গল্প:পাওয়া মেয়ে

ঢাকা থেকে খুলনা আসতে ছিলাম বাসে ।
আমার ঠিক সামনের সিট থেকে কান্নার আওয়াজ শুনতে পাচ্ছি।
কান্নার আওয়াজ শুনে মনে হল একটা মেয়ে কান্না করতেছে।
পাশের সিটে একজন মধ্য বয়স্কো লোক বসা ।
আমার মনে একটু সন্দেহ হলো কেননা টিভি নিউজ এ মাঝে মাঝে দেখি মেয়ে মানুষ কে পাচার করে,রেপ করে ,বিক্রি করে....ইত্যাদি ।

আমি একটু ভালো করে কান পেতে শুনতে ছিলাম লোক টি মেয়ে টাকে বলতাছে চুপ কর ছেমরি চুপ চাপ বইসা থাক ,তরে আমার আনাই ভুল হয়ছে
হালা রে কত কইরা বললাম এই ছেমরি আমার লাগবো না তাও তরে আমারে দিয়া দিলো.এখন চুপ চাপ বইসা থাক নাইলে কিন্তু তরে আবার দিয়ামো।
তার পর মেয়েটা আস্তে আস্তে কান্না করতে লাগলো ।
একটু পর লোক টি আবার মেয়েটাকে বলতাছে
অইনে যাইআ ভালো মত কাম করবি নইলে কিন্তু তরে ওরা মাইরা লাবে,আর এই বালের কান্না কাটি বন্ধ কর নইলে কিন্তু......

এইবার আমি কনফার্ম হলাম এই মেয়ে টা কোন খারাপ লোকের পাল্লায় পরছে।
বাস চলেছে আর আমি সময়ের অপেক্ষায় কখন মেয়েটার সাথে কথা বলা যাবে ।
বাস যখন মাওয়া ঘাটে পোছালো তখন মাওয়া ঘাটে প্রচুর জাম ।
কমপক্ষে ৪/৫ ঘন্টা লাগবে আর ঘাটে যে ফেরি আছে ওই টা ১ ঘন্টা পর ছারবে ।তার মানে আমরা পরে যে ফেরি আসবে সেই ফেরি তে যাওয়া লাগবে জামের কারনে।
বাসের ভিতর গরমের কারনে অনেক যাত্রী বাইরে বের হচ্ছে ।
কিছুখন পর ওই লোকটা বাইরে বের হলো।
আমি এই রকমই একটা সময়ের অপেক্ষা করতে ছিলাম।
আমি মেয়েটার পাসের সিটে বসলাম ।
মেয়েটার দিকে তাকালাম মেয়েটা বোরকা পরা শুধু তার চোখ টা দেখা যাচ্ছে ।
চোখ টা রক্তর মত লাল অনেক কেদেছে মেয়েটা।
আমি মেয়েটা কে বললাম কোন সমস্যা ।

মেয়েটা মাথা নারিয়ে না বললো।
আমি বললাম যদি কোন সমস্যা থাকে বলতে পারেন ।
মেয়েটা কিছুখন চুপ থেকে বললো
সমস্যা বলে কি হবে যেই সমস্যার কোন সমাধান নাই।
আগে বলবেন তো দেখি সমাধান করা যায় কি না ।
আমাকে বিক্রি করে দেছে খারাপ জায়গায়
সেখানে আমাকে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে ।

আপনাকে কে বিক্রি করে দিয়েছে,
আর আপনার পরিবার কোথায় থাকে।
মেয়েটা বললো আমার পরিবার বলতে কেউই নেই আমি একটা এতিম মেয়ে,
আর যারা আমাকে বিক্রি করছে তাদের আমি কাউকে চিনি না কিন্তু তাদের মধ্য একজন পুলিশ ছিল ।
এর মধ্যে এই মধ্যে বয়স্ক লোক চলে আসলো
আমি আস্তে করে আমার সিটে বসে পরলাম।

আমি ভাবতে লাগলাম
আমি কি মেয়েটাকে বাঁচাতে পারবো নাকি পারবোনা।
আমি যদি কোন আবার কোন সমস্যার ভিতর পরি।

