গল্পটা কাল্পনিক হলেও চোখে পানি চলে আসবে।

>>>>>গল্প: বাবা মায়ের অপদার্থ ছেলে>>>>>>

বাবা -মায়ের অপদার্থ ছেলে হিসেবে পরিচিত আমি, অনেকদিন ধরে একটা চাকরি খুজতেছি but কপালে চাকরি জুটেনা আমার।

তাই বাবা বলে, তোর মতো অপদার্থের কপালে কখনো চাকরি জুটবেনা, সারাজীবন আমার ঘাড়ে চড়েই কাটিয়ে দিবি।

মুনে মুনে বললাম নিজের বাবা যদি এমন অভিশাপ দেই, তাহলে সারাজীবন কেন, সাত জন্মেও চাকরি পাবোনা আমি, আর বাবার কথার উওরে বললাম,
বাবা, চাকরি করতে গেলে পূর্ব অভিজ্ঞতা লাগে, আর নয়তো অনেক টাকা ঘুষ দিতে হয়। আচ্ছা তুমিই বলো বাবা, মানুষ কি জন্মের সময় অভিজ্ঞতা নিয়ে জন্মায়? আর সব চাকরি করতে যদি পূর্ব অভিজ্ঞতা লাগে, তাহলে তো আমাদের মতো কোন ছেলেই চাকরি পাবেনা, আগে চাকরিটা করতে দিলেই না তারপর অভিজ্ঞতা হবে, চাকরি না দিলে অভিজ্ঞতা হবে কি ভাবে? আর ঘুষ দিয়ে চাকরি করতে চাইলে তো তুমি টাকা দেবেনা।

বাবা:- কেন দেব টাকা? অনেক টাকা খরচ করে তোকে লেখাপড়া করিয়েছি কি ঘুষ দিয়ে চাকরি করার জন্য? একটা টাকাও ঘুষ দিবনা আমি।

আমি:- তাহলে বাবা আমি ব্যবসা করব, কিছু টাকা দেও।

বাবা:- ব্যাংকে কিছু টাকা জমা আছে, ঐগুলো তুলে ব্যবসা শুরু কর

আমি:- ঠিক আছে বাবা।

আর রাতে আমার বাসায় খবর এল, আমি মারাত্মক ভাবে জখম হয়ে হসপিটালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় আছি। কারন ব্যাংক থেকে টাকা তুলে ফেরার সময় ছিনতাইকারীর হাতে পড়ছিলাম আমি। আর পেটে ছুরি বসিয়ে সব টাকা নিয়ে পালিয়ে গেছে ওরা।

আর আমার বাবা আমার এ কথা শুনে জমি বিক্রি করে আমার অপারেশন করল। আর আমি সুস্থ হয়ে বাসায় যখন ফিরলাম, তখন বাবা বলল।

বাবা:- তুই শুধু অপদার্থই নস, তুই একটা অপয়াও বটে, তুই আমাকে পথে বসিয়ে দিলি।

আমি কিছু বললাম না, চুপ করে ভেতরে চলে গেলাম। বাবার অবস্থা টা আমি বুঝতে পারছি। আমাকে বকা দিয়ে যদি বাবা কিছুটা শান্তি পায়, তাহলে আমি বকা শুনতে রাজি আছি।

পরদিন বাবা আমাকে একটা প্রস্তাব করল, এলাকার একটা মেয়েকে অনেক টাকা যৌতুকের বিনিময়ে আমাকে বিয়ে করতে হবে। আর আমি বাবার এ কথায় রাজি হলাম না, কারন এ অন্যায় আমি করতে পারবো না। কিন্তু বাবার এক কথা, বিয়ে না করলে বাড়ি থেকে বেরিয়ে যেতে হবে।

বাবা কনেপক্ষকে কথা দিয়ে ফেলেছে। আর বিয়ের দিনতারিখও ঠিক করে এসেছে, কাল আমার বিয়ে।।তাই আমি বিয়ের দিন পালিয়েছিলাম, আর পরদিন বাসায় ফিরে আসলাম। কিন্তু বাবার এক কথা, বাড়ি থেকে এখন বেরিয়ে না গেলে বাবার মরা মুখ দেখতে হবে আমাকে, তাই আমি মুনে অনেক কষ্ট নিয়ে বাড়ি ছেড়ে চলে আসলাম।

