♥ভালোবাসার গল্প♥
#গল্পঃ "বউয়ের অভিমান"
#Writer→ ღRK Raselღ
বউ বাপের বাড়ি গেছে। এমনি এমনি যায় নাই, রাগ করে
গেছে। অবশ্য রাগ করার যথেষ্ট কারণ আছে। গত ৩ সপ্তাহ
হল তার বাইনা, তাকে নিয়ে বাইরে ডিনার করতে হবে।
আর আমি আজ নয় কাল বলতে বলতে ৩ সপ্তাহ কাটিয়ে
তার ধৈর্যের বাধ ভেঙ্গে ফেলেছি। বউটা রাগি, কিন্তু
এতটা রাগি না যে, আমার উপর রাগ করে বাপের বাড়ি যাবে!
ঘটনায় আসা যাক।
আজ সকালে অফিসের উদ্দেশ্য বের
হবার আগে যথারীতি বউয়ের কাছে প্রমিস করে গেলাম,
যেভাবেই হোক আজ দ্রুত অফিস থেকে ফিরেই তাকে
নিয়ে বাইরে খেতে যাবো। সবকিছু ঠিকঠাক ছিল,
মাঝখানে একটা ঘটনা ঘটে গেল। অফিসের কলিগ আলিম
সাহেবের মেয়ে সন্তান হয়েছে গতকাল। আর সেই সুবাদে
আজকে তিনি আমাকে সন্ধ্যায় খাওয়াবেন। তিনি
নাছোরবান্দা! ছাড়াছাড়ির কোন উপায় নেই। এছাড়া
অনেকদিন হল, তার কাছে খাওয়ার আবদার করছিলাম!
তিনি একরকম জোড় করেই নিয়ে গেলেন, অনিচ্ছা সত্বেও
যেতে হল। তারপরে বাসায় ফিরতে ফিরতে অনেক দেরি
হয়ে গেছে! যতক্ষণে ফিরলাম, দেখি ঘরে তালা ঝুলছে!
২য় চাবিটা দিয়ে ঘর খুলে দেখি, ঘরের ভিতর মোটামুটি
টর্নেডো বয়ে গেছে। সবকিছু এলোমেলো, বিছানা
উল্টাপাল্টা। ঘরের ভিতর কিছু দ্রব্যাদির ভাঙ্গা অংশ
ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে। অ্যাকুরিয়ামের মাছটা মেঝেতে
মরে পরে আছে।
এসব দেখে আমি ঠিক কি করব? বুঝে উঠতে পারলাম না।
তাৎক্ষণিক কোন প্রতিক্রিয়াও কাজ করল না। সাতপাঁচ
না ভেবে কোনমতে বিছানা ঠিক করে ঘুমুতে গেলাম।
এপাশ-ওপাশ করছি, আর ঘুমানোর চেষ্টা করছি। কিন্তু, ঘুম
যেন আমার সাথে আড়ি দিয়েছে! কিছুতেই দু-চোখের
পাতা এক হচ্ছে না। তবুও বৃথা চেষ্টা করে যাচ্ছি।
এভাবে কতক্ষণ কেটে গেছে জানিনা। হইত হালক ঘুম ঘুম
এসেছিল। ঠিক তখনই ফোনটা বেজে উঠে জানান দিল,
কেউ একজন আমাকে স্বরণ করেছে। ফোনের দিকে
তাকিয়ে দেখলাম নাম্বারটা "বউ" লেখা দিয়ে সেভ
করা। মোবাইল স্কিনে তখন রাত ১১ টা ৩৫। ফোনটা
রিসিভ করলাম……
----হ্যালো………
----হ্যালো দুলাভাই……
----ওহ, তুমি!
----আসবেন না আমাদের বাসায়?
