গল্প :-
""অন্তঃস্বত্তা মেয়েকে বিয়ে""
.
লেখক:- #Nayem_Ahmed
.
100% কান্না করবেন challenge....শুধু শেষ পর্যন্ত সাথে থাকবেন....
.
★------পর্ব :- ১৬~~~ ♥
.
.
রিত্তের কথা শুনে কথার পায়ের নিচে মাটি সরে যাচ্ছে। পৃথিবীটা কেমন যেন অন্ধকার মনে হচ্ছে। কিছুক্ষণ পর এমবুলেন্স করে রাজের লাশ নিয়ে আসলে কথা গিয়ে দেখি কফিনের ভিতরে রাজকে খুব সুন্দর লাগছে। আর কখনো রাজ তাকাবেনা সেই ভালবাসার দৃষ্টি নিয়ে "কখনো বলবেনা " কথা তোমাকে আজ অনেক সুন্দর লাগছে"! তুমি সত্যিই মায়াকাননী, রৃপবতী,। তুমি কল্পনায় রাণি কখনো বলতে পারবেনা"।
.
রাজের ঘুম আর কোনোদিন ভাঙবে না। কত সুন্দর ভাবে ঘুমিয়েছে! মনে হয় কেউ পাশ থেকে একটু চিল্লানি দিলে রাজের ঘুম ভেঙে যাবে। সবাই কাঁদছে, রিত্ত সবচেয়ে বেশি কাঁদছে। কিন্তু আমি কাঁদতে পারছি না। শুধু চোখ দিয়ে অশ্রু গড়িয়ে গাল থেকে টুপ-টুপ করে পড়ছে। খুব কষ্ট হচ্ছে! বুকের ভেতরে কলিজার ঠিক মাঝ বরাবর কেউ ছুড়ি চালিয়ে দিচ্ছে মনে হয়। একটু পর কেউ এসে রাজের মুখটা ডেকে দিলো। মায়াভরা মুখটা ডেকে দেওয়ার আগে মনে হচ্ছে রাজ চুপিসারে বললো" এই পাগলী কাদঁছো কেন? তুমি কাঁদলে যে আমার কষ্ট হয়, তুমি বুঝনা? "
আমি আর এখন থাকতে পারছিনা জোরে চিৎকার করে কাঁদছি! রাজ আমাকে তুমি ক্ষমা করে দাও। আমি তোমাকে খুন করেছি। আমার মতো অভাগীকে ক্ষমা করে দাও,যে পাহাড়সম ভালবাসা পেয়েও ভালবাসা টা হারিয়ে ফেললো অবহেলায়। কি করে বাঁচবো নিজেকে যে নিজেই শেষ করে দিয়েছি। এভাবে কাঁদতে কাঁদতে মাটিতে পরে গেলাম। এদিকে রাজকে সবাই দাফন করতে নিয়ে যাচ্ছে। সবাই রাজকে নিয়ে যযাচ্ছে।আর রাজকে দেখতে পারবো না। রাজকে আর চরিএহীন বললেও সে আর চোখের পানি ফেলবেনা। মনে হচ্ছে কলিজাটা কেউ ছিঁড়ে নিয়ে যাচ্ছে। আমি চিৎকার করে কাঁদছি,আর সবাইকে বলছি " তোমরা কোথায় নিয়ে যাচ্ছো আমার কলিজার টুকরা কে। আমার স্বামীকে অনেক কষ্ট দিয়েছি অন্তত্য একটু ভালবাসতে দাও আমাকে বুকে নিতে দাও আমার কলিজার টুকরাটাকে! নিয়ো না ওকে, রাজকে নিয়ো না, আমাদের রাইসা কাকে বাবা ডাকবে। প্লিজ তোমরা নিয়ে যেয়োনা রাইসার বাবাটাকে।আমার মেয়েটার মুখে বাবা ডাক না শুনিয়েই তোমরা কোথায় নিয়ে যাচ্ছো? প্লিজ নিয়ো না আমি বাঁচবোনা " আমার স্বামীকে ছাঁড়া।কেউ আমার কথা শুনছে না সবাই রাজকে নিয়ে চলে যাচ্ছে, আমি পারছিনা আর, এত কষ্ট হচ্ছে কেন আমার।আল্লাহ্ এত বড় শাস্তি দিয়োনা আমায়। এদিকে
রিত্ত, মা- বাবা সবাই বুঝাচ্ছে কিন্তু পারছিনা আমি নিঃশ্বাস বন্ধ হয়ে যাচ্ছে।
.
এই কথা কি হয়েছে? কাঁদছিস কেন এভাবে? আর কী সব বলছিস ঘুমের মাঝে !
.
মা রাজ মারা গিয়েছে, রাজকে ওই যে দাফন করতে নিয়ে যাচ্ছে। মা আমি রাজকে ছাড়া বাঁচবোনা! সবাইকে আকঁটাও মা, রাজকে নিয়ে যেতে দিয়ো না।
.