আমি বাড়ি ছেড়ে শহরে এসে ঠাই নিলাম। আর শহরের একটা বাসায় লজিং থাকারর অফার পেলাম, ক্লাস ১০ পড়া একটা মেয়েকে আমার পড়াতে হবে।

শহরে আমার সময়টা ভালোই কাটতেছিল, আমি আরো কয়েকটা টিউশনি করে, মাসে বার থেকে পনের হাজার টাকা পেতাম, আর টিউশনির টাকাগুলো জমা করে, একদিন সব বাবার হাতে তুলে দেবে বলে সপ্ন দেখতাম।

ফ্যমিলি কে ছেড়ে চলে এসে আমার খুব কষ্ট হতো, বাবা-মা, ভাই- বন্ধু এরা সবাই কেমন আছে কে জানে। আর তাদের কথা মনে পড়লে মনটা খারাপ হয়ে যেত আমার, তবু অনেক আশা নিয়ে আমি বেঁচে আছি। আর আমি ভাবতাম বাবা একদিন নিশ্চয় তার ভুল বুঝতে পারবে।

এরই মধ্যে লজিং এ থেকে আমি যে মেয়েটাকে পড়াতাম, সে মেয়েটা আমার প্রেম পড়ে গেল। মেয়েটার নাম পাপ্তি। আমি যখন পাপ্তি কে পড়াতে বসতাম, তখন পাপ্তি একনজরে আমার দিকে তাকিয়ে থাকত, একদিন আমি পাপ্তি কে প্রশ্ন করলাম।

আমি:- কি ব্যাপার? আমার দিকে এইভাবে তাকিয়ে আছ কেন?

পাপ্তি:- স্যার, আমার মোটেও পড়তে ইচ্ছে করেনা।
আমি:- তো কি করতে ইচ্ছে করে?
পাপ্তি:- সারাক্ষণ আপনার দিকে তাকিয়ে থাকতে ইচ্ছে করে, ও স্যার, একটা কথা বলি
আমি:- বলো?
পাপ্তি:- স্যার, আজ বিকলে আমাকে নিয়ে একটু বাইরে ঘুরতে বের হবেন।
আমি:- না, তোমার বাবা-মা জানতে পারলে আমাকে আর এখানে থাকতে দেবেনা।
পাপ্তি:- মাকে ম্যানেজ করার দায়িত্ব আমার। আর বাবা এ কথা জানতে পারবেনা। আপনি শুধু রাজি কিনা বলেন?
আমি:- আচ্ছা ঠিক আছে।

বিকেলে আমারা বের হলাম। আর একটা পার্কে বসে বাদাম খেতে খেতে দু'জন আড্ডা দিতে লাগলাম, হঠাৎ পাপ্তির কি হল জানিনা, পাপ্তি উঠে গিয়ে অচেনা একটা মেয়ের মুখে চড় বসিয়ে দিল। তারপর আমাকে দেখিয়ে বলল, এই মেয়ে, তুই উনার দিকে এইভাবে হা করে তাকিয়েছিলি কেন? জীবনে কি কোন পুরুষ মানুষ দেখছনি? আর মেয়েটা অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে পাপ্তির দিকে, পরে আমি কাছে গিয়ে পরিস্থিতি সামাল দিলাম। মেয়েটাকে বুঝিয়ে, sorry বলে বিদায় করলাম।
তারপর পাপ্তিকে বললাম, মেয়েটার সাথে এ কাজটা কটা ঠিক হলো না।

পাপ্তি:- কেন স্যার? মেয়েটা আপনার দিকে হা করে তাকিয়ে থাকবে, আর আমি তা চেয়ে চেয়ে দেখব?
আমি:- আমার দিকে কোন মেয়ে তাকালে তোমার তাতে কি?
পাপ্তি:- আমার ওসব সহ্য হয়না স্যার। আমি আপনাকে ভালোবাসি।

