Discover postsExplore captivating content and diverse perspectives on our Discover page. Uncover fresh ideas and engage in meaningful conversations
ভয়ানক ছাত্র
???????
আজ টিউশনির প্রথম দিন। বহু কষ্টে এক বড় ভাইকে তেল মেরে চামচামি করে একটা টিউশনি যোগাড় করেছি। কিন্তু বড়ভাই সাবধান করে দিয়েছে আমি যেন কোন উল্টা পাল্টা কাজ না করি তাছাড়া আমার ছাত্র না কি ১ নাম্বারের ফাঁকিবাজ। তাই আমি যেন খুব যত্ন সহকারে পড়াই।
--তোমার নাম কি?
~স্যার আমার নাম ফটিক কিন্তু আমার স্কুলের বন্ধুরা আমাকে আদর করে ফটকাবাজ বলে ডাকে।
ছাত্রের মুখ থেকে এই কথা শুনার বুঝতে পারছিলাম ছাত্র আমার ১ নাম্বারের টাউটার। আমিও কম যায় না। আমি আমার ছাত্রকে বললাম,
--শুনো ফটিক আমি খুব রাগী একটা মানুষ।তোমার মত অনেক ফটকাবাজ ছেলেদের আমি পিটিয়ে মানুষ করেছি।তাই আমার সাথে কোন চালাকি করবে না। প্রতিদিনের পড়া প্রতিদিনেই শেষ করতে হবে।
ছাত্র আমার মুখের দিকে তাকিয়ে বললো,
~আমি কি আপনাকে স্যার বলে ডাকবো না কি দুলাভাই বলে ডাকবো?
--দুলাভাই বলে ডাকবে মানে!! ফাজলামি করো? স্যার বলে ডাকবে।
~আসলে ২ দিন পর তো আপনি আমার দুলাভাই হবেন তাই আগে থেকে ডাকার অভ্যাস করে নিচ্ছি।
-- দুলাভাই হবো মানে?
~স্যার আমার ৩ বোন। ২ বোনের বিয়ে হয়ে গেছে। কিভাবে হয়েছে জানেন?
-- কীভাবে?
~স্যার আমাদের পরিবারের আর্থিক অবস্থা তেমন ভাল না। তাছাড়া বর্তমানে মেয়ে বিয়ে দেওয়া অনেক টাকার ব্যাপার। আমার আব্বু আম্মু খুব চালাক। তারা চালাকি করে ভার্সিটি পড়ুয়া ভাল একটা ছেলেকে আমাকে পড়ানোর জন্য নির্বাচিত করে।তারপর ঐ স্যার যখন আমায় পড়াতে আসে তখন তাকে আমার আব্বু আম্মু খুব আদর যত্ন করে। পড়ানোর সময় আমার আপু খুব সুন্দর করে সেজে স্যারের সামনে ঘুরঘুর করে। তো একদিন আমাকে শিখেয়ে দেওয়া হয় আমি যেন পড়ার সময় মিথ্যা কথা বলে ওয়াশ রুমে চলে যায়। আর আমিও তাই করি। তখন আপু স্যারের রুমে এসে দরজা বন্ধকরে দেয়। আর একটু পরেই আব্বু আম্মু দরজা ধাক্কাধাক্কি করতে থাকে। তখন আপুই কান্নাভেজা চোখে দরজা খুলে। তারপর আব্বু আম্মু জোর করে ঐ স্যারের সাথে আপুকে বিয়ে করিয়ে দেয়। তখন স্যারের কিছু করার থাকে না কারণ আব্বু আম্মু স্যারকে খুব ভয় দেখাই আর বলে বিয়ে না করলে এলাকার লোকদের জানাবে। তখন স্যার নিরুপায় হয়ে কাঁদতে কাঁদতে আপুকে বিয়ে করে।এতে টাকাও খরচ হলো না আর ভাল ছেলের সাথেও বিয়ে দেওয়া হলো।২ বোনের বিয়ে এভাবেই হয়েছে আর ৩ নাম্বার বোনের বিয়ের জন্য আব্বু আম্মু আপনাকে নির্বাচিত করেছে ।
