ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ উপজেলার সীমান্তঘেঁষা বামোনের বিল হয়ে উঠেছে পর্যটককেন্দ্র। বর্ষায় বিলের পানি যেমন বেড়েছে, তেমনি পানিতে ফুটেছে লাল সাদা শাপলাসহ অন্যান্য জলজ ফুল। বিলের পানিতে বিকেলের সূর্য দেখতেও দূর-দূরান্ত থেকে অনেক মানুষ আসে। তিন নদীর সঙ্গমস্থল এটি। প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের এই বিলের ঠিক মাঝখানে গড়ে উঠেছে একটি গ্রাম। নাম ধাপোপাড়া। গ্রামটি পড়েছে মাগুরা জেলার শালিখা উপজেলায়।
দূর-দূরান্তের মানুষ ধাপোপাড়ায় এসে আনন্দ উপভোগ করলেও এখানকার অধিবাসীদের কোনো আনন্দ নেই। বর্ষায় পানিবন্দি এই গ্রামটির মানুষ বর্তমানে সীমাহীন কষ্টের সম্মুখীন।
এখানে কোনো স্কুল, বাজার ও ওষুধের দোকান নেই। একটি চায়ের দোকান থাকলেও তা বিকেল থেকে চালু হয়। বাচ্চাদের প্রাইমারি স্কুলে নিতে নৌকায় করে পাড়ি দিতে হয় অন্তত আড়াই থেকে তিন কিলোমিটার পথ।
গ্রামটিতে একটি মসজিদ আছে, তবে এর অবস্থা অত্যন্ত জীর্ণশীর্ণ। মসজিদে নির্ধারিত কোনো ইমাম-মুয়াজ্জিন নেই। পুরো বসতিতে নামাজ পড়েন মাত্র আটজন। আর নিয়মিত মসজিদে আসেন তিনজন। তাঁরা বেশির ভাগ সময় একাকী নামাজ আদায় করেন।
এখানে এমন লোকও আছে, যারা নিজেদের নবীর নামও জানে না। এই করুণ পরিস্থিতি ধাপোপাড়া গ্রামে গিয়ে স্বচক্ষে দেখে এসেছেন ঝিনাইদহের কয়েকজন আলেম।
তাঁদের বর্ণনায়, এখানে নেই কোনো পাকা রাস্তা। মাটির তৈরি মেঠোপথটি বর্ষার মৌসুমে পানির নিচে ডুবে আছে। সাপ আর মানুষের একসঙ্গে বসবাস। গ্রামবাসীর প্রধান পেশা মাছ ধরা। এখানে বছরে একবার মাত্র ধানের চাষ হয়।
পানিবন্দি এই গ্রামটিতে বাস করে অন্তত ২৬টি পরিবার। এদের মধ্যে প্রাপ্তবয়স্ক পুরুষ ৪০ জন। বাকিরা নারী ও শিশু, যাদের বেশির ভাগ অশিক্ষিত ও নিরক্ষর।
মানবেতর জীবন যাপন করা এই বসতির মানুষের বিভিন্ন মানবিক সহায়তা প্রয়োজন। থাকা-খাওয়ার জন্য অর্থনৈতিক উন্নতি, চলাচলের জন্য প্রয়োজনমতো রাস্তাঘাট, শিক্ষার জন্য স্কুল-মক্তব প্রতিষ্ঠা, নিয়মিত ইবাদতের জন্য সুন্দরভাবে মসজিদ পরিচালনা ইত্যাদি।
গত ২০ আগস্ট বৃহস্পতিবার আলেমরা ধাপোপাড়া গিয়ে পুরো গ্রাম পরিদর্শন শেষে মান্যবর লোকদের মসজিদে সমবেত করে তাদের সমস্যা নিয়ে আলোকপাত করেন। অন্য প্রয়োজন পূরণের পাশাপাশি আলেমরা তাদের অনাবাদ মসজিদটি আবাদের আশ্বাস দেন। গ্রামবাসী এই উদ্যোগে আনন্দ প্রকাশ করে। মসজিদ আবাদের লক্ষ্যে আলেমদের প্রতিনিধিদল একজন ইমাম নিয়োগের সিদ্ধান্ত নেন। ইমাম মসজিদে শিশু ও বয়স্কদের দ্বিনি শিক্ষাও দান করবেন।
ঝিনাইদহের ঐতিহ্যবাহী ধর্মীয় বিদ্যাপীঠ আল জামিয়াতুল ইসলামিয়া কাসিমুল উলুম মাদরাসার পরিচালক মাওলানা ওসমান গনীর নেতৃত্বে ধাপোপাড়া গ্রাম পরিদর্শনে অংশ নেন মুফতি ফারুক নোমানী, মুফতি হাফিজুর রহমান, হাফেজ মাওলানা শাহিনুর রহমান, মাওলানা আবদুর রহিম, হাফেজ হাসানুজ্জামান প্রমুখ।
আলেমরা আশাবাদী, পার্শ্ববর্তী এলাকার সামর্থ্যবানরাও এই গ্রামের অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়াবে। ইনশাআল্লাহ! তাদের এই সম্মিলিত প্রচেষ্টা স্থলভাগ থেকে বিচ্ছিন্ন এই বসতিকে ইসলামের আলোতে আলোকময় হয়ে উঠতে সাহায্য করবে।