# পচা বউ #
.লেখক,,, RK Rasel
.
: এই যে শুনছেন,,,,,, এই
: হুম ডিস্টার্ব করিস নাতো রাব্বি আজ অফিস যাবো না।
: এই কি বললেন আপনি। আর রাব্বিকে? সকাল হতে না হতেই বউকে ভুলে গেলো
: ওহহ সরি,,,,, আপনি,,,,, না মানে হয়েছে কি,,,,
.
: কিছুই হয় নাই। আগে বলুন রাব্বি কে।
: ওহহ,,, রাব্বি আমার রুম মেট। যার সাথে একি মেসে থাকতাম। প্রতিদিন অফিস যাবার জন্য ওই আমাকে ডেকে দিতো তো। তাই আজো রাব্বিকেই ভেবে ছিলাম।
: বউ আর রুম মেট কি এক,,,,,
: না মানে অনেক দিন মেসে ছিলাম তো,,,,, সরি।
: হিহিহি। মেসে থাকা ছেলো গুলো বুঝি তার বউকে প্রথম প্রথম রুমমেট ভাবে।
: হতে পারে।
.
: নাস্তা করবেন না।
: হ্যা করবো। আপনি কি নাস্তা করেছেন।
: না,,,,, আমি রান্না করতে পারি না তাইতো আপনাকে ডাকলাম,,,,, খুব ক্ষুধা লাগছে।
: (কয় কিরে) তার মানে আমি নাস্তা বানাবো?
: জী। আপনি ছাড়াতো আর কেউ নাই বাসায়।
: রান্না শিক্ষতে পারেন না।
: ছিঃ এত কষ্ট করে রান্না শিক্ষতে যাবে কে।
: মেয়েদের রান্না শিক্ষতে হয়।
.
: এটা কোন হাদিসে লেখা আছে যে মেয়েদের রান্না শিক্ষতে হবে।
: না মানে কোন হাদিসে নাই। তবে এটাই নিয়ম। বউরা রান্না করবে বররা খেয়ে অফিসে যাবে। আপনি বাংলা সিনেমা দেখেন নি।
: আমি এসব আজগবি নিয়ম মানি না। আর এখন ঝগড়া করতে পারবো না। কিছু একটা বানান, আমার ক্ষুধাতে পেট চোচো করছে।
: চলুন আজকে আপনাকে নাস্তা বানানো শিক্ষাচ্ছি। কাল থেকে নিজেই বানিয়ে নিবেন।
.
: বয়েই গেছে আমার শিক্ষতে। প্রতিদিন আপনি নাস্তা বানিয়ে দিয়ে যাবেন। দুপুরে হোম ডেলিভারিতে খাবার পাঠাবেন, আর রাতে এসে রান্না করবেন।
: মারডালা।
: কি বললেন?
: না মানে বললাম রুটিন টা খুব ভালো।
: ভালো না খারাপ জানি না। ক্ষুধা লাগছে আমার। এমনিতেই রাতে শরীরের উপর দিয়ে সিডর গেছে। এখন বেশি কথা বললে একদম মাথা ফাটিয়ে দিবো।
.
: তার দরকার হবে না। যাচ্ছি।
.
.
সালার এ কোন মেয়েকে বিয়ে করলাম রে বাবা। সকাল বেলা ঘুম থেকে উঠেই রান্না ঘরে পাঠিয়ে দিলো। এত যাবত দেখে এসেছি বউরা রান্না করে বরের জন্য। কিন্তু আমার বউ দেখছি আমাকে দিয়েই রান্না করিয়ে নিচ্ছে।
.
চাকুরীজীবী মানুষ বিয়ে করে বউয়ের হাতের রান্না খাবার জন্য কিন্তু এই মেয়েকে নাকি আমারই রান্না করে খাওয়াতে হবে। এর থেকে তো মেসেই ভালো ছিলাম। কেন যে বিয়ে করতে গেলাম। আল্লাহ তুমি কেনো বিয়েটাকে ফরজ করে দিলা।
.
.
