চোখে পানি চলে আসবে ১০০%
---------------------------------#বোনের_অবহেলা পার্ট ০৩ (শেষ পর্ব)?
------------------------------------------
নুসরাত কলেজে গেছে আর শুভ স্কুলে
গেছে।
আজ বৃহস্পতিবার। হাফ টাইম। তাই শুভ
ভাবছে
আজ আসার সময় আপুর সাথে আসবে।
.
কলেজে প্রায় নুসরাতের সব বান্ধবীরা
জানে নুসরাত কেমন। ও ওর ভাইয়ের
সাথে
কেমন ব্যবহার করে। কলেজ ক্যান্টিনে
বসে আছে নুসরাত, নীলা আর মায়া।
- নুসরাত তুই তোর ভাইকে আমার কাছে
দিয়ে দে। (মায়া)
- কেন?
- তোর ভাইটা অনেক কিউট,,
খুব আদর করতে ইচ্ছে করে ওকে,,
কিন্তু তোর তো শুভ দু চোখের বিষ,,
তাই বলছি ওকে আমার কাছে দিয়ে দে।
(মায়া)
- ঠিকই বলছিস, নুসরাত তুই আর কষ্ট দিস
না
ওকে,, না হয় আমাদের কাছে দিয়ে দে।
অনেক হ্যাপি রাখবো। ( নীলা)
- তুই তো তোর ভাইকে একটুও
ভালোবাসিস না। তোর ভাইকে
ভালবাসার ভার টা না হয় আমাদের দে
( মায়া)
- কি বলছিস এসব( নুসরাত)
- ভুল কি বললাম রে? ( নীলা)
.
নুসরাত এখন বসে বসে একটা কথাই
ভাবছে,,,
চোখের বিষ। শুভ কি আমার সত্যিই
চোখের
বিষ? যার জন্য ওকে একটুও ভালবাসি না।
সবসময় আমার পিছনে তো শুধু আমার
কাছ
থেকে একটু সময় পাওয়ার জন্য ঘুরঘুর করে।
কিন্তু আমি মাইর দেই। এটা কি ঠিক
হচ্ছে।
আমি কি করছি এসব ওর সাথে??
.
এখন শুধু নুসরাতের বিবেক থেকে এই সব
কথা
আসছে। এতদিন যদি আমার শুভ কে না
বকে না মেরে আদর
করতাম,ভালবাসতাম ,তাহলে তো ওর
জীবনটাই পাল্টে যেত। আর একা
থাকতে হতো না। ভালো একটা সঙ্গী
পেতো ও।
কিন্তু এ আমি কি করছি? ছিঃ।
কোনো বোন তার ভাইয়ের সাথে এমন
করতে
পারে?
আমি কি করে করলাম?
.
এসব ভাবতে ভাবতে কলেজে ছুটি হয়ে
গেল।
আজ নুসরাত একা একা হেটে বাড়ি
আসছে।
আর ভাবছে, ভাইটাকে আজ সাথে করে
দুজন
একসাথে বাসায় যাব।কলেজ গেটের
বাইরে বেরুতেই এক ১০ বছরের বাচ্চা
মেয়ে নুসরাতের হাত ধরলো,, মেয়েটার
কাপড়চোপড় দেখে বোঝা গেল কোনো
বস্তির হবে হয়তো। .
- আফা আফা দশটা ট্যাহা দিবেন?
- কি করবি?
- আমার দু বছরের ছোট ভাইটা না কাল
সন্ধ্যা
বেলা থিকা কিছু খাইয়া পারে
নাই,,ঘরে কিচ্ছু নাই।
- তুই খাইছস?
- আফা আমার খাওয়ার দরকার নাই,,
আমার
ভাইয়ে খাইলেই আমার খাওয়া হইয়া
যাইবো।
.
এই পিচ্চি মেয়েটার এ কথা শুনে আজ
নুসরাতের চোখ দিয়ে টপটপ করে জল
পড়ছে। ব্যাগ থেকে ১শ টাকার নোট বের
করে সেই মেয়েটার হাতে দিল নুসরাত।
- আফা এতো ট্যাহা লাগবো না, মাত্র
দশ ট্যাহা হইলেই ভাইয়ের লিগা একটা
রুটি কিনা পারুম।
- এতগুলোই নে,সমস্যা নাই, তুই আর তোর
ভাই
হোটেলে গিয়ে আজ পেট ভরে খাবি।
- আচ্ছা আফা ঠিক আছে, যাই এহন।
.