----না……
----বুবু কিন্তু রাগ করে আছে। অনেকক্ষণ হল, পুকুরপাড়ে
দাড়িয়ে আছে। আমি ডাকতে গেলাম, আমার সাথে
রাগারাগী করে পাঠিয়ে দিল! মোবাইলটাও ওর রুমে পড়ে
আছে……
----আচ্ছা থাকুক, দেখি আমি আসছি……
শালিকা ফোন করেছিল। এর আগেও দু-একবার বউ রাগ
করে বাপের বাড়ি আসলেও যতই রাত হোক, আমি চলে
আসতাম। কেননা, বউকে নিয়ে ঘুমুতে ঘুমতে একটা অভ্যাস
হয়ে গেছে। প্রতিদিন রাতে ঘুমন্ত বউয়ের কপালে একটা
চুমু না খেলে এখন আর ঘুম আসেনা। বউ বাহুতে মাথা না
রাখলে ঘুম হয় না। আর আমি জানি, ওরও ঘুম হবে না।
প্রতিদিন রাতে ওই আগে ঘুমিয়ে যায়। আমার বাহুতে
মাথা রাখে, ওর চুলের ভিতরে আমি হাত বুলিয়ে দেই,
হঠাৎ করে দেখি ও ঘুমো ঘুমো চোখে আমার দিকে
তাকায়। তারপরে ঘুমন্ত অবস্থায়ই অদ্ভুতভাবে তাকিয়ে
ভেংচি কাটে, তারপরে আরেকটু কাছে এসে জড়িয়ে ধরে
ঘুমায়। আর এই দৃশ্যটা আমার কাছে পৃথিবীর যেকোন
জিনিসের থেকে মূল্যবান। খুব ভাললাগে, এটা না
দেখলে আমার ঘুম হয় না।
-
আমি রাজ । আর আমার বউয়ের নাম রিফা। আমাদের বিয়েটা পারিবারিকভাবেই
সম্পূর্ন হয়েছিল।বিয়েটা হয়েছে, ১ বছরেরও বেশি সময়
হল। মায়ের বান্ধবির মেয়ে, যদিও বিয়ের আগ পর্যন্তও এ
কথাটা জানতাম না। বউ পুরোপুরি ধার্মিক না হলেও,
মোটামুটি ধার্মিক বলা চলে। বিয়ের আগে কোন প্রেম
করেনি। অবশ্য আমি এমনটা না। প্রেম করেছিলাম দু-
তিনটা। কিন্তু, বিধিরাম একটাও টিকে নি। তবে, মেয়ে
মানুষ আমাকে ছেড়ে চলে যাবে বলেই, ভেঙ্গে পড়ার মত
ছেলে আমি ছিলাম না। নতুন উদ্যমে সবকিছু শুরু করতাম।
কে জানে, হয়তো তাদেরকে মন থেকে ভালবাসতে পারি
নি। তবে, বর্তমানে বউ যদি কোনকারণে আমাকে ছেড়ে
চলে যায়? জানিনা কি হবে, তবে সম্ভবত আমার বেচে
থাকাটা অনেক কঠিন হয়ে যাবে। কারণ, নিঃশ্বাষ
নেওয়া ছাড়া কেউ বাচতে পারেনা।
-
রিফাদের বাড়ি আমাদের বাসা থেকে প্রায় ৫-৬ মাইল।
এতরাতে রাস্তায় কিছু পাওয়ার আশা করা বোকামি,তবুও
একটা মিনিট্রাকে করে প্রায় ৫ মাইলের বেশি এসেছি,
আর বাকিটুকু হেটে যেতে হবে। সঙ্গি মোবাইল, আর
মোবাইলের টর্চ। প্রায় ১৫-২০ দ্রুত গতিতে হেটে যাওয়ার
পরে অবশেষে ওদের বাড়িতে গিয়ে পৌছালাম। ওদের
বাড়িটা গেট করা, কারণ এই দিকটা শহরও না আবার
গ্রামও না। আবার ফোন দিলাম, শালিকা উঠে বাইরের
গেট খুলে দিল। আমাকে দেখে মুচকি হাসল সে। আমি
বললাম,
----হাসির কি হল?
----আপনাদের দেখে! কি প্রেম মাইরি!
----আগে বিয়ে কর, তারপরে বুঝবা। তো সে এখন কোথায়?
----আমার রুমে!
----ঘুমিয়ে পড়েছে?
----না, আর আমাকেও ঘুমাতে দিচ্ছে না।
----তুমি একটা কাজ কর, এখন অন্য রুমে গিয়ে ঘুমাও, আমি
দেখি কি করা যায়..
----ওকে…
-
ধীরপায়ে ওর রুমের দিকে গেলাম। দড়জায় পা রাখতেই
রিফা বলে উঠল……
----আপনি এখানে এসেছেন কেন?
---- আমি কোন কথা না বলে কান ধরে মুখটা মলিন করে
ফেললাম। যেন তার মন গলে যায়। কিন্তু কাজ হল না, ও
হঠাৎ চিৎকার করার জন্য করল। আমি জ্বলদি গিয়ে ওর
মুখটা চেপে ধরলাম……
----ছাড়ুন বলছি……
----আমার ভুল হয়ে গেছে…
----প্রতিদিনই তো হয়……
----আর হবে না……
----প্রতিদিনই বলেন……
----এবার সত্যি বলছি……
----বলা লাগবে না, চলে যান……
----সত্যি যাবো তো?
----হুম সত্যি…
----তাহলে আর কি করার? দেখি নতুন কাউকে খুজতে হবে
বিয়ে করার জন্য, অনিমতি দিও, আমি আবার বউ ছাড়া
ঘুমোতে পারব না……
----আচ্ছা দিলাম……
----তাইলে থাক, আমি গেলাম……
----খুন করে ফেলব, হুম……
----কাকে?
----আপনাকে!
----আমি তো খুন হয়েই আছি।
রিফা নিঃশব্দে হেসে উঠল। এই হাসিটার দাম আমার
জানা নেই, পৃথিবীতে কিছু জিনিস আছে যা কখনো
কোন মূল্য দিয়ে কেনা যায় না, যেগুলো হয় অমূল্য। এই
হাসিটা হল, সেই অমূল্য সম্পদ। জীবন সুখের হত আর কি
দরকার। (কাল্পনিক)
--------------------------
---------------------------
#প্রিয়_পাঠক , গল্পটি কেমন লাগলো কমেন্টস করে জানাতে ভুলবেন না সবাই। ধন্যবাদ।

image