মনের দুঃখ মনে রেখে সারা জীবনের বউয়ের হাতের সুস্বাদু রান্না খাবার স্বপ্ন বিসর্জন দিয়ে নাস্তা করে, গেলাম অফিসে। দুপুর বেলা অনলাইনে অর্ডার দিলাম মহারানীর খাবার বাসায় পৌছে দেবার জন্য। অফিস শেষে বাসায় এসেছি,,,, একটু ফ্রেস হয়ে রেস্ট নিবো। কিন্তু তা আর হলো না।
.
আবার রান্না ঘরে যেতে হলো। কারন মহারানী না খেয়ে আছে। পিয়াজ কাটার ঝাঝ, ক্লান্তি আর মনের দুঃখে চোখের জল নাকের জল এক হয়ে গেলো। কোনটা দুঃখের জল সেটাই বুঝতে পারছি না।
.
এ কোন ডেন্জারাস মেয়ের পাল্লায় পরলাম রে বাবা। আগে কত মধুর স্বপ্ন দেখতাম। আমি অফিস থেকে ক্লান্ত হয়ে বাসায় ফিরবো আর আমার বউটা আমার পছন্দের রান্না করে আমার জন্য বসে থাকবে। সারাদিনের ক্লান্তি ঝেরে ফেলে বউকে নিয়ে শান্তিতে খাবো। কিন্তু সব স্বপ্ন দুঃস্বপ্নে পরিনত হলো।
.
আমার মত একটা নিরীহ ছেলের পাল্লায় কেন যে আল্লাহ এমন ডেন্জারাস মেয়ে জুটালো।
.
.
সব ভাবনার ছেদন ঘটলো,,,, মহারানীর ডাকে,,,
.
: এই রান্না হয়নি। আমি ঘুমাবো। সারাদিন টিভি দেখছি। আমি অনেক ক্লান্ত।
: হচ্ছে একটু দারান
: দারাতে পারবো না। বসে বসে টিভি দেখছি। পা ব্যাথা করছে।
: পাও টিপে দিতে হবে নাকি।
: হুম। দিলে খুব ভালো হতো।
: ওকে রান্না টা শেষ করি।
.
.
সালার পোড়া কপাল। সারাদিন টিভি দেখে নাকি তিনি ক্লান্ত। আর আমি মহিষের মত কাজ করলাম অফিসে বসের গুতা খেয়ে। তাহলে আমার কি অবস্থা। আল্লাহ যে কোন পাপের শাস্তি আমায় দিচ্ছে তা জানি না। মনে হচ্ছে খাবারের সাথে বিষ ঢেলে দিয়ে মেরে দেই আপদ টাকে।
.
.
.
(৭ দিন পর,,,,,,)
অফিস থেকে বাসায় ফিরার জন্য বাসে বসে আছি। জীবনটা তেনা তেনা হয়ে গেছে এই ৭ দিনে। আমার অবস্থা এখন মাছের কাটা গলায় বিধার মত। না পারছি গিলতে না পারছি ওগলাতে।
.
বউ নামের এই আজব প্রানীটা আমার জীবন শেষ করে দিলো। বাথরুম পরিষ্কার থেকে শুরু করে কাপড় কাচানো প্রর্যন্ত সব কাজি আমার থেকে করে নিয়েছে। আমার এতই খারাপ অবস্থা যে বন্ধুদের সাথে শেয়ারো করতে পারছি না কিছু। শেয়ার করলে আমি হাসির পাত্র হয়ে দারাবো সবার কাছে।
.
মাঝে মাঝে মনে হয় বাড়ি ঘর ছেরে বনবাসে চলে যাই। সেখানে গিয়ে গাছের উপর বাড়ি বানিয়ে থাকবো। সাপ, ব্যাঙ, পোকামাকড় ধরে ধরে খাবো। গাছের পাতা পড়ে থাকবো। আর রাত হলে গাছে চড়ে ঘুমাবো। সেখানে না থাকবে বসের ঝারি, না থাকবে বউয়ের প্যারা। ইফফ জীবন টা পুরাই তেজপাতা হয়ে গেছে।
.
.
.
