হাঁচি, কাশি, সর্দি কিংবা গলাব্যথা থেকে অনেক সময় কানে তালা বা বন্ধ হয়ে যায়। ভারী হয়ে ওঠে মাথা। এমন অবস্থাকে হালকাভাবে নেওয়া মোটেও উচিত নয়। কেননা এ অবস্থা থেকে কানের পর্দার ভেতরের দিকে প্রদাহ বা ইনফেকশন হতে পারে।
এ ছাড়া কানের মধ্যভাগে তরলের উপস্থিতি, পুঁজ সৃষ্টি কিংবা পুঁজ গলে বের হয়ে আসার মতো ঘটনাও ঘটতে পারে। ফলে বাইরে থেকে কান বন্ধ থাকা, কিছু শুনতে না পাওয়া, কানের ভেতরে যন্ত্রণা অনুভবও হতে পারে।
যেসব কারণে কান বন্ধ হয়:
নাকের সঙ্গে গলা ও কানের সংযোগ স্থাপনকারী অডিটরি টিউব মধ্যকর্ণ ও আবহাওয়ার বায়ুচাপের ভারসাম্য রক্ষা করে থাকে। কোনো কারণে এই টিউব বন্ধ হলে বা ঠিকঠাক কাজ না করলে কানের মধ্যে পানি জমে প্রদাহ দেখা দিতে পারে।
সাধারণত হাঁচি, কাশি, সর্দি লাগলে কানের সঙ্গে নাক এবং গলার সঙ্গে যোগাযোগকারী ওই টিউব বন্ধ হয়ে যায়। এতে বাইরের পরিবেশের সঙ্গে ভেতরের যোগাযোগ বিঘ্নিত হয়। এ ছাড়া শ্বাসনালির ওপরের অংশে জীবাণু সংক্রমণ বা প্রদাহও কানের সমস্যার কারণ হতে পারে।
কারা আক্রান্ত হন:
স্কুলগামী বাচ্চাদের এই সমস্যা বেশি দেখা দেয়। তাছাড়া যে কোনো বয়সের মানুষজনও আক্রান্ত হতে পারেন। ঘন ঘন সর্দি-কাশি-নাক বন্ধ, প্রায়ই অ্যালার্জিজনিত নাকের প্রদাহ, ক্রনিক টনসিলের ইনফেকশন, শিশুদের ক্ষেত্রে নাকের পেছনে এডিনয়েড নামক লসিকা গ্রন্থি বড় হয়ে যাওয়া, নাকের হাড় বাঁকা হওয়া, ভাইরাল ইনফেকশন ছাড়াও নাকের পেছনে ন্যাসোফ্যারিংস নামক স্থানে কোনো টিউমার হলে এ রোগ হতে পারে।
যেসব লক্ষণ দেখা দেয়:
কানের মধ্যে পানি জমে প্রদাহ হলে সর্দি-কাশির সঙ্গে হঠাৎ কান বন্ধ হয়। হঠাৎ কানে ব্যথা অনুভূত হয়। কানের মধ্যে ফড়ফড় অথবা ভোঁ ভোঁ শব্দ হয়। কানে কম শোনা যায়। এমনকি ইনফেকশন বেশি হলে পর্দা ফুটো হয়ে কান বেড়ে রক্তমিশ্রিত পানি কিংবা পুঁজ আসতে পারে।
এ ধরনের সম্যা দেখা দিয়ে কোনো ধরনের কালবিলম্ব না করেই নাক কান গলা চিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়া অত্যাবশ্যক।
কান বন্ধের চিকিৎসা:
কান পরীক্ষার মাধ্যমে সাধারণত অ্যান্টি-হিস্টামিন; বয়স উপযোগী নাকের ড্রপ; প্রয়োজনে অ্যান্টিবায়োটিক দিয়ে থাকেন চিকিৎসকরা। ব্যথা কমাতে খেতে পারেন প্যারাসিটামল জাতীয় ওষুধ। আপনি যদি চুইংগাম খেতে পছন্দ করেন, তাহলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে আয়েশ করে চিবাতে থাকুন চুইংগাম, যা চিকিৎসার অংশ হিসেবে কানের বন্ধভাব দূর করার খুব দ্রুত এবং সহজতর পদ্ধতি।
এরপরও যদি ১২ সপ্তাহে সমস্যার সমাধান না হয় তখন ছোট একটি অপারেশনের মাধ্যমে কানের পর্দা ফুটো করে তরল পদার্থ বের করে দেন নাক-কান-গলা সার্জনরা। যাকে বলেন মাইরিংগোটমি। সুতরাং এ ধরনের সমস্যাকে ছোট খাটো ভেবে অবহেলা করা উচিত নয়।