কিভাবে কথা বলবেন?কেন বলবেন? পর্ব ০১

Comments · 2094 Views

কিভাবে কথা বলবেন?কেন বলবেন? পর্ব ০১

প্রবাদ আছে- কম চিন্তাশীল ব্যক্তিরাই অধিক কথা বলেন। সত্যিই, ব্যক্তিত্বহীন মানুষের একটাই মারাত্মক অভ্যাস, তা হল- অকারণে বক বক করা। আলাপ শুরু করলে শেষ করতেই চায়না। এরা অন্যের বিব্রতবোধ নিয়ে মাথা ঘামায় না। এটা কখনো ঠিক না। অযথা না ফেনিয়ে কম কথা গুছিয়ে এমনভাবে বলা উচিত- যাতে বুদ্ধিমত্তার পরিচয় পাওয়া যায়।

কথা বেশি বলাতে যেমন বোকামি প্রকাশ পায়, তেমনি শ্রোতারও বিরক্তির উদ্রেক হয়। হ্যাঁ এবং না এই শব্দ দুটো যদিও ভাষার সবচেয়ে আদিও ছোট শব্দ এবং সব সময় ব্যবহার করতে হয়, অথচ এই শব্দ দুটো ব্যবহারের বেলায় অনেকক্ষণ ভাবতে হয়। কারণ শব্দের সঠিক ব্যবহারে আপনি যেমন বন্ধু লাভ করবেন।

তেমনি শব্দের অযথা-অযোগ্য ব্যবহারে বাড়িয়ে তুলবেন শত্রু। মোট কথা হল, বাজে কথা এবং বেশি কথা চিন্তাকে ঘোলাটে এবং ব্যক্তিত্বকে হালকা করে দেয়। যারা সারাক্ষণ শুধু বকবক করে নিজের কথাই বলেচলেন এবং যারা ঘুরেফিরে একই কথা বারবার বলেন, তাদের কেউ পছন্দ করে না। তাদের কাছ থেকে সবাই দূরে থাকতে চাই।

কাজেই কম কথা এমন ভাবে গুছিয়ে বলতে হবে- যাতে আন্তরিকতার পরশ থাকবে। নইলে কোকিল কন্ঠের মানুষটিও কাক বনে যাবে। জড়তার, লজ্জা ও সংকোচ থেকে পুরোপুরি মুক্ত থাকুন। অন্যদের সম্মান করতে শিখুন; সবার কাছে আপনার সম্মান ও গ্রহণযোগ্যতা বাড়বে। বাস্তব কারণে কখনো সত্য বলতে না পারলেও অসৎ মিথ্যা বলবেন না, বরং নীরবতা অবলম্বন করা উত্তম।

জড়তা মানুষের এগিয়ে চলার পথে প্রধান বাধা। ভালো কিছু পেতে চাইলে আপনাকে এ বাধা অতিক্রম করতে হবে। কথা বলুন প্রাণ খুলে- জড়তা ছাড়া, স্পষ্ট উচ্চারণ টা অনেক বেশি জরুরী। অধিকাংশ পেশাদার ব্যক্তিত্বই কথা বেচে চলেন। 60 শতাংশ কাজ ৪০% কথা চাই। কাজের সমর্থনে কথা না বললে কেউ কাজকে গুরুত্ব দেবে না। সবাইকে আন্তরিক সম্ভাষণ জানান; হাসিমুখে কথা বলুন; ফলে তাদের সঙ্গে আপনার ঘনিষ্ঠতা বাড়বে।

এমন অনেক মানুষ আছেন- যারা অনায়াসে সকলের সঙ্গে মিশতে পারেন। দেখা যায়, প্রতিটি মানুষই তাকে বেশ পছন্দ করছে। সেই লোকটিও অনায়াসে সবার মন জয় করে নিচ্ছেন। একটু বিশ্লেষণ করলেই বুঝতে পারবেন, মানুষের হৃদয় জয়ের জাদু- যা ইচ্ছা করলে আপনি অনুসরণ করতে পারবেন।

কথা বলার সময় প্রতিটি শব্দ স্পষ্ট করে উচ্চারণ করবেন। কথাকে যিনি শিল্প করে গড়ে তুলতে পারেন তিনিই বাগ্মীর মর্যাদা পান। কথা বলতে শিখুন সচেতনভাবে- শুধু মনের ভাব প্রকাশ করার জন্য নয়, অন্যকে প্রভাবিত করার জন্য। কথার মধ্যে যেন বক্তব্য থাকে এবং বক্তব্যের মধ্যে যেন জোর থাকে।

কথায় চিড়া ভেজে না সত্যি, কিন্তু মানুষের মন বেজে। মিনমিন করে কথা বলবেন না। একবার বলা হয়ে গেলে কোন কথা আর ফিরিয়ে নেওয়া যায় না। তাকে নিয়ন্ত্রণ করুন। জ্বালা ধরানো কথা বলে আপনি নিজে তাৎক্ষণিক সন্তুষ্টি লাভ করেন, কালক্রমে তার থেকে অনেক বেশি মূল্য দিতে হয়।

অধস্তন কর্মীরা কথা বলার আগে কখনো কথা বলবেন না। আমি যত বেশি চুপ থাকব অন্যরা তত তাড়াতাড়ি কথা বলবেন। যখনই তারা কথা বলবেন তখনই আমি তাদের আসল উদ্দেশ্য বুঝতে পারব।

আমরা যখন বাসা বা বন্ধুদের সাথে কথা বলি তখন আমরা হড়বড় করে সব কথা অনেক দ্রুত বলে ফেলি। এখন থেকে একটু ধীরে প্রত্যেকটা শব্দের উপর পর্যাপ্ত জোর দিয়ে কথা বলার চেষ্টা করুন। এতে করে আপনার কথা সবাই প্রথমবারের বুঝবে এবং আপনাকে দেখবে একটু আলাদা দৃষ্টিতে।
Comments