ইসলাম সম্পর্কে কিছু কথা

Comments · 5579 Views

মুসলমানদের ধর্ম বিশ্বাসের মূল ভিত্তি আল্লাহ্র একত্ববাদ। মুসলমানরা বিশ্বাস করেন আল্লাহ মানবজাতির জন্য তার ব

ইসলাম একটি একেশ্বরবাদী এবং আব্রাহামিক ধর্ম । কোরআন দ্বারা পরিচালিত যা এমন এক কিতাব যাকে এর অনুসারীরা হবহু আল্লাহর বানী বলে মনে করেন এবং ইসলামের প্রধান নবী মুহাম্মাদ (সঃ) এর প্রদত্ত শিক্ষা পদ্ধতি জীবনাদর্শ বলা হয় সুন্নাহ এবং হাদিস নামে লিপিবদ্ধ রয়েছে এর ভিত্তি । ইসলামের অনুসারীরা মুহাম্মদ (সাঃ)কে শেষ নবী বলে মনে করেন। ইসলাম শব্দের অর্থ আত্মসমর্পণ বা একক স্রষ্টার নিকট নিজেকে সমর্পন করা । অনেকের ধারণা যে মুহাম্মদ (সাঃ)হলেন এই ধর্মের প্রবর্তক । তবে মুসলমানদের মতে তিনি এই ধর্মের প্রবর্তক নন বরং আল্লাহর পক্ষ থেকে প্রেরিত সর্বশেষ এবং চূড়ান্ত রাসূল পয়গম্বর । খৃস্টিয় সপ্তম শতকে তিনি এই ধর্ম পুনঃপ্রচার করেন । পবিত্র কোরআন ইসলাম ধর্মের মূল ধর্মগ্রন্থ । এই ধর্মে বিশ্বাসীদের মুসলমান বা মুসলিম বলা হয় । পবিত্র কোরআন আল্লাহর বাণী এবং এটি তার কর্তৃক মুহাম্মদ (সঃ) এর নিকট প্রেরিত বলে মুসলমানরা বিশ্বাস করেন । তাদের বিশ্বাস অনুসারে মুহাম্মদ (সঃ) শেষ নবী । হাদিসে প্রাপ্ত তার নির্দেশিত কাজ এবং শিক্ষার ভিত্তিতে কোরআনকে ব্যাখ্যা করা হয় । তবে কোনো হাদিসের মর্মার্থ কোরআনের বিরুদ্ধে গেলে তা বাতিল বলে গণ্য হয় ।

ইহুদি এবং খৃস্ট ধর্মের ন্যায় ইসলাম ধর্মও ইব্রাহিমীয় । বর্তমান বিশ্বে মুসলমানের সংখ্যা আনুমানিক ধারনা ১৮০ অথবা ১৯০ কোটি হবে এবং তারা পৃথিবীর দ্বিতীয় বৃহত্তম ধর্মাবলম্বী গোষ্ঠী । মুহাম্মদ (সাঃ) ও তার উত্তরসূরীদের প্রচার এবং যুদ্ধ জয়ের ফলশ্রুতিতে ইসলাম দ্রুত বিশ্বে ছড়িয়ে পড়েছিল । বর্তমানে সমগ্র বিশ্ব জুড়ে বিশেষ করে মধ্যপ্রাচ্য উত্তর আফ্রিকা ও দক্ষিণ এশিয়া,, পূর্ব আফ্রিকা,, পশ্চিম আফ্রিকা,, মধ্য এশিয়া,, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া এবং পূর্ব ইউরোপে মুসলমানরা বাস করেন । আরবে এ ধর্মের গোড়াপত্তন হলেও অধিকাংশ মুসলমান আন্যাংশ । যুক্তরাজ্যসহ বেশ কিছু বলকান অঞ্চল দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম ধর্ম ইসলাম ।

মুসলমানদের ধর্ম বিশ্বাসের মূল ভিত্তি

মুসলমানদের ধর্ম বিশ্বাসের মূল ভিত্তি আল্লাহ্র একত্ববাদ। মুসলমানরা বিশ্বাস করেন আল্লাহ মানবজাতির জন্য তার বাণী ফেরেস্তা জীব্রাইল এর মাধ্যমে রাসূল মুহাম্মদ (সাঃ) এর নিকট অবতীর্ণ করেন । কোরআনে বর্ণিত খতমে নবুয়্যত এর ভিত্তিতে মুসলমানরা তাকে শেষ বাণীবাহক (রাসূল) বলে বিশ্বাস করেন ।