এই বলে মেয়েটা খুশি হয়ে চলে গেল।
আর নুসরাত এক পা দু পা করে সামনে
এগোচ্ছে। নুসরাতের পা চলতে চায় না
এখন। খুব কান্না
পাচ্ছে এখন নুসরাতের।
.
যে ভাই ওর পিছনে দশটা টাকার জন্য
হাত পাচ্ছে ওর কাছে, সেই ভাইকে ও
মেরে তাড়িয়ে দিছে। কিন্তু এই
মেয়েটাকে দেখো, এতো পিচ্চি একটা
মেয়ে,নিজে খাক বা না খাক, তা
নিয়ে ওর কোনো
খেয়াল নেই, ওর ছোট্ট ভাইটা যেন শুধু
একটু খেতে পায় সেজন্য অন্যের কাছে
হাত পাতছে।
.
আর আমি, আমার নিজের রক্তের ভাই,
ওর সাথে কি ব্যবহারটাই না করছি।
সবসময় খারাপ ব্যবহার আর অবহেলা
করছি। জানি না ও কোনো দিন
আমাকে ক্ষমা করবো কিনা তবুও আজ
আমি প্রতিজ্ঞা করছি এরপর আর কোনো
দিন আমার
ভাইয়ের সাথে এমন করব না,
খুব আদর করবো ওকে।
অনেক ভালবাসবো।
. এসব ভাবতে ভাবতে প্রাইমারী
স্কুলের সামনে এসে পরে নুসরাত। এসেই
দেখে স্কুলের সামনে মেইন রোডের
পাশে বড়ই গাছের নিচে অনেক মানুষের
ভীড়।আর ভেতর থেকে কার যেন
কান্নার আওয়াজ আসছে। কি হলো
আবার ওখানে।
কত্তো ভীড়।
. নুসরাত একজনকে ডাক দিল,,
- এইযে ভাই শুনুন।
- কি হইছে?
- ওখানে এতো ভীড় কিসের?
- আর বলবেন না, একটা বাচ্চা ছেলে
স্কুল ছুটির পর বড়ই গাছে উঠছিল বড়ই
পারতে।
কিন্তু দূর্ভাগ্যবশত ছেলেটা গাছ থেকে
পরে যায়, পরছে তো পরছে একেবারে
পিচ ঢালা রোডের মাঝে। বাচ্চা
ছেলে,আঘাত সয্য করবার পারে নাই।
ওখানেই মারা গেছে। আর কোথা
থেকে যেন ওর মা আসে তারপর নিজের
ছেলেকে জড়িয়ে ধরে কান্না কাটি
করতেছে।
- ওহ্,, আচ্ছা আপনি যান।
.
লোকটা চলে গেল। নুসরাত ভাবছে,
আবার কোন মার কপাল পুড়লো?
এখনই মার কোল খালি হয়ে গেল।
ইসসসস, দেখতে হচ্ছে, বিষয় টা।
.
আস্তে আস্তে ভীড় ঠেলে ভেতরে
যেতে লাগলো নুসরাত। একটু ভেতরে
যেতেই দেখতে পেল,
এক মহিলা বিপরীত মুখী হয়ে সেই
ছেলেটাকে জড়িয়ে ধরে চিৎকার করে
কাঁদছে। লাল রক্তে ভিজে গেছে
রাস্তার সাইড। রক্তের ঢল বয়ে গেছে
ছেলেটার মাথা থেকে।
.
সেই অভাগা মা কে দেখার জন্য নুসরাত
আরও সামনে যেতে থাকে।এতো অল্প
বয়সে যে মার কোল খালি হয় তাকে
তো একটু দেখতেই হবে তাই না!!!!
অনেক কষ্টে ভীড় ঠেলে মহিলার
সামনে যায়
নুসরাত।
.
নুসরাত মাথা তুলে মহিলার দিকে
তাকাতেই
নুসরাতের মাথায় আকাশ ভেঙে পরে।
এটা
কাকে দেখছে নুসরাত??
