গল্প :-
-----""অহংকারী মেয়ে""
.
লেখক:- #RJ_Nayem_Ahmed
.
★------পর্ব :- ০৮ ~~"শেষ পর্ব"
.
.
মোবাইল বেড় করে দেখে জুইয়ের নাম্বার থেকে ফোন আসছে।শান্ত মোবাইল রিসিভ করার সাথে সাথে কেউ একজন বলে ভাইয়া তারাতারি সদর হসপিটালে এসো বলে ফোন কেটে দেয়।
শান্ত বুঝতে পেরে তখন পাগলের মতো হয়ে যায়। তোর কারনে জুইয়ের এমন টা হয়ছে, যদি
আমার জুইয়ের কিছু হয় তাহলে আমি তোকে মেরে ফেলবো বলে শান্ত তারাতারি হসপিটালের উদ্দেশ্যে বের হয়।
এদিকে এনি ও নিজের সব কিছু বুঝতে পেরে নিজেই নিজের প্রতি ঘৃনা জন্মাচ্ছে।
এনি ও হসপিটালের উদ্দেশ্যে বের হয়।
শান্ত হসিপিটালে গিয়ে দেখে জুইয়ের বাবা ডক্টরের সাথে কথা বলতাছে। শান্ত ও তাদের মাঝে যায়।
-আসাদ সাহেব আপনার মেয়ের রক্তের গ্রুপ এবি+ , রক্ত তারাতারি সংগ্রহ করুন না হলে খারাপ কিছু ঘটতে পারে...
.
জুইয়ের বাবা আর শান্ত রক্ত খুজার জন্য আপপ্রাণ চেষ্টা করছে...কিন্তু কোথাও রক্ত পাচ্ছে না...
এদিকে এনি জুইয়ের কাছে যায়..গিয়ে দেখে জুইয়ের করুণ অবস্থা...এটা থেকে এনি চোখের পানি ধরে রাখতে পারে না..কান্না করতে শুরু করে দেয়..বার বার এটাই মনে করছে এগুলোর জন্য সে ই দায়ী..শুধু তার জন্যই এটা হয়েছে....
কয়েক ঘন্টা পর দেখছে রুমের বাইরে অনেকটাই শরগোল হচ্ছে...
বাইরে বের হয়ে দেখছে..শান্ত ডাক্তার সাহেবের হাত ধরে কান্না করছে...
-ডাক্তার সাহেব যে করেই হোক আমার জুইকে আমার কাছে ফিরিয়ে দিন...আপনার কাছে চিরজীবণ ঋনী থাকবো...plzz ডাক্তার সাহেব... (শান্ত)
-হ্যাঁ, আমরা তো সেই চেষ্টাই করছি...কিন্তু রক্ত ছাড়া পরিস্থিতি হাতের বাইরে চলে যাবে...এভাবে রোগিকে বেশিক্ষণ রাখা যাবে না...একটু দ্রুত রক্ত সংগ্রহ করার ব্যবস্থা করেন...
.
তখন শান্ত ফ্লোরে বসে পড়ে..কারণ সে সবজায়গায় রক্ত খুজেও পাই নি...
.
এনি তখন বুঝতে পারে জুইয়ের রক্ত লাগবে...
হঠাৎ জুই বলে উঠলো..
-ডাক্তার সাহেব আপনি আমার রক্ত নিন.... (এনি)
(এনি জানে তাদের দুজনেরই রক্ত একই গ্রুপের...কলেজে থাকাকালীন তারা একদিন পরীক্ষা করেছিলো..)
-আমার রক্ত এবি+ , আমি রক্ত দিবো (এনি)
-একজন মানুষ দিয়ে রক্ত হবে না (ডাক্তার)
-মানে?
-৩ব্যাগে লাগবে
-আমার থেকে নিন, আমি দিবো
-স্যরি ম্যাম, আমরা পারবো না
-কেনো পারবেননা?