তারা আরও বিশ্বাস করেন তাদের পবিত্র গ্রন্থ কুরআন নিখুত অবিকৃত এবং মানব ও জ্বিন জাতির উদ্দেশ্যে অবতীর্ণ আল্লাহর সর্বশেষ বাণী যা পুনরুত্থান দিবস বা কেয়ামত পর্যন্ত বহাল এবং কার্যকর থাকবে । তবে মুসলমানদের মধ্যে আহ্মদি নামক একটি সম্প্রদায় মনে করে মুহাম্মদ (সাঃ)শেষ নবী নন বরং যুগের চহিদা মোতাবেক নবুওয়াতের ধারা অব্যহত থাকবে ।

এবং শিয়াদের একটি বিরাট অংশবিশেষ ইসমাঈলীয়দের মধ্যে প্রচলিত বিশ্বাস যে ইমাম ইসমাঈল আখেরী নবী ছিলেন ।
মুসলমানদের বিশ্বাস আদম হতে শুরু করে আল্লাহ্ প্রেরিত সকল পুরুষ ইসলামের বাণীই প্রচার করে গেছেন । পবিত্র কোরআনের সূরা ফাতিরে বলা হয়েছে
নিঃসন্দেহে আমি তোমাকে (মুহাম্মদ) পাঠিয়েছি সত্যের সাথে সুসংবাদদাতা এবং সতর্ককারীরূপে । আর এমন কোনো সম্প্রদায় নেই, যাঁদের মধ্যে একজন সতর্ককারী পাঠানো হয়নি ।

ইসলামের দৃষ্টিতে ইহুদি ও খ্রিস্টান উভয় ধর্মাবলম্বীরাই আব্রাহামের শিক্ষার ঐতিহ্য পরম্পরা । উভয় ধর্মাবলম্বীকে কোরআনে আহলে কিতাব বলে সম্বোধন করা হয়েছে এবং বহুদেবতাবাদীদের থেকে আলাদা করা হয়েছে ।

পবিত্র কোরআনের সূরা আলে ইমরানে আহবান করা হয়েছে
তুমি (মুহাম্মদ) বল,, হে কিতাবীগণ,, এসো সেই কথায় যা তোমাদের এবং আমাদের মধ্যে এক,, যেন আমরা আল্লাহ ব্যতীত কারও ইবাদত না করি । কোনো কিছুকেই তার শরীক না করি । এবং আমাদের কেউ কাউকে আল্লাহ ব্যতীত উপাস্য হিসেবে গ্রহণ না করি । যদি তারা মূখ ফিরিয়ে নেয় তবে বল,, তোমরা স্বাক্ষী থাক অবশ্যই আমরা মুসলিম।

এই ধর্ম দুটির গ্রন্থসমূহের বিভিন্ন ঘটনা এবং বিষয়ের উল্লেখ কোরআনেও রয়েছে তবে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে রয়েছে পার্থক্য । ইসলামি বিশ্বাসানুসারে এই দুই ধর্মের অনুসারীগণ তাদের নিকট প্রদত্ত আল্লাহ্ এর বাণীর অর্থগত এবং নানাবিধ বিকৃতসাধন করেছেন ।

ইহুদিগণ তৌরাতকে তোরাহ এবং খৃস্টানগণ ইনজিলকে নতুন বাইবেল । মুসলমানদের বিশ্বাস ইসলাম ধর্ম আদি এবং অন্ত ও স্রষ্টার নিকট একমাত্র গ্রহনযোগ্য ধর্ম ।
মুসলমানগণ বিশ্বজগতের সৃষ্টিকর্তাকে আল্লাহ বলে সম্বোধন করেন । ইসলামের মূল বিশ্বাস হলো আল্লাহর একত্ববাদ বা তৌহিদ । ইসলাম পরম একেশ্বরবাদী এবং কোনোভাবেই আপেক্ষিক বা বহুত্ববাদী নয় ।