পাপ্তির এ কথা শুনে আমি ঠাস করে একটা চড় বসিয়ে দিলাম তারপর বললাম, পাপ্তি আমি তোমার স্যার, আর এ কথা তুমি ভুলে যেওনা।
পাপ্তি:- আমি এতকিছু বুঝিনা, আমাকে মারেন কাটেন, যাই করেন, আমি শুধু আপনাকে চাই। এই কথা বলে কান্না করতে করতে পাপ্তি দৌড়ে চলে গেল বাড়ির দিকে। রাতে সে কিছুই খেলনা। পড়তেও বসলনা। আর পাপ্তির -মা কিছু একটা আঁচ করতে পেরেছিল, কিন্তু কিছুই বললনা।

গভীর রাত পর্যন্ত জেগে ফেসবুকে গল্প লিখার অভ্যাস ছিল আমর, আর সেই রাঁতেও গল্প লিখছিলাম আমি, হঠাৎ দরজায় ঠোকা পড়ল, আর দরজা খোলার সাথে সাথে পাপ্তি একটা বালিশ নিয়ে ভেতরে ঢুকে পড়ল। তারপর আমার বেডে গিয়ে শুয়ে পড়ল, আমি অবাক হয়ে পাপ্তিকে জিঙেস করলাম এইসবের মানে কি?
পাপ্তি:- তুমি আমাকে ভালোবাসো কিনা বলো? নইলে আজ সারারাত তোমার রুমেই থাকব।
আমি:- দেখ পাপ্তি, পাগলামি করোনা, তোমার রুমে চলে যাও।
পাপ্তি:- না, যতক্ষণ পর্যন্ত তোমার ভালোবাসা আদায় করতে না পারি, ততক্ষণ পর্যন্ত এইরুম থেকে একপাও নড়বনা আমি। বলো আমায় ভালোবাসো কিনা
আমি:- আমার মতো অপদার্থকে ভালোবেসে তুমি কিছুই পাবেনা।
পাপ্তি:- আমি অতকিছু বুঝিনা, প্লিজ আমাকে দয়া করে হলেও ভালোবাসো? তোমার ভালোবাসা ছাড়া আমি বাঁচবনা।
আমি:- কারো ভালোবাসা না পেলে কেউ মরেনা।
পাপ্তি:- অবশ্যই মরে। তুমি কি ভেবেছো, শুধু দেহ থেকে প্রাণ চলে যাওয়াটাকেই মরে যাওয়া বলে? এইটা ভুল। মানুষ জন্মে একবার, কিন্তু মরে একাধিকবার, মানুষ যখন কোনো স্বপ্ন দেখে কাউকে নিয়ে সেই স্বপ্নের মৃত্যু হলে মানুষের একবার মৃত্যু হয়, খুব আপন কেউ ছেড়ে চলে গেলে মানুষের আরেকবার মৃত্যু হয়, যখন মানুষ তার মনের কথা মনের মানুষকে বলতে পারেনা, মনের কথা মনেতেই মরে যায়, তখন মানুষের আরও একবার মৃত্যু হয়। এইরকম মানুষ অনেকবার মরে। যখন দেহ থেকে প্রাণ চলে যায়, তখন মানুষ শেষবারের মতো মরে। তোমাকে না পেলে আমিও জীবন্ত লাশ হয়ে যাব, so প্লিজ আমাকে ফিরিয়ে দিওনা, আমাকে
ভালোবাসতে না পারো, অন্তত সারাজীবন ভালোবাসার অভিনয় করে যাও। কথাগুলো বলে ফুফিয়ে কান্না করতে লাগল পাপ্তি।

আর আমি বুঝতে পারলাম, পাপ্তির ভালোবাসা পবিত্র। পাপ্তি আমাকে সত্যিই ভালোবাসে। আমাকে চুপ থাকতে দেখে পাপ্তি বলল প্লিজ শুভ, বলো আমায় ভালোবাসো?
আমি:- কিন্তু পাপ্তি তোমার বাবা -মা যদি জানতে পারে, তাহলে আমাকে এইখানে থাকতে দিবেনা।
পাপ্তি:- জানবেনা, এবার বলো আমাকে ভালোবাসো?
আমি:- হ্যা, ভালোবাসি। {I love you}

আমার কথাশুনে পাপ্তির হাসি-কান্না এক হয়ে গেল। মুখে হাসি, চোখে অশ্রু, খুশিতে আমাকে জড়িয়ে ধরতে গিয়ে থেমে গেল। আর এমনভাবে আমার দিকে তাকালো, পাপ্তির চোখ দেখে আমার মনে হলো পাপ্তি মিনতি করতেছে যে, আমাকে একবার জড়িয়ে ধরতে চায়।

