কেউ ওয়ারী ছেড়েছেন, কেউ ব্যস্ত জরুরি পণ্য কেনাকাটায়

Comments · 1317 Views

আবাসিক এলাকাটির চারপাশের প্রবেশমুখে বাঁশের বেড়া। সেখানে টাঙানো রয়েছে রঙিন ব্যানার, লেখা রেড জোন, লকডাউন। জরুরি প্রয়োজনে যাতায়াতের জন্য পৃথক দুটি সড়কের মুখে রয়েছে ছোট্ট ফটক। কিন্তু ফটক দুটি দিয়ে তেমন কেউ আসা-যাওয়া করছেন না। ভেতরের রাস্তাঘাটও ফাঁকা। সুপারশপে রয়েছে মানুষের ভিড়।

আজ শুক্রবার বিকেলে পুরান ঢাকার ওয়ারীর চিত্রটা ছিল এমনই। করোনাভাইরাস প্রতিরোধে কাল শনিবার সকাল ৬টা থেকে ২৫ জুলাই পর্যন্ত ওয়ারীর তিনটি রোড ও পাঁচটি গলি লকডাউনের অধীনে থাকবে। রোডগুলো হলো টিপু সুলতান রোড, যোগীনগর রোড ও ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক (জয়কালী মন্দির থেকে বলধা গার্ডেন)। গলিগুলো হলো লারমিনি স্ট্রিট, হেয়ার স্ট্রিট, ওয়্যার স্ট্রিট, র্যাংকিন স্ট্রিট ও নবাব স্ট্রিট।

অবশ্য এই লকডাউন শুরুর আগেই অনেক বাসিন্দা এলাকা ছেড়ে চলে গেছেন বলে জানিয়েছেন স্থানী লোকজন। নবাব স্ট্রিটের বাসিন্দা আলমগীর হোসেন বলেন, কয়েক দিন ধরে পরিচিতদের অনেককেই সপরিবারে এলাকা ছাড়তে দেখা গেছে। তাঁদের অধিকাংশই বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন। কেউ কেউ ব্যবসা করেন। চাকরিজীবীরা জানিয়েছেন, তাঁদের প্রতিষ্ঠান টানা ২১ দিন ছুটি দিতে নারাজ। তাই চাকরি বাঁচাতে আপাতত অন্য এলাকায় পরিচিতজনের বাসায় উঠছেন তাঁরা। এ ছাড়া অনেকে গ্রামের বাড়িতে চলে গেছেন।

Lifebuoy Soap
ওয়ারী এলাকাটি ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) ৪১ নম্বর ওয়ার্ডের আওতাধীন। স্থানীয় কাউন্সিলরের নেতৃত্বেই এই লকডাউন কার্যক্রম বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। কাউন্সিলর কার্যালয় সূত্র জানায়, আজ দুপুরের আগেই এই এলাকাগুলোয় যাতায়াতের সব কটি পথ বাঁশের বেড়া দিয়ে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। তবে জরুরি প্রয়োজনে যাতায়াতের জন্য র্যাংকিন স্ট্রিটের উত্তরা ব্যাংকের রাস্তা ও ওয়্যার স্ট্রিটের হট কেকের দোকানের পাশের রাস্তা দিয়ে যাতায়াতের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। এখন কেউ ওই দুটি ফটক দিয়ে যাতায়াত করতে চাইলে তাকে নির্দিষ্ট খাতায় যাতায়াতের কারণ এবং নিজ ঠিকানা লিখে বের হতে হবে। এ ছাড়া জরুরি প্রয়োজনে একটি কন্ট্রোল রুম (০১৯৯৯৯২৬৩৩৯, ০১৮৭৩৩০১১১৪) খোলা হয়েছে। যেকোনো প্রয়োজনে এই দুটি মুঠোফোন নম্বরে যোগাযোগ করতে পারবেন অধিবাসীরা।

বেলা তিনটার দেখা গেল, ওয়ারীর যে সড়কগুলো লকডাউন করা হবে, সেগুলো ফাঁকা। মানুষের চলাচল অনেক কম। রিকশা ও ব্যক্তিগত যান চলাচল নেই। তবে ওয়ারীতে ফার্মেসি, সুপারশপ, মুদি ছাড়া বাকি সব দোকানপাট বন্ধ। এর মধ্যে সুপারশপ ও মুদি দোকানে মানুষের ভিড় দেখা গেছে।

বেলা সাড়ে তিনটার দিকে বলধা গার্ডেন এলাকায় রিকশায় মাইক নিয়ে ওয়ারী লকডাউনের ঘোষণা প্রচার করেছিলেন সিটি করপোরেশনের এক কর্মচারী। এ সময় তিনি জরুরি প্রয়োজন ছাড়া বাসাবাড়ি থেকে বের না হতে অনুরোধ জানান।

সুপারশপ স্বপ্ন থেকে খাদ্যপণ্য কিনে বাসায় ফিরছিলেন টিপু সুলতান রোডের বাসিন্দা রফিকুল ইসলাম। তিনি ইসলামপুরের কাপড়ের ব্যবসা করেন। রফিকুল বলেন, টানা ২১ দিন লকডাউনে থাকতে হবে। তাই বেশি পরিমাণ খাদ্যপণ্য কিনেছি। কিন্তু এই ২১ দিন ব্যবসা না করলে সংসার খরচ কীভাবে চালাব, তা নিয়ে চিন্তায় আছি।

যোগীনগর রোডের মুদি দোকানি সায়েম তালুকদার। তিনি বলেন, কয়েক দিন আগে থেকেই দোকানে বেচাকেনা বেড়েছে। তবে আজ দুপুর থেকে ক্রেতা কমছে।

ডিএসসিসির ৪১ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর সারওয়ার হাসান প্রথম আলোকে বলেন, ওয়ারীর লকডাউন এলাকার ভেতরে লক্ষাধিক লোকের বাস। সেখানে সুপারশপ স্বপ্ন, মিনা বাজার, আগোরা রয়েছে। সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে সব শপ থেকে খাদ্যপণ্য কেনাকাটা করতে পারবেন তাঁরা। এ ছাড়া নাগরিকদের সেবা দিতে একটি স্বেচ্ছাসেবী টিম রয়েছে। হটলাইন নম্বরে কল দিয়ে এই সেবা নিতে পারবেন তাঁরা।

ডিএসসিসির স্বাস্থ্য কর্মকর্তা মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ওয়ারীর ওই এলাকাগুলোয় দুই শতাধিক মানুষ করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। তাই ওই এলাকা লকডাউন করা হয়েছে। তিনি বলেন, ওয়ারীতে নতুন করে কেউ করোনায় আক্রান্ত হলে তাঁদের পরীক্ষার জন্য সেখানে একটি বুথের ব্যবস্থা করা হয়েছে। সেখানে আইইডিসিআরের প্রতিনিধিরাও থাকবেন। তাঁরা প্রয়োজনীয় পরামর্শ দেবেন।

Comments