স্যার পিলিজ গিভ মি সাম মানি!
.
আমি খানিকটা অবাক হয়ে পিচ্চিটার দিকে তাকালাম । সংসদ ভবনে এসেছি তিথির সাথে দেখা করার জন্য ! সন্ধ্যা প্রায় নেমে গেছে । তিথিকে নিয়ে বসে আছি, এখনও আনুষ্ঠানিক কথা বার্তা শুরু হয় নি ! এমন সময় এক পিচ্চি এসে হাজির ! পিচ্চির খালি গা । প্যান্ট টাও বেশ ময়লা । এমন পিচ্চির কাছ থেকে ইংরেজিতে ভিক্ষা চাওয়াটা একটু অন্য রকম । আমি পিচ্চিকে বললাম,
.
-কি বললি ?
পিচ্চি ফিক করে হেসে দিল । তারপর বলল
-স্যার ইংরেজি জানেন না ?
আমি কি উত্তর দেব তাকিয়ে দেখি তিথি আমার দিকে তাকিয়ে হাসছে । আমি পিচ্চিকে বললাম
-যা ভাগ এখান থেকে । দেখছিস না কথা বলছি !
-স্যার দেন না ?
-যা ভাগ!
আমার কথা শুনে তিথি বলল
-আহা ! দিয়ে দেন না ! বেচারা ইংরেজিতে ভিক্ষা চেয়েছে !
আমি চোখ কপালে তুলে বললাম
-মাথা খারাপ ! এদের একজন কে যদি কিছু দিলে চারিদিক থেকে সবাই ছুটে আসবে । তখন ?
.
তিথি কিছু না বলে চুপ করে অন্য দিকে তাকিয়ে রইলো । আমি বললাম
-তুমি কেন আমাকে ডাকলে ?
-কেন ? এমনি দেখা করতে ইচ্ছা হতে পারে না ?
-না পারে তো ! পারবে না কেন ? তা এমনিই কি ?
তিথি কোন কথা না বলে আবার অন্য দিকে তাকিয়ে রইলো । আমি জানি ও আমাকে কিছু বলতে আজকে আমাকে ডেকেছে, কিন্তু ঠিক মত বলতে পারছে না !
আমি বুঝি না মেয়েটা আমার সাথে কথা বলতে এতো সঙ্কোচ কেন বোধ করে ! আমার সাথে এমন একটা ভাব করে যেন ওর সাথে আমার আগামী মাসে বিয়ে হবে পারিবারিক ভাবে । আমার সাথে প্রথম বারের মত দেখা করতে এসেছে ।
এদিকে আমার সাথে দেখা করার ইচ্ছাও আছে আবার আমার সাথে কথা বলতে গিয়ে লজ্জায় মরে যাচ্ছে !
.
আমিও চুপাচাপ এদিক ওদিক তাকাতে লাগলাম । সন্ধ্যার দিকে সংসদ ভবন এলাকা টা বেশ জমজমাট ! যডিও নিজের উপর খানিকটা অত্যাচার হয় তবুও সময় ভাল কাটে । তবে বন্ধু বান্ধদের সাথে আসলে ভাল হয় । বর্তমান প্রেমিকা কে নিয়ে আসলে একটু সমস্যায় পড়তে হয় !
.
সন্ধ্যার অন্ধকার যখন আরও একটু ঘন হল তখন তিথি হঠাৎ করে বলল
-আজ কদিন ধরে আপনার কি হয়েছে ?
-কেন কি হবে ?
আমি খানিকটা অবাক হলাম । এমন তো কিছু হয় নাই ! আমার অবাক ভাব টা দেখে তিথিও খানিকটা অপ্রস্তুত হল । বলল
-না কিছু না ! ভুলে যান !
-আরে ভুলে যান মানে কি ?
-কিছু না ! প্লিজ অন্য কিছু বলেন ! আমি আসলে …..
-কি আসলে ?
-কিছু না ! প্লিজ আপনি আর কিছু জানতে চাইবেন না ! প্লিজ!
আমি আর কি বলবো ঠিক বুঝলাম না ! বললাম
-আইসক্রিম খাবা ?
-হুম ! তবে একটা নিয়ে আসবেন ।
-একটা কেন ? আমি খাবো না ?
-খাবেন । তবে আমারটা থেকে ?
-আমার এটো খেতে পারবে তুমি ?
-খুব পারবো ! আপনি পারবেন তো ?
.
আমি তিথির ছেেল মানুষী দেখে হাসলাম ! তারপর সামনের আইসক্রিমওয়ালা থেকে আইসক্রিম নিয়ে এলাম !
তিথি আমার দিকে তাকানো বন্ধ করে দিয়েছে ।
কয়েক আইসক্রিমে কয়েক কামড় দিয়ে আমার দিকে বাড়িয়ে দিল আইসক্রিম টা !
