সূর্য্য গ্রহন ও আমাদের করনীয়

Comments · 1249 Views

গর্ভবতী ভাবীকে জেঠিমা নির্দেশ দিয়েছেন ঘরে বসে না থেকে হাঁটাহাঁটি করার জন্য। কেননা সূর্য গ্রহণ চলছে। এসময়ে গর্ভবতী নারীদের খাবার গ্রহণ ও না ঘুমানোসহ অসংখ্য কুসংস্কার চলছে আমাদের সমাজে।
গর্ভবতী নারীরা কিছু কাটাকাটি করলে ক্ষতি হবে বা গর্ভস্থ সন্তানের উপর প্রভাব পড়বে
-এসব ধারণা পরিত্যাজ্য এবং কুসংস্কার।
মহান আল্লাহ তাআলার একত্ব মহত্ত্ব বড়ত্ব অস্তিত্ব প্রমাণে সৃষ্টিকূলের বড় দুটি নিদর্শন হলো সূর্য ও চন্দ্র।
.
চন্দ্র ও সূর্যগ্রহণ হলো আল্লাহ তাআলা কর্তৃক নির্ধারিত একটি প্রক্রিয়া। চাঁদ যখন পরিভ্রমণ অবস্থায় কিছুক্ষণের জন্য পৃথিবী ও সূর্যের মাঝখানে এসে পড়ে, তখন পৃথিবীর কোনো দর্শকের কাছে কিছু সময়ের জন্য সূর্য আংশিক বা সম্পূর্ণরূপে অদৃশ্য হয়ে যায়। এটাই সূর্যগ্রহণ (Solar eclipse) বা কুসুফ।
.
চাঁদের আলোর উৎস হলো সূর্য। ১৩ লাখ ৯৪ হাজার কিলোমিটার ব্যাসের এ নক্ষত্রের সঙ্গে পৃথিবী ও জীবজগতের সম্পর্ক সুনিবিড়।
সূর্যের তাপে পৃথিবীর সব কিছু সজীব-সতেজ ও প্রানবন্ত হয়ে উঠে। উদ্ভিদ সূর্যালোক থেকে খাদ্য গ্রহণ করে।
.
যদি পৃথিবীতে সূর্যের তাপ ও আলো না আসত, তাহলে প্রাণিকূলের জীবন বিপন্ন হয়ে পড়তো। পুরো পৃথিবী পরিণত হতো একখণ্ড বরফে।
অন্যদিকে সূর্য যদি তার ভেতরকার সব তাপ পৃথিবীর ওপর উগড়ে দিত, তাহলেও পৃথিবী পরিণত হতো শ্মশানে। ধ্বংসাত্মক এক পৃথিবী হতো।
.
বাংলায় সূর্যালোক বা চন্দ্রালোক বলি।
ইংরেজিতে, Sunlight এবং Moonlight বলি।
পবিত্র কোরআনুল হাকিমে সূর্য ও চন্দ্র প্রসঙ্গে বলা হয়েছে,
"তিনিই সেই মহান সত্তা, যিনি সূর্যকে কিরণোজ্জ্বল ও চাঁদকে স্নিগ্ধ আলোয় আলোকিত করেছেন।"
[সুরা ইউনুসঃ-৫]
অন্যত্র ইরশাদ হয়েছে, "আর আমি সৃষ্টি করেছি একটি প্রজ্বলিত বাতি।" [সুরা নাবাঃ-১৩]
.
সূর্য প্রসঙ্গে কোরআন বলেছে, সূর্য নিজে দহনক্রিয়ার মাধ্যমে প্রচণ্ড তাপ ও আলো উৎপন্ন করে। বিজ্ঞানও তা-ই বলে।
বিজ্ঞান বলছে, সূর্য তার কেন্দ্রভাগে নিউক্লীয় সংযোজন বিক্রিয়ার মাধ্যমে প্রতি সেকেন্ডে ৬২ কোটি মেট্রিক টন হাইড্রোজেন পুড়িয়ে হিলিয়াম উৎপাদন করে। সূর্যপৃষ্ঠের তাপমাত্রা ৫৭৭৮ কেলভিন বা ৫৫০৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। অর্থাৎ বিজ্ঞানের বক্তব্যেও সূর্যই তাপশক্তির ও আলোর প্রধান উৎস।
মহান রব স্পষ্ট করে বলেছেন,
"আল্লাহ চাঁদকে স্থাপন করেছেন আলোরূপে, আর সূর্যকে স্থাপন করেছেন প্রদীপরূপে।"
[সুরা নুহঃ-১৬]
.
