গল্প :-অবৈধ ~~~ ♥
. লেখক:- #RJ_Nayem_Ahmed
.
পর্ব :- ০৩~~~~
.
.
তনয়া:--হ্যালো আয়াত!
আয়াত: হ্যা বলো তনয়া,,
তনয়া: তুমি কোথায় আয়াত?? বাড়ির সবাই তোমাকে নিয়ে কতটা টেনশনে আছে। প্লীজ আয়াত চলে আসো???
আয়াত: তুমি কি কিছু বুঝো না নাকি?? আমি তোমার জন্য বাড়ি আসছি না। আমি অন্য একজনকে ভালোবাসি আর তাকে নিয়েই থাকতে চাই।
তনয়া: আয়াত একদম মিথ্যা বলবা না।
আয়াত: তোমার সাথে আমি মিথ্যা কোন বলবো?? আজব!!
তনয়া: কারণ আমি আমার আয়াতকে চিনি।
আয়াত: তাহলে তুমি ভুল চিনেছো। আমি বাবা মাকে বলে দিয়েছি যে তোমাকে বিয়ে করা আমার পক্ষে সম্ভব না। আর আমি শহড় ছেড়ে চলে যাচ্ছি। কবে ফিরবো তা জানি না। রাখছি,,,,,
তনয়া: আয়াত শোনো,,,
আয়াত: শোনো তনয়া,,,,নিজের খেয়াল রেখো,,ভালো থেকো।
এই বলে আয়াত ফোনটা কেটে দিলো।
অপলক দৃষ্টিতে তনয়া ফোনটার দিকে তাকিয়ে আছে। আর ওর কানে শুধু একটা কথাই বাজছে ভালো থেকো। নিজের কষ্টটা আটকাতে না পেরে
জোড়ে একটা চিৎকার দিলো। তনয়ার চিৎকার শুনে ওর বাবা মা তাড়াতাড়ি ওর কাছে এলো।
মা: কি হয়েছে মা?? কাদছিস কেন?? বল মা
তনয়া: মা সব শেষ হয়ে গেছে। ও আমায় ভালো থাকতে বলেছে। কিভাবে ভালো থাকবো মা আমি?? কিভাবে?? আর কোন কথা বলছে না তনয়া। শুধু মাকে জড়িয়ে ধরে কান্না করছে। ওর বাবা মাও কান্না করছে। পৃথিবীর কোনো বাবা মাই
নিজের সন্তানের এমন অবস্থা দেখতে পারবে না।
সারাটা দিন সারাটা রাত তনয়া নিজের রুমে বসে কান্না করলো। শত চেষ্টা করেও নিজেকে সামলাতে পারছে না। মনের মাঝে কষ্টটা এমনভাবে আটকে গেছে যে কিছু ভাবার মতো ভারসাম্য হারিয়ে ফেলেছে।
পরেরদিন সকালবেলা আয়াতের বাবা মা এলো।
তনয়ার মা তাদের অনেক কথা শুনালেন।
তনয়ার বাবা তনয়ার মাকে চুপ করতে বললেন।আর বললেন,,,,
তনয়ার বাবা: এতে তাদের কোনো দোষ নেই। তারা তো আয়াতকে এসব করতে বলে নি।
তনয়ার মা: সেটা আমি বুঝি। কিন্তু আমার মেয়ের জীবনটাতো নষ্ট হয়ে গেলো। আমার মেয়ের এখন কি হবে???
আয়াতের বাবা: দেখুন সে বিষয়েই আমরা কথা বলতে এসেছি। অনু তুই তনয়াকে ডেকে আনতো।
অনু তনয়ার রুমে গিয়ে দেখে তনয়া নিচে বসে বসে কান্না করছে। সারা ঘর আয়াতের ছবি ছড়ানো।
অনু: আমাকে মাফ করে দে তনয়া।
তনয়া: কেন?? তুই কি করেছিস??
অনু: না আমি ভাইয়াকে কলেজে নিয়ে যেতাম না তোদের কাহিনী এতো দুর গড়াতো। আমার এখনো বিশ্বাস হচ্ছে না যে,,,,আয়াত ভাইয়া আমার আয়াত ভাইয়া কোনো মেয়ের সাথে এমন করেছে। যে ভাইয়া সবসময় মেয়েদের সম্মান করতো সে এমনটা করবে তা যেনো ভাবতেই কষ্ট হচ্ছে।
তনয়া: নারে তোরা ভুল বুঝছিস আয়াতকে?? আমার মন এখনো এটা মানতে নারাজ যে আয়াত আমাকে ধোকা দিয়েছে।
অনু: বিশ্বাস ভালো কিন্তু অন্ধ বিশ্বাস ভালো না তনয়া!!!