.
এমনিতেও ও আমার দিকে ঠিক মত তাকায় না । একটু যেন লজ্জা লজ্জা পায় ! সেই শুরু থেকে ।
আমার মনে আছে আমাদের প্রথম যেদিন দেখা হয়েছিল সেদিন ও একটা বারের জন্য আমার দিকে তাকায় নি । আমি যতবার ওর সাথে কথা বলতে যাই ও ততবার অন্য দিকে তাকায় !
আজকেও তেমন করছে ।
.
আমি আইসক্রিমে কামড় দিতে দিতে বললাম
-তুমি কি আমার গত কয়েক দিনের স্টাটাস দেখে খানিকটা চিন্তিত ?
তিথির নিরবতা দেখে বুঝলাম তিথি সেটা নিয়েই খানিকটা চিন্তিত ! আমি বললাম
-আরে চিন্তিত কেন হচ্ছো ?
-কেন ? হব না ?
-কেন মানে ওসব তো প্রাক্তন প্রেমিকাদের নিয়ে !
-প্রেমিকাদের ?
আমি হাসতে হাসতে বললাম
-কেন ? তুমি জানো না ?
-জানি তো ! কিন্তু আমার ভাল লাগে না ! আপনার মুখে অন্য মেয়েদের কথা শুনতে ভাল লাগে না !
-তো কি শুনতে ভাল লাগে শুনি ?
এই কথার জবাব না দিয়ে তিথি চুপ করে রইলো !
.
তিথি আমার থেকে এক হাত দুরুত্ব রেখে বসে ছিল । সব সমসয় এমন করেই বসে । আমি ওর দিকে একটু সরে বসলাম ! কাছে গিয়ে ওর দিকে আইস ক্রিম বাড়িয়ে বললাম
-তো তোমার কি ভাল লাগে ? সারা দিন কেবল তোমাকে নিয়ে কথা বলবো ?
তিথি কোন কথা বলে না বলে কেবল মাথা নাড়লো ! আমি ওকে বললাম
-চিন্তা কর না ! ওগুলো তো এক্সদের কে নিয়ে লেখা । তুমি তো আর এক্স নাও । তাই না ?
-তাহলে আমি কি ?
-তুমি হচ্ছ সি ?
-সি ?
-হুম ! সি মানে কারেন্ট ! কন্টিনিয়াস প্রোসেস !
-মানে আমিও এক্স হতে যেতে পারি ?
-সেটা তোমার বিবেচনা !
-মানে ?
-মানে হল তুমি যদি আমার থেকে যে তোমাকে বেশি আর্থিক নিশ্চয়তা দিতে পারা কারো কাছে চলে যাও তাহলে এক্স হয়ে যাবেই ! যেমন করে আগের জন চলে গেছে ।
.
তিথির দিকে তাকিয়ে দেখি ও আমার দিকে কেমন চোখে তাকিয়ে আছে । চোখের কোনে পানি জমতে শুরু করেছে ।
আমার দিকে তাকিয়ে বলল
-আমি কোন দিন আপনাকে ছেড়ে যাবো না ! কোন দিন না ! যদি আমাকে সারা দিন না খেয়ে থাকতে হয় তবুও না !
.
কিছু একটা বলতে গিয়েও কেন জানি বললাম না ! বালিকার তীব্র আবেগ কে কেন জানি প্রশ্রয় দিতে মন চাইলো ! কিন্তু আমি এটাই জানি বয়স বাড়ার সাথে এই তীব্র আবেগ আস্তে আস্তে কমতে থাকবে । সেখানে প্রক্টিক্যাল চিন্তা ভাবনা শুরু হবে । কে বেশি ভালবাসতে পারে এই চিন্তা থেকে বালিকা তখন এই চিন্তা করবে কে বেশি ভাল বাসায় তাকে রাখতে পারবে !
.
-স্যার পিলিজ গিভ মি সাম মানি !
.
পিচ্চি ছেলেটা আবার ফিরে এসেছে । আমি তিথিকে চোখের পানি সামলে নেওয়ার জন্য কিছুটা সময় দিয়ে পিচ্ছির সাথে কথা বলতে লাগলাম !
-এই আর কি কি ইংরিজি জানিস ?
-আরও মেলা ?
-বলতো কয়েকটা ! যত গুলো বলতে পারবি তত টাকা পাবি !
-সত্য তো ?
-হুম ! সত্য !
.
পিচ্চিটা আবারও ইংরেজি বাক্য বলার প্রস্তুতি নিতে থাকে ! আমিও চুপচাপ অপেক্ষায় থাকি!
.
@ অভিমানী ছেলে