আমি পাপ্তির অবস্থা বুঝতে পেরে বললান, থেমে গেলে কেন? জড়িয়ে ধর? আর পাপ্তি তখন হেসে আমাকে জড়িয়ে ধরল। আর সেইরাতটা দু'জনে ভালোভাবেই কাটালাম।

একদিন দুজনে বসে আছি পার্কে। আর আমি অন্যমনস্ক হয়ে কিছু ভাবতেছি। পাপ্তি জিঙেস করল
কি ভাবছ?
আমি:- কিছুনা
পাপ্তি:- বলোনা প্লিজ।
আমি:- মা ফোন করেছিল, বাসায় টাকার খুব প্রবলেম। আর বাবা নাকি ঠিকমতো চোখে দেখতে পাইনা, তাই চোখে অপারেশন করতে হবে। কি করব বুঝতেছিনা।
পাপ্তি:- আমি বলি কি, তোমার কাছে জমানো যা টাকা আছে, তা নিয়ে বাবাকে একবার দেখে এসো।
আমি:- না আমি যাবনা, আমি গেলে বাবার মরা মুখ দেখতে হবে, আমি বেঁচে থাকতে বাবার মরা মুখ আমি দেখতে পারবনা। বাবাকে আমি খুব ভালোবাসি পাপ্তি আসলে কি জান, কাছে থাকলে আপন মানুষগুলোর ভালোবাসার মর্ম বুঝা যায়না, দূরে এসেই বুঝতে পেরেছি আমি তাদের কতটা ভালোবাসি, আর আমার জীবনে তাদের ভালোবাসা কতটা গুরুত্বপূর্ণ।

কথা গুলো বলতে বলতে আমার চোখ দিয়ে অশ্রু বেরিয়ে আসল, পাপ্তি আড়ালে তা মুছে ফেলতে চাইল, কিন্তু পারলনা। তবে পাপ্তি তা দেখেও না দেখার ভান করল বলল, তাহলে এখন কি করবে?
আমি:-টাকা পাঠিয়ে দিয়েছি, দেখি বাবার চোখের অপারেশনের পর কি হয়, চলো এবার বাসায় ফেরা যাক।
পাপ্তি:- হুমমমম. চলো...দুজনে পাশাপাশি হাটতে হাটতে চলে এলাম বাসায়।

এর কয়েকদিন পরের ঘটনা। আমি সারাদিন বাসায় ফিরলামম না। আর রাতেও আমার আসতে দেরি হচ্ছে দেখে পাপ্তির ফ্যামিলির সবাই চিন্তা করতে লাগল। আর আমার ফোনও অফ ছিল, তাই যোগাযোগ করারও কোন সম্ভব ছিলনা। অনেক রাতে বাসায় ফিরলাম, পাপ্তি মা জিঙেস করল, কোথায় ছিলে বাবা এতক্ষণ?
আমি:- আন্টি, একটু অসুস্থ হয়েছিলাম, তাই হসপিটালে যেতে হয়েছিল। আর এ কথা বলতে গিয়ে আমার গলা কেঁপে উঠল।
আন্টি:- তো বাবা, এখন ঠিক আছ তো?
আমি:- হ্যা আন্টি, ঠিক আছি।
আন্টি:- খেতে বসো, আমি খাবার দিচ্ছি।
পাপ্তি:- মা আমি খেতে দিচ্ছি, যাও তুমি ঘুমিয়ে পড়।