-একজন রোগির জন্য আরেকজন মারতে পারি না
-আরে নিন বলছি
-আমরা পারবো না
-তাহলে রক্ত কি এখন আপনার বাবা দিবে? আমি বলছি আমার রক্ত নেন এর থেকে একটু ও বেশি বুঝবেননা
-তাহলে এখানে একটা স্বাক্ষর করেন।
-এনি তখন স্বাক্ষর করে
-জুইয়ের মা-বাবা এনির দিকে আনমনে চেয়ে আছে আর চোখের পানি ফেলছে।
এনি সবকিছু করে রক্ত দেওয়ার জন্য রুমে ডুকে।রুমে ডুকে কেবিনে দেখতে পায় জুই লম্বা হয়ে শুয়ে আছে আর নাকে মুখে অক্সিজেন লাগিয়ে রাখছে।
জুইয়ের এমন পরিস্থিতি দেখে এনির চোখে আবার পানি চলে আসে।
এনি অস্ফুট শব্দে বলে এই জুই দেখ আমি এসে গেছি...দেখ তোর best friend হয়েই এসেছি... বলে ঠোটে বাকিয়ে কান্না করে দেয়।
এনির খুব ইচ্ছা হচ্ছে জুইয়ের মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে ।
ডাক্তার সাহেব এসে এনির শরীর থেকে রক্ত নিতে থাকে।
এনির শরীর থেকে ৩ব্যাগ রক্ত নেওয়ার পরে আল্লাহর রহমতে তার শরীরের সবকিছু এখনো ঠিকঠাক আছে।
রক্ত নেওয়ার পরে এনিকে কতক্ষণ শুয়ে থাকতে বলে।
ঐদিকে জুইয়ের অপারেশনের কাজ চলছে।
এনি শুয়ে শুয়ে.....
হ্যা আল্লাহ তুমি আমার bestu কে আমার কাছ থেকে কেড়ে নিও না...তার থেকে আমাকে তোমার কাছে নিয়ে নাও..তবুও আমার bestu কে বাঁচিয়ে দাও...সব দোষ আমার তুমি আমাকে শাস্তি দাও.. এসব মনে মনে বলে চোখ ভিজিয়ে ফেলে। (এনি)

এনি কেবিন থেকে উঠে বাহিরে গিয়ে দেখে শান্ত ভিষন্ন মনে বসে আছে।
কিন্তু এনি খুব দূর্বল, ঠিক করে চলতেই পারছে না...শান্তকে দেখে শান্তর কাছে যেতেই মুখ থুবড়ে ফ্লোরে পড়ে যায়....
শান্ত এটা দেখে দৌড়ে এনির কাছে আসে...& এনিকে তুলে মাথাটা কোলের উপর নেয়..
এনি তখন একটা স্বস্তির নিশ্বাস ফেলে শান্তর চোখের দিকে তাকিয়ে থাকে..এনি শান্তর চোখে রাগ আর দেখতে পাচ্ছে না...এখন শান্তর চোখে মায়া দেখতে পাচ্ছে....♥
.
তারপর এনিকে শান্ত রুমে নিয়ে যায়...এবং বলে...
.
-জুই এখন কেমন আছে?(শান্ত)
-অপারেশন থিয়েটারে আছে আর বাকিটা আল্লাহ জানে।
এমন সময় ডাক্তার বের হয়।
-ডাক্তার সাহেব এখন কি অবস্থা?(জুইয়ের বাবা)
-আল্লাহ্ রহমতে কোনো সমস্যা হয় নাই। তখন সবার মুখে অদ্ভূত একটা হাসির আভা ফুটে উঠছে।
শান্ত ডাক্তারকে গিয়ে জড়িয়ে ধরে কান্না করে দেয়।থ্যাংকস ডাক্তার সাহেব।
-ওয়েলকাম
-এখন কি দেখা করা যাবে?(শান্ত)
-না ৭-৮ ঘন্টা পরে দেখা করতে পারেন
-ওকে
রাত ১১ টার দিকে জুইয়ের জ্ঞান ফিরে।
প্রথম ওর মা-বাবা দেখা করে তারপরে শান্ত যায়।
শান্ত যাওয়ার পরে জুই চোখ দিয়ে পানি ছেড়ে দেয়। শান্ত গিয়ে জুইয়ের মাথার কাছে বসে কপালে হাত দিয়ে....
-এখন কেমন লাগছে?(শান্ত)
-হুমম, ভালো(জুই)
-নিজের শরীরের কোনো যত্ন নেও নাই কেনো?
-যে শরীরের খেয়াল রাখার কথা সে ই তো কাছে নাই
-কে বলছে কাছে নাই? এই তো আমি বলে জুইয়ের কপালে চুমু খায়।
দুজন গল্প করতে করতে শান্ত সবকিছু বলে দেয়....
.
তখন এনি রুমে প্রবেশ করে।
এনি এসে জুইয়ের পাশে এসে বসে হাউমাউ করে কান্না করে দেয়।
-জুই বইন আমাকে মাফ করে দিস,আমি কেনো এমন হয়ে গেছিলাম আমি নিজেই জানিনা বলে কান্না করতে থাকে।(এনি)
-আরে কি করছিস কি?(জুই)
-আমি খুব খারাপ তাই না রে? যে মেয়েটার সাথে আমি ক্লাস ওয়ান থেকে পড়ালেখা করি তার সাথে কিভাবে এসব করলাম। জুই আমাকে ক্ষমা করে দে।
-আরে এসব কি করছিস? আমি না তোর বেস্টু
-এটা আমার মনে ছিলো না রে।
তোর মতো মেয়ের সাথে আমার এসব করা ঠিক হয় নাই।
-আচ্ছা এসব বন্ধ করবি নাকি না?
