কোরআন মুমিনের জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ। দিনে-রাতে যখন সুযোগ পাবে, তখনই কোরআন তিলাওয়াত করবে। রাসুল (সা.) ইরশাদ করেন, ‘দুই ব্যক্তি ছাড়া অন্য কারো সঙ্গে ঈর্ষা করা যায় না।

এক. ওই ব্যক্তি, যাকে আল্লাহ কোরআন শিক্ষা দিয়েছেন এবং সে তা দিন-রাত তিলাওয়াত করে। আর তা শুনে তার প্রতবেশীরা বলে, হায়! আমাদের যদি এমন জ্ঞান দেওয়া হতো যেমন—অমুককে দেওয়া হয়েছে, তাহলে আমরাও তার মতো আমাল করতাম।

দুই. ওই ব্যক্তি, যাকে আল্লাহ সম্পদ দিয়েছেন এবং সে সম্পদ সত্য ও ন্যায়ের পথে খরচ করে। এ অবস্থা দেখে অন্য এক ব্যক্তি বলে, হায়! আমাকে যদি অমুক ব্যক্তির মতো সম্পদ দেওয়া হতো, তাহলে সে যেমন ব্যয় করছে, আমিও তেমন ব্যয় করতাম।’ (বুখারি, হাদিস : ৫০২৬)

দিন-রাতের যেকোনো সময় কোরআন পড়া গেলেও বিভিন্ন হাদিস থেকে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের পর বিশেষ কিছু সুরা পাঠ করার তাগিদ পাওয়া যায়। নিম্নে তা বর্ণনা করা হলো—

ফজরের নামাজের পর : ফজরের পর নির্দিষ্ট কোনো সুরা পাঠের কথা স্পষ্টভাবে কোনো হাদিসে নেই। তবে ফজরের নামাজ জামাতে পড়ে সূর্যোদয় পর্যন্ত বসে জিকির-আজকার করার কথা সহিহ হাদিসে এসেছে। আর কোরআন তিলাওয়াত সর্বোত্তম জিকির। তাই এ সময় কোরআন পাঠ করবে। তাবেয়ি আতা (রহ.) থেকে (মুরসালান) এ বিষয়ে একটি হাদিস বর্ণিত হয়েছে। রাসুল (সা.) ইরশাদ করেছেন, ‘যে ব্যক্তি দিনের শুরুতে সুরা ইয়াসিন পাঠ করবে তার ওই দিনের প্রয়োজন পূরণ হবে।’ (সুনানে দারেমি)

উল্লেখ্য যে হাদিসবিশারদরা এই হাদিসের বর্ণনাসূত্রকে দুর্বল বলেছেন। যদিও আমলের ক্ষেত্রে এমন হাদিসের ওপর আমল করতে অসুবিধা নেই।

জোহরের নামাজের পর : জোহরের পরও নির্দিষ্ট কোনো সুরা পাঠের কথা হাদিসে নেই। তবে আগের বহু মুসলিম মনীষী জোহরের পর সুরা ফাতহ পাঠ করতেন। সুরা ফাতহের ফজিলত সম্পর্কে হাদিসে এসেছে, রাসুল (সা.) ওমর (রা.)-কে বলেন, ‘আজ রাতে আমার ওপর এমন একটি সুরা নাজিল হয়েছে, যা আমার কাছে সূর্যালোকিত সব স্থান থেকে উত্তম। এরপর তিনি সুরা ফাতহের প্রথম আয়াত পাঠ করেন।’ (বুখারি, হাদিস : ৪১৭৭)

আসরের নামাজের পর : আসরের পরও নির্দিষ্ট কোনো সুরা পাঠের কথা হাদিসে নেই। তবে সুরা নাবার ফজিলত সম্পর্কে একটি দুর্বল হাদিসে এসেছে, ‘যে ব্যক্তি সুরা নাবা পাঠ করবে আল্লাহ তাকে কিয়ামতের দিন ঠাণ্ডা পানীয় দ্বারা তৃপ্ত করবেন।’ (তাফসিরে কাশশাফ : ৬/৩০৩)

মাগরিবের নামাজের পর : মাগরিবের পর বা রাতে সুরা ওয়াকিয়া পাঠ সম্পর্কে বিভিন্ন তাফসিরের কিতাবে অন্তিম রোগশয্যায় আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.)-এর কথোপকথন এসেছে। উসমান (রা.) বলেন, আমি রাসুল (সা.)-কে বলতে শুনেছি, ‘যে ব্যক্তি প্রতি রাতে সুরা ওয়াকিয়া পাঠ করবে, সে কখনো উপবাস থাকবে না।’ (তাফসিরে মাআরেফুল কোরআন : ৮/১০৬; সাফয়াতুত তাফাসির ৩/৩০৪; ইবনে কাসির ৪/২৮১)

এশার নামাজের পর : এশার পর সুরা মুলক পাঠ সম্পর্কে হাদিস শরিফে এসেছে, জাবের (রা.) বলেন, ‘রাসুল (সা.) সুরা সাজদাহ ও সুরা মুলক তিলাওয়াত করা ছাড়া ঘুমাতেন না।’ (তিরমিজি, হাদিস : ২৮৯২)

রাসুল (সা.) বলেন, “কোরআনে এমন একটি সুরা আছে, যার মধ্যে ৩০ আয়াত আছে। আয়াতগুলো পাঠকারীর জন্য সুপারিশ করবে এবং তাকে ক্ষমা করে দেওয়া হবে। আর সেটা হলো ‘তাবারাকাল্লাজি বিয়াদিহিল মুলকু’ (সুরা মুলক)।’ (তিরমিজি, হাদিস : ২৮৯১)