পাপ্তির মা ঘুমাতে চলে গেল। পাপ্তি খাবার দিল, খাবার সময় পাপ্তি প্রসঙ্গটা আবার তুলল, আর গলাটা নিচু করে জিঙেস করল হসপিটালে কেন গেছ সত্যি করে বলো?
আমি:- এমনি।
পাপ্তি:- এমনি হলে মা কে বলার সময় তোমার গলা কেঁপে উঠতনা।
আমি:- কই গলা কাঁপল?
পাপ্তি:- কেঁপেছে, আমি দেখেছি, সত্যিটা বল এখন।
আমি:- বললাম তো একটু অসুস্থ হয়ছি তাই।
পাপ্তি:- একটু অসুস্থ হলে সারাদিন সারারাত হসপিটালে কি?
আমি:- সারাদিন কোথায়? আমি তো একটু পার্কে ঘুরছিলাম একা একা।
পাপ্তি:- আমার সাথে মিথ্যে বলে পার পাবেনা। সত্যিটা আমি জেনেই ছাড়ব, যাও খাওয়া শেষ, এইবার ঘুমাতে যাও, আর হ্যা সারা রাত ধরে জেগে ফেসবুকে গল্প লিখার কনো দরকার নেই।
আমি:- ওকে মহারাণী। এবার তুমিও যাবে কি আমার সাথে? দু'জন একসাথে জড়িয়ে ধরে ঘুমাব?
পাপ্তি:- ইস, শখ কতো?

আর আমি তখন পপ্তিকে জড়িয়ে ধরে পাপ্তির ঠোঁটে কিস করার জন্য ধীরে ধীরে নিজের ঠোঁটটা এগিয়ে নিয়ে যেতে লাগলাম। আর পাপ্তি তখন লজ্জায় চোখ বন্ধ করে ফেলল। অনেক্ষণ পরও যখন আমার ঠোঁটের স্পর্শ পেল না, তখন পাপ্তি চোখ খুলল, আর দেখল, আমি এক নজরে তাকিয়ে আছে তার দিকে,
পাপ্তি:- ওভাবে তাকিয়ে আছ কেন তুমি??
আমি:- তুমি কি জানো, তুমি কতো সুন্দর?
পাপ্তি:- হয়েছে, আর বলতে হবেনা, ভেবেছিলাম, আমি একটু আদর পাব, but সেই সৌভাগ্য আমার আর হলো না।

পাপ্তি কথা শেষ হতেই আমি পাপ্তিকে কোলা করে রুমে নিয়ে যেতে লাগলাম হঠাৎ। পাপ্তি বলল এই কি করছ? ছাড়ো....
আমি:- আদর করার জন্য রুমে নিয়ে যাচ্ছি।
পাপ্তি:- লাগবেনা আদর। তুমি নিজে গিয়ে শুয়ে পড়, আমি আমার রুমে যাবো।
আমি:- ওকে যাও।

পাপ্তিকে ছেড়ে দিয়ে নিজের রুমে চলে এলাম আমি।
আর রুমে এসে শুয়ে পড়লাম, তারপর ভাবতে লাগলাম পাপ্তিকে মিথ্যে বলা উচিত হয়নি, সত্যি কথাটায় বলে দেওয়া উচিৎ ছিল, একদিন তো সবাই জেনেই যাবে যে আমার কিডনি দুইটা ড্যামেজ হয়ে গেছে, আজ সারাদিন যে হাসপাতালে ছিলাম। সেখানে বিভিন্ন টেস্ট করলাম। কিন্তু রেজাল্ট পেলাম নেগেটিভ। ডাক্তার পরামর্শ দিল, কিডনি প্রতিস্থাপন করার, but অত টাকা আমি পাবো কোথায়। আর ডাক্তার বলেছে ডায়ালাইসিস করে বাঁচিয়ে রাখা যাবে, কিন্তু এতেও প্রতি মাসে কমপক্ষে হলেও দশহাজার করে টাকা লাগবে। এতটাকা আমি পবো কোথায়, আর সবদিকদিয়ে বাঁচার আশাটা ক্ষীণ হয়ে এসেছে আমার। আর এই কথাগুলো আমি পাপ্তিকে বললে পাপ্তি সামলে নিতে পারবে না,