-শান্ত তোকে খুব ভালোবাসে,এতদিন ওর সাথে থাকছি ঠিক ই কিন্তু একদিন ও বিছানা শেয়ার করা হয় নাই। এই শান্ত শোন জুইরে কিন্তু অনেক অনেক ভালোবাসবি আর এই বছরের মধ্যে প্রেগন্যান্ট বানাবি বলে এনি দাড়িয়ে যায়,
আর এই শান্ত এখন অন্তত একটা হাসি দে,তোর হাসি মুখ অনেক দিন হয় দেখা যায় না।
-শান্ত তখন মুচকি হেসে কান্না করে দেয়।অপরদিকে জুইয়ের ও একই অবস্থা।
.
এগুলো বলেই এনি চলে গেলো...চোখে তার পানি..
এগুলো কতো যে কষ্টে বলেছে কেউ সেটা না বুঝলেও জুই ঠিকই বুঝেছে...জুই এনিকেই দেখেই বুঝতে পেরেছে এনি কতটা change হয়ে গেছে আর কতটা শান্তকে মন থেকে ভালোবাসে....!!
.
তারপর,
-শান্ত তোমার কাছে একটা জিনিস চাইবো দিবে..? (জুই)
-আরে....তুমি জান চাইলেও দিয়ে দিবো... (শান্ত)
-তুমি এনিকে মেনে নাও (জুই)
-কিহ্......তুমি এসব কি বলছো..! পাগল হয়ছো..?
পারবো না..আমি তোমাকেই চাই.. (শান্ত)
- তুমি কিন্তু দিতে চাইছো.এখন না বলছো, এটা ঠিক না...
তারপরও তোমার সাথে এনির বিয়ে হয়ে গেছে & এনি আমার best friend বোনের মতো...সে সব কিছু না বুঝে এগুলো করে ফেলেছে..
আর এখন দেখো তোমাকেই পাগলের মতো ভালোবাসে, ওর চোখে তোমার জন্য ভালোবাসা ছাড়া এক বিন্দুপরিমানও অহংকার নেই...
তাছাড়াও আমার জীবণটাও তো সেই ফিরিয়ে দিলো...এতোকিছুর পরও কিভাবে আমি তার সাথে এমনটা করবো..!
আমি কখনই পারবো না...
হ্যাঁ আমি তোমাকে পাবো না ঠিক আছে...কিন্তু তোমাকে ভালোবেসে যাবো...আর এই ভালোবাসাতে পাওয়ার আকাঙ্খা থাকবে না... (জুই)
জুই শান্তর কাছে হাত জোর করে এগুলো বলতে থাকলো
শান্তর চোখ থেকে পানি গড়িয়ে পড়ছিলো আর জুইও কান্না করছিলো..
এক পর্যায়ে শান্তকে মানিয়ে নিতে পারলো জুই.....
.
এদিকে,
এনি রাস্তায় বের হয়ে ল্যাম্পপোস্টের আলোতে হাটতে থাকে আর ভাবতে থাকে,আমি তো শান্তকে প্রথম ভালোবেসে বিয়ে করিনি, জুইয়ের সাথে রাগারাগি করে এসব হয়ে গেছে। কিন্তু এখন তো সত্যিই শান্তকে ভালোবাসতাম।
থাক ভালোবাসলে কি সবাইকে পেতে হবে, এমন কোনো কথা আছে নাকি? আমি না হয় আমার বেস্টু টার দিকে তাকিয়ে একটু সেক্রিফাইস করলাম।
আল্লাহ তুমি তাদের সুখে রাইখো বলে এনি ল্যাম্পপোস্টের আলোতে হাটতে থাকে।
.
#কিছুদিন পর...
.
এনি দেখছে শান্ত তার সাথে আর তেমন খারাপ ব্যবহার করছে না, তবুও এনি তার অধিকার নিয়ে কাছে যাচ্ছে না...শান্তর এমন পরিবর্তন দেখে চিন্তিত হলেও কিছু বুঝতে পারছে না...
.
একদিন এনির ফোনে কল আসে....কলটা হচ্ছে জুইয়ের....
-hmm...dost কেমন আছিছ (এনি)
-অনেকটাই ভালো আছি রে....তুই কেমন আছিছ..? (জুই)
- আছি মোটামোটি ভালো (এনি)
-তোর সাথে কিছু কথা ছিলো.. (জুই)
-hmm...বল..! (এনি)
-ফোনে না...আজ বিকেলে একটু দেখা কর...! (জুই)
-আচ্ছা ঠিক আছে... (এনি)
এনি একটু চিন্তিত হয়ে পড়লো..কি বলতে চাই জুই..! আবার কিছু সমস্যা হইলো নাকি...!
