ভারতের আধ্যাত্মিক গুরু রাম রহিমের ১০ বছরের কারাদণ্ড:
ধর্ষণের অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় ভারতের আধ্যাত্মিক গুরু রাম রহিমকে ১০ বছরের কারাদণ্ড দিয়েছে আদালত। এর অাগে নিরাপত্তাজনিত কারণে রাম রহিমের সাজা ঘোষণার জন্য জেলখানাতেই বসানো হয় আদালত।
আদালতে সিবিআইয়ের আইনজীবী তার যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দাবি করেন। তবে রাম রহিমের আইনজীবী তাকে নির্দোষ দাবি করে মুক্তি দেওয়ার আবেদন করেন। আদালত উভয় পক্ষকে ১০ মিনিট করে শুনানির সময় দেন। উভয় পক্ষের শুনানি শেষে আদালত রায় ঘোষণা করেন।
আদালতে রায় ঘোষণার সময় কাঁদছিলেন রাম রহিম। এক পর্যায়ে তিনি ভেঙে পড়েন এবং কৃতকর্মের জন্য ক্ষমা চান। আদালতে বিচারকের নির্দেশের পর পিন পতন নিরবতা নেমে আসে। সে সময়েই রায় ঘোষণা করা হয়।
প্রসঙ্গত, ১৫ বছর আগে দুই শিষ্যকে ধর্ষণের অপরাধে গত শুক্রবার রাম রহিমকে দোষী সাব্যস্ত করেন হরিয়ানা রাজ্যের পাঁচকুলায় সিবিআইয়ের বিশেষ আদালত।
সাজা ঘোষণা করেন, সিবিআইয়ের বিশেষ আদালতের বিচারক জগদীপ সিংহ। পাশাপাশি সরকার বিচারক জগদীপ সিংহের ব্যক্তিগত নিরাপত্তা বাড়ানোর ঘোষণা দিয়েছে।
রায় ঘোষণার আগে নিরাপত্তার স্বার্থে তাকে সরকারের একটি হেলিকপ্টারে করে উড়িয়ে নেওয়া হয় জেলখানায়। রোহতক শহর থেকে ১০ কিলোমিটার দূরের সানোরিয়া কারাগারের একাংশকে এজন্য আদালত হিসেবে ঘোষণা করা হয়। সেখানেই শাস্তির রায় শোনার অপেক্ষায় ছিলেন রাম রহিম।
এর আগে ভারতের সেন্ট্রাল ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (সিবিআই) একটি বিশেষ আদালত গত শুক্রবার রাম রহিমকে দোষী সাব্যস্ত করেন। আজ সোমবার দুপুরে তাঁর সাজা ঘোষণা করা হলো।
শুক্রবার রাম রহিম দোষী সাব্যস্ত হতেই তাঁর ভক্তরা ভারতের কয়েকটি রাজ্যে তাণ্ডব চালায়। হরিয়ানার পঞ্চকুলায় ভক্তদের লাগামছাড়া সহিংসতায় নিহত হন ৩৮ জন। আহত হন ২৫০ জনেরও বেশি।
রাম রহিমের সাজা ঘোষণাকে কেন্দ্র করে হরিয়ানার রোহতক শহর অনেকটা যেন দুর্গে রূপ নেয়। শুধু পুলিশই নয়, সতর্ক অবস্থানে রাখা হয় সেনাবাহিনীকেও। তারা শহরে এক ঘণ্টার মধ্যে মোতায়েনের প্রস্তুতি নেয়।
এ রায় উপলক্ষে পুলিশ জানিয়েছে, কেউ সহিংসতার চেষ্টা করলে তাকে সতর্ক করা হবে। সতর্কতায় কর্ণপাত না করলে গুলি করা হবে। রোহতকের পুলিশপ্রধান জানিয়েছেন, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের ব্যাপারে রাজ্যকে সহায়তা করছে কেন্দ্র। রোহতকে কোনো যানবাহন ঢুকতে দেওয়া হচ্ছে না। রোহতকমুখী সব বাস ও ট্রেন আজ বন্ধ থাকবে। রোহতক পুলিশের উপকমিশনার অতুল কুমার বলেছেন, তাঁরা শহরের কোথাও কাউকে কোনো ধরনের ঝামেলা পাকাতে দেবেন না। কেউ আইন ভাঙলে বা সহিংস কর্মকাণ্ডে জড়ালে তার দায়ভার সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিকেই নিতে হবে। কেউ গোলমাল পাকালে প্রথমে তাকে সতর্ক করা হবে। এই সতর্কতা আমলে না নিলে গুলি করা হবে।
কারাগারের ভেতরে থাকা একটি বিশ্রামাগারে (রেস্টহাউস) আদালতের কার্যক্রম পরিচালনা করা হয়। এর আগেই বিচারকের সব ধরনের নিরাপত্তা বিধান করতে কেন্দ্র থেকে রাজ্য সরকারকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল।
রোহতক শহরে হাজারো পুলিশ ও আধা সামরিক সেনা মোতায়েন করা হয়েছে। প্রস্তুত রাখা হয়েছে সেনাবাহিনী। সহিংসতার আশঙ্কায় হরিয়ানার ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় সতর্ক অবস্থানে রয়েছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। বিভিন্ সড়কে প্রতিবন্ধকতা তৈরি করা হয়েছে। যানবাহন তল্লাশি করা হচ্ছে। রাম রহিমের ভক্তরা রোহতকে জোরপূর্বক প্রবেশের চেষ্টা করতে পারে বলে ধারণা করছে পুলিশ।
https://protidinbarta.com/bn/?p=650