আর আমি এ চিন্তা করতে করতে সারারাত ঘুমাতে পারলাম না। পরদিন মা ফোন করে আরেকটা খারাপ নিউজ দিল, বাবার চোখ পরোপুরি নষ্ট হয়ে গেছে। চোখ প্রতিস্থাপন করতে হবে। আর এতো টাকা নাই বলে, অপারেশন হয়নি। টেনশনের উপর টেনশন! কি করবো আমি কিছুই বুঝতে পারছিনা। পাপ্তি এসে সান্তনা দিতে লাগল। আর আমার মলিন মুখটা দেখে পাপ্তি জিঙেস করল শুভ কি হয়েছে আমাকে বল..
আমি:- পাপ্তি আমার বাবা চিরতরে অন্ধ হয়ে গেল। বাবার অপারেশন হয়নি।
পাপ্তি:- তোমার বাবাকে আমাদের এইখানে নিয়ে এসো। আমার বাবাকে বলে অপারেশন করাব।
আম:- কিন্তু তোমার বাবার টাকায় আমি আমার বাবার অপারেশন করবনা।
পাপ্তি:- পাগলামি করোনা শুভ। প্লিজ নিয়ে এসো।
আমি:- কিন্তু বাবার সামনে আমি কি করে যাবো?
পাপ্তি:- তোমার বাবা তোমাকে চোখের সামনে না যেতে বলেছে, কিন্তু এখন তো তোমার বাবা চোখে দেখেনা। তুমি একবার চেষ্টা করে দেখো..
আমি:- ঠিক আছে, আমি এক্ষুনি যাচ্ছি।
পাপ্তি:- হুমমমম...... যাও।

বাড়িতে এসে আমি বাবাকে সব বুঝালাম। কিন্তু কোনমতে বাবাকে রাজি করাতে পারলাম না। বরং আমি অপমানিত হয়ে বাড়ি থেকে বের হয়ে আসতে হলো।

শহরে ফিরে এলাম আমি। আর হসপিটালে গিয়ে এক ডাক্তারের সাথে বাবার ব্যাপারে কথা বললাম। তারপর বাসায় ফিরলাম। আর বাসায় ফিরে কারো সাথে কোনন কথা না বলে রুমে গিয়ে শুয়ে পড়লাম। আর অন্যমনস্ক হয়ে চিন্তা করতে লাগলাম।

আর গভীররাতে উঠে দুইটা চিঠি লিখলাম। একটা পাপ্তির জন্য, আরেকটা বাবার জন্য। তারপর চিন্তা করতে করতে সারারাত কাটিয়ে দিলাম।

সকালের দিকে আমি মাকে ফোন দিলাম। আর মা ফোন রিসিভ করে বলল
মা:- হ্যালো শুভ,
আম:- হ্যালো মা" বলে ফুফিয়ে ফফুয়ে কাঁদতে শুরু করলাম।
মা:- কি ব্যাপার কাঁদছিস কেন?
আমি:- এমনি মা, কেমন আছো?
মা:- ভালো আছি বাবা, তুই কেমন আছিস?
আমি:- হ্যা মা ভালো আছি। বলতে গিয়ে গলাটা কেঁপে উঠল আমার।
মা:- আমি জানি তোর মন খারাপ বাবা।
আমি:- না মা, মোটেওনা। কাল বাবাকে বুঝিয়ে এইখানের হসপিটালে নিয়ে আসবে
মা:- কিন্তু তোর বাবা রাজি হবে তো?
আমি:- আমার কথা না বললে রাজি হবে। বলবে, শহরে একটা খুব ভালো ডাক্তার এসেছে। যে টাকার জন্য না, মানুষের সেবার জন্য চিকিৎসা করে।
মা:- ঠিক আছে, আমি বুঝিয়ে বলব।
আমি:- ওকে মা, রাখি তাহলে। ভালো থেকো।" বলেই ফোন রেখে দিলাম আমি।

বিষন্ন মনে পার্কে বসে আছি আমি আর পাপ্তি, আমি পাপ্তকে প্রশ্ন করলাম বাবা দিবসে তোমার বাবাকে কিছু গিফট করবেনা?
পাপ্তি:- করব, একটা দামি কিছু গিফট করতে হবে।
আমি:- আমিও আমার বাবা কে একটা দামি জিনিস গিফট করব।
পাপ্তি:- কি করবা।
আমি:- এখন বলা যাবেনা। বাবা দিবসের দিন দেখবে।
পাপ্তি:- ওকে।
আমি:- তোমায় খুব সুন্দর লাগতেছে আজ।
পাপ্তি:- মনে হয় প্রথম দেখতেছ?
আমি:- না, শেষবার দেখতেছি।
পাপ্তি:- মানে?
আমি:- মানে?না মানে হল....." বলতে বলতে ঠোঁটটা এগিয়ে নিয়ে গেলাম পাপ্তির মুখের দিকে। তারপর আলতো করে চুমু খেলাম তার কপালে। আচমকা আমার এই আলতো ছোয়াী শিহরণ বয়ে গেল পাপ্তির সারা শরীরে। চোখ বন্ধ করে ফেলল সে। নিঃশ্বাস বেড়ে গেল তার। বুক উঠানামা করতে লাগল ঘনঘন। আর পাপ্তি আমাকে জড়িয়ে ধরে আলতো করে কিস করল গালে। তারপর বলল তোমাকে অনেক বেশি ভালোবাসি
শুভ।

