বিদায়ের সময় মুজিব ভাইকে কদমবুচি শেষ করার সঙ্গে সঙ্গে আমাকে বুকে জড়িয়ে ধরে বললেন, “বাংলাদেশে যখন ফেরত আইবি, তখন আমারে আর পাইবি না। আমার কবর যেখানেই থাকবাে জিয়ারত কইরা একটা সাদা ফুল দিয়া আসিস।"“তবে তােরে আইজ আরও একটা কথা কইয়া দেই। তুই তাে ১৯৪৬ সাল থাইক্যা আমারে দেখতাছস। সেই-ই ক্যালকাটা পলিটিকস। আমি আছিলাম শহীদ সােহরাওয়ার্দীর শিষ্য। ছাত্র রাজনীতিতে দিনাজপুর জেলা থাইক্যা দবিরুল ইসলাম আর তুই ছিলি আমাগাে অন্ধ সাপোর্টার। হেই জন্য নুরুল আমীনের টাইম-এ দিনাজপুরে জেলও খাটছস এক বছর। পঞ্চাশ সালের রায়ট-এর বছর ঢাকায় আইলি ইউনিভার্সিটিতে পড়ার জন্য। তারপর মানিক ভাই-এর ইত্তেফাকের জন্মের টাইম থ্যাইক্যা তুই হইলি ফুল টাইম সাংবাদিক। পাকিস্তানের চব্বিশটা বছরই তুই আমার রাজনীতির সবকিছুই দেখছােস। এরপর একাত্তর থাইক্যা তুই হইলি আমার বাংলাদেশ সরকারের অফিসার। যা আইজ তােরে একটা ভবিষ্যৎ বাণী কইয়া দিলাম। আমি যখন এই দুনিয়ায় থাকুম না, তুই তখন আমার সম্বন্ধে বই লিখবি। বুঝছােস্, এইসব বই বেইচ্যা তাের হইবাে রুজি-রােজগার। বউ পােলাপান খাওইয়াতে পারবি।" দরজার ছিটকিনি খুলে বেরিয়ে আসার মুহূর্তে আবার পিছনে ডাক এল। মুখে তার স্নেহমাখা হাসি। বললেন, “আমার মুকুল তুই আর ফুটলি না। আর একটা কথা শুইন্যা রাখি। আমার ফ্যামিলির সঙ্গে তাের স্পেশাল সম্পর্কের কথা কিন্তু ভুলিস না। এই বাড়ির তিন তিনটা জেনারেশনের লগে তাের হইতাছে 'ভাই'-এর সম্পর্ক। ১৯৪৬ সাল থাইক্যা তুই আমারে চিনিস। আমি তাের মুজিব ভাই আর রেণু তাের ভাবী। আবার কামাল জামাল-রাসেল আর হাসিনা-রেহানাও তােরে মুকুল ভাই কইয়া ডাকে।" “সব চাইতে বড় ডাকটা তুই শােনচোস? আমার নাতি মানে হাসিনার পােলা 'জয়’ও কিন্তু তোরে ‘মুকুল ভাই' কইয়া ডাকে। এই জন্যই তুই হইতাছােস এই বাড়ির হগলের ভাই।" কথাটা বলেই মুজিব ভাই তার স্বভাবসুলভ শিশুর মতাে সৰল অট্টহাস্যে ফেটে পড়লেন। আমি তখন দরজার কাছে থমকে দাঁড়ানাে।
- এম আর আখতার মুকুল, মুজিবের রক্ত লাল
#সংগ্রামের_নোটবুক #বঙ্গবন্ধু_হত্যাকাণ্ড
ছবি - ফাইল ফটো, অফিসে যাবার প্রস্তুতি নিচ্ছেন বঙ্গবন্ধু।

#সংগৃহিত

image