গল্প :- অবৈধ ~~~♥
.
লেখক:- #RJ_Nayem_Ahmed
.
পর্ব:-০৮~~[শেষ পর্ব]
.
.
.
তনয়ার বাবা এতোক্ষন চুপ ছিলো কিন্তু এখন আর চুপ থাকতে পারলো না। তিনি বললেন,,,,,,
তনয়ার বাবা: ও তোর নিজের মা না।
কথাটা শুনে সবাই অনেক অবাক হলো।
তনয়া: কি???(অনেক অবাক হয়ে)
তনয়ার বাবা: হ্যা রে মা। তোর জম্মের পর তোর মা মারা যায়। আর তারপর আমি ওকে বিয়ে করি।
আমি তোকে তোর মায়ের কথা জানাই নি কারণ আমি চাই নি তুই ওকে সৎ মা ভাবিস। আমাকে ক্ষমা করে দে মা।
তনয়া: না বাবা তুমি কোনো ভুল করো নি। কিন্তু মা আমি তো তোমাকে ছোট বেলা থেকে মা জেনেছি
মেনেছি তোমার ভালোবাসা পেয়েছি। কিন্তু কি এমন হলো যে তুমি আমার সাথে এমনটা করলে???
তনয়ার মা: কারণ আমি তোকে ঘৃণা করি প্রচন্ড ঘৃণা।
তনয়া: কেন মা?? আমি কি এমন করেছি যে তুমি আমায় ঘৃণা করো???
তনয়ার মা: আমাকে একদম মা বলবি না। তোর কারণে আমি আজ মা হওয়ার সুখ থেকে বচ্ঞিত।
তনয়া: কি বলছো এসব মা?? আমি কি করেছি???
তনয়ার মা: বিয়ের পর তোকে আমি নিজের মেয়ের মতোই দেখতাম। কিন্তু তোর যখন তিন বছর বয়স তখন আমি পাচ মাসের প্রগনেন্ট। তখন তুই খেলতে গিয়ে ম্যান হোলের পাশে চলে যাস।
তখন দৌড়ে তোকে বাচাতে গিয়ে আমি পরে যাই।
তখন আমার বাচ্চাটা নষ্ট হয়ে যায় আর সাথে সাথে আমি মা হবার ক্ষমতাও হারাই।
তখন থেকেই ভেবে নিয়েছি তুই আমাকে ঠিক যে পরিমাণ কষ্ট দিছোস তার তিনগুন তোকে আমি ফিরিয়ে দিবো। তোকে আমি একেবারে মারতে মারতাম। কিন্তু তোকে আমি রোজ রোজ কষ্ট দিয়ে তিলে তিলে মারতে চেয়েছিলাম। যেমনটা এতোটা বছর ধরে আমি পাচ্ছি।
আর তার সুযোগটা তুই আয়াত সামান্য একটা ভুল করে দিয়ে দিলো। ভেবেছিলাম আয়াত হয়তো তোকে কাছে পাবার পর ছেড়ে দিবে কিন্তু ও তোকে পাগলের মতো ভালোবাসে। তাই আমি আয়াতকে অপহরন করাই।
এলাকায় তোর প্রেগন্সির খবরটা আমিই ছড়িয়েছিলাম। যাতে সবাই তোকে নষ্টা বলে। আমি তোর বাচ্চাটাকে কখনো মারতে চাই না।
সবসময় চেয়েছি বাচ্চাটা পৃথিবীতে আসুক আর সবাই তাকে অবৈধ বলুক। অবৈধ।
যখন লোকজন তোকে নষ্টা আর তোর বাচ্চাকে অবৈধ বলে তখন আমার খুব শান্তি লাগে। বিশ্বাস কর মনে হয় ২২বছর অপেক্ষার ফল পাচ্ছি।
প্রথমে আয়াতকে মারতে চাই নি পরে ভাবলাম ওকে মেরে ফেললে সারাজীবন তোকে অবৈধ নামক বোঝাটা বয়ে বেড়াতে হবে। আর আমি এটাই চায়েছিলাম।
তনয়া ওর মায়ের কথা শুনে যেনো বোবা হয়ে গেলো। পাথরের মতো দাড়িয়ে আছে।
কি বা বলার থাকে তখন, যখন সব থেকে কাছের মানুষ নিজের মা ধোকা দেয়। তখন কথা বলার অনুভুতিগুলো ভোতা হয়ে যায়। হারিয়ে যায় বলার মতো শব্দগুলো। তখন চোখ থেকে নিঃশব্দে ঝরতে থাকে কিছু নোনা তরল।
অফিসার তনয়ার মাকে এরেস্ট করতে চাইলে আয়াত বাধা দেয়।
আয়াত: অফিসার উনার প্রতি আমার কোনো অভিযোগ নেই।
সবাই অবাক দৃষ্টিতে আয়াতের দিকে তাকালো।
আয়াত: হ্যা আমি জানি উনি অন্যায় করেছে কিন্তু তবুও উনি তনয়ার মা। আর উনার উপর আমার কোনো রাগ নেই।
তনয়ার বাবা: কিন্তু আমার আছে,,,,তুমি হয়তো ওকে মাফ করতে পারো কিন্তু আমি না। কারণ আমি আমার মেয়েকে এতোগুলো দিন অসহ্য যন্ত্রনার মধ্য দিয়ে কাটাতে দেখেছি। তা তোমরা ভুললেও আমি ভুলবো না।
তনয়া: কিন্তু বাবা????