আমি:- আমিও তোমাকে খুব ভালোবাসি পাপ্তি। এইবার চলো, বাসায় ফেরা যাক।
পাপ্তি:- হুমমমম.... চলো। এই বলে দু'জনে বাসার দিকে পা বাড়ালাম।

পরদিন সকাল আমাকে খুঁজে পাওয়া গেলনা। সারাদিন বাসায় ফিরেনি, রাতেও না। আর ফোনটাও আমার অফ। পাপ্তি খুব টেনশন করতে লাগল। আর পরের দিন সকালে পাপ্তি আমার রুমে ঢুকল। আর দুইটা চিঠি পেল একটা তার নামে, অন্যটা আমার বাবার নামে। তার নামের চিঠিটা সে খুলে পড়তে লাগল:-

প্রিয় পাপ্তি,
প্রথমেই আমি তোমার কাছ থেকে ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি। কারন, আর কখনো ক্ষমা চাওয়ার সুযোগ পাবো কিনা জানিনা। তোমাকে যে কথাগুলো বলতে যাচ্ছি তা মুখে বলার সাহস আমি পাইনি, তাই পত্রের মাধ্যমে বলতেছি। জানি, তুমি আমাকে অনেক ভালোবাসো, অামিও তোমাকে কম ভালোবাসিনা। তোমাকে নিয়ে অনেক স্বপ্ন দেখিয়েছি, কিন্তু সেই স্বপ্ন পূরণ করতে পারলামনা বলে আমি দু:খিত। আসলে আমাকে নিয়ে স্বপ্ন দেখাটা কাউকে মানায়না। কারন আমার দুইটা কিডনিই ড্যামেজ হয়ে গেছে। আমার আর বাঁচার কোন উপায় নেই....
জানিনা এই পত্রটা তুমি পাওয়ার পর আমি আর বেঁচে থাকবো কিনা। সবাইকে ছেড়ে যেতে খুব কষ্ট হচ্ছে, কিন্তু এই ভেবে শান্তি পাচ্ছি, বুকের ভেতর এতদিন তিলতিল করে গড়ে উঠা কষ্টের অবসান হতে যাচ্ছে।

জানো পাপ্তি, তোমাকে নিয়ে খুব স্বপ্ন দেখতাম, কিন্তু বিধাতা তা চাইনি। এই জন্মে তোমার আমার মিলন হবেনা ঠিক, কিন্তু আখিরাতে নিশ্চয় বিধাতার কাছে তোমাকে আমি চেয়ে নেব। আর আমার পত্র পাওয়ার পর সেন্ট্রাল হসপিটালে একবার এসো, আমার বাবার চোখের অপারেশন ঠিকমতো হচ্ছে কিনা দেখে যেও।
আর একটা কথা, পারলে আমাকে ভুলে যাওয়ার চেষ্টা করিও, আর নতুন করে অন্য কাউকে নিয়ে স্বপ্ন দেখিও। কিন্তু আমার ভালবাসার কসম রইল, নিজের কোনো ক্ষতি তুমি কখনো করবেনা।

ভালো থেকো, দূর থেকে তোমাকে সবসময় আমি ভালোবেসে যাবো।
ইতি
শুভ।

চিঠিটা পড়ে পাপ্তি জোরে জোরে কান্না করতে লাগল। তারপর বাবা-মাকে নিয়ে সেন্ট্রাল হসপিটালে ছুটে গেল। ততক্ষণে বাবার চোখের অপারেশন শেষ। ডাক্তার তখন চোখের ব্যান্ডেজ খুলতেছে। তখন কান্না করতে করতে পাপ্তি ঢুকল। আর চিৎকার করে বলল
ডাক্তার, ডাক্তার আমার শুভ কোথায়?"