আল্লাহর একত্ব ইসলামের পাঁচটি মূল স্তম্ভের মধ্যে প্রথম যাকে বলা হয় শাহাদাহ । এটি পাঠের মাধ্যমে একজন স্বীকার করেন যে (এক) আল্লাহ ব্যতীত অন্য কোনো উপাস্য নাই এবং (দুই) মুহাম্মদ (সাঃ) তার প্রেরিত বাণীবাহক বা রাসূল সুরা এখলাছে আল্লাহর বর্ণনা দেয়া হয়েছে এভাবে বলুন,, তিনি আল্লাহ,, এক,, আল্লাহ অমুখাপেক্ষী,, তিনি কাউকে জন্ম দেননি এবং কেউ তাকে জন্ম দেয়নি এবং তার সমতুল্য কেউ নেই ।

আল্লাহ শব্দটি আল এবং ইলাহ যোগে গঠিত । আল অর্থ সুনির্দিষ্ট এবং ইলাহ অর্থ উপাস্য যার অর্থ সুনির্দিষ্ট উপাস্য । খৃস্টানগণ খৃস্ট ধর্মকে একেশ্বরবাদী বলে দাবী করলেও মুসলমানগণ খৃস্টানদের ত্রিত্ববাদ বা এক ঈশ্বরের মধ্যে পিতা পুত্র এবং পবিত্র আত্মার মিলন,, এই বিশ্বাসকে বহু ঈশ্বরবাদী ধারণা বলে অস্বীকার করেন ।

ইসলামি ধারণায় আল্লাহ সম্পূর্ণ অতুলনীয় এবং পৌত্তলিকতার অসমতুল্য যার কোনোপ্রকার আবয়বিক বর্ণনা অসম্ভব । এধরনের অবয়বহীনতার ধারণা ইহুদি এবং কিছু খৃস্টান বিশ্বাসেও দেখা যায় । মুসলমানরা তাদের সৃষ্টিকর্তাকে বর্ণনা করেন তার বিভিন্ন গুণবাচক নাম ও গুণাবলীর মাধ্যমে ।
ফিরিশতা সম্পর্কে
ফিরিশতা অথবা ফেরেশতা হলো ফারসী শব্দ । ফেরেশতা আরবী প্রতিশব্দ হলো মালাইকা। ফেরেশতায় বিশ্বাস ইসলাম ধর্মে বিশ্বাসের একটি মূল নীতি ।

এরা অন্য সকল সৃষ্টির মতই আল্লাহর আরেক সৃষ্টি । তারা মুলত আল্লাহুর দূত । ফেরেশতারা নভোমণ্ডল এবং ভূমণ্ডলের মধ্যে যোগাযোগ রক্ষা করেন । তারা সর্বদা এবং সর্বত্র আল্লাহুর বিভিন্ন আদেশ পালনে রত এবং আল্লাহর অবাধ্য হবার কোনো ক্ষমতা তাদের নেই । ফেরেশতারা নূর তথা আলোর তৈরি ।

রূহানিক জীব বলে তারা খাদ্য এবং পানীয় গ্রহণ করেন না । তারা সুগন্ধের অভিলাষী এবং পবিত্র স্থানে অবস্থান করেন । তারা আল্লাহর আদেশ অনুসারে যেকোনো স্থানে গমনাগমন এবং আকৃতি পরিবর্তনের ক্ষমতা রাখেন ।

ফেরেশতাদের সংখ্যা অগণিত । ইসলামে তাদের কোনো শ্রেণীবিন্যাস করা না হলেও চারজন গুরুদায়িত্ব অর্পিত প্রধান ফেরেশতার নাম উল্লেখযোগ্য,

জিব্রাইল ইনি আল্লাহর দূত এবং সর্বশ্রেষ্ঠ ফেরেশতা । এই ফেরেশতার নাম তিনবার কুরআন শরীফে উল্লেখ করা হয়েছে সূরা জিব্রাইল ফেরেশতাকে পাক রূহ বা রুহুল ক্বুদুস বলা হয়েছে । আল্লাহর আদেশ নিষেধ এবং সংবাদ আদান প্রদান যেসব ফেরেশতার দায়িত্ব জিব্রাইল তাদের প্রধান ।

