করোনার সুযোগে হিন্দি ছবি আমদানির উদ্যোগ!

Comments · 1075 Views

চেষ্টাটা অনেক আগে থেকেই ছিল, করোনা এসে সেই ইচ্ছে বাস্তবায়নের পথ উন্মুক্ত করে দিলো। সব কিছু ঠিকভাবে চললে আগামী জানুয়ারি থেকেই দেশের প্রেক্ষাগৃহে দেখা যাবে হিন্দি ছবি। এরই মধ্যে তথ্য মন্ত্রণালয়ে এ বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। বলা হয়েছে, হিন্দি ছবি আমদানির ব্যাপারে লিখিত প্রস্তাব দিতে। তবে আমদানিকৃত সিনেমা ‘নতুন’ নাকি ‘পুরোনো’ হবে সেটা নিয়ে মতভেদ রয়েছে।

দক্ষিণ এশিয়ার আঞ্চলিক মুক্তবাণিজ্য চুক্তির (সাফটা) আওতায় সার্কভুক্ত দেশগুলোর মধ্যে চলচ্চিত্র বিনিময়ের সুযোগ সৃষ্টি করা হয়েছে আরো অনেক আগেই। কিন্তু দেশের নির্মাতা, প্রযোজক ও অভিনেতাদের বিরোধিতার কারণে হিন্দি ছবি বাংলাদেশের প্রেক্ষাগৃহে আসতে পারেনি। যদিও ২০১৫ সালে সালমান খানের ‘ওয়ান্টেড’ ছবিটি চালানো হয়েছিল। কিন্তু আশানুরূপ দর্শক তখন সিনেমা দেখতে যায়নি দেশাত্মবোধের কারণেই।

কিন্তু হিন্দি ছবি আমদানির চেষ্টা থেমে থাকেনি একদিনের জন্যও। করোনার কারণে দেশের প্রযোজকরা যখন নতুন ছবি মুক্তি দিতে ভয় পাচ্ছেন। তখন আবারো হিন্দি ছবি আমদানির বিষয়টি সামনে আসে। এবার আর কোনো মহলের আপত্তি নেই। কেউ কেউ একবাক্যে বলেছেন, আরো আগে থেকেই হিন্দি ছবি চালানো উচিত ছিল। কেউ আবার আমদানির অনুমতি দেয়ার আগে শর্ত দেয়ার পক্ষে।

এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ হল মালিক সমিতির সাবেক সভাপতি ও মধুমিতা হলের মালিক ইফতেখার উদ্দিন নওশাদ বলেন, তথ্য মন্ত্রণালয়ে যে বৈঠক হয়েছে, সেখানে আমি উপস্থিত ছিলাম না। তবে বরাবরই আমি সিনেমা আমদানির পক্ষে। কারণ সিনেমা হল বাঁচাতে হলে ব্যবসায় করতে হবে। এ জন্য ভালো ছবির বিকল্প নেই। তথ্য মন্ত্রণালয় সিনেমা আমদানির ব্যাপারে যে ইতিবাচক সিদ্ধান্ত নিয়েছে আমি সেটাকে স্বাগত জানাই। কারণ বাংলা ছবি দেখার জন্য হলে যদি ১০০ দর্শক আসে, হিন্দি ছবির জন্য আসবে ৩০০ দর্শক। আর দর্শক হলমুখী হলে বাংলা, হিন্দি, ইংরেজি সব ছবির জন্যই সেটা ভালো হবে।

হিন্দি ছবি আমদানির বিষয়টিতে সবচেয়ে বেশি বিরোধিতা করেছেন শিল্পীরা। তারা বিভিন্ন সাক্ষাৎকারে বলেছেন, বড় মাছ যেমন ছোট মাছকে গিলে খায় হিন্দি ছবি বাংলাদেশে চলালে সে রকম ব্যাপার হবে। এই জায়গাটায় সামনের কাতারে ছিলেন শাকিব খান। তিনি যখন শিল্পী সমিতির সভাপতির দায়িত্ব পালন করছিলেন, তখন কাফনের কাপড় গায়ে জড়িয়ে আন্দোলনে নেমে ছিলেন। ছবি আমদানি প্রসঙ্গে তিনি তখন বলেছিলেন, ‘যেখানে আজ আমরা আরো সামনে এগিয়ে যাবো সেখানে আমাদের চলচ্চিত্রকে ধ্বংস করার পাঁয়তারা চলছে।’ তবে সময়ে সাথে সাথে তারও মত পাল্টেছে। তিনি বলেছেন, ‘করোনার বাস্তবতাকে মাথায় রেখে কিছু দিনের জন্য শর্ত সাপেক্ষে ছবি আমদানি করা যেতে পারে।’