তনয়া: এ বিশ্বাসেই তো সংসার চলে।
অনু: ভাইয়াকে বাবা বলেছে ও যেনো বাড়ির চারপাশেও না আশে। ওরকম ছেলে তার লাগবে না।
তনয়া: আমি জানি আমার আয়াত আসবে।
অনু: পাগলামি করিস না তনয়া?? একটু স্বাভাবিক
হবার চেষ্টা কর।
তনয়া: পাগলি না অনু বিশ্বাস আর ভরসা। জানিস তোর ভাইয়া কার আমাকে শেষ কি কথা বলেছে?
অনু: কি???
তনয়া: নিজের খেয়াল রেখো। ভালো থেকো।
অনু: সেটা হয়তো এমনি তেই বলেছে।
তনয়া: জানিস আমাদের বিয়ের বয়স ছয় মাস কিন্তু রিরেশনের বয়স সাত আট মাস। এই সাত আট মাসে যখনই আমরা কথা বলতাম দেখা করতাম তখনই আয়াত আমাকে বলতো নিজের খেয়াল রেখো। আই লাভ ইউ। কিন্তু ভালো থেকো কথাটি কখনো বলে নি।
অনু: তাতে কি বুঝায়??
তনয়া: জানিস তোর ভাইয়াকে আমি একবার বলেছিলাম ভালো থেকো। তখন ও আমার উপর রাগ করেছিলো। যখন আমি রাগের কারণ জানতে চাইলাম তখন বললো যখন কেউ কারো থেকে অনেক দুরে চলে যায় কিন্তু সে সবসময় তার মনের মধ্যে গেথে থাকে তখন বলে ভালো থেকো।
আর আমি তোমার কাছ থেকে কখনো দুরে যাবো না। আর যদি কোনো কারণে যাওয়া লাগে তখন তোমায় বলবো ভালো থেকো। কারণ তখন তুমি আমার থেকে দুরে থাকবে কিন্তু মন থেকে দুরে কখনো থাকবে না। হয়তো আমার শরীর দুরে যাবে
কিন্তু আমার মনটা তখন তোমার কাছেই থাকবে।
তার মানে আয়াতের কোনো বিপদ নয়তো কোনো বিশেষ কারণে ও আমাদের কাছে আসতে পারছে না।
অনু: সবটা তোর মনের ভুল ধারনা। ভাইয়ার জন্য তুই পাগল হয়ে গেছিস।
তনয়া: সে তো কবে থেকেই। তুই কি আজকে জানলি নাকি???
অনু: বাদ দে তো ওসব কথা। বাইরে সবাই তোকে ডাকছে। চল।
তনয়া: হুম।
তনয়া ঠিক ভাবে দাড়াতে পারছে না। দাড়াতে গিয়ে আবার দপ করে বসে পরলো। কি করে দাড়াবে??
কাল থেকে ওকে যে কেউ কিছু খাওয়াতে পারে নি। তনয়া এ অবস্থা দেখে অনু কান্না করে দিলো। অনু তাড়াতাড়ি রান্নাঘর থেকে তনয়ার জন্য
কিছু খাবার আর জুস নিয়ে আসলো।
অনু: এগুলো আগে খেয়ে নিবি তারপর উঠবি।
তনয়া: নারে ইচ্ছা করছে না।
অনু: চুপ একদম চুপ। তনয়া তুই ভুলে যাচ্ছিস যে তুই একা না। নিজের না রাখলেও তোর ভিতরে ছোট্র একটা প্রাণটা বেড়ে উঠছে তার খেয়াল তোকে রাখতে হবে। আর তুই না বললি আয়াত ভাইয়া ফিরে আসবে। সে যদি এসে তোর এ অবস্থা দেখে আর তোকে জিজ্ঞেস করে তোর এ অবস্থা কেন??? তাহলে তাকে তুই কি বলবি???
অনুর কথা শুনে তনয়া সামান্য কিছু খেলো। তারপর অনুর সাথে সামনের রুমে গেলো। সেখানে ওর আর আয়াতের বাবা মা গম্ভীর ভাবে বসে আছে।
তনয়াকে দেখে আয়াতের মা তার নিজের পাশে বসালো। তারপর বলল,,,,,
আয়াতের মা: দেখো মা তোমার সাথে যে অন্যায় হয়েছে কিন্তু আমরা চাইলেও তার সমাধান খুজে বের করতে পারবো না। এখন তুমি কি চাও বলো????
আয়াতের বাবা: হ্যা মা। আয়াত যাই বলুক তুমিই আমাদের ঘরের লক্ষি। আমাদের পুএবধু। তুমি চাইলে এখন থেকে আমাদের বাসায় থাকতো পারো।
তনয়ার মা: তার তরকার নেই। তনয়া মাএ এক মাসের প্রগনেন্ট। আমি ওর এবোশন করাবো।
এবোশন কথাটা শুনেই তনয়া চমকে উঠলো। মনে হলো ওর কলিজাটা ধরে কেউ টান দিছে।
তনয়া: নাহ!!! আমি আমার বাচ্চাকে মারতে পারবো না।
তনয়ার মা: কিন্তু তনয়া এ বাচ্চার কোনো ভবিষৎ নেই। কিন্তু তোর আছে। যে এখনো পৃথিবীতে আসে নি তার জন্য নিজের উজ্জ্বল ভবিষৎটাকে
এমনভাবে নষ্ট করে দিবি???
তনয়া: মা এটা সত্যি যে ও এখনো পৃথিবীতে আসে নাই। কিন্তু ওর প্রান আছে। ওর অস্তিত্ব আমি অনুভব করতে পারি। ওর অস্তিত্বের রন্ধ্রে রন্দ্রে আমার আয়াতকে খুজে পাই। খুজে পাই আয়াতের ভালোবাসাকে।
তনয়ার মা: কিন্তু মানুষে তোর বাচ্চাকে অবৈধ বলবে। জারত বলবে। তখন তুই তাদের কি বলবি???
তনয়া: থাক মা। সমাজের মানুষের কথা এখন না হয় থাক। সমাজ যাই বলুক আমার বাচ্চা যে অবৈধ নয় তা আমি জানি। আর তোমাদের এখানে থাকলে তোমাদের যদি সমস্যা হয় তাহলে বলো
আমি আয়াতের বাবার সাথে চলে যাবো। তারাও যদি না নেন তাহলে আমি নিজের আর আমার বাচচ্চার খেয়াল রাখতে পারবো। আমার কারো দরকার নাই।
তনয়ার বাবা: কি বলছো এসব মা?? তোমার কোথাও যেতে হবে না। আমি জানি আমার মেয়ে কোনো অন্যায় করে নি। তোমার সিদ্ধান্তে আমি কখনো বাধা দিবো না।
আয়াতের বাবা: এখানে থাকলে সবাই আরো বেশি বাজে কথা বলবে তার থেকে বরং আমি ওকে আমাদের বাড়ি নিয়ে যাই। সবাইকে বলবো যে আয়াতের স্ত্রী। আর আয়াত কয়েক বছরের জন্য বিদেশ গেছে।
তনয়ার বাবা: তনয়ার যা ইচ্ছা। আমি সবসময় আমার মেয়ের ইচ্ছাকে সম্মান করি।
------আজ তনয়ার বিদায়। হুম এমন মেয়ে বিদায় হয়তো কেউ জীবনে দেখে নি। কারণ মেয়ে বিদায়ে বর নেই। কনে বধু সাজে নাই। সবার চোখে শুধু কান্না হতাসা আর সামনের দিকে কি হবে তা নিয়েয়ে ভয়।
তনয়া আয়াতদের বাড়ি চলে আসলো। আয়াতের রুমে গিয়ে চারিদিকটায় তাকিয়ে শুধু একটা দীর্ঘনিঃশ্বাস ছাগলো।
কি সুন্দর করে সাজিয়েছে আয়াত রুমটাকে। বাচ্চাদের খেলনায় ভর্তি রুমটায়। খেলনা গুলো হাত বুলিয়ে দেখছে তনয়া। আয়াতের রুমের টেবিলের উপর রাখা আয়াত আর তনয়ার ছবি।
তনয়া ছবিটা হাতে নিয়ে দেখলো।
ছবিটা ওদের বিয়ের। মনে পরে যাচ্ছে তনয়ার নিজের বিয়ের কথাগুলো। কোনো সাজগোজ নেই। তনয়ার পরনে বেগুনি রং এর একটা থ্রি পিচ
আর আয়াত ছিলো অফিসের ড্রেসে। একটা ঘোরের মধ্যে হয়েছিল বিয়েটা। কত সুন্দর ছিলো দিনগুলো। স্মৃতিগুলো যেনো চোখের সামনে ভাসছে।
ওদের সম্পর্ক তখন দু মাসের মতো। কলেজের কিছু বাজে ছেলে তনয়াকে খুব বিরক্ত করতো। আয়াতকে বলা মাএ আয়াত তনয়ার সাথে কলেজে গিয়ে ছেলেদের বলল,,,,,,
আয়াত: কি ছোট ভাই ওকে বিরক্ত কেন করছেন???
---তাতে তোর কি?? তোর কি বোন লাগে???
আয়াত: না বউ লাগে। কিছুদিন পর বউ হবে।
---তাহলে কিছুদিন পরেই এখানে আসিস। যখন তোর বই হবে তখনই অধিকার খাটাতে আসিস। তার আগে মালটা আমাদের। এরকম আরো অনেক বাজজে কথা বলল।
কখাটা শুনে আয়াতের মাথায় রক্ত উঠে গেলো।
আয়াত: আধঘন্টা পর অাসছি।
আয়াত তনয়ার হাত ধরে বলল চলো।
তনয়া: কোথায় যাচ্ছি আমরা??
আয়াত: চলো তো তারপর বলছি।
পথে অনু আর আয়াতের বন্ধুকে কাজি অফিসে আসতে বলল।
কিছুক্ষণের মধ্যে বিয়ে হয়ে গেলো। তনয়া যেনো এখনো ঘোরের মধ্য আছে। মনে হচ্ছে কোনো স্বপ্ন দেখছে।
তারপর আয়াত তনয়াকে নিয়ে আবার কলেজে গেলো। সেখানে গিয়ে বলল,,,,,
ছোট ভাই কাজি অফিস থেকে বিয়ে করে সোজা এখানে আসলাম। এখন বলেন কেউ যদি আপনার বউকে বাজে কথা বলে তখন তাকে কি করবেন????
আমিও ঠিক তাই করবো।
আয়াত সাথে নিজের কয়েকটা বন্ধু নিয়ে এসেছিলো। সবগুলোকে ইচ্ছে মতো দুলাই দিয়ে সোজা পুলিশে দিলো। কারণ ছেলেগুলো অনেক বাজে ছিলো। আর বলল,,,,,
আয়াত: বস দেখতে চকলেট বয় হলেও একশনের রিএকশন কিভাবে দিতে হয় সেটা খুব ভালো করে জানি।
তনয়ার ঘোর যেনো এখনো কাটে নি।
আয়াত: চলো তোমাকে বাড়ি পৌছে দি??
গাড়িতে যাবার সময় তনয়া বলল,,,,,,
তনয়া :সামান্য বিষয়টার জন্য আমাকে বিয়ে করার কি দরকার ছিলো???
আয়াত: এটা সামান্য বিষয়?? আজকের পর থেকে কেউ তোমার দিকে চোখ তুলে তাকাতে পারবে না। আর দোষটা ওদের না তোমার।
তনয়া: মানে???
আয়াত: তুমি দেখতে এতো সুন্দর যে কেউই তোমার জন্য পাগল হবে। যেমন আমি হয়েছি।
আর এখন থেকে তোমাকে হারানোর ভয়টা আমার আর থাকবে না।
তনয়া: পাজি ছেলে। আচ্ছা আয়াত একটা কথা বলবো??
আয়াত: হুম বলো।
তনয়া: আমাদের তো বিয়ে হয়ে গেছে। তারমানে আমরা এখন হাজবেন্ড ওয়াইফ।
আয়াত: হুম তো???
তনয়া: তুমি আবার আমার সাথে সেরকম কিছু করবে না তো??
আয়াতদুষ্টুমি করে) কেন ইচ্ছা আছে নাকি???
তনয়া রাগ করে আয়াতের দিকে তাকিয়ে বলল,,,,
তনয়া: ঠেং ভেঙ্গে দিবো।
আয়াতজোরে হেসে বলল) ম্যাডাম আপনাকে আমি সারাজীবন নিজের করে রাখতে চাই। তাই যত দিন না পর্যন্ত পারিবারিকভাবে আমাদের বিয়ে হয় ততদিন পর্যন্ত আমরা এরকম ওরকম সেরকম কিছুই করবো না। ভরসা রাখতে পারেন।
তার দুমাস পর তনয়ার পরীক্ষা শেষ হলো। কিন্তু হঠাৎ আয়াতের দাদি মারা যায়। যার কারণে বিয়েটাকে আরো কয়েকমাস পিছিয়ে দেওয়া হয়।
আর-------
তনয়া তনয়া,,,,,
কেউ তনয়াকে ধাক্কা দিলো। ঘোর কাটলো তনয়ার
তনয়া: কে কে????
অনু: কতোক্ষণ ধরে ডাকছি কিরে কি ভাবছিস???
অনুর চোখ যায় তনয়ার হাতের ছবিটার দিকে। অনু বুঝে গেলো তনয়া ঠিক কি ভাবতে ছিলো।
তনয়া সর্বনাশ হয়ে গেছে। বাইরে চল তাড়াতাড়ি...... ♥