সংগ্রাম প্রাণঘাতি মহামারি করোনাভাইরাসের কারণে গত মার্চ মাস থেকে দেশের সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকার কারণে শিক্ষার্থীদের পড়াশোনা মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে।বঞ্চিত হচ্ছে শিক্ষকদের দিক-নির্দেশনা ও ক্লাস থেকে।তবে স্কুল পর্যায়ে কিছু অনলাইন ক্লাশ শুরু হলেও এখনো ক্লাসের বাইরে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ের ২৮ লাখ শিক্ষার্থী।
দুই মাস আগে গত ৩০ এপ্রিল শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনির সভাপতিত্বে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি), সরকারি ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিনিধিদের অংশগ্রহণে এক ভিডিও কনফারেন্সে সরকারি-বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে বাধ্যতামূলকভাবে অনলাইন ক্লাশ শুরু করার সিদ্ধান্ত নেয়া হলেও এখনও তা বাস্তন হয়নি।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, বেসরকারি পর্যায়ের বেশ কিছু বিশ্ববিদ্যালয় অনলাইনে ক্লাস শুরু করতে পারলেও বেশির ভাগ পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় এবং জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের কলেজগুলো তাদের ক্লাস শুরু করতে পারেনি। সর্বশেষ গত ২৫ জুন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর সাথে ইউজিসির ভার্চুয়াল সভার পর পাবলিক বিশ্ববিদ্যায়লগুলো শিগগিরই অনলাইনে তাদের পাঠদানকার্যক্রম শুরু করতে সম্মতি জানিয়েছে বলে জানা গেছে।
এ দিকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ ও করোনার কারণে শিক্ষাব্যবস্থায় অচলাবস্থার কারণে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে বড় সেশনজটের আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। এ থেকে উত্তরণের জন্য ৪৬ পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসিদের নিয়ে গত ২৫ জুন ভার্চুয়াল বৈঠকে বসে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি)।
ইউজিসির সদস্য (প্রশাসন) অধ্যাপক মুহাম্মদ আলমগীর গতকাল সোমবার সংবাদ মাধ্যমকে জানান, নানা সীমাবদ্ধতার কারণে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় তাদের শিক্ষার্থীদের ক্লাসে ফেরাতে পারছিল না। এখন বিকল্প পন্থায় বিশেষ করে অনলাইনে কিভাবে তাদেরকে শিক্ষার মূল স্রোতধারায় ফেরানো যায় সেই লক্ষ্যেই ভিসিদের সাথে বৈঠক করা হয়েছে। দেশের ৪৬টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে অনলাইনে ক্লাসের বিষয়ে ভিসিদের সাথে সভা হয়েছে। তারা সবাই অনলাইনে ক্লাসের ব্যাপারে একমত হয়েছেন।
ইউজিসি সূত্র জানায়, শিক্ষার্থীদের সেশনজটের কবল থেকে রক্ষা করতে ইউজিসির পক্ষ থেকে সব পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়কে অনলাইন শিক্ষাকার্যক্রম শুরুর প্রতি জোর দেয়া হয়। সভায় ভিসিদের উদ্দেশে বলা হয়, করোনার কারণে যেহেতু শ্রেণিকক্ষে ক্লাস শুরু করা যাচ্ছে না তাই দ্রুততার মধ্যে অনলাইন ক্লাস, পরীক্ষা নেয়ার মতো পরিবেশ তৈরি করতে বলা হয়েছে। ইউজিসির এ প্রস্তাবে প্রায় সবাই একমত হয়েছেন। তবে অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ে বিদ্যমান কিছু সমস্যা রয়েছে সেসব কিভাবে সমাধান করা সম্ভব তা নিয়ে আলোচনা করে মতামত দিয়েছেন।
এ প্রসঙ্গে ইউজিসি চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. কাজী শহীদুল্লাহ জানান, করোনা পরিস্থিতিতে সেশনজট থেকে রক্ষা করতে ও শিক্ষার্থীদের সুরক্ষা নিশ্চিত করে শিক্ষাকার্যক্রম চালিয়ে নিতে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসিদের নিয়ে বৈঠক হয়েছে। বৈঠকে আলোচনা করে আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি যে, শিক্ষার্থীদের আর ক্লাসের বাইরে রাখা যাবে না। তাই এখনি অনলাইনে ক্লাস নেয়া শুরু করতে হবে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে পরীক্ষা এবং ব্যবহারিক পরীক্ষা নেয়া হবে। শিক্ষার্থীদের জন্য ইন্টারনেটের বিশেষ প্যাকেজ দেয়ারও চেষ্টা চলছে বলে তিনি জানান। আর এ জন্য শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে চিঠিও দেয়া হয়েছে।
ইউজিসির বৈঠক সূত্রে জানা গেছে, অনলাইন ক্লাস শুরু করার ক্ষেত্রে বৈঠকে ভিসিরা বেশ কয়েকটি সমস্যা তুলে ধরেন। এর মধ্যে আছে, সব শিক্ষক-শিক্ষার্থীর ল্যাপটপ নেই। ল্যাপটপের বিকল্প হিসেবে স্মার্টফোনেও ক্লাস নেয়া যায়। কিন্তু ১৩ শতাংশ শিক্ষার্থীর তাও নেই। সারা দেশে সব স্থানে ইন্টারনেটের গতি কম। আবার সব স্থানে ইন্টারনেট সংযোগ থাকে না। অনলাইন ক্লাসের ক্ষেত্রে ইন্টারনেটের দরও একটি বড় প্রতিবন্ধকতা। এ ছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সব শিক্ষক ভার্চুয়াল ক্লাস নেয়ার ব্যাপারে অভ্যস্তও নন বলে জানানো হয় সভায়।
উল্লেখ্য, বিশ্বের বহু দেশে অনেক আগ থেকেই অনলাইনে উচ্চশিক্ষা গ্রহণের ব্যবস্থা থাকলেও আমাদের দেশে সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো করোনা মহামারির এই দুর্যোগকালীন সময়ে তিন মাসের বেশি সময় অতিবাহিত হয়ে গেলেও এখনো তা চালু করতে পারেনি।