তওবা মুমিন জীবনে সৌন্দর্য ফিরিয়ে আনে

Comments · 1347 Views

প্রভুর সাজানো এই পৃথিবীর সব সুযোগ-সুবিধা ভোগ করার পরও যখন বান্দা তাকে ভুলে যায়, তখনো আল্লাহ তাঁর বান্দার জন্য তাঁর দরজা খুলে রাখেন। শয়তান যখন নিরাশার সাগরে বান্দাকে ডুবিয়ে মারতে চায়, তখনো আল্লাহ বলেন, ‘(হে নবী) আপনি বলুন, হে আমার বান্দারা! যারা নিজেদের ওপর অবিচার করেছ! তোমরা আল্লাহর রহমত থেকে নিরাশ হয়ো না। নিশ্চয়ই আল্লাহ সব গুনাহ ক্ষমা করে দেবেন। কারণ তিনি ক্ষমাশীল, দয়ালু।’ সুরা জুমুয়া, আয়াত ৫৩।

তিনি আরও বলেন, ‘হে বিশ্বাসীরা! তোমরা সব সময় সবাই মিলে আল্লাহর কাছে তওবা কর, যাতে তোমরা সফল হতে পারো।’ সুরা নুর, আয়াত ৩১। তিনি যে পাপের সাগরে পড়ে যাওয়া মানুষটিকেও ক্ষমার চাদরে আবৃত করেন, তা বোঝাতে গিয়ে বলেন, ‘নিশ্চয়ই আল্লাহ তাঁর বান্দাদের তওবা কবুল করেন। তাদের পাপ মোচন করেন। তোমরা যা কর, তিনি তা সবই জানেন।’ সুরা শুরা, আয়াত ২৫। অনুতাপের অনলে জ্বলা বান্দাদের তিনি বলেন, ‘যে অনুশোচনা করে, বিশ্বাস করে, সৎকর্ম করে ও সৎপথে চলে তার প্রতি আমি সব সময়ই ক্ষমাশীল।’ সুরা তোয়াহা, আয়াত ৮২। নবীজি (সা.) বলেছেন, ‘তোমরা আল্লাহর কাছে তওবা কর এবং তাঁর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা কর। আমি দিনে ১০০ বার তওবা করি।’ মুসলিম। প্রতিটি মুসলিমেরই উচিত গুনাহ হয়ে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তওবা করা। কারণ তওবা ও বিপদাপদে আল্লাহর কাছে ছুটে যাওয়ার ক্ষেত্রে শয়তান যখন আমাদের অলসতা দেখে, তখনই সে আল্লাহর পথ থেকে সরানোর জন্য আমাদের ওপর আক্রমণ করে। সে বলে, ‘কোথায় যাও? যে পথে যাচ্ছ তা খুবই দীর্ঘ। এখানেই থাক এ উর্বর জমিতেই চরে বেড়াও।’ এ কথা শুনে আমরা মনের লাগাম তার কাছে সমর্পণ করে দিই। ফলে সে আমাদের নিয়ে যায় অনুর্বর ভূমিতে এবং যখন আমাদের আল্লাহর দরজায় কড়া নাড়তে দেখে, তখন সে বলে, ‘এদিকে সহজ একটি পথ আছে। আমার অনুসরণ কর।’ এরপর সে আমাদের নিয়ে যায় পার্থিব উপকরণের ঠিকানায়। সেখানে আমাদের সময় ও শ্রম নষ্ট করে। যখনই আমরা আল্লাহর পথে ফিরতে চাই, সে তখনই বলে, ‘থাম, পথের শেষ মাথায় আমি আলো দেখতে পাচ্ছি।’