জিব্রাইল ই আল্লাহর বাণী নিয়ে নবীদের কাছে গমনাগমন করেন । এই ফেরেশতাকে ইসলামের নবী মুহাম্মদ (সাঃ) তার নিজস্ব আকৃতিতে মোট দুইবার দেখেছেন । পবিত্র কোরআনে সূরা আন নাজমে বলা হয়েছে

সে উর্ধ্বাকাশের উপরিভাগে । তারপর সে কাছে এলো । অতঃপর সে আরো কাছে এলো । তাদের মাঝে ব্যবধান থাকল দুই ধনুকের অথবা তার চাইতেও কম । অতঃপর সে তার বান্দার কাছে ওহী পৌঁছে দিল যা তার পৌঁছানোর ছিল ।

সে যা দেখেছে অন্তর তা মিথ্যা প্রতিপন্ন করেনি । তোমরা কী সে বিষয়ে বিতর্কে লিপ্ত হতে চাও যা সে নিজের চোখে দেখেছে । সে তাকে আরও একবার দেখেছিল । সেদরাতুল মোন্তাহার কাছে ।

প্রাসঙ্গিক হাদিসসমূহ: মুসলিম শরীফ 329,, 330,, 332,, 333,, 334 এবং 336 ।

ফেরেশতা মিকাইল কুরআনে এই ফেরেশতার নাম উল্লেখ করা হয়েছে । ইনি বৃষ্টি এবং খাদ্য উৎপাদনের দায়িত্বপ্রাপ্ত ।
ফেরেশতা ইসরাফিল এই ফেরেস্তা আল্লাহর আদেশ পাওয়া মাত্র শিঙ্গায় ফুক দেওয়ার মাধ্যমে কিয়ামত অথবা বিশ্বপ্রলয় ঘটাবেন । তার কথা কুরআন শরীফে বলা না হলেও হাদিসে উল্লেখ করা হয়েছে ।মালাক আল মাউত ইনি মৃত্যুর ফেরেশতা এবং প্রাণ হরণ করেন ।

বিশেষ শ্রেণীর ফেরেশতা যাদেরকে কুরআনে কিরামান কাতিবিন অর্থ সম্মানিত লেখকগণ বলা হয়েছে তারা প্রতিটি মানুষের ভালো মন্দ কাজের হিসাব রাখেন । কবরে মুনকির এবং নাকির নামের দুই ফেরেশতা মানুষকে তার কৃত কর্মের ব্যাপারে জিজ্ঞাসাবাদ করেন ।

মালিক নামের ফেরেশতা নরক বা জাহান্নামের রক্ষণাবেক্ষণ করেন এবং রিদওয়ান নামের আরেক ফেরেশতা জান্নাত অথবা বেহেশতের দেখভাল করেন বলে বর্ণিত আছে । ইসলাম খৃস্টান ও ইহুদী ধর্ম ছাড়াও হিন্দুধর্মে ফেরেশতা তথা স্বর্গীয় দূতদের অস্তিত্বের কথা বলা হয়েছে ।

কোরআন মুসলমানদের মূল ধর্মগ্রন্থ
হাত্তাত আজিজ এফেন্দির হস্তলিখিত কোরআনের প্রথম সুরা।

কোরআন মুসলমানদের মূল ধর্মগ্রন্থ । তাদের বিশ্বাস পবিত্র এই কোরআন স্রষ্টার অবিকৃত হুবহু বক্তব্য । এর আগে স্রষ্টা প্রত্যেক জাতিকে বিভিন্ন গ্রন্থ পাঠিয়েছেন কিন্তু সেগুলোকে বিকৃত করা হয় । কোরআনকে আরও বলা হয় আল-কোরআন অথবা কোরআন শরীফ। কোরআনএর জায়গায় বানানভেদে কোরআন অথবা কোরানও লিখতে দেখা যায় ।

ইসলাম ধর্মমতে জীব্রাইল ফেরেশতার মাধ্যমে নবী মুহাম্মদ (সাঃ) এর নিকট ৬১০ খ্রিস্টাব্দ থেকে ৬ই জুলাই ৬৩২ খ্রিস্টাব্দে তার মৃত্যু অবধি বিভিন্ন সময়ে স্রষ্টা তার বাণী অবতীর্ণ করেন । এই বাণী তার অন্তঃস্থ ছিলো সংরক্ষণের জন্য তার অনুসারীদের দ্বারা পাথর,, পাতা এবং চামড়ার ওপর লিখেও রাখা হয় ।