নিজের চোখকে বিশ্বাস করতে পারছে
না।
যে মহিলাটা চিৎকার করে কাঁদছে
সেটা আর কেউ না,,, স্বয়ং নুসরাতের
মা।
তবে কি ওনার কোলে ওই রক্ত মাখা
ছেলেটা আমার ভাই??
.
না।
আর ভাবতে পারছে না নুসরাত।
চারদিক অন্ধকার হয়ে আসছে
নুসরাতের।
সেখানেই মাথা ঘুরে পরে যায় নুসরাত।
.
এক নিমিষেই সব শেষ হয়ে গেল। ৬ ঘন্টা
পর
নুসরাতের জ্ঞান ফিরে। জ্ঞান ফিরে
নুসরাত দেখে সে তার বাড়ির সামনে
পরে আছে, আশেপাশে অনেক মানুষ।
নুসরাতের পাশে বসে আছে ওর মা,
তিনি এক ভাবে কেদে চলছেন। আর
নুসরাতের সামনে কাফনের কাপড়
জড়ানো এক ছেলেকে শুইয়ে রাখা
হইছে।
.
সামনে রাখা নাকে তুলো গুঁজে দেওয়া
লাশটাকে জড়িয়ে ধরে এক বিসাদ আত্ম
চিৎকারে ভেঙে পরে নুসরাত।
আর নানা আবোলতাবোল বকতে থাকে
নুসরাত।
.
ওই ভাই উঠ, উঠ না ভাই। দ্যাখ তোর আপু
এসেছে তোর কাছে। ওই ভাই আপু বলে
ডাক
না। প্লিজ ভাই।
তোকে আর মারবো না রে ভাই,
খুব আদর করবো এরপর।
-উঠ ভাই।এসব বলে আরও জোরে জোরে
কাদতেঁ থাকে নুসরাত।
তবুও আর শুভ উঠে না। .
আজ শুভ শুনতে পাচ্ছে না ওর আপুর
কান্নার
আওয়াজ। কি করে শুনবে?ওর দেহে যে
আর
প্রাণটা নেই। একদিন শুভ ওর আপুর জন্য
কাঁদছে কিন্তু ওর আপু শুনতে পায়নি।
তবে আজ কেন শুভ ওর আপুর কান্না
শুনতে পাবে?
না ফেরার দেশ থেকে। .
শুভ মরে গেছে আজ অনেক দিন হলো,,,
এখন
শুধু নুসরাত প্রতিদিন ওর ভাইয়ের স্কুল
ব্যাগ টা জড়িয়ে ধরে আকাশের দিকে
তাকিয়ে চোখের জল ফেলে। আর
ভাবে,,ভাই রে তুই আমাকে ক্ষমা না
করেই দূরে চলে গেলি। আমি যে
সারাজীবন তোর কাছে অপরাধী হয়ে
থাকবো রে ভাই। কবে ফিরবি তুই
আমার কাছে??
. নুসরাত এখন প্রতিদিন বিকেলে
অপেক্ষা করে ওর ভাইয়ের জন্য,, ওর ভাই
কখন স্কুল থেকে ফিরে এসে বলবো, আপু
খেতে দে। তারপর কখন শুভ ওর মুখের
কাছে প্লেট নিয়ে বলবো _ আপু নে হা
কর, আমি খাইয়ে দেই।
.
কিন্তু শুভ আর আসে না। নুসরাত গভীর
আগ্রহ
নিয়ে শুভর পথ চেয়ে বসে থাকে তবুও
সেই আসে না।
.
এখন কেউ নুসরাত কে বলে না - আপু চল
না
ফুটবল খেলি, তুই ছাড়া যে আমার
কোনো
সঙ্গী নেই।
.
এখন কেউ বলে না - আপু তোর জন্য বড়ই
আনছি, খাবি? দ্যাখ কি মিষ্টি!!
এসব ভাবতেই নুসরাত ঢুকরে কেদে উঠে।
তবুও
আজ ওর কান্না শুভর কানে পৌঁছায় না।
.
পৌছাবে কি করে? এখন যে শুভ,মাটির
নিচে
অনেক আরামে ঘুম পারছে।
নুসরাতের কান্নার আওয়াজে তো আর এ
ঘুম ভাঙবে না....

#সমাপ্ত
Rayhan Ahmed Sohag

image