তনয়ার বাবা: কোনো কিন্তু নাই। আজকে আমি তোর কোনো কথাই শুনবো না। ওকে তোর জীবনে ভালোবাসার পরস দিতে এনেছিলাম। কিন্তু ও তো
তোর জীবনটাকে বিষের থেকে বিষময় করে দিয়েছে।
অফিসার ওকে নিয়ে যেতে পারেন।
পুলিশ তনয়ার মাকে নিয়ে চলে গেলো। সারাদিন সবাই অস্থির মধ্যে ছিলো। কারণ সবাই ভাবছে এটা হয়তো কোনো দুঃস্বপ্ন। যেটা ঘুম ভাঙ্গার সাথে সাথে ভেঙ্গে যাবে। কিন্তু আফসোস তা হবার নয়।
রাতে তনয়া জানালা দিয়ে বাইরের দিকে তাকিয়ে ছিলো। আয়াত রুমে ডুকে পিছন থেকে তনয়াকে
জড়িয়ে ধরে।
আয়াত: হেই বিউটিফুল। সব ভুলে যাও। চলো সব নতুন করে শুরু করি আমরা।
তনয়া: পারবো কি???
আয়াত: পারবে না কেন?? আমি আছি না তোমার কাছে, তোমার পাশে, তোমার হৃদয়ে, তোমার অনুভুতিতে, তোমার সারাটা জুড়ে। যেমনটা তুমি আছো আমার সাড়াটা জুড়ে তাহলে কেন পারবে না???
তনয়া: হুম ঠিক বলেছো। তুমি থাকলে সব পারবো।
আয়াত: তনয়া!!!
তনয়া: হুম।
আয়াত: আই লাভ ইউ,,লাইক এ ম্যাড
তনয়া: আই নো। এখন ভালোবাসা অনেক হয়েছে যাও ঘুমাও। রাত কম হয় নি। আমি অনুর কাছে যাচ্ছি।
আয়াত: অনুর কাছে কেন???
তনয়া: ঘুমাতে,,,
আয়াত: কেন?? আমার খাটে কি জায়গা নাই???
তনয়া: বেহায়া!!! বেশরম!!!
আয়াত: যাহ এমন কি বললাম???
তনয়া: কি বলেছিলে মনে নাই?? যতোদিন না পারিবারিকভাবে বিয়ে হবে ততোদিন একদম ভুল করবে না।
আয়াত: তো আমি কি ভুল করতে বলেছি নাকি??? (দুষ্টুমি করে)
তনয়া: অসভ্য,,,যাও ঘুমাও।
আয়াত: উওরটা দিয়ে যাও।
তনয়া: আই ডোন্ট লাভ ইউ।
আয়াত: বাট আই লাভ ইউ টু বিউটিফুল।
পরেরদিন সকালে তনয়ার বাবা বলছে,,,,
আজ তনয়াকে তার বাড়ি নিয়ে যাবে।
আয়াত: কেন???
আয়াতের বাবা: ওরে গাধা। বাড়ি না নিলে বৌমাকে বিয়ে করে ঘরে নিয়ে আসবি কি করে??
আয়াত: ও হ্যা। তা কবে নিয়ে আসবো??
আয়াতের বাবা: বেহায়া। পরশু শুত্রবার। আমি চাই আমার নাতী পৃথিবীতে আসার আগে ওর মাথা থেকে অবৈধ নামক কলঙ্কটা মুছে যাক।
আয়াত: হ্যা বাবা। একদম ঠিক বলছো।
তারপর মুটামুটি ঘরোয়া আনুষ্ঠানিকভাবে বিয়ে হয়ে গেলো। তনয়া অসুস্থ বলে বেশি জাকজমক করে নি।
অনু তনয়াকে আয়াতের রুমে নিয়ে আসলো। রুমটা খুব সুন্দরভাবে সাজানো।
আয়াত: তোমাকে খুব সুন্দর লাগছে বিউটিফুল।
তনয়া লজ্জা পেয়ে মাথা নিচু করে ফেললো।
আয়াত: লজ্জা পেলে কাজ হবে না আমার উওরটা চাই হুমমম।
তনয়া: দিবো না।
আয়াত: তাহলে কিন্তু আবার চলে যাবো।
তনয়া আয়াতের মুখটা চেপে ধরে,,,,,
তনয়া: ঠেং ভেঙ্গে খোড়া করে ঘরে রেখে দিবো।
আয়াতকে জড়িয়ে ধরে আই লাভ ইউ টু।
তারপর সারারাত মিলে দুজনে গল্প করলো। দুজনের মনে যে হাজারো কথা জমে আছে। জমে আছে অনেক ঝগড়া,,ভালোবাসা,
,খুনসুটি।
তার কয়েকদিন পর ওদের কোল জুড়ে আসলো ছোট একটা পরী।
পরীটাকে এখন কেউ অবৈধ বলতে পারবে না। কারণ পরীটা আয়াত আর তনয়ার ভালোবাসাকে মনের ডোরে বেধে দিয়েছে। পরীটার উপর থেকে মুছে গিয়েছে অবৈধ নামক কলঙ্ক।