অধিকাংশ মুসলমান পবিত্র কোরআনের যেকোনো পাণ্ডুলিপিকে অত্যন্ত শ্রদ্ধা করেন স্পর্শ করার পূর্বে ওজু করে নেন । তবে ওজু ছাড়াও কোরআন পাঠ করা যায় । কোরআন জীর্ণ এবং ব্যবহার অনুপযোগী হয়ে পড়লে আবর্জনা হিসেবে ফেলে দেয়া হয় না বরং কবর দেয়ার মত করে মাটির নিচে রেখে দেয়া হয় অথবা পরিষ্কার পানিতে ডুবিয়ে দেয়া হয় ।

অনেক মুসলমানই কোরআনের কিছু অংশ এর মূল ভাষা আরবিতে মুখস্থ করে থাকেন । কমপক্ষে যেটুকু আয়াত নামাজ আদায়ের জন্য পড়া হয় । সম্পূর্ণ কোরআন মুখস্থকারীদের হাফিজ অথবা সংরক্ষণকারী বলা হয় । মুসলমানরা আরবি কোরআনকেই কেবলমাত্র নিখুত বলে বিশ্বাস করেন ।

সকল অনুবাদ মানুষের কাজ বিধায় এতে ভুল ত্রুটি থাকার সম্ভাবনা থেকে যায় এবং বিষয়বস্তুর মূল প্রেরণা এবং সঠিক উপস্থাপনা অনুবাদকর্মে অনুপস্থিত থাকতে পারে বিধায় অনুবাদসমূহকে কখনোই আরবি কোরআনের সমতুল্য এবং সমান নিখুত গণ্য করা হয় না । বরং এগুলোকে সর্বোচ্চ অর্থানুবাদ হিসেবে অভিহিত করা হয় ।

মুহাম্মদ (সাঃ) ইসলামের শ্রেষ্ঠ বাণী বাহক
মুহাম্মদ (সাঃ) ছিলেন তৎকালীন আরবের বহুল মর্যাদাপূর্ণ কুরাইশ বংশের একজন । নবুওয়াত প্রাপ্তির পূর্বে তার বিশেষ গুণের কারণে তিনি আরবে আল-আমীন অথবা বিশ্বস্ত উপাধিতে ভূষিত হন । স্রষ্টার নিকট হতে নবুওয়াত প্রাপ্তির পর তিনি ইসলাম ধর্ম এবং মুসলিম জাতি বা উম্মাহ প্রতিষ্ঠা করেন ।

তাকে ইসলামের শ্রেষ্ঠ বাণী বাহক (নবী) হিসেবে শ্রদ্ধা এবং সম্মান করা হয় । মুসলমানরা তাকে একটি নতুন ধর্মের প্রবর্তক হিসেবে দেখেন না । তাদের কাছে মুহাম্মদ (সাঃ) বরং আল্লাহ প্রেরিত নবী-পরম্পরার শেষ নবী যিনি আদম ইব্রাহিম ও অন্যান্য নবীদের প্রচারিত একেশ্বরবাদী ধর্মেরই ধারাবাহিকতা রক্ষা করেন।

তার পূর্বের একেশ্বরবাদী ধর্ম বিভিন্ন সময় পরিবর্তিত এবং বিকৃত হয়ে গিয়েছিল । তাই মুহাম্মদ (সাঃ) ইসলামকে শেষ প্রেরিত ধর্ম হিসেবে আল্লাহর পক্ষ থেকে উপস্থাপন করেন ।

ইসলাম ধর্মমতে তিনি চল্লিশ বছর বয়স হতে মৃত্যুর আগ পর্যন্ত ২৩ বছর যাবৎ ফেরেশতা জিব্রাইল মারফত ঐশী বাণী লাভ করেন । এই বাণীসমূহের একত্ররূপ হলো পবিত্র কোরআন যা তিনি মুখস্ত করেন ও তার অনুসারীদের (সাহাবী) দিয়ে লিপিবদ্ধ করান । কারণ, তিনি নিজে লিখতে ও পড়তে জানতেন না ।

