আমি একবার মিরপুরের ভাড়া বাসা থেকে রিক্সায় একখানে যাচ্ছি । রিক্সাওয়ালা আমার মতই যুবক অনেক পরিপাটি আর কথা বার্তায় শিক্ষিতের ভাব। স্বভাবসুলভ তার সাথে কুশল বিনিময়ের এক পর্যায়ে তাকে জিজ্ঞাস করলাম "ভাই আপনি কি লেখাপড়া করেন❓"উনি বললেন করি ভাই। আমি আবার জিজ্ঞাসা করলাম কোথায় ভাই❓
উনি বলল,আরে আছি ভাই কোথাও। ভাবলাম মনে হয় অখ্যাত কোনো ইনস্টিটিউটে পড়ে,বলার মত না।দ্বিতীয়বার জিজ্ঞাস করে আর লজ্জা না দেই।আমি আমার গন্তব্যে পৌছে তাকে ভাড়া দিয়ে বিদায়ের সময় হাত মিলাতে মিলাতে বললাম ভাই কিসে পড়েন❓
রিক্সাওয়ালা একটা সরল হাসি দিয়ে উত্তর দিল,এইতো ভাই আছি,ঢাবিতে, আইআর বিভাগে।
এই বিসিএস এর আগের বিসিএস এ এক সিনিয়র বড় ভাই এএসপি হয়।তিনি Fb বন্ধু লিস্টে ছিল। তো এএসপি হিসেবে জয়েন করার দুই তিনমাস পর ওনাকে কল দিলে এক অপরিচিত লোক রিসিভ করে।
আপনি কাকে চান❓
বললাম *****ভাইকে দেন।
আপনি উনার কে হন❓
বললাম,জুনিয়র,নাম বললেই চিনবে।
উনি বলল,স্যার এর সাথে এইভাবে কথা বলা যায় না।
মনে মনে দুইটা খাটি বাংলায় গালি দিয়া লিস্ট থাইকা আউট করে দেই(যদিও আমার কিকে উনার কিছু যায় আসে না পৈশাচিক আনন্দ আর কি)
প্রতিটা ইনস্টিটিউটে কিছু এডুকেটেড ছাগল থাকে।যাদের কথায় প্রতি ছয় মিনিটে নয়বার শোনা যাবে"আমি যখন সরকারি মেডিকেলে ছিলাম", "আমরা বুয়েটিয়ানরা", "আমাদের ঢাবি থেকে পাশ করা যে কিইইইইইই কষ্ট" কিংবা সোলায়মান সুখনের আর আয়মান সাদিকের মত"আমি যখন ঢাকা ভার্সিটির আই বি এ তে ছিলাম ❗
ভাবের একটা লেভেল আছে। অপটিমাম লেভেলে থাকলে তখন রেসপেক্ট কাজ করে,আর লেভেল পাড় হয়ে গেলে তখন পিছনে দুইটা গালি দিয়ে"তোমার মত চ্য*র *ল অনেক দেখছি। সোদনের টাইম নাই❗
অশিক্ষিত মানুষেরা তোমাকে এতোটা পেইন দিবে না,যতটা না দিবে কতিপয় এডুকেটেড ছাগল।এরা কথার প্রতি লাইনে তোমাকে তার নিজের পজিশনটা তুলে ধরবে।অনেকটা রবীন্দ্রনাথের "আমার এ দেহখানি তুলে ধর তুলে ধর"টাইপের❗
নিজেকে উর্ধে তুলে ধরার ভিতর কোনো কৃতিত্ব নেই।তোমার এটিচিউড রিপ্রেজেন্ট করবে তোমার অরিজিন কোথায়❗
টি শার্টের ভিতর বিশায়ায়ায়ায়ায়ল আকারে পোস্টার সাইজে নিজের ইন্সটিটিউটের নাম লিখে রাস্তায় রাস্তায় হাটলেই মানুষ বলবে না তুমি টেলেন্ট।শো অফ ব্যাপারটা আজকাল কে জি এর ছাত্ররাও বুঝে।
প্রতিটা মেডিকেল,বিশ্ববিদ্যালয়,কলেজে প্রফেসর এর অভাব নেই।কয়টা প্রফেসর এর পিছনে তুমি বলতে পারবা"স্যার আসলেই একটা আইডল"❗
বাংলা টাকার নোটে যে, সাবেক গভর্নর আতিউর রহমান এর সিগনেচার থাকে সেই আতিউর রহমান এর এক ফিচারে পড়েছিলাম।তিনি যখন ক্যাডেট কলেজে চান্স পান তখন ভর্তির টাকা ছিল না।গ্রামের বাজারে প্রতি দোকানে গিয়ে গিয়ে টাকা তুলে পাচ টাকা নিয়ে যায় ভর্তি হতে।পরবর্তীতে প্রতিষ্ঠিত হবার পর তিনি অই গ্রামে অনেক স্কুল কলেজ প্রতিষ্ঠা করেন।আর বলেন,"সেই পাঁচ টাকা আমি আজ ও শোধ করতে পারিনি"❗