লোক টি মেয়েটাকে বলতাছে আসে পাশে খাবার হোটেলে নাই।
সামনে হোটেল আমি যাইআ খাবার লইআ আই
তুই এইনে বইআ থাক আমি আইতাছি।
এই কথা বলে লোকটি চলে গেলো।
আমি আবার মেয়েটার পাশে গিয়ে বসলাম।

আর বললাম এখন কি করবেন ।
মেয়েটা বললো যানিনা।
আমি বললাম বাচতে হলে একটা উপায় আছে।
মেয়েটা বললো কি উপায় ?
এখান থেকে পালাতে হবে।
কিন্তু আমি পালিয়ে কোথায় যাবো।আমার তো আপন বলতে কেউ নেই এই দুনিয়াতে।
সেটা এখন ভাবার বিষয় না।
কিন্তু আপনি আমাকে নিয়ে কোথায় যাবেন?
সেটা পরে ভাবা যাবে।
কিন্তু?
কিন্তু কি? এই লোকটা চলে আসবে।যদি বাঁচতে চান তাহলে এখান থেকে এখনই পালাতে হবে।

মেয়েটাকে দেখে মনে হচ্ছে ভয় পাচ্ছে ।

দেখেন আপনি আমাকে বিশ্বাস করতে পারেন
আমি আপনার কোন ক্ষতি করবোনা ।

মেয়েটা আমার চোখের দিকে কিছুখন তাকিয়ে থেকে বললো চলুন ।

আমি মেয়েটাকে নিয়ে সোজা বাস থেকে নেমে ফেরিঘাটের দিক হাটা শুরু করলাম।

ফেরিঘাটে যেয়ে দেখি ফেরি চলে গেছে
এখন কি করবো কিছু বুঝতাছিনা।
এখন স্টিমার বোটে যাওয়া ছাড়া কোন উপায় নাই ।

মেয়েটা বললো কোথায় যাবো আমরা এখন
ভয়ে ভয়ে বললো কথা টা।

আমি বল্লাম আমার দাদা বাড়ি ।

তার পর

স্টিমার বোটে উঠলাম
অনেক গতিতে চলছে
কিছু খন পর মেয়েটা অন্যদিকে ফিরে মুখের উপর থাকা মুখোস টা মাথার উপরে উঠেয়ে হাতটা মেলে আকাসের দিক তাকিয়ে রইলো ।

তারপর মেয়েটা মুখোসটা ঠিক করে আমার পাশে এসে বসলো ।
জানেন আমি এই প্রথম নদী দেখলাম।(মেয়েটা)
মানে, আপনি আগে পরে কখনও নদী দেখেন নাই।(আমি)
না , আমি সব সময় এতিমখানার ভিতরই থাকতাম।(মেয়েটা)
আপনার আপন বলতে কেউ কি নেই(আমি)
জানিনা আছে কিনা। বলেই মেয়েটা কান্না করতে লাগলো।
কান্না বন্ধ করুন মানুষজন খারাপ ভাববে ।

বোট থেকে নামার পর আমার চাচাতো ভাইরে ফোন দিলাম।
হ্যাঁলো সাকিল।(আমি)
কেমন আছো ভাইয়া।(সাকিল)
ভালো, আমি আসতাছি বাড়ি ।
সত্যি ।
হুম।
এর কে কে আসবে।(সাকিল)
একটা মেয়ে আছে আমার সাথে ও আসবে।(আমি)
কে ভাইয়া মেয়েটা।(সাকিল)
আমি আসি তারপর বলবানি।(আমি)
থাক আর বলা লাগবে না আমি বুঝছি ।(সাকিল)
কি বুঝ....বলার আগেই ফোনটা কেটে দিলো।

তারপর
মেয়েটাকে বললাম কিছু খাবেন
মেয়েটা মাথা নারিয়ে না বললো।

তারপর আমি জোর করে হোটেলে নিয়ে গেলাম
মহিলা ওয়াশ রুম দেখিয়ে দিয়ে বললমা হাত মুখ ধুয়ে টেবিলে আসুন।
আমিও হাত মুখ ধুয়ে খাবার টেবিলে আসলাম