তুমি তো এর আগে কোনো কিতাব পড় নি এবং স্বহস্তে কোনো কিতাব লেখনি যে অবিশ্বাসীরা সন্দেহ পোষণ করবে ।

মুহাম্মদ (সাঃ) ছিলেন একজন উৎকৃষ্ট চরিত্রের মানুষ । সকল মুসলমান বিশ্বাস করেন মুহাম্মদ (সাঃ) এই বাণী নির্ভুলভাবে প্রচার করেছেন । এবং তাতে কোনো কিছু যোগ করেননি ।

সে যদি আমার নামে কোনো কথা রচনা করতো, তবে আমি তার ডান হাত ধরে ফেলতাম, অতঃপর কেটে দিতাম তাঁর গ্রীবা।

তোমাদের কেউ তাকে রক্ষা করতে পারতে না ।
মুসলিমরা বিশ্বাস করে যে মুহাম্মদ (সাঃ) ও সর্বোপরি সকল নবী ঐশী বাণী প্রচারে কখনো ভুল করেন নি।

তবে মানবিক এবং পার্থিব কিছু কিছু সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে তিনি মানুষ হিসেবে নিজের পক্ষ থেকে মত দিয়েছেন বলে সুন্নীরা বিশ্বাস করে থাকে । কিন্তু শিয়ারা মনে করে থাকে সকল নবী ও তাদের ইমামগণ সর্বাবস্থায় নির্ভুল ছিলেন যা ধর্মগ্রন্থ কোরআর এবং বিশুদ্ধ হাদিসের বিপরীত ।

কারণ মুহাম্মদ (সাঃ) এর সকল প্রকার মানবিক এবং পার্থিব সিদ্ধান্তগুলো আল্লাহ শুধরে দিতেন । উদাহরণ হিসেবে নিম্নলিখিত আয়াতটি আলোচনা করা হয়
হে নবী, আল্লাহ আপনার জন্যে যা হালাল করেছেন, আপনি আপনার স্ত্রীদেরকে খুশী করার জন্য তা নিজের উপর হারাম করছেন কেন ? আল্লাহ ক্ষমাশীল, দয়াময় ।

এভাবে কুরআনের আরও কয়েক জায়গায় মুহাম্মদের (সাঃ) কাজ শুধরে দেয়া হয়েছে । এই আয়াতগুলো আল্লাহর বাণী নির্ভুল এবং অপরিবর্তিতভাবে প্রচার করার ব্যাপারে প্রমাণ হিসেবে ব্যবহার করা হয় কারণ নির্ভুলভাবে প্রচারের ইচ্ছা না থাকলে নিজের অসম্মান হয় এমন কিছুই তিনি প্রচার করতেন না ।

মুসলিমরা বিশ্বাস করেন মানুষ হিসেবে সিদ্ধান্ত দিতে হলে মুহাম্মদ (সাঃ) কখনো কখনো ভুল করতেন । কিন্তু ঐশ্বিক বাণী প্রচারের ক্ষেত্রে তিনি কখনো ভুল করেননি । তার জীবনকালে তিনি সম্পূর্ণ আলৌকিকভাবে মেরাজ লাভ করেন ।

মুসলমানদেরকে শেষ বাণীবাহক মুহাম্মদের নাম উচ্চারণ করার সাথে সাথে সাল্লাল্লা-হু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলতে হয় । এর অর্থ আল্লাহ তার উপর রহমত এবং শান্তি বর্ষণ করুন । একে বলা হয় দরুদ শরীফ ।

এছাড়াও আরও অনেক দরুদ হাদীসে বর্ণীত আছে । তার মধ্যে এটাই সর্বপেক্ষা ছোট । কোনো এক বৈঠকে তার নাম নিলে দরুদ একবার বলা অবশ্যকর্তব্য (ওয়াজিব) ।

হাদীস নিয়ে কিছু কথা
হাদীস আরবি শব্দ । এর আভিধানিক অর্থ হচ্ছে- কথা, বাণী,, কথা বার্তা,, আলোচনা,, কথিকা,, সংবাদ,, খবর,, কাহিনী ইত্যাদি । ইসলামী পরিভাষায় মুহাম্মদের (সাঃ) কথা,, কাজ,, অনুমোদন