এসব বাসে বসে ভাবছিলাম। আর তাই বাস থেকে শ্যামলিতে নামার কথা থাকলেও তা পারকরে কখন যে যাত্রাবাড়ি পৌছে গেছি তা খেয়াল করিনি। বাস থেকে নেমে দেখলাম আমি যাত্রাবাড়িতে। তাই অগত্যায় লেগুনাতে চরে ফিরে আসলাম শ্যামলিতে। আজ এসব কারনে বাসায় আসতে ১ ঘন্টা লেট হইলো। না জানি কোন ঝর আজ আমার জন্য অপেক্ষা করছে।
.
নিজের বাড়ির কলিং বেলটাকে যেনো যমের দরজার কলিং বেল মনে হচ্ছে। মনে হচ্ছে টিপ দিলেই যম দরজা খুলে আমার যান কবজ করে নেবে।
.
.
সব ভয় কে পকেট বন্দি করে কলিং বেল চেপে একটা সাইক্লোনের জন্য অপেক্ষা করছিলাম। দরজাটা খুললো ঠিকি তবে প্রত্যাশার সেই ঝরটা হলো না। মহরানী হাসি মুখেই বললো।
.
: আজ এত দেরি হলো যে?
: না মানে জ্যাম ছিলো (মিথ্যা কথা)
: ওহহ। ভিতরে আসছো না কেনো।
: ওহহ,,, আসছি।
: শার্টটা খোলো গন্ধ লাগছে।
: ওহহ তাইতো।
: যাও ফ্রেশ হয়ে আসো।
.
: (এত ভালো ব্যবহার ) ও আপনি খাইছেন।
: না। আপনার অপেক্ষায় বসে ছিলাম।
: ওহহ। ওকে ফ্রেশ হয়ে খাবারের ব্যবস্থা করছি।
.
.
সালার কি বউ মাইরী। দেরি করে আসছি। আজকের দিনটা নিজে রান্না করলেই পারতো । তা না করে আমার মাথা খাবার জন্য বসে আছে। গোসল করলাম আর গালি দিয়ে বউয়ের গুস্টি উদ্ধার করলাম। গোসল শেষে রান্না ঘরে যাবো। কিন্তু মহারানীর ডাক পরলো।
.
: এই যে শুনেন। এদিকে আসেন।
: কি, কিছু বলবেন।
: বসেন আজ আপনার প্রিয় গরুর মাংস আর বিরয়ানী রান্না করছি।
: হ্যা
: রান্নারর বই দেখে দেখে আর আম্মুর হেল্প নিয়ে রান্না করছি। জীবনে প্রথম কারো জন্য রান্না করলাম। খারাপ হলে আমাকে বকবেন না কিন্তু।
: হ্যা।
.
: কি পাগলের মত হ্যা হ্যা করছেন। খাওয়া শুরু করুনতো। আমিও খাবো খুব ক্ষুধা লাগছে।
: (মুখে দিলাম ১ নলা) খুব সুন্দর হইছে।
: এখন থেকে রোজ আমি রান্না করবো। আসলে কখনো বাসার কোন কাজ আম্মু করতে দেয়নি তো। তাই কোন কিছুই পারিনা। আপনি আমাকে সব কাজ শিখাই দিয়েন কেমন। আর ভুল হলে বকবেন না কিন্তু।
: ঠিক আছে।
: আর এই কদিনের জন্য সরি। আসলে আমি বরের সাথে একটু দুষ্টামী করবো। এটা অনেক দিনের স্বপ্ন ছিলো। তাই এমন করছি । আজ থেকে আমি লক্ষী বউ হবো।
: আচ্ছা একটা কথা বলি।
.
: জী বলেন
: আমি স্বপ্ন দেখছি নাতো। কেন জানি মনে হচ্ছে আমি স্বপ্ন দেখছি। ঘুম ভাঙ্গার সাথে সাথে জীবনটা আবার অসয্য হয়ে যাবে।
: পাগল স্বপ্ন দেখবেন কেনো।
: আমাকে একটা চিমটি দাওতো দেখি, স্বপ্ন না বাস্তব।
: উম্ম,,,, ওকে।
: অমাগো। এত জোরে কেউ চিমটি দেয় বরকে। পচা বউ।
: হিহিহি,,,,,, পচা হই আর যাই হই,,,,, আমিতো আপনারি....
:হুম,,,,আমারই.......

(((আর নাই শেষ)))