মুগিরা ইবনে শুবা রাঃ বলেন, রাসুল সাঃ এর পুত্র ইবরাহিমের ইন্তিকালের দিনটিতেই সূর্যগ্রহণ হলে আমরা বলাবলি করছিলাম যে নবী পুত্রের মৃত্যুর কারণেই সূর্যগ্রহণ হয়েছে।
এসব কথা শুনে রাসূল সাঃ বললেন, "সূর্য ও চন্দ্র আল্লাহ তাআলার অগণিত নিদর্শনের দুটি। কারো মৃত্যু বা জন্মের কারণে চন্দ্রগ্রহণ বা সূর্যগ্রহণ হয় না।"[বুখারী-১০৪৩]
চন্দ্র বা সূর্যগ্রহণকে আল্লাহ তাআলার কুদরত হিসেবে অভিহিত করে রাসূল সাঃ সাহাবিদের চন্দ্র বা সূর্যগ্রহণের সময় নামাজ আদায়ের নির্দেশ দিয়েছেন।
তিনি বলেন, "কোনো লোকের মৃত্যুর কারণে কখনো সূর্যগ্রহণ বা চন্দ্রগ্রহণ হয় না। তবে তা আল্লাহ তাআলার নিদর্শনগুলোর দুটি। তোমরা সূর্যগ্রহণ বা চন্দ্রগ্রহণ হতে দেখলে সালাতে দাঁড়িয়ে যাবে।" [বুখারীঃ- ৯৮৪]
.
সূর্যগ্রহণের সময় রাসূল সাঃ আতঙ্কিত হয়ে তা থেকে উদ্ধারের জন্য সালাতে দাঁড়িয়ে আল্লাহ তাআলার সাহায্য চাইতে বলেছেন।
আধুনিক বিজ্ঞানও বলছে যে সত্যি চন্দ্র বা সূর্যগ্রহণ পৃথিবীর জন্য আতঙ্কের বিষয়।
শুধু তাই নয় বরং চন্দ্র বা সূর্যগ্রহণে তিনি কিয়ামতের মহাপ্রলয়ের আশঙ্কাও করেছেন।
.
হজরত আবু মূসা রাঃ বলেন, নবী সাঃ-এর সময় সূর্যগ্রহণ হলে তিনি এ আশঙ্কায় করলেন যে কিয়ামতের মহাপ্রলয় বুঝি সংঘটিত হবে।
তিনি দ্রুত মসজিদে এলেন। দীর্ঘ কিয়াম, রুকু, সিজদাসহ নামাজ আদায় করলেন।
বর্ণনাকারী বলেন, আমি নবী সাঃ-কে এমন করতে আগে আর কখনো দেখিনি। অতঃপর তিনি বললেন, "আল্লাহর প্রেরিত এসব নিদর্শন কারো মৃত্যু বা জন্মের (ক্ষতি করার) জন্য হয় না।
যখন তোমরা তা দেখবে, তখনই আতঙ্কিত হৃদয়ে আল্লাহ তাআলার জিকির ও ইস্তিগফারে মশগুল হবে।" [মুসলিমঃ-১৯৮৯]
অন্য হাদিসে চন্দ্র বা সূর্যগ্রহণকে আল্লাহর পক্ষ থেকে ভীতি প্রদর্শন হিসেবে উল্লেখ করে তা থেকে দ্রুত উদ্ধারে সদকাহ করার কথা বলেছেন।
.
বিজ্ঞানীরা বলেন, সূর্য ও চন্দ্রগ্রহণের সময় সূর্য, চন্দ্র ও পৃথিবী একই সমান্তরালে, একই অক্ষ বরাবর থাকে বলে এ সময়ই গ্রহাণুপুঞ্জের ঝুলন্ত বড় পাথরগুলো পৃথিবীতে আঘাত হানার আশঙ্কা বেশি। বৃহদাকারের পাথর পৃথিবীর দিকে ছুটে এলে পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলের পক্ষে তা প্রতিহত করা অসম্ভব। ধ্বংসই হবে পৃথিবীর পরিণতি।
.
বর্তমান সময়ে আমাদের উচিত, কুসংস্কারগুলো পরিহার করে রাসূল সাঃ এর নির্দেশনা অনুযায়ী চন্দ্র বা সূর্যগ্রহণের সময় আল্লাহর নিকট সাহায্য চাওয়া।
হে মহান রব! আপনার রহমতের চাঁদরে আমাদেরকে আবৃত করে রাখুন..আমিন।

Comments