এবং তার দৈহিক ও চারিত্রিক যাবতীয় বৈশিষ্ট্যকে হাদীস বলে । মুহাম্মদের জীবদ্দশায় তার সহচররা তার হাদীসসমূহ মুখস্থ করে সংরক্ষণ করতেন । প্রথমত হাদীস লেখার অনুমতি ছিলো না যাতে হাদীস এবং কোরআন পরস্পর মিলে না যায় ।

পরবর্তীতে মুহাম্মদ (সাঃ) নিজেই তার কোনো কোনো সাহাবী বা সহচরকে হাদীস লেখার অনুমতি প্রদান করেন । মুহাম্মদের (সাঃ) মৃত্যুর পর তার সহচরের নিয়মিত তার হাদিসগুলো চর্চা করতেন ও তাদের ছাত্রদের কাছে বর্ণনা করতেন ।

মহাম্মদের সহচরদের ছাত্র তথা তাবেঈরা ওমর ইবন আব্দুল আযীযের আমলে রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় হাদীস লিখিত আকারে সংরক্ষণ করেন ।

মুহাম্মদের (সাঃ) কথা-কাজসমূহের বিবরণ এভাবে লোকপরম্পরায় সংগ্রহ ও সংকলন করে সংরক্ষণ করা হলে তার বক্তব্যসমূহ পরবর্তী প্রজন্মের কাছে উন্মুক্ত হয় ।

বিভিন্ন বিখ্যাত পণ্ডিতেরা এই কাজে ব্রতী ছিলেন । তাদের সংকলিত সেসব হাদিস-সংকলন গ্রন্থের মধ্যে ছয়টি গ্রন্থ প্রসিদ্ধ হয়েছে । এগুলো ছয়টি হাদিস গ্রন্থ (কুতুবুস সিত্তাহ) আখ্যা দেয়া হয় ।

তবে এটা ভাবা ভুল হবে যে এই ছয়খানা গ্রন্থের বাইরে আর কোনো বিশুদ্ধ হাদিস নেই । এর বাইরেও বহু বিশুদ্ধ হাদিসের সংকলন রয়েছে । হাদিসের বিশুদ্ধতা যাচাইয়ের বিভিন্ন মাপকাঠি রয়েছে । সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো হাদীসের সনদ বা হাদিস প্রাপ্তির সুত্র যাচাই ।

কেয়ামতের কিছু নমুনা
ইসলামী পরকালবিদ্যা কেয়ামতে অথবা শেষ বিচারের দিনে বিশ্বাস ইসলামের মূল বিশ্বাসগুলির একটি । ইসলাম ধর্মে কেয়ামত অথবা কিয়ামত হলো সেই দিন যে দিন এই বিশ্বের আল্লাহ সৃষ্ট সকল জীবকে পুনরুত্থান করা হবে বিচারের জন্য ।

সকল জীবকে তার কৃতকর্মের হিসাব দেওয়ার জন্যে এবং তার কৃতকর্মের ফলাফল শেষে পুরস্কার অথবা শাস্তির পরিমান নির্ধারণ শেষে জান্নাত অথবা বেহেশত অথবা স্বর্গ কিংবা জাহান্নাম অথবা দোযখ অথবা নরকে পাঠানো হবে ।

নবী মুহাম্মদ (সাঃ) কিয়ামতের সম্পর্কে কিছু আগাম নিদর্শন প্রকাশ করে গেছেন যেমনঃ ১। পুরুষদের তুলনায় নারী দের সংখ্যা বেড়ে যাবে ২। ইমাম মাহাদির আবির্ভাব ঘটবে ৩। দুনিয়ায় পাপ কাজ বেড়ে যাবে ৪। অযোগ্য লোকের হাতে ক্ষমতা চলে যাবে ৫। ব্যাভিচার বেড়ে যাবে ৬। পাপ কাজ করতে মানুষ দুইবার ভাববে না ৭। কয়েকজন লোক নিজেকে নবী দাবি করবেন আর অনেক অনেক কথা ।

Comments