আপনার হয়তো জানেন ১৯৯৯ সালে নাসা মঙ্গলের উদ্দেশ্য একটি সেটেলাইট পাঠায় যেটি মঙ্গলের চারদিকে পদক্ষেপ করবে এবং মঙ্গল সম্পর্কে যাবতীয় তথ্য পৃথিবীতে পাঠাবে। তাহলে আপনারা এটাও হয়তো জানেন নাসার এই মিশন সফল হয়নি। এবং সেটেলাইটি মঙ্গলের কাছাকাছি দিয়ে বিস্ফোরণ ঘটে মহাশূন্যে হারিয়ে যায়। কিন্তু কেন এমনটা হয়ে ছিল সেটা জানেন কি আসলে এমনটা হয়েছিল সামান্য একটা অংকের ভুলে তাছাড়া আর কিছুই নয়। তো কিভাবে এমন একটি ভুল করলো যাতে তাদের ৬২৯৬ কোটি টাকা ক্ষতি হলো জানতে হলে পড়তে থাকো আর্টিকেলটি
পরিমাপ খুব গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয় এ যেমন কাঠের জিনিস পত্র তৈরীর ক্ষেত্রে সামান্য ১ ইঞ্চি ভুল হলেই সমস্ত জিনিসটা নষ্ট হয়ে যেতে পারে। ১৯৯৯ সালে নাসার ক্ষেত্রে ঠিক এমনি একটি ভুল হয়।যায় জন্য তাদের এতো বড় ক্ষতি হয়। তবে এই বিষয় বলার আগে পরিমাপের ইতিহাস সম্পর্কে আপনার কিছু জানা প্রয়োজন
১৮ শতকের আগে পৃথিবীতে পরিমাপের নিদিষ্ট কোন একক ছিল না। যার যেভাবে পরিমাপ করার ইচ্ছে সেটিকে সেভাবেই পরিমাপ করতো। যেমন ধরেন একজন একটি অর্ধ ইটের পরিমাপকে ১ কেজি ধরে আপনাকে ১০ কেজি চাল পাঠালো। কিন্তু আপনার কাছে একটি সম্পন্ন ইটের ওজন ১ কেজি তাহলে আপনি ঐ লোকের কাছে থেকে মূলত ৫ কেজি চাল পেলেন। পরিমাপের এমন সমস্যা জন্য ১৭৯০ সালে ফ্রান্স তৈরি করে একটি আদর্শ একক বিশিষ্ট পরিমাপের নিয়ম। এই নিয়মকে বলা হয় মেট্রিক সিস্টেম।এ নিয়ম আবিস্কারের পর ফ্রান্সের পরিমাপ সমস্যা কেটে যায়।
এর তারা এই নিয়ম সারা পৃথিবীতে ছড়িয়ে দেয়। কয়েক বছরের মধ্যে স্পেন, নেদারলেন্ড,অস্ট্রেলিয়া সহ ইউরোপের আর অনেক দেশ পরিমাপের এই পদ্ধতিকে গ্রহন করে নেয়। এছাড়া ১৯১৮ সালে রাশিয়া,১৯২০ সালে জাপান এবং ১৯৪৭ সালে ভারত এই পদ্ধতিকে বেছে নেয়। এ সময়ে মধ্যে পৃথিবীতে প্রায় সব দেশি মেট্রিক পদ্ধতিতে পরিমাপ করা শুরু করে। কিন্তু ইউনাইটেড কিংডম যেন তাদের ফুড পাউন্ড পদ্ধতি বেশি পছন্দ করতো। তারা সহজে এই পদ্ধতি ছাড়াতে চায়নি। অবশেষে ১৯৬৫ সালে ইউনাইটেড কিংডম ও মেট্রিক পদ্ধতি গ্রহন করে নেয়।
এবং ১৯৭৩ সালে কানাডা, নিউজিল্যান্ডের, আইল্যান্ডে এবং অস্ট্রেলিয়া ও মেট্রিক পদ্ধতি বেছে নেয়। এবং এই সিরিজে সব শেষে নাম লেখান বর্তমান বিশ্বে সবচেয়ে এগিয়ে থাকা দেশ আমেরিকা। ১৯৭৫ সালে সিডিউল গভর্নমেন্ট মেট্রিক পদ্ধতিকেই পরিমাপের অফিসিয়াল পদ্ধতি হিসেবে ঘোষনা দেয়। এরপর সবধরনের সরকারি কাজে মেট্রিক পদ্ধতিকেই ব্যবহার করা হয়। কিন্তু আমেরিকানরা বেশ এক ঘেরে সরকারি প্রতিষ্ঠানে মেট্রিক পদ্ধতি ব্যবহৃত হলেও বেসরকারি সব কাজে এবং অধিকাংশ লোকজন এখনো তাদের পুরনো ফুড পাউন্ড পদ্ধতিকেই ব্যবহার করে আসছে। আর এটাই হলো সেই সমস্যা যায় জন্য নাসা তার হাজার কোটি প্রজেক্ট নষ্ট হয়।চলুন শুনা যাক আসল গল্প
১৯৯৯ সালে নাসা মঙ্গলে সেটেলাইট পাঠাবে বলে ভাবে তখন সেটেলাইটের সকল মাপ যোকে ঠিক করে তাদের নাসার জন্য কাজ করা Lockheed Martin কাছে সেটেলাইটের ব্লু পিন্ট পাঠায়। নাসা তাদের যাবতীয় হিসেবে মেট্রিক পদ্ধতিতে করলেও Lockheed Martin কিন্তু সেই ফুড পাউন্ড পদ্ধতিতে ধরেই কাজ করতে থাকে। ফলে সেটেলাইটের আকার ও কার্যক্ষমতায় পরিবর্তন আসে। অন্য দিকে নাসা ভেবে নেয় সবকিছু তাদের হিসেব অনুসারে করা হয়েছে।
পরে যখন রকেটের মাধ্যমে সেটেলাইটটি লঞ্চ করা হয় তখন হিসাব অনুযায়ী সেটেলাইটটি মঙ্গলের বিশ্ব থেকে ১৫৭ কিলোমিটার উপরে উড়বার কথা থাকলেও এটি মঙ্গলের ৫৭ কিলোমিটারের মধ্যে চলে যায় এবং সাথে সাথে এটি বিস্ফোরিত হয়ে ধ্বংস হয়ে যায়। বিষয়টি নিয়ে অনুসন্ধানে বেড়িয়ে আসে পরিমাপের এই জলজ্যান্ত কারণ। আর এই সামান্য ভুলের জন্য নাসা তার ২৬৯৬ কোটি টাকার প্রজেক্টে সম্পন্ন ব্যর্থ হয়। আর এটাই ছিল সেই গল্প যেটা সামান্য পরিমাপের ভুলে ধ্বংস হয়ে যায় দীর্ঘ ১০ মাসের পরিশ্রম আর কয়েক হাজার কোটি টাকা