মিরাজ নবী-জীবনের এক আলোকিত ঘটনা। রাসুল (সা.)-এর মুজেজা বা অলৌকিক কীর্তিগুলো মধ্যে অন্যতম শ্রেষ্ঠ মুজেজা হলো মিরাজ। কোরআন-হাদিসের বর্ণনায় বিষয়টি উপস্থাপিত হয়েছে।
আল্লাহ তাআলা পবিত্র কোরআনে ইরশাদ করেন, ‘তোমাকে আমরা চাক্ষুষভাবে যা দেখালাম, তা এই লোকদের জন্য একটি পরীক্ষার বস্তু বানিয়ে রেখেছি। ’ (সুরা বনি ইসরাঈল, আয়াত: ৬০)
আয়াতে উল্লেখিত ‘রুইয়া’ বা দেখা প্রসঙ্গে ইবনু আব্বাস (রা.) বলেন, ‘এটা ছিল চাক্ষুস দর্শন।
নবী (সা.)-কে রাতের বেলা (মেরাজের সময়) বাইতুল মুকাদ্দাসে নিয়ে গিয়ে তা (যাবতীয় নিদর্শন) দেখানো হয়েছিল। ’ (বুখারি, হাদিস নং: ৪৭১০)
আরো অন্যান্য হাদিস থেকেও আমরা মিরাজের কথা সুনিশ্চিত তথ্য জানতে পারি। আবু হুরাইরাহ (রা.) থেকে বর্ণিত হাদিসে এসেছে, ‘যে রাতে নবী (সা.)-কে মিরাজ ভ্রমণে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল, সে রাতে তার কাছে মদ ও দুধের দুটি পাত্র আনা হয়। তখন তিনি উভয়টির দিকে তাকিয়ে দেখে দুধের বাটিটা তুলে নেন। এটি দেখে জিবরাইল (আ.) বললেন, ‘সেই আল্লাহর প্রশংসা, যিনি আপনাকে প্রকৃত দিকেই পথ দেখালেন। যদি আপনি মদের পাত্রটি ধারণ করতেন, তাহলে আপনার উম্মত পথভ্রষ্ট হয়ে যেত। ’ (বুখারি, হাদিস নং: ৪৭০৯)
আনাস ইবনে মালিক (রা.) থেকে বর্ণিত অন্য হাদিসে এসেছে, ‘মিরাজের রাতে নবী (সা.)-এর ওপর পঞ্চাশ ওয়াক্ত নামাজ ফরজ করা হয়েছিল। অতঃপর কমাতে কমাতে পাঁচ ওয়াক্তে সীমাবদ্ধ করা হয়। অতঃপর ঘোষণা করা হয়, হে মুহাম্মাদ! আমার নিকট কথার কোনো অদল-বদল নেই। তোমার জন্য এই পাঁচ ওয়াক্তের মধ্যে পঞ্চাশ ওয়াক্তের সওয়াব রয়েছে। ’ (তিরমিজি, হাদিস নং: ২১৩)
রাসুল (সা.) এর মুজেজাকে অস্বীকার করবার কোনো সুযোগ নেই। কোরআন-হাদিসে মিরাজ এভাবেই বিবৃত হয়েছে। এতে সুনির্দিষ্টভাবে ইবাদত-বন্দেগির কথা নির্ভরযোগ্য কোথাও কিছু বলা হয়নি। এমনকি মিরাজ কবে হয়েছিল তাও সুনির্দিষ্ট নয়। এর বছর মাস দিন নির্ণয়ের ক্ষেত্রে রয়েছে বিস্তর মতপার্থক্য। যা শেষ হবার নয়।
দুইটি বিষয়ে একটু সচেতন হওয়া চাই-
প্রথমত: নবী-জীবনী ও ঐতিহাসিক বর্ণনার কোথাও নির্ভরযোগ্য বিশ্বস্ত সূত্রে মেরাজের তারিখ সুনির্দিষ্টভাবে উল্লেখ নেই। যা আছে তা খুবই মতবিরোধ পূর্ণ। সিরাতগবেষক ও ঐতিহাসিকদের ষোলটি মতামত দেখা যায়। যার মধ্যে খুবই দুর্বল একটি মতামত হলো সাতাশে রজব শবে মিরাজ। এ মতটি হাদিসবিশারদের নিকট প্রত্যাখ্যাত।
অন্যদিকে নবী (সা.) এর মক্কা-জীবনে প্রকাশিত হয়েছিল মেরাজের মুজেজা। এরপর মদিনায় ছিলেন দীর্ঘ সময়। কিন্তু কখনো তিনি এমন কিছু করেননি বা এমন কোনো ইঙ্গিতও দেননি যাতে মেরাজের তারিখ নির্দিষ্ট করা হয়েছে বা নির্দিষ্ট করা যায়। সাহাবায়ে কেরামও সুনির্দিষ্ট বা অনির্দিষ্ট কোনো দিনে মিরাজ উদযাপন করেননি।
অল্প কথায় কোরআন-হাদিস, বিশ্বস্ত সীরাত, সাহাবাচরিত ও ইতিহাসের কোথাও মিরাজের একক নির্দিষ্ট তারিখের উল্লেখ নেই। সাতাশে রজব তো নয়-ই।
দ্বিতীয়ত: মিরাজকেন্দ্রিক ইবাদত-বন্দেগি। রাতে বিশেষ নিয়মে নামাজ, দিনে রোজাসহ নানান আনুষ্ঠানিকতা—প্রচলিত আমাদের সমাজে। বস্তুত নবী-জীবন ও সাহাবাচরিতের কোথাও মেরাজের নামাজ-রোজা নামের কোনো ইবাদত-বন্দেগির সন্ধান আমারা পায়নি। ইসলামের সকল ইবাদত-বন্দেগির সময়-কাল হয়তো ধরন-করণে নির্দিষ্ট, নির্ধারিত ও আদিষ্ট, নয়তো ইশারায় বিবৃত ও উৎসাহ দেওয়ার মাধ্যমে স্বীকৃত। কিন্তু মিরাজ বিষয়ে এর সবকিছুই অনুপস্থিত। এটা কেবলই রসম-রেওয়াজ আর ভ্রান্তিবিলাস।
সাতাশে রজবে শবে মিরাজ নামে যে অপসংস্কৃতি এবং ইবাদত-বন্দেগির নামে যে রসম রেওয়াজ রয়েছে, তা শরিয়ত বিবর্জিত ও অসমর্থিত। সর্বান্তকরণে সুন্নাহ পরিপন্থি।
মিরাজ সত্য ও শ্বাশ্বত। তবে মেরাজের দিবস পালন ও এতে নির্ধারিত ইবাদত-বন্দেগি বলতে ইসলামে কিছু নেই। তাই মেরাজের রাতে ও দিনে ভিত্তিহীন ও মনগড়া সবকিছু থেকে বিরত থাকা উচিত আমাদের। আল্লাহ তাওফিক দান করুন। আমিন।
#kachermasjid
#thenearestmosque
#islamicevent
#1443/2022

Samsul Tajvir
Delete Comment
Are you sure that you want to delete this comment ?
Sakib Ahmed Fahim
Delete Comment
Are you sure that you want to delete this comment ?
SAZID HASAN
Delete Comment
Are you sure that you want to delete this comment ?
Monjur Alam
Delete Comment
Are you sure that you want to delete this comment ?
Mohammad Shariful
Delete Comment
Are you sure that you want to delete this comment ?