অথচ সেখানে কোনো আলো নেই। সে আমাদের সঠিক পথ থেকে দূরে সরিয়ে রাখে। সে নিজেকে আমাদের পথপ্রদর্শক হিসেবে উপস্থাপন করতে থাকে। তাই প্রথমবারেই যদি আপনি তার বিরোধিতা করে আল্লাহর দরজায় কড়া নাড়তে থাকেন, তাহলে অবশ্যই সে পরাজিত হবে এবং আপনি সফল হবেন। আমাদের মনে রাখতে হবে, যখনই পাপের অনুভূতি আমাদের অন্তরে জাগ্রত হয় তখনই শয়তান চেষ্টা করে আমাদের অনুভূতিহীন করে দিতে এবং পাপের অনুভূতি কুমন্ত্রণার মাধ্যমে ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করতে। সে মনে এ কল্পনা ঢুকিয়ে দেয় যে, তুমি অপদার্থ এবং সংশোধনের অযোগ্য। তুমি কখনো আল্লাহর বান্দা হতে পারবে না। পাঠক! আল্লাহর প্রতি আপনার আমার আনুগত্য এবং নিজের অবস্থা সংশোধনের প্রচেষ্টা ভণ্ডুল করে দেওয়ার জন্যই শয়তান এগুলো করে। যাতে আপনি আমি সৌভাগ্য থেকে বঞ্চিত হই। রবের ব্যাপারে অসস্তুষ্ট হই। অনেক সময় বিপদে পড়লে আমরা আল্লাহর কাছে ছুটে যাওয়া বাদ দিয়ে বিকল্প পদ্ধতি তালাশ করি। আল্লাহর কাছে ছুটে যাওয়াকে আমরা বিপন্মুক্তির ক্ষেত্রে দীর্ঘমেয়াদি পন্থা মনে করি। তারপর যখন আমাদের কাছে সুস্পষ্ট হয় যে, উপকরণ গ্রহণ করার কারণে আল্লাহর কাছে ছুটে যাওয়ার সুযোগ হয়নি, তখন অপারগতার কথা বলে নিজেদের আবারও ধোঁকা দিই। মনে মনে বলতে থাকি, এ উপকরণের মেয়াদ শেষ হলে এর সমাপ্তি ঘটবে। কিন্তু তওবার দরজা তো সব সময়ই খোলা থাকবে। তা কখনো বন্ধ হবে না। তাই পরে তওবা করে নেব- এ যেন নিজের সঙ্গেই প্রতারণা করা। হে প্রিয় ভাই! যদি শয়তান আপনার কাছে এসে কুমন্ত্রণা দেয় যে, তুমি তো আল্লাহর রহমত পাওয়ার যোগ্য নও, তাহলে আপনি বলবেন, ‘হ্যাঁ, আমি যোগ্য নই ঠিক আছে কিন্তু আল্লাহ আমার ওপর দয়া করবেন। কারণ তিনি বান্দাকে এমন কিছু দেন যা পাওয়ার যোগ্যতা বান্দা রাখে না।’
শয়তান যদি বলে, ‘আল্লাহ তোমাকে আর কোনো সুযোগই দেবেন না। কারণ অতীতে তিনি তোমাকে সুযোগ দিয়েছেন; কিন্তু তুমি তা কাজে লাগাওনি।’ আপনি তখন বলুন, ‘আল্লাহ আমাকে অবশ্যই সুযোগ দেবেন এবং আমাকে মুক্তি দেবেন। কারণ তিনি ক্ষমাশীল ও দয়ালু।’ শয়তান যদি বলে, ‘আল্লাহ শাস্তিস্বরূপ তোমাকে বিপদে ফেলেছেন। কারণ তিনি তোমাকে অপছন্দ করেন।’ তখন আপনি বলুন আল্লাহ আমাকে পরিশুদ্ধ ও সংশোধনের জন্যই বিপদে ফেলেছেন।’ শয়তান যদি বলে, ‘তুমি আল্লাহর রহমত পাওয়ার অযোগ্য।’ আপনি তখন বলুন, ‘আল্লাহর রহমত অনেক ব্যাপক। তা আমাকে বেষ্টন করে নিতে সক্ষম।’ হে আল্লাহ! তওবার পথে শয়তানের শত বাধা-প্রতিবন্ধকতা ছিন্ন করে জীবনের সৌন্দর্য ফিরিয়ে আনতে যথাসময়ে তওবা করার তৌফিক দান করুন।
লেখক : চেয়ারম্যান, বাংলাদেশ মুফাস্সির সোসাইটি

Comments