৩৮ বিসিএসে পরিশ্রম ও ধৈর্যতেই সফল সুজায়েত

Comments · 1103 Views

ঘুমের সাথে যুদ্ধে হেরে গিয়ে গভীর রাতে যথন হলের রিডিং রুম ত্যাগ করি তখনও দেখি ভাই রিডিং রুমে বসে দিব্যি চালিয়ে যাচ্ছেন তার পড়াশুনা, আবার ভোর রাতে যখন আসি দেখি ভাই হাজির। চিন্তা করি যে ভাইয়ের আগে সকালে রিডিং রুমে হাজির থাকবো কিন্তু সেটা কখনও সম্ভব করতে পারেনি। ছাত্রজীবনে আমার বড় আফসোসগুলোর মধ্যে এটা অন্যতম। ৩৮তম বিসিএস এ শিক্ষা ক্যাডারে সুপারিশপ্রাপ্ত এসএম সুজায়েত আলী সম্পর্কে এমন মন্তব্য এসএম হলের শিক্ষার্থী হাসিবুর রহমানের।

পরিশ্রম, ধৈর্য, আত্মবিশ্বাস, দৃঢ় সংকল্প ও রুটিনমাফিক কৌশলী পড়ালেখার বাস্তব প্রতিচ্ছবি সুজায়েত আলী। আর এমন পরিশ্রমী ও ধৈর্যশীর হওয়ার পেছনে সুজায়েত আলীর মায়ের অবদান অনস্বীকার্য। চরম অর্থকষ্টের মধ্যদিয়ে জীবনের বেশিরভাগ সময় পার করলেও হতাশ হননি তিনি। সর্বদা চেয়েছেন ছেলেকে লেখাপড়া করিয়ে একজন ভাল মানুষ হিসেবে গড়ে তুলবেন। জীবন সায়াহ্নে এসেও ছেলের সফলতার জন্য বিশেষ বিশেষ দিনে রোজা রেখে দোয়া করেছেন। পরিশ্রমী ছেলে তার যথাসাধ্য চেষ্টার মাধ্যমে মায়ের ইচ্ছা পূরণ করতে সমর্থ হয়েছেন।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এসএম হলের আবাসিক ছাত্র এসএম সুজায়েত আলী একাডেমিক পরীক্ষায়ও তার মেধার যথার্থ পরিচয় দিয়েছেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজ কল্যাণ ও গবেষণা ইনষ্টিটিউট থেকে সিজিপিএ ৩.৫৯ পেয়ে ৬ষ্ঠ স্থান অর্জন করে বিএসএস ( সম্মান) এবং সিজিপিএ ৩.৮১ পেয়ে ৪র্থ স্থান অর্জন করে এমএসএস সম্পন্ন করেছেন।

পাঁচ বোন ও দুই ভাই এর মধ্যে সবার ছোট সুজায়েতের পড়ালেখার হাতেখড়ি সাতক্ষীরা জেলার আশাশুনি উপজেলার বাঁকড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে। সেই প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকেই মেধাবী সুজায়েত প্রতি ক্লাসে সর্বোচ্চ সংখ্যাক নাম্বার পেয়ে প্রথম স্থান অধিকার করে শিক্ষকদের সুদৃষ্টি ও ভালবাসা অর্জন করেছেন।

গরীব পরিবারের সন্তান হওয়ায় সুজায়েত মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিকে ভাল প্রতিষ্ঠানে পড়তে পারেনি। মাধ্যমিকে ভাল ফলাফল অর্জন করায় উচ্চমাধ্যমিকে শিক্ষকরা তাকে সকল সুযোগ সুবিধা বিনামূল্যে প্রদান করেন। মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক উভয় পরীক্ষায় জিপিএ-৫ পেয়ে পাশ করেণ।

একাডেমিক পড়ালেখা শেষ হবার পর প্রকাশনীতে লেখালেখির পাশাপাশি চাকুরীর পরীক্ষার জন্য জোর প্রস্তুতি নিয়ে দীর্ঘদিন অনেক ভাইবা দিয়েও সফলতার মুখ দেখতে পায়নি । এরই মাঝে ঢাকসহ দেশের বিভিন্ন জেলায়র নামকরা বেসরকারি কলেজে প্রভাষক পদে চাকরি পান । কিন্তু কলেজে জয়েন করার আগেই ১৪তম ভাইবার মাধ্যমে প্রথম সরকারী চাকরি হিসেবে বাংলাদেশ পুলিশের উপ-পরিদর্শক পদে সুপারিশপ্রাপ্ত হন। বাংলাদেশ পুলিশ একাডেমীতে প্রশিক্ষণকালে সোনালী ব্যাংকের সিনিয়ার অফিসার ও জনতা ব্যাংকের একজিকিউটিভ অফিসার দুইটাতেই একই দিনে সুপারিশপ্রাপ্ত হন। পরবর্তীতে ৩৮তম বিসিএসে শিক্ষা ক্যাডারে সুপারিশপ্রাপ্ত। বর্তমানে তিনি সোনালী ব্যাংক লিমিটেড এর খলিষখালি ব্রাঞ্চ পাটকেলঘাটা, সাতক্ষীরাতে কর্মরত আছেন।

ভবিষ্যতে গরীব অসহায় শিক্ষার্থীদের জন্য কিছু করার পরিকল্পনা আছে কিনা জনতে চাইলে সুজায়েত জানান, আমি প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পড়াশোনা যে সকল প্রতিষ্ঠানে সম্পন্ন করেছি সেই প্রতিষ্ঠানগুলোতে আব্দুল ওহাব সরদার বৃত্তি প্রদানের উদ্যোগ নিয়েছি। প্রতি বছর গরীব এবং মেধাবী ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে এই বৃত্তি দেয়া হবে। এছাড়াও ভবিষ্যতে গরীব ও মেধাবী ছাত্রছাত্রী যারা আর্থিক সংকটের কারণে পড়ালেখা চালিয়ে নিতে পারছে না তাদের সাহায্যের জন্য একটা ট্রাস্ট করতে চাই।

Comments