ব্যাকটেরিয়া ও ভাইরাস সম্পূর্ণ ভিন্ন নিজস্ব প্রক্রিয়া ও পদ্ধতিতে কাজ করে। তাদের উভয়েরই প্রধান লক্ষ্য হলো মানুষের দেহে ঢুকে টিকে থাকা ও বংশ বিস্তার করা। এ জন্য ব্যাকটেরিয়া নিজস্ব রাইবোসোম (ribosome) ব্যবহার করে তাদের বংশবিস্তার ও টিকে থাকার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যাকটেরিয়াল প্রোটিন তৈরি করে। তাই একে চিহ্নিত করা সহজ। কিন্তু ভাইরাস প্রথমেই দেহকোষ আক্রমণ করে কোষের কার্যক্রমের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নেয় এবং আমাদের দেহকোষ ব্যবহার করে ভাইরাল প্রোটিন তৈরি করতে থাকে। এভাবে দ্রুত ভাইরাস আমাদের দেহে নিজের বংশ বিস্তার করে।
এই অবস্থায় গতানুগতিক পদ্ধতিতে ভাইরাস দমন করতে গেলে আমাদের দেহকোষ ধ্বংস হওয়ার আশঙ্কা থাকে। তাহলে তো আমাদের জীবনই বিপন্ন হবে। তাই অ্যান্টিবায়োটিক নয়, বরং ভাইরাস দমনের জন্য প্রয়োজনীয় টিকা (ভ্যাকসিন) তৈরি করতে হয়, যেন ভাইরাস আমাদের দেহকোষ দখলের আগেই দেহের রোগ প্রতিরোধব্যবস্থা তাদের চিনতে পারে এবং দ্রুত নির্মূল করে। যেহেতু ভ্যাকসিন আবিষ্কার সময়সাপেক্ষ, তাই ভাইরাসের চিকিৎসা ব্যাকটেরিয়ার তুলনায় কঠিন।
আমরা জানি, ঠান্ডায় গলাব্যথা, কাশি, জ্বরের জন্য সাধারণত তিন দিন দেখতে হয় জ্বর কমে কি না। এরপর ডাক্তার প্রয়োজনীয় পরীক্ষানিরীক্ষা করে নিশ্চিত হলে অ্যান্টিবায়োটিক দেন। নির্দিষ্ট মাত্রায় ওষুধ খেতে হয়। অসুখ ভালো হয়ে যায়। কিন্তু যদি কোনো ভাইরাসের কারণে অসুস্থতা হয়, তাহলে ডাক্তার নিশ্চিত হওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় পরীক্ষা করে চিকিৎসার ব্যবস্থা করেন। এখন যেমন করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হলে অ্যান্টিবায়োটিকে কাজ হয় না। অন্য পদ্ধতিতে চিকিৎসা করা হয়। তবে ভাইরাসের কারণে সেকেন্ডারি ইনফেকশন রোধের জন্য হয়তো প্রয়োজনীয় অ্যান্টিবায়োটিক দেওয়া হতে পারে। এতে অবশ্য মূল ভাইরাসের চিকিৎসা হয় না।
ব্যাকটেরিয়ার কারণে অসুস্থ হলে রক্ত ও মলমূত্র পরীক্ষা, বিশেষভাবে কালচার করলে বোঝা যায়, ওই ব্যাকটেরিয়া কোন কোন অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহার করে নির্মূল করা যাবে। তখন চিকিৎসা সহজ হয়ে যায়। কিন্তু ভাইরাসের ক্ষেত্রে এই পদ্ধতি কোনো কাজে আসে না। কারণ, ভাইরাস তার জেনেটিক উপাদানগুলো আমাদের দেহকোষে ঢুকিয়ে দেয় এবং আমাদেরই দেহকোষের কার্যপদ্ধতি ব্যবহার করে নিজের অনুরূপ জেনেটিক বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন ভাইরাস তৈরি করতে থাকে। এখানেই মূল পার্থক্য। এবং এ কারণেই ভাইরাসের চিকিৎসা কঠিন।
শিশুদের করোনাভাইরাস সহজে আক্রান্ত করতে পারে না কেন
দেখা গেছে, শিশুরা করোনাভাইরাসে খুব কম আক্রান্ত হয়। আক্রান্ত হলেও তীব্রতা কম। এর কারণ হিসেবে বলা যায়, তাদের রোগ প্রতিরোধক্ষমতার বিশেষ একটি বৈশিষ্ট্য রয়েছে, যা তাদের রক্ষা করে। শিশুদের থাইমাস গ্ল্যান্ডগুলো খুব সক্রিয়। এই গ্ল্যান্ডগুলোই হলো টি-সেল উৎপাদনের উৎস। টি-সেল হলো রক্তের একধরনের শ্বেতকণিকা, যা দেহের রোগ প্রতিরোধক্ষমতার অংশ। টি-সেল দেহের বোন-ম্যারো থেকে উৎপন্ন হয়। যেহেতু শিশুরা দ্রুত টি-সেল উৎপাদন করতে পারে, তাই ভাইরাস শিশুদের টি-সেল ধ্বংসের আগেই শিশুদের দ্রুতগতিতে উৎপন্ন টি-সেল ভাইরাস ধ্বংস করতে পারে। তবে কোনো শিশু খুব দুর্বল বা অন্য রোগে আক্রান্ত হয়ে থাকলে হয়তো করোনাভাইরাসের শিকার হতে পারে। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই শিশুদের করোনার আক্রমণ বেশ দুর্বল। বয়স বাড়লে, বিশেষভাবে ৪০ বছরের বেশি বয়স্কদের থাইমাস গ্ল্যান্ড দুর্বল হতে থাকে। তাই বয়স্কদের রোগ প্রতিরোধশক্তি বাড়ানোর দিকে বেশি নজর দিতে হয়।
ভ্যাকসিন কত দূর
ইতিমধ্যেই বিভিন্ন দেশ করোনাভাইরাসের ভ্যাকসিন তৈরির পথে অনেক এগিয়ে গেছে। হয়তো খুব শিগগির আমরা ভ্যাকসিন পাব। কিন্তু তার আগে আমাদের সচেতনতা বাড়াতে হবে। আমরা যদি বাসার বাইরে সব সময় মুখে মাস্ক ব্যবহার করি এবং দিনে বেশ কয়েকবার সাবান দিয়ে হাত ধোয়ার অভ্যাস গড়ে তুলতে পারি, তাহলে বিশেষজ্ঞরা বলেন, প্রায় ৯০ শতাংশ আশঙ্কা কমে যায়। তাই এই অভ্যাসগুলো মেনে চলতে আমাদের বিশেষ উদ্যোগ প্রয়োজন।