করোনা সঙ্কট কাটাতে বাংলাদেশে হিন্দি ছবি চলানোর পক্ষে মতামত ব্যক্ত করে প্রযোজক ও পরিবেশ সমিতির সভাপতি খোরশেদ আলম খসরু বলেছেন, বর্তমান বাস্তবতা মাথায় রেখে আমরা ছবি আমদানির পক্ষে মতামত দিয়েছি। তবে বিষয়টি এখনো চূড়ান্ত হয়নি। লিখিত দেয়ার পর মন্ত্রণালয় চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত দেবে।’ তিনি বলেন, ‘১৬ অক্টোবর থেকে প্রেক্ষাগৃহগুলো খুলে দেয়া হলেও দর্শক আসছে না। বড় বাজেটের ৩৫টি ছবি অপেক্ষায় থাকলেও দর্শক না আসার কারণে ছবি মুক্তি দিচ্ছেন না প্রযোজকরা। এ অবস্থায় প্রক্ষাগৃহগুলো চলবে কী করে এমন প্রশ্ন তুলে খসরু বলেন, ‘কিছুদিন বলিউডের ছবি চালানোর জন্য আমরাও সম্মতি দিয়েছি। বৈঠকে বলিউডের ১০টি ছবি আনার বিষয়ে আলোচনা হয়েছে।’

এদিকে হলমালিক সমিতির নেতাদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, পুরোনো নয়, ভারতের সাথে একযোগে বাংলাদেশেও নতুন সিনেমার মুক্তি দিতে চান তারা। এর ফলে সিনেমা হলগুলো ক্ষতি পুষিয়ে উঠতে পারবে বলে আশা তাদের।

চলচ্চিত্র প্রদর্শক সমিতির সহসভাপতি মিয়া আলাউদ্দিন বলেছেন, ‘ভারতের ছবি আনার বিষয়ে আমরা হলমালিকরা একমত হয়েছি। তবে পুরোনো সিনেমা নয়, আমরা চাই বলিউড ও কলকাতার সিনেমা সেখানে যেদিন মুক্তি পাবে, আমাদের এখানেও একই দিনে মুক্তি পাবে। আমরা এখন সেই চেষ্টাই করছি।’

এদিকে, চলমান সঙ্কট কাটাতে নির্মাতা, চিত্রনায়কসহ অনেকেই এমন সিদ্ধান্তকে সাধুবাদ জানিয়েছেন। তবে কিছু শর্তের কথা বলেছেন কেউ কেউ। চিত্রনায়ক ফেরদৌস আহমেদের মতে, করোনার সময়ে নির্মাতারা ছবি মুক্তি দিচ্ছেন না। হলগুলোর টিকিয়ে রাখার স্বার্থে একটি নির্দিষ্ট সময়ের জন্য বলিউডের ছবি চালানো যেতেই পারে।

তিনি বলেন, ‘হলগুলো যদি না বাঁচে তাহলে আমাদের ক্ষতি হয়ে যাবে। আমাদের কিন্তু বেশ কিছু বড় বাজেটের ছবি তৈরি হয়ে আছে। হলগুলোতে দর্শক না আসায় পরিচালকরা সেই ছবিগুলো মুক্তি দিচ্ছেন না।’

দেশে একসময় বাংলা ছায়াছবির পাশাপাশি হিন্দি-উর্দু ছবি চলত এমন তথ্য উল্লেখ করে দুই বাংলায় জনপ্রিয় এ চিত্রনায়ক বলেন, ‘আমি কলকাতায় দেখেছি, একটি হলে বাংলা ছবি চলছে, পাশেই হলেই হয়তো বোম্বের ছবি চলছে। আমাদের আসলে বিরোধিতা করার চেয়ে কিভাবে বিশ্বমানের ছবি নির্মাণ করা যায়, সে চেষ্টা করা উচিত।’

এ ক্ষেত্রে দেশীয় শিল্প-সংস্কৃতি যেন হুমকির মুখে না পড়ে সে বিষয়টিও বিবেচনায় রাখতে বলছেন তিনি। শর্তসাপেক্ষে বলিউডের সিনেমা চালানোয় সমস্যা দেখছেন না নির্মাতা আমিতাভ রেজা চৌধুরীও। তার মতে, প্রেক্ষাগৃহগুলো বাঁচানোর স্বার্থে বলিউডের ছবি চালানো যেতে পারে।

তিনি বলেন, ‘আমি মনে করি, সময় ঠিক করে এটা করা উচিত কত ঘণ্টা বলিউডের ছবি চলবে, আর কত ঘণ্টা বাংলা ছবি চলবে। আবার ট্যাক্সের ক্ষেত্রেও একটা পার্থক্য থাকতে হবে। বাংলা ছবির টিকিটের দাম যদি ৪০০ টাকা হয়, তাহলে হিন্দি ছবির টিকিটের দাম ৮০০ টাকা হওয়া উচিত। তা না হলে ওদের ছবির সাথে আমাদের ছবি কোনোভাবে চালানো যাবে না। কারণ, ওরা শত কোটি টাকা খরচ করে একটি ছবি বানায়, আর আমাদের ছবির বাজেট কয়েক লাখ টাকা। ফলে দেশীয় শিল্পকে বাঁচাতে একটা ব্যবস্থা থাকতেই হবে।’

 

Comments