মা গ্লাসে করে পানি নিয়ে এসে কয়েক ফোঁটা পানি মুখে ছিটিয়ে দিলো। কথা মা তুই দুঃস্বপ্ন দেখছিস। রাজ বেঁচে আছে মা, তুই আর কান্না করিসনি। কান্না করলে তোর গর্ভের সন্তানের ক্ষতি হবে যে, তোর গর্ভে যে রাজের সন্তান। রাজের স্বপ্ন যে তোর গর্ভে বড় হচ্ছে মা।
.
এদিকে আম্মুর কথায় আর বুঝতে বাকি রইলো না আমি দুঃস্বপ্ন দেখছিলাম। মা'কে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে কাঁদতে বলতে লাগলাম" মা আমি রাজকে ছাড়া বাঁচবোনা। সত্যি মরে যাবো, রাজ যে আমার স্বামী আমার বেঁচে থাকার একমাএ অবলম্বন।"
.
হুম জানিরে মা! রাজের মতো ছেলে হয় না। রাজ নিজস্ব টাকায় একটা এতিম খানা পরিচালনা করতো। কিন্তু রাজের মা - বাবা পর্যন্ত জানতো না। কিন্তু রাজের অসুস্হতার জন্য, এতিমখানার অধ্যক্ষ এসে সব বলেছে। এতিম ছেলেরা হাসপাতালে বসে কাঁদছে। তাঁদের কান্নায় হাসপাতালের ডাক্তার রা পর্যন্ত কেঁদে দিয়েছে। এতিম ছেলেরা খাওয়া দাওয়া বন্ধ করে রাজের কেবিনের বাহিরে বসে আছে। মা'রে রাজের কিছুই হবেনা মা চিন্তা করিস না মা! রাজের মতো ছেলে যে মায়ের গর্ভে জন্ম নিয়েছে সে মা বড় ভাগ্যবতী সে, বাবা বড় ভাগ্যবতী। মা'রে আমি সত্যি অনেক ভাগ্যবতী মেয়েটা'কে একজন সুপাএের হাতে তুলে দিতে পেয়েছি। আর হ্যাঁ রাজের শার্ট পড়ে শুয়ে না থেকে ফ্রেশ হয়ে আল্লাহর কাছে প্রার্থনা কর। ( কথাগুলো বলে মা চলে গেল)
.
মা'র কথা গুলো কানে বাজচ্ছে।চোখদিয়ে টপ-টপ করে পানি পড়ছে। সত্যি পৃথিবীতে এত ভালো, মহান মানুষ হতে পারে?আর এত বড় মহান মানুষটাকে কত অবহেলা করেছি।স্বামীর অধিকার দেয়নি কখনো। স্ত্রী হয়ে স্বামীর গায়ে হাত তুলেছি। শুধু নীরবে কেঁদেছে। ইসলামে স্বামীর খেদমত করে জান্নাত হাসিল করতে বলেছে মহান আল্লাহ্ তায়ালা। কিন্তু আমি তো, তাকে অবহেলা, ঘৃণা অপমান ছাড়া কখনো ভালবাসতে পারিনি। পারিনি ভালবেসে বুকে টেনে নিতে। কখনো এক বিছানায় থাকিনি পর্যন্ত। কখনো কপালে ভালবাসার স্পর্শ একেঁ দিতে পারিনি। এতোটা ভালবাসা পাওয়ার পরও শুধু অবহেলায় করে গেছি। কখনো বুঝিনি, রাজের চোখ থেকে ঝড়ে পড়া প্রতিটি অশ্রুকণার কতটা ভালবাসা লুকায়িত। আমি হীরাকে কাঁচ ভেবে কত বড় ভুল করে ফেলেছি। যে মা এতো ভাগ্যবতী, যে ছেলেটা এতটা উদার মনের মানুষ, তাঁকে আমি জারজ সন্তান পর্যন্ত বলেছি। চোখটা আর বাঁধা মানছেনা! " আল্লাহ্ তুমি আমার জীবন নিয়ে রাজকে বাঁচিয়ে দাও"! রাজের শার্টটাতে এখনো রাজের গায়ের গন্ধ লেগে আছে! শার্টটা গায়ে দিয়েই রয়েছি। রাজের লেখা ডাইয়িটা বুকের সাথে শক্ত করে জড়িয়ে রেখেছি। সমানে ডাইয়ির লেখা গুলোতে চুমু খাচ্ছি। বুকটা কেঁপে কেঁপে ওঠছে।
.
কিছুক্ষণ পর বাবা আসলো। বাবা এসে রেডি হতে বলল।
.
বাবা রেডি হয়ে কী করবো?
.
হসপিটালে জামাই বাবাজীর কাছে যাবো রে মা তুই রেডি হয়ে নে প্লিজ। আর তোর ও চ্যাকাপ করতে হবে।
.