এনি আর জুই বিকেলে একটা পার্কে দেখা করলো...
-কিরে কখন আসলি..! (জুই)
-এইতো 15 মিনিট হলো.... (এনি)
-sorry re dost...late হয়ে গেলো...( জুই)
-it's ok.. (এনি)
জুই দেখলো এনি অনেকটাই বিষন্ন হয়ে আছে তবুও হাসি খুশি থাকার অভিনয় করছে...জুই সব বুঝতে পারছে...
এভাবে অনেকটা সময় কাটানোর পর বাসায় যাবে এনি বিদায় নিয়ে চলে আসবে তখনই জুই এনিকে পেছন থেকে ডাক দেয়...
- এনি শোন..!! (জুই)
-এনি পেছন ঘুরে বলে..কিছু বলবি..? (এনি)
- Hmm...আসল কথাটাই তো বলা হয় নি.. (জুই)
- Hmm...বল..! (এনি)
- Thank u... (জুই)
- কেনো..!
- আমার জন্য এতো কিছু করার জন্য....
- আরে পাগলি তুই আমার brstu না...!! এটা তো আমাকে করতেই হবে...।
(এটা বলে দুজনই একটু হাসে...)
- আরেকটা কথা. ছিলো.! (জুই)
- আবার কি কথা...! (এনি)
-কথাটা রাখতে হবে কিন্তু..! (জুই)
-hmm...অবশ্যই রাখবো...হাজার হোক তুই আমার বোনের মতো...বল..! (এনি)
- শান্তকে সারাজীবণ আগলে রাখতে পারবি না...! (জুই)
(এনি এটা শুনেই একেবারে থমকে দাড়িয়ে যায়...)
- কিহ্.....! এগুলো কি বলিস...! (এনি)
- hmm...আমি ঠিকই বলছি....শান্তকে তুই আগলে রেখিস dost... (জুই)
(এনি এটা শুনে দৌড়ে গিয়ে জুইকে জড়িয়ে ধরে কান্না শুরু করে দেয়...)
-আরে পাগলি কাদিস কেনো...! দেখ ছোট বাচ্চাদের মতো কাদিস না...!
তুই কিছু না বললে আমি কিছু বুঝি না মনে বলছে...!
আমি সব বুঝি...আর আমার বোনটার জন্য এইটুকু স্যাক্রিফ্রাইজ করতে পারবো না..?
অবশ্যই পারবো....এখন থেকে শান্ত তোর...শুধুই তোর... (জুই)
(এদিকে এনি জুইকে জড়িয়ে রেখে কেদেই যাচ্ছে...কিছু বলার ভাষা নেই তার....)
((মনে রাখবেন...সম্পর্কে স্যাক্রিফ্রাইজ জিনিসটা অতি জরুরী জিনিস))
.
১৫ দিন পরে সকলের সম্মতি নিয়ে আবার ধুমধাম করে শান্ত আর এনির বিয়ে ঠিক হয়।
বিয়েটা জুই থেকেই সম্পন্ন করে.....
.
এনি তার মা-বাবাকে সালাম করে।
জুই এনির দিকে চেয়ে সামনে আসতে বলে। জুই এনিকে ধরে বাসর রুমে নিয়ে যায়।
সব ঝামেলা শেষ হওয়ার পরে রাত ১১.৩০ মিনিটের দিকে শান্ত রুমে গিয়ে দেখে এনির সাথে জুই হেসে হেসে গল্প করতাছে।
শান্ত যাওয়ার পরে জুই দাড়িয়ে যায়।
-তোদের দুজনকে বেশ মানিয়েছে।
সারাজীবন এইভাবে থাকিস।
শুভরাত্রী বলে জুই রুম থেকে বের হয়ে যায়।
জুই রুম থেকে বের হওয়ার পরে শান্ত রুম লক করে এনির কাছে আসার পরে এনি শান্তকে জড়িয়ে ধরে ঠোটের স্পর্শ দিয়ে কান্না করতে থাকে।
শান্ত এই কান্নাতে কোনো বাধা দিচ্ছে না কারন এটা কোনো কষ্টের কান্না না, এটা সুখের কান্না, এর অনুভূতি অন্যরকম।
শান্ত এনির মাথা টা উঠিয়ে কপালে চুমু দিয়ে বুকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে।
জনম জনম টিকে থাকুক এমন পবিত্র ভালোবাসার বন্ধন।
.
ভালো থাকবেন সবাই
আল্লাহ হাফেজ..
.
.
♥-----"""The End""-----♥