো জ্ঞান হারাচ্ছে পিয়াল। নিজেকে সামলে নেয়ার শেষ চেষ্টা করলো, কিন্তু ব্যর্থ হয়ে মুখ থুবড়ে মাটিতে পরলো পিয়াল।চারদিক থেকে মানুষ এসে ধরে উঠালো পিয়ালকে।
সন্ধ্যা ৭টা,
পিয়াল চোখ খুললো, পাশেই সেই ডক্টরকে দেখতে পেলেন। চোখ খুলতে দেখে ডক্টর মুচকি একটা হাসি দিলেন। পিয়ালকে উঠে বসতে সাহায্য করলেন ডক্টর। এক গ্লাস পানি হাতে ধরিয়ে দিলেন পিয়ালের।
ডক্টর - দেখলে তো? সত্যটা কতোই কঠিন?
পিয়াল - আমার এখনো বিশ্বাস হয় না! (কান্না-কন্ঠে)
- সত্যের গভীরতা খুব কম। কিন্তু কষ্ট অনেক। তাই আমরা অনেক সময় মিথ্যা বলি কষ্টটাকে কমানোর জন্য। কিন্তু সত্য তো এক সময় প্রকাশ পায়ই।যে অন্যকে কষ্ট থেকে দূরে রাখতে সত্যকে চাপা দেয় তার চেয়ে বড় ব্যক্তি হয়তো এই পৃথিবীতে নেই। যদিও মিথ্যা বলাটা অনেক খারাপ,কিন্তু কারো কষ্ট লুকাতে মিথ্যা বলাটা ততটাও খারাপ নয়। কিন্তু হ্যা! যে সত্যে কষ্ট আছে তা নিয়ে বেশি ঘাটাঘাটি না করাই ভালো, তাতে সুখ নেই, দুঃখই বেশী।
- আমি রুমির বাসা থেকে বের হবার সময় একটা ডায়রী এনেছিলাম ওটা কোথায়?
- একটু আগেই বললাম, যে সত্যে কষ্ট থাকে সেই সত্য নিয়ে বেশি ঘাটাঘাটি করা উচিৎ নয়।
- আমি ডায়রীটা চাই, কোথায়?
- আস্তে, মাথা ঠান্ডা করো পিয়াল। আমার কাছেই আছে।
ডাক্তার তার ব্যাগ থেকে একটা ডায়রী বের করে পিয়ালের হাতে দিলেন। পিয়াল ভালো করে দেখে নিলো। হ্যা! এই সেই ডায়রী, তামান্নার ডায়রী।
ডক্টর - আচ্ছা আমি আজকে আসি তাহলে,কেমন?
পিয়াল - জ্বি আসুন। ধন্যবাদ।
- ডায়রীটার প্রথম কয়েকটা পাতা পড়তে পারো কিন্তু এরপরের গুলো না পড়াই ভালো। একদম শেষের পাতাটা খুলবেই না। আমার এই কথাটা একটু মনে রেখো। কেমন?
- আচ্ছা, আপনি এখন আসুন।
ডাক্তার মুচকি একটা হাসি দিয়ে পিয়ালের রুম থেকে বের হলেন। পিয়াল ডায়রীটার দিকে তাকিয়ে থাকলো। সাদা রঙের ডায়রীটায় তামান্নার রক্তের দাগ এখনো লেগে আছে।
ডাক্তার যাওয়ার সাথে সাথেই পিয়ালের মা হাতে একটা প্লেট নিয়ে রুমে ঢুকলেন। পিয়াল তার দিকে বিরক্তের চোখ দিয়ে তাকালেন। পিয়ালের মা এসে পিয়ালের পাশে বসলেন।
পিয়ালের মা - নে কিছু খেয়ে নে। কয়েকদিন ধরেই ভালো মতো কিচ্ছুই খাস না।
পিয়াল - ভালো লাগছে না মা। খিদে নেই।
- খেয়ে নিতে বলেছি চুপচাপ খেয়ে নে।
পিয়াল না খাওয়ার জোরজবরদস্তি করলেও মায়ের কান্নাকাটির কাছে হেরে যায়। খাওয়ার অনিচ্ছা সত্যেও খেয়ে নেয়।পিয়ালের হাতে ডাক্তারের দেয়া ঔষধ তুলে দেয়া হলো। পিয়াল এক গ্লাস পানি দিয়ে সব ঔষধগুলো মুখে পুরে নিলো। পিয়ালের মা পিয়ালকে শুয়িয়ে দিয়ে রুমের আলোটা নিভিয়ে দিলো। পিয়াল শুয়ে আছে, অন্ধকার রুমটায় জানালার পর্দার ফাকা থেকে একটু চাঁদের আলো ঢুকেছে, সেই দিকে তাকিয়ে আছে। শরীর দূর্বল থাকার কারনে ঘুম পিয়ালকে ঘিরে ধরলো,পিয়াল ঘুমিয়ে পরলো।
-
.
♥...........""চলবেই""..........♥ .