ডাক্তার নিশ্চুপ। কোন কথা বললনা।

আমার মা কি হয়েছে আমার শুবর ?"
.
*ডাক্তার নিশ্চুপ"

আমার বাবা জিঙেস করল, ডাক্তার, আমার এতবড় উপকারটা কে করল? কে এই মহান ব্যক্তি, যে আমাকে চোখ দান করল? আমি তাকে একবার দেখতে চাই..."
ডাক্তার এইবার বলল দেখতে চান? আসুন আমার সাথে।

ডাক্তার সবাইকে একটা কক্ষে নিয়ে গেল, যেখানে লাশ রাখা হয়। তারপর একটা লাশের উপর থেকে সাদা পর্দা সরিয়ে বলল ইনিই আপনাকে চোখ দান করেছেন।"

আমার নিথর দেহ পড়ে থাকতে দেখে সবাই না. আ....আ" বলে চিৎকার করে কেঁদে উঠল। আর আমার বাবা সবার চেয়ে জোরে কান্না করতে লাগল। সবার আর্তচিৎকারে রুম যেন ফেটে যাবে, কিন্তু শান্ত হয়ে শুয়ে আছি শুধু আমি। আর কখনো আমি জাগবো না।

পপ্তি আমার বাবার দিকে পত্রটা এগিয়ে দিল আর বাবা পড়তে লাগল...

প্রিয় বাবা,
প্রথমেই বাবা দিবসের শুভেচ্ছা রইলো। আশা করি ভালো আছো। বাবা, তোমাকে আমি কি বলব বুঝতেছিনা। সারাজীবন আমি তোমার অপদার্থ ছেলে হিসেবে কাটিয়েছি। আমি আসলেই অপদার্থ বাবা। নিজের বাবার ভালোবাসা পর্যন্ত যার কপালে জুটেনা, তার মতো বড় অপদার্থ আর কে হতে পারে? কিন্তু বাবা আমি তোমাকে খুব ভালোবাসি। তুমি বলেছো, আমি তোমার সামনে আসলে তোমার মরা মুখ দেখতে হবে। কিন্তু বাবা, আমি তা দেখতে পারবনা কখনো। তাই তোমার সামনে কখনো আসবনা, হয়তো আসার সুযোগও পাবোনা।

বাবা, আমি জানি, তুমি চোখ নিয়ে খুব কষ্ট পাচ্ছো। আমি তো আর বাঁচবনা আমার দুইটা কিডনিই ড্যামেজড। তাই আমার চোখ দুইটাও আর প্রয়োজন নেই, সেন্ট্রাল হসপিটালের ডাক্তারবাবুকে আমি সব বলে রেখেছি। উনি সব ব্যবস্থা করে দিবেন আমার চোখ দুটো তোমাকে প্রতিস্থাপন করার ব্যাপারে। বাবা দিবসে তোমাকে আমার পক্ষ থেকে এই ছোট্ট উপহার বাবা। আমার চোখ দিয়ে তুমি আবার বিশ্বকে দেখো বাবা। আর আমাকে ক্ষমা করে দিও।

সারাজীবন তোমার জন্য কিছুই করতে পারলামনা বাবা। বাবা, আমি তোমাকে অনেক ভালোবাসি। আজ খুব ইচ্ছে করতেছে, তোমাকে বুকের সাথে জড়িয়ে নিয়ে শুধু "বাবা বাবা" বলে ডাকতে। কিন্তু আফসোস! আমি অপদার্থ এতো বড় কপাল নিয়ে জন্ম নিইনি।

মা, আর ছোট ভাই ক নিয়ে সুখে থেকো বাবা....... ভালো থকো।
ইতি
তোমার অপদার্থ ছেলে {শুভ}

চিঠিটা পড়ে বাবার কান্নার বেগ আরো বেড়ে গেল। সারাজীবন যে ছেলেকে তিনি অপদার্থ বলে গালমন্দ করেছেন, সেই ছেলে তার জন্য এতবড় ত্যাগস্বীকার করবে বুঝতে পারেনি, সবাই কান্না করতে লাগল। অথচ কি শান্ত হয়ে পড়ে আছে আমার নিথর দেহ! একটুও নড়চড় নেই। তিলেতিলে গড়া কষ্টগুলোর আজ অবসান হয়েছে আমার। আজ আমি মুক্ত।