ছাত্রের মুখ থেকে এইসব কথা শুনার পর আমার অবস্থা খুব খারাপ হয়ে যায়। আমি উঠে দাঁড়ানো শক্তি পর্যন্ত হারিয়ে ফেলি।হাত পা আমার থরথর করে কাঁপতে থাকে।
ছাত্র আমার কানের কাছে ফিসফিস করে বললো,
~স্যার একটু পর আপু আসবে চা দেবার নাম করে আপনাকে দেখতে।
আমি তখন কথা বলার শক্তি পর্যন্ত হারিয়ে ফেলেছি। ঠিক তখনি দেখলাম কালো একটা মেয়ে মুখে সাদা পাউডার মেখেছে ঠোঁটে লাল লিপস্টিক লাল টিপ একদম অদ্ভুত খারাপ দেখতে হাতে চায়ের কাপ নিয়ে আমার কাছে আসছে।
ছাত্র তখন আমায় আবার ফিসফিস করে বললো,
~স্যার আমার আপু। তার সাথেই আপনাকে আব্বু আম্মু জোর করে বিয়ে দিবে।
জানি না আমার তখন কি হয়েছিলো। শরীরের সমস্ত শক্তি নিয়ে জোরে একটা চিৎকার দিয়ে জ্ঞান হারালাম।
যখন জ্ঞান ফিরলো তখন দেখি ছাত্রের মা আমার মাথায় পানি ঢালছে আর ছাত্রের বাবা আমার হাত পা মালিশ করছে।
আমি তখন সোজা ছাত্রের মায়ের পায়ে ধরে কাঁদতে কাঁদতে বললাম,
-- আন্টি আমায় মাফ করে দেন আমি বিয়ে করতে পারবো না। আমি খুব গরিব আমাকে নিয়ে আমার বাবা মার অনেক স্বপ্ন। তাছাড়া আমার গার্লফ্রেন্ডও আছে।ও যদি জানে আমি বিয়ে করেছি তাহলে ও আমায় খুণ করবে।
~আরে বাবা তুমি আমার পা ছাড়ো। আর বিয়ে করবে না মানে কি?
-- আমি আপনার মেয়েকে বিয়ে করতে পারবো না।
ছাত্রের মা আমার কথা শুনে একদম চমকে গেলেন।তারপর আমাকে সোফাই বসিয়ে বললেন,
~আমার মেয়ে মানে!! আমার তো কোন মেয়ে নেই। আমার তো একটা মাত্র ছেলে।
--তাহলে ঐ মেয়েটা কে?
~আমাদের বাসার কাজের মেয়ে।
কথাটা শোনার পর আমার মাথায় আকাশ ভেঙে পড়লো।শেষে কি না এই পিচ্চি ছেলে আমায় কাঁদিয়ে ছাড়লো।
আমি তখন ছাত্রের মাকে বললাম,
-- আন্টি ফটিক কোথায়?
~ফটিক কে?
--আপনার ছেলে।
~আমার ছেলের নাম তো পিয়াস। আর তুমি অজ্ঞান হবার পর পিয়াস যেন কোথায় গেল।
আমার মাথা তখন ঝিমঝিম করছে।এই ছেলে তো মহা টাউটার। এই বয়সে যে রকম টাউটারি করে বড় হলে না জানি কি কি করে।
আন্টি তখন আমায় মাথায় হাত রেখে বললো,
~ বাবা তোমার মনে হয় আজ শরীরটা খারাপ। তুমি বরং আজ চলে যাও।কাল থেকে না হয় এসো...
আমি রাস্তাদিয়ে হাটছি আর ভাবছি,
সারাজীবন আমি মানুষদের সাথে ফটকাবাজি করেছি আর আজ কি না আমার হাটুর বয়সী ছেলে আমায় কাঁদিয়ে ছাড়লো। বেচে থাকতে এই মুখ ঐ ছেলেকে আর দেখাবো না।????
copied
Alik Hossain Aly
Delete Comment
Are you sure that you want to delete this comment ?