ওয়েটার টেবিলে খাবার দিতাছে এর ভিতর
মেয়েটা আমাকে বললো
আমি কি এখানে বসে খাবো।
তো কোথায় বসে খাবেন।(আমি)
না আমি এখানে বসে খাবো না।(মেয়েটা)
কেন?
এখানে অনেক লোকজন আর পুরুষ আছে তাই।
আমি আর কোন কথা বললাম না।
ওয়েটার বললাম
ভাই এখানো কোন আলাদা খাওয়ার জাগা আছে ।
হুম এইখানে।
আপনি ওনাকে এইখানে নিয়ে যান আর ওনার খাবারটা এইখানে দিয়ে আসেন।(আমি)
ওকে।
তার মেয়েটাকে বললাম
আপনি এইখানে যেয়ে খেয়ে আসুন
মেয়েটা কিছুখন তাকিয়ে থেকে চলে গেল।
খাওয়া দাওয়া শেষে বাসে উঠলাম দাদা বাড়ি যাওয়ার জন্য ।
রাত ৮টার সময় দাদা বাড়ি পৌছালাম ।
বাড়ির ভিতর ঢুকে আমি একটু অবাক হলাম ।
আমার দাদা দাদি ৪ চাচা চাচি ২ফুফু ভাই বোনে পুরা ঘর ভরা।
সাকিল আমার পাশে এসে বললো চলো ভাইয়া।
বলে একটা রুমে নিয়ে যাচ্ছে ছিলো আমি মেয়েটাকে দেখিয়ে শাকিল কে বললাম ও
সাকিল আপু ডাক দিয়ে বললো
আপু তুই ভাবি কে নিয়ে যা।(সাকিল)
ভাবি মানে।(আমি)
সাকিল মুচকি মুচকি হাসতাছে।

আমি মেয়েটাকে বললাম
এনাদের সামনে একটুও কান্না করবেন না
মেয়েটা মাথা নারিয়ে ঠিক আছে জানালো।
আপু আমার সামনে এসে বলতাছে
অনেক বড় হয়ে গেছিস
মানে(আমি)
মেয়েটাকে দেখিয়ে এ যে বলে আপু মেয়েটাকে নিয়ে অন্য রুমে চলে গেল।
আমি রুমে এসে ফ্রেশ হয়ে বের হওয়ার সাকিল আমার হাতে একটা পান্জাবি দিয়ে বললো পরো এটা ।
আমি বললাম না আমার জামা কাপুর ব্যাগে আছে।।
তারপর ও পরো দাদা পরতে বলছে।(সাকিল)
আমি পরে বের হলাম।

তারপর দাদার পাশে বসলাম
দাদাকে বললাম কেমন আছো ।
তারপর দাদা আমাকে জড়িয়ে দরে কান্না করতে লাগলো
আর বললো তোর মা বাপ এখন ও আমার উপর অভিমান করে আছে
আমি ফোন করছিলাম তোর আব্বু আম্মু
কে তারা সকালে আসতাছে
আমি অবাক হয়ে গেলাম এই ২১ বছর পর দাদা আমার আব্বু আম্মুর সাথে কথা বললো
আমার মা বাবা প্রেম করে বিয়ে করছিলো বলে মেনে নেই নি ।
আমার দাদা তার ভাইয়ের মেয়ের সাথে আব্বুর বিয়ে ঠিক করছিলো।
কিন্তু আমার আব্বু বিয়ের তিন দিন আগে পালিয়ে বিয়ে করে ।
তারপর দাদার কাছে আসছিলো দাদা মেনে নেই নি।(আরো অনেক কথা অন্য একদিন বলবো)

তারপরে সবার সাথে কথা বললাম
মেঝো চাচিকে জিগ্যাসা করলাম চাচা কই
বললো অফিসে।
(আমার মেঝো চাচা কাজি)
এতো রাতে অফিসে।(আমি)
এখনি চলে আসবে(চাচি)
তারপর দাদি আমাকে বললো।
মেয়েটার নাম কি?

আপু চিল্লায়া বললো মিষ্টি
দাদি বললো দেখতে যেমন মিষ্টি নাম ও মিষ্টি

সবাই মেয়েটার মানে মিষ্টির প্রশংসা করতে লাগলো।
আমি একটু রুমের বাইরে এসে মুসকান কে ফোন দিলাম।

চলবে.....................................