বাবার কথাতে ওয়াশরুমে গিয়ো শাওয়ার নিয়ে, আসরের নামায পড়,হসপিটালে রওয়ানা দিলাম। মনটা কেমন কেমন করছে। মনে হচ্ছে যদি রাজকে বুকে নিতে পারতাম,তাহলে বোধহয় অশান্ত মনটা শান্ত হতো। মায়াবী মুখটা দেখার জন্য পরাণটা জ্বলে যাচ্ছে। হাসপাতালে পোঁছানোর পর, রাজের কেবিনের সামনে আসতেই বুকঁটা ভেতর কেমন যেন চিনচিনে ব্যাথা অনুভব করতে লাগলাম। হঠাৎ রাজের কেবিনের বাহিরে অনেকগুলো বাচ্চা ছেলে - মেয়ে দেখলাম তাঁদের সবার মাঝে একটা মেয়েকে কেমন যেন পরিচিত লাগছে খুব। মেয়েটা খুব কাঁদছে তাই আস্তে আস্তে মেয়েটার কাছে যেতেই মনে পড়ে গেল। এটা তো সেই মেয়ে যে কিনা গাড়িতে,গাড়িতে ফুল বিক্রি করতো। রাজ এই মেয়েটার কাছ থেকেই বকুল ফুলের মালা কিনেছিল।
.
মেয়েটার কাছে গিয়ে কিছু বলার আগেই বলতে লাগলো" আপনাকে রাজ ভাইয়ার সাথে নিউ মার্কেট মোড়ে গাড়িতে দেখেছি না? "
হ্যাঁ আমাকেই দেখেছিলে, আমি তোমার ফুল কিনিনি সেদিন।
.
না ম্যাম সেদিন রাজ ভাইয়া আমার সব ফুল কিনেছিল। আর বলেছিল গাড়িতে যে মেয়েটা বসে আছে বকুল ফুলের মালাতে মেয়েটাকে কেমন লাগবে?
.
আমি সেদিন হেঁসে দিয়ে বলেছিলাম অনেক সুন্দর লাগবে ভাবীকে! আচ্ছা ম্যাম ক্ষমা করবেন আপনি বড় লোক আপনাকে ভাবী ডাকার জন্য।
.
আরে না না কি বলছো? আমি তোমাদের ভাবীন,রাজই যে আমার বেঁচে থাকার অবলম্বন।
.
আচ্ছা ঠিকআছে! জানো ভাবী, সেদিন সারাদিনে একটা ফুলও বিক্রি করতে পারছিলাম না। তোমাকে কিনদে বলেছিলাম তুমি আরো বকা দিয়েছো। জানো, আমি না সত্যি দুইদিন কিছু খায়নি। প্রথম দিন ফুল বিক্রির সবটাকে দিয়ে মা'র জন্য ঔষদ কিনে নিয়েছিলাম। তার পরের দিন সারাদিনে যখন একটা ফুলও বিক্রি করতে পারছিলাম না তখন, আপনাকে বলেছিলাম আপনি তাড়িয়ে দিয়েছিলেন। ভাইয়া সব ফুল কিনে আমার মায়ের চিকিৎসার সব খরচ নিয়েছিল। জানো আমরা গরীব কুঁড়ে ঘরে থাকি, তার পরেও ভাইয়া আমার মাকে মা বলে ডাকতো। কিন্তু একদিন মা মারা যায় ভাইয়া খুব কেঁদেছিল! আমিও তার পর থেকে ভাইয়া আমাকে তাঁর এতিম খানায় নিয়ে যায়। আমার মতো এদের অনেকের জীবনের গল্প এমনই। ভাবী আপনার কাছে একটা অনুরোধ করবো?
.
মেয়েটার কথায় চোখ দিয়ে অঝরো পানি আসছে, একটা মানুষের সাথে ৬ মাসের মতো ঘর করেও চিনতে পারলাম না। নিজেকে আজ বড়ই অভাগী মনে হচ্ছে।
.
আমার অনুরোধ টা কী করো ভাবী?
.
আচ্ছা বলো কী এমন অনুরোধ?
.
রাজ ভাইয়াকে কেউ দেখতে দিতে দিচ্ছে না আমাদেরকে। দয়া করে ভাইয়ার চাঁদমাখা মুখটা কী আমার মতো গরীব এতিম বোনটাকে কী দেখতে পারবে।
.
মেয়েটার কথায় নিজেকে ঠিক রাখতে পারলাম না। মেয়েটাকে বুকে জড়িয়ে নিলাম। আজ বুঝতে পারছি, মানুষকে ভালবাসতে পারলে কতটা শান্তি পাওয়া যায়। মেয়েটার মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বললাম হ্যাঁ রে তোর ভাইয়াকে দেখাবো! দেখাতেই যে হবে।
.
ডাক্তারকে বলে আমার কলিজার টুকরা, আমার রাইসার আব্বুটাকে দেখতে রুমেতে প্রবেশ করলাম। পিনপিনে নীরবতা, কিছুক্ষণ পর পর টিট- টিট শব্দ হচ্ছে। মুখে অক্সিজেন মাক্স লাগানো। কিছুক্ষণ পর ছোট মেয়েটা রাজের কপালে একটা পাপ্পি দিয়ে কাঁদতে কাঁদতে বের হয়ে গেল। নার্সকে বের হয়ে যেতে বললাম কিছুক্ষণের জন্য। নার্স প্রথমে না করলেও পরে আর অনুরোধে না করতে পারেনি